Breaking News

ফার্মিং এ উৎপাদন চক্রঃ

ফার্মিং এ উৎপাদন চক্রঃ
ফার্ম করে প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আয়ের চিন্তা সবাই করেন। কিন্তু সে অর্থ আয় করা কিভাবে সম্ভব সেটা আমাদের অধিকাংশ নতুন উদ্যোক্তাই জানেননা। প্রায় প্রতিদিনই নতুন উদ্যোক্তারা বিশেষ করে প্রবাসীরা জানতে চান একটা দেশী মুরগি, টার্কি, ছাগল, ডেইরী বা ফ্যাটেনিং খামার করে প্রতিমাসে সংসার চালানোর মত নিরাপদ নিশ্চিত একটা আয় কিভাবে করা সম্ভব। সেজন্যই আজকে আমার দৃষ্টিতে ফার্মিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় “উৎপাদন চক্র” নিয়ে লিখছি।

ফার্মিং এ উৎপাদন চক্র খুবই গরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমাদের অধিকাংশ নতুন উদ্যোক্তা এই বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা না থাকার কারনে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পরে যান। ফলে অনেক সময়ই ফার্মিং ছেড়ে ভো দৌড় দিতে হয়।

উৎপাদন চক্র কি ?
ইংরেজী wheel বা Cycle অর্থ চক্র বা চাকা। না আজকে আমার আলোচ্য বিষয় রিক্সা বা গাড়ীর চাকা না। আমার আলোচ্য বিষয় ফার্মিং এর উৎপাদন চাকা। আপনার বহু স্বপ্নের ফার্ম যদি টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ফার্মিং এর উৎপাদন চক্র সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে এবং কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে হবে।

ফার্মিং এ উৎপাদন চক্র কিভাবে নির্ধারন করবেন ?
ধরুন আপনি চিন্তা করছেন এক হাজার টার্কি পালনে বিনিয়োগ করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বিনিয়োগটা কিভাবে করলে আপনার ফার্মিং এ টিকে থাকতে সহজ হবে? তো প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে টার্কির বানিজ্যিক বয়স কত।
সাধারনত আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটা টার্কি ০৫মাস বয়স পার হলে মাংস হিসাবে বিক্রয় উপযোগী হয়।
এই মুহুর্তে আপনার হাতে যদি অবকাঠামো বাদে এক হাজার টার্কি পালন করার মুলধন থাকে, তাহলে আপনি যদি ফার্মিং এ প্রতিমাসে আয় চান তবে কিভাবে এগোবেন ?
প্রথমেই আপনার মুলধনকে ০৫(পাঁচ) ভাগে ভাগ করেন। প্রতিমাসে এক ভাগ করে বিনিয়োগ করুন। এভাবে ০৫মাসে পাঁচ ভাগ মুলধন বিনিয়োগ করুন।

কি বুঝলেননা তো ? তাহলে আরেকটু বুঝিয়ে বলছি।
আপনি প্রতিমাসে যদি ২০০ করে টার্কির বাচ্চা আপনার শেডে উঠান, তাহলে সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ম মাস হতে আাপনার প্রতিমাসে ধারাবাহিক ভাবে আয় আসবে। অর্থাৎ প্রতিমাসে একটা করে ব্যাচ মার্কেটে চলে যাবে। ফলে কমবেশী অর্থ আপনি পাবেন।
এবার আপনি ১ম ব্যাচটি বিক্রি করার পর যে শেডটি খালি হলো- সেখানে নতুন একটি ব্যাচ বাচ্চা উঠান। এভাবে পরের মাসে ২য় ব্যাচের বয়স ০৫মাস হলে বিক্রি করে শেডে নতুন বাচ্চা উঠান। এটাই মুলত উৎপাদন চক্র।

আরেকটু সহজ করে বলছি। ধরুন আপনি ১২টি গাভী নিয়ে খামার শুরু করবেন পরিকল্পনা করলেন। এখন আপনি যদি ফার্মিং এ সহজে টিকে থাকতে চান, প্রতিমাসে লাভ নাহোক অন্তত ফার্মের দৈনন্দিন খরচ ফার্ম হতে উঠাতে চান। তাহলে গাভী ক্রয়ের সময় এমন পরিকল্পনায় ক্রয় করুন যাতে সারাবছর আপনার খামারে অন্তত ২-৩টা গাভী পরিপূর্ণ দুধ দেয়।
অর্থাৎ আপনার খামারে ২-৩টা গাভী দুধ দেয়া শেষ করার আগেই যেন আবার ২-৩টা গাভী দুধ দেওয়া শুরু করে।
আবার আপনি যদি দেশী মুরগির ফার্ম করতে আগ্রহী হন, তাহলে ঠিক একই ভাবে আপনি আগে নির্ধারন করবেন আপনার মোট মুলধন কত এবং সেই মুলধন বিনিয়োগ করে প্রতিমাসে ধারাবাহিক ভাবে মাসে কত কেজি মাংস আপনি উৎপাদন করতে পারবেন বা কতগুলো বাচ্চা লালন পালন করতে পারবেন। এরপর পরিকল্পিত ভাবে এগোবেন।

শেষকথাঃ
ধারাবাহিক ভাবে প্রতিমাসে অল্প আয়ই আপনার ফার্মিং এ টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট। তাই ফার্মিং এ বিনিয়োগ করার আগে আপনার উৎপাদন চক্র নির্ধারন করে নিন। টিভি প্রতিবেদন আর ইউটিউবে সফলতার গল্প দেখে ভালোলেগে গেল আর হুট করে আপনার কষ্টার্জিত পয়সা বিনিয়োগ করে ফেললেন। এভাবে সফল হওয়া যায়না। বিশেষ করে প্রবাসী ও তরুনরা উৎপাদান চক্র না বুঝেই হুট করে বিনিয়োগ করে ফেলেন। প্রথম প্রথম কয়েক মাস ফার্মের ব্যয় নির্বাহ করতে তেমন কোন বেগ পেতে হয়না। কিন্তু নতুন গড়ে তোলা একটা আনকোরা ফার্ম হতে রিটার্ন বের করতে অন্তত ১-২বছর সময় লেগে যায়। ফলস্বরূপ নতুন উদ্যোক্তারা কয়েক মাস পর হতেই পকেট হতে পয়সা ঢালতে ঢালতে একসময় উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং একটি অপার সম্ভাবনাময় স্বপ্ন ও বিনিয়োগের অপমৃত্যু হয়।
তাই হুজুগে পরে নয়, পরিকল্পিত বিনিয়োগ করুন। একটি যুৎসই উৎপাদন পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং তা বাস্তবায়ন করুন। একটি উত্তম উৎপাদন চক্র আপনাকে ফার্মিং এ টিকে থাকতে সহায়তা করবে।

চাষী মানিক

Please follow and like us:

About admin

Check Also

টিপস ৩৪(মেডিসিনের হিসাব)

ভি টি এস টিপসঃ ১০০০ প্রডাকশন লেয়ারের এক বেলার পানি মানে ১০০লিটার পানি।(২০ সপ্তাহের পর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »