Breaking News

ছাগল-#ভেড়ার #খামার বিষয়ক ভূল #সিদ্ধান্তের কারন ও #সমাধান #কৌশল

ছাগল#ভেড়ার #খামার বিষয়ক ভূল #সিদ্ধান্তের কারন ও #সমাধান #কৌশল

ছাগল-ভেড়ার খামার করার ব্যাপারে নতুন খামারীরা কেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নাজ ফার্ম তার ৬ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা, অসংখ্যা নতুন পুরাতন খামারীর সাথে আলোচনা, দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পযালোচনা করেছে। তাতে দেখা গেছে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার পিছনে খামারীদের যেমন রয়েছে কিছু মানসিক বাঁধা এবং বাঁধা এড়ানোর জন্য জ্ঞানের অভাব, তেমনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার বিজ্ঞানসম্মত ধাপসমূহ ও কৌশল সম্পর্কে না জানা। এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনাই নাজ ফার্মের আজকের আলোচনার বিষয়।

প্রিয় খামারী ভাই ও বন্ধুগণ, আশা করি লেখাটার শেষ পযন্ত পড়বেন, ভাল লাগবে, উপকৃত হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস, এবং কমেনন্ট করে আপনার জিজ্ঞাসা ও মতামত জানাবেন। চলুন আলোচনা করা যাক-

#খামারীদের #ভূল #সিদ্ধান্ত নেয়ার #মানসিক বাঁধা:

#ফলাফল সম্পর্কে অতি নিশ্চিত হবার চেষ্টা: নতুন খামারীরা প্রথমেই যে ভূলটা করছে, তা হলো ইউটিউব এর কোন সফলতার গল্প শুনে বা ফেইসবুকের কোন বিশাল লাভের হিসাব নিকাশ দেখে ছাগল-ভেড়ার খামার করার জন্য মনকে স্থির করে ফেলছে। তখন তারা সফলতা আর বিশাল লাভের হিসাব নিকাশ অনুযায়ীই শুধু তথ্য সংগ্রহ করছে। ব্যর্থ হবার তথ্যকে তারা এড়িয়ে চলছে। এই মানসিক বাঁধার কারণে নতুন নতুন খামারীরা শুধু সহজশর্তে লাভের দিকে একপেশে দৃষ্টিতে তাকায়। শুধু তারা যেটা দেখতে চাচ্ছে – সেটাতেই ফোকাস করে। ভিন্ন তথ্যে নয়। ফলে ভূল তথ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

#খুবদ্রুতসিদ্ধান্ত নেয়া: নতুন নতুন খামারীরা রাতারাতি লাভ চায়। ফলে সবকিছুতে অস্থীর হয়ে পড়ে। এই ধরনের মানুষ তথ্য সংগ্রহের জন্য যথেষ্ঠ সময় দিতে চায় না। যদিও তারা তথ্য সংগ্রহ করে, কিন্তু প্রাথমিক ভাবে যে তথ্য পায় তার ওপর নির্ভর করেই খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। যেমন-একদিন একটা ছেলে নাজ ফার্মকে ফোন করে বলল-তারা কয়েক জন বন্ধু মিলে ছাগলের খামার করবে। কিন্তু তার সাথে আলোচনায় দেখা গেল-খামার পরিচালনার ক্ষেত্রে ছেলেটার জ্ঞান নেই বললেই চলে। আমি বললাম আগে অল্প ৮-১০টা দিয়ে শুরু করে অভিজ্ঞতা বাড়ান। পরে পশুর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। আবার একদিন রাতে হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে-ভাই আমারে বাঁচান, বললাম কি হয়েছে বলেন, বলল-ভাই কয়েকদিনের মাথায় বাজার থেকে ৬০টা ছাগল কিনেছিলাম। এখন সব মরে যাচ্ছে। আমাকে বাঁচান। এখন আপনারাই বলেন-বাঁচানোর কোন পথ আছে কিনা? এটাই সমস্যা। খামারের বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে মন স্থির করে দ্রুত সিদ্বান্ত নেয়া চরম বোকামী।

#অতিরিক্ত #আত্ম-বিশ্বাস: অনেক সময় জ্ঞানীগুনি শিক্ষিত মানুষও মনে করে অন্য কারও পরামর্শ তাদের দরকার নেই। তাদের মনে হয় তারাই সবচেয়ে বেশি ও ভাল বোঝেন। অনেকে বলে- আমি গ্রামের ছেলে আমার বাবা দাদারা ছাগল-ভেড়া পালে আসছে-আমি ভাল বুঝি। আমার ভালো বুঝার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আছে – এটা হল আত্মবিশ্বাস। আর আমি সবার চেয়ে ভালো বুঝি; আমার চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না –অতি আত্মবিশ্বাস। অনেক খামারী এই ধরনের চিন্তা নিয়ে খামার শুরু করে বটে কিন্তু কিছুদিন পরে আর সামনে আগাতে পারে না।

#সবকিছু একই নিয়মে বিচার করা: অনেকের সাথে কথা বলে এটা বোঝা গেছে যে, তারা যা একবার চিন্তা করেছে তা নিয়েই আছে। এই যেমন ধরেন-ছাগল যা পায়, তাই খায়, এমন ধারনা। যে কোন ঘাস হলেই চলে এমন বিশ্বাস। ঘাস তো ঘাসই লাগালেই হবে। কিন্তু মানুষের আচার আচরন, খাদ্যাভাস, আবহাওয়া, বাজার পরিস্থিতি যে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে, সে দিকে কোন নজর রাখছে না। এরা সাধারনত একই ছাঁচে ফেলে সবকিছু বিচার করতে চায়। ফলে সময়ের তালে সিদ্ধান্ত সঠিক থাকে না।

#মানসিক #বাঁধাগুলি #এড়ানোর #কৌশল:

#বিপরীত মতামত ও তথ্য সংগ্রহ করা: বিপরীত মতামত, তথ্যও যত বেশি পারা যায়, সংগ্রহ করতে হবে। বরং এগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সত্যি কথা বলতে কি যারা আসল খামারী তারা বেশি কথা বলে না। বলতে পারে না। কারন কোন জিনিসের ফ্যাক্ট বের করা সহজ না ববং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই তারা মতামত কম দেয়। তবে যা দেয়, তাতে বিশ্বাস করা যায়। যা সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়কের ভূমিকা পালন করে।

#বিচার বিশ্লেষণের জন্য সময় নিন: তথ্য উপাত্ত বিচার বিশ্লেষনে সময় দিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে একই জিনিস বার বার করছে সে সব দিকে বেশি নজর দিতে হবে। তাহলে তাদের ফ্যাক্টগুলি ধরতে পারবেন।

#নিজেকে সব সময় ছাত্র মনে করুন: সব কিছু পড়বেন, জানার চেষ্টা করবেন, কিন্তু তাৎক্ষনিক বিশ্বাস করবেন না। ছাগল-ভেড়ার খামার বিষয়ক প্রতিদিন কমপক্ষে ৪ ঘন্টা পড়া শোনা, জানা, ও চিন্তা করুন। ফলে আপনি উক্ত বিষয়ে সাধারন জ্ঞান থেকে বিশেষ জ্ঞান লাভ করবেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সাধারন নয়, বিশেষ জ্ঞান দরকার।

#যে কোন বিষয়ে অন্যের মতামত নিন: যতই আপনি বেশি জানেন না কেন, কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্য কারো বিশেষ করে উক্ত সেক্টরে যারা অভিজ্ঞ তাদের মতামত নিন। তবে ভাল হয় পরিচিত কারো মতামত নেয়া, যাকে আপনি বেশ কিছুদিন ধরে চেনেন এবং আপনাকে সে সবসময় ভাল চায়। একটা কথা মনে রাখবেন-বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় যারা সচারচার মতামত দেয়- কিন্তু বলার স্টাইল হলো-আমার মনে হয়, আমি মনে করি, হতে পারে, আমার ধরনা। এমন মতামত গ্রহন করার আগে আরো ৫বার ভাববেন। সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য ’প্রাসঙ্গিক ফ্যাক্ট’ দরকার।

#পরিবেশ ও বাজারের গতিপথ বোঝার চেষ্টা করুন: আবহাওয়া পরিবেশ পরিস্তিতি ও বাজার ব্যবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে সে দিকে সর্বদা নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে পরিকল্পনার পরিবর্তন, পরিমার্জন করতে হবে, তবে উদ্দেশ্য অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে।

#সিদ্ধান্ত নেয়ার #বিজ্ঞানসম্মত ধাপসমূহ:

যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান, সেই বিষয়ে যত বেশি সম্ভব তথ্য জোগাড় করুন। যেমন- ছাগল-ভেড়ার বাসস্থান, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, প্রজনন, বাজারজাত করন ইত্যাদি।

যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবেন না। তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই করুন। এক জায়গা থেকে একটি তথ্য পেলে, অন্য জায়গা থেকে একই তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করুন, এবং মিলিয়ে দেখুন যে – এগুলোর মধ্যে কোনও অসংগতি আছে কি না। ভিন্নতা থাকলে আরো বেশি খতিয়ে দেখুন।

শুধু এক দিক থেকে চিন্তা না করে, বিষয়টি বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করার চেষ্টা করুন। প্রকৃত খামারীরা যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সেটি বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করেন। এবং একটি সমস্যার আলাদা আলাদা সমাধান চিন্তা করে সেগুলো প্রয়োগ করলে কি হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করেন।

#চুড়ান্তভাবে #সঠিক #সিদ্ধান্ত নেয়ার #কৌশল:

আপনি যে সব তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। তা দুটি ভাগে ভাগ করুন। এক অংশে রাখুন ’তথ্য’, আর এক অংশে ’ফ্যাক্ট’ । এখানে তথ্য বলতে বোঝানো হয়েছে-আপনি বই পত্র, পত্রিকা, ফেইসবুক, ইউটিউব, টিভি, লোকজন, বিভিন্ন খামারীর কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে পাওয়া সবই তথ্য। কিন্তু সব ফ্যাক্ট নয়, ফ্যাক্ট হলো সেগুলো যা সত্য বলে প্রমানিত। যা বার বার করার পরেও প্রমানিত যে একই রেজাল্ট আসছে। শুধুমাত্র সেগুলোকেই ফ্যাক্ট হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।

ফ্যাক্টগুলি আলাদা করার পর, এগুলোকে আবার দু’ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিক। প্রাসঙ্গিক বলতে এমন সবকিছুকে বোঝাচ্ছে, যা আপনার অবস্থা ও অবস্থানের সাথে মানাসসই বা আপনার ক্ষমতার মধ্যে আছে, আপনি করতে পারবেন। অপরদিকে অপ্রাসঙ্গিক ফ্যাক্ট বলতে বোঝানো হয়েছে, যা আপনার সাথে মানানসই না বা আপনার সামর্থ্যের বাইরে। যা আপনি চাওলেও করতে পারবেন না। যেমন-পুরো খামার অটোমেশন কিন্তু বিশাল খামারীরা তা করছে। এটা তাদের কাছে প্রাসঙ্গিহ হলেও আপনার কাছে অপ্রাসঙ্গিক। তাই এটা বাদ দিন।

এখন উপরের কাজ থেকে শুধু প্রাসঙ্গিক ফ্যাক্ট গুলি বেচে নিতে হবে এবং এগুলোর উপর নির্ভর করে চুড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন। তাহলেই আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে এবং চলার পথ সহজ ও সফল হবে। আপনার খামারের শুভ কামনায়-#নাজ ফার্ম।

তথ্যসূত্র:
#Judgment Under Uncertainty by Daniel Kahneman, Paul Slovic, Amos Tversky
#Articles of #Harvard Business Review
The Law of Success by Napoleon Hill
#নাজ ফার্ম এর বান্তব অভিজ্ঞতা #NAZ FARM

Please follow and like us:

About admin

Check Also

গবাদী পশুর ফার্ম লাভজনক করার উপায়

গবাদী পশুর ফার্ম লাভজনক করার জন্যে করনীয়..

গবাদী পশুর ফার্ম লাভজনক করার জন্যে করনীয়.. ১* খামার করার পূর্বেই সার্বিক বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »