Breaking News
ছাগলের কৃমি
ছাগলের কৃমি

ছাগল পালনে মাচা ব্যবহারের গুরুত্ব ও পাকস্থলীর পাতাকৃমি

ছাগল পালনে মাচা ব্যবহারের গুরুত্ব ও পাকস্থলীর পাতাকৃমি

ছাগল পালনের বিশেষ দিকগুলো হচ্ছে- উপযুক্ত বাসস্থান, উপযুক্ত খাদ্য, প্রজনন, স্বাস্থ্য ও বাজার ব্যবস্থাপনা।

দেশে দুধ, ডিম ও পোলট্রির উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে ছাগলের উৎপাদন তেমন বৃদ্ধি পায়নি। মাচার ওপর ছাগল পালন বিষয়ে চাষিদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার।

বাসস্থান :

ছাগল সাধারণত পরিষ্কার শুষ্ক, দুর্গন্ধমুক্ত উষ্ণ, পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচলকারী পরিবেশ বেশি পছন্দ করে। অপরিষ্কার, স্যাঁতস্যঁতে, বদ্ধ, অন্ধকার ও পুঁতিগন্ধময় পরিবেশে ছাগল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। যেমন- নিউমোনিয়া, একথিওমা, পিপিআর, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, উকুন ইত্যাদি, অপর দিকে ছাগলের উৎপাদন কমে যায়।

পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বী দক্ষিণ দিকে খোলা স্থানে ঘর তৈরি করতে হবে।

খামারের তিন দিকে ঘেরা পরিবেশ বিশেষ করে উত্তর দিকে গাছপালা লাগাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাঁঠাল, ইপিল ইপিল, কসভা, ডেউয়া ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে, যার পাতা ছাগল খায়।

মাচা তৈরি :

ছাগলের ঘর যে ধরনের হোক না কেন ঘরের ভেতরে কাঠের মাচা তৈরি করে তার ওপর ছাগল রাখতে হবে।

কাঠের চকিও মাচার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মাচার উচ্চতা ১.৫ মিটার (৫ ফুট) এবং মাচা থেকে ছাদের উচ্চতা ৬-৮ ফুট হতে হবে।

গোবর ও প্রস্রাব পড়ার সুবিধার্থে কাঠের মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে। মাচার নিচে থেকে সহজে গোবর ও প্রস্রাব সরানোর জন্য ঘরের মেঝে বরাবর উঁচু করে দুই পাশে ঢালু (২%) রাখতে হবে। মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত বালু মাটি দিতে হবে।

ছাগলের ঘরের দেয়াল, মাচার নিচের অংশ ফাঁকা এবং মাচার ওপরের অংশ এম এম ফ্ল্যাক্সিবল নেট হতে হবে। শীতকালে রাতে মাচার ওপর দেয়াল চট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শীতের সময় মাচার ওপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু খড়ের বেডিং বিছিয়ে দিতে হবে।
প্রতিদিন মাচা পরিষ্কার করতে হবে। সপ্তাহে ১ দিন জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করতে হবে। ভেঙে গেলে সাথে সাথে মেরামত করতে হবে। মাচা শক্ত ও মজবুত হতে হবে।

#মাচায়_ছাগল_পালনের_সুবিধাসমূহ :
১. সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া রোগ হবে না, ২. কৃমি, উকুন, চর্মরোগ কম হবে।
৩. প্রস্রাব, গোবর সাথে সাথে নিচে পড়ে যায়। ফলে শরীর পরিষ্কার থাকে।
৪. শীতকালে ঠাণ্ডা কম লাগে,
৫. মাচার ওপর ও নিচ দিয়ে বাতাস চলাচল করে বিধায় মাচা শুকনো থাকে,যা ছাগলের জন্য আরামদায়ক।
৬. সর্বোপরি ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

পাকস্থলীর পাতাকৃমি (Paramphistomes, Rumen fluckes, Conical fluckes) : বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রজাতির পাকস্থলীর পাতাকৃমি দ্বারা গবাদিপ্রাণি আক্রান্ত হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক এ কৃমি দেখতে গোলাপী-লাল বর্ণের এবং আকার নাশপাতির মতো। ১৫ এমএম পর্যন্ত লম্বা হয়, যা রুমেন ও রেটিকুলামের দেয়ালে লেগে থাকে।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি ১-৩ এমএম পর্যন্ত লম্বা হয়, যা ডিউডেনামে অবস্থান করে। ইলিয়ামের (ileal musosal) দেয়ালে কৃমি শোষক দ্বারা আটকিয়ে থাকার কারণে মারাত্মক অন্ত্রপ্রদাহ এবং রক্তপাত ঘটিয়ে থাকে।

প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি স্পষ্টত তেমন রোগ লক্ষণ তৈরি করে না, কিন্তু খুব বেশি পরিমাণে কৃমির অবস্থান অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। সাধারণত গরু বেশি আক্রান্ত হয়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার ৯০%। অতিরিক্ত মৃত্যুর হার দেখে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
সব বয়সে গরু, ছাগল, ভেড়া এবং অন্য রোমন্থনকারী প্রাণী আক্রান্ত হয়। তবে ১ বছরের কম বয়সের প্রাণী কম আক্রান্ত হয়। ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল দেশে এ কৃমি সংক্রমণ বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রায় ৭০-৯০% গরুর দেহে পাকস্থলীর পাতাকৃমি পাওয়া যায়।

জীবন চক্র :

আক্রান্ত পশুর মলের সাথে কৃমির ডিম বেরিয়ে আসে। মাটিতে ডিম থেকে মিরাসিডিয়াম বের হয়।

এ মিরাসিডিয়াম কয়েক প্রকার শামুকে প্রবেশ করে। শামুকের মধ্যে স্পোরোসিস্ট রেডিয়া এবং পরে সারকারিয়ায় পরিণত হয়। এ সারকারিয়ার সম্মুখে ও পেছনে একটি করে সাকার থাকায় একে এম্ফিস্টোমও বলে।

এ সারকারিয়া শামুক থেকে বের হয়ে জলজ উদ্ভিদ, ঘাস ইত্যাদিতে লেগে যায় এবং মেটাসারকারিয়ায় পরিণত হয়।

সংক্রামিত ঘাস খাওয়ার মাধ্যমে এ মেটাসারকারিয়া অন্ত্রে চলে যায় এবং সেখানে পুনরায় সারকারিয়া বের হয়। সারকারিয়া অন্ত্রের ক্ষুদ্রান্তে ৩-৫ সপ্তাহ অবস্থান করার পর রোটকুলাম হয়ে রুমেনে পৌঁছে ও সেখানেই স্থায়ীভাবে অবস্থান করে। ৭-১৪ সপ্তাহ বয়সে তারা ডিম পাড়ে।

লক্ষণ :

আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষুধামন্দা, ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস, পানিশূন্যতা, উদাসীনভাব, চলাফেরায় দুর্বলতা, মারাত্মক পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। থুতলির নিচে পানি জমা হতে পারে।

মিউকোজা ফ্যাকাশে দেখাবে। ছোট বাছুর ও ভেড়া আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে ও বিশেষ করে লক্ষণ দেখা দেয়ার ১৫-২০ দিন পর মারা যায়।

প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের ক্ষেত্রে পশুর ওজন কমে যায়, রক্তশূন্যতা চামড়া শুকিয়ে যায়, উৎপাদন কমে যায়, পশুর থুতনির নিচে পানি জমা হয়। এভাবে রোগ ভোগের কিছু দিন পর আক্রান্ত পশুর মৃত্যু ঘটতে পারে অথবা ধীরে ধীরে সেরে ওঠতে পারে।

রোগ নির্ণয় :

রোগ লক্ষণ ও অনুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পশুর মল পরীক্ষা করলে বড় আকারের পরিষ্কার, স্বচ্ছ, অপারকুলামযুক্ত ডিম দেখা যাবে। কিন্তু মারাত্মক আকারের ক্ষেত্রে মল পরীক্ষা করে ডিম নাও পাওয়া যেতে পারে।

Fluid feces পরীক্ষা করলে অপ্রাপ্ত কৃমি পাওয়া যাবে। মৃত প্রাণীকে ময়নাতদন্ত করে রোগ নিশ্চিত হওয়া যায়।

চিকিৎসা : ১. Niclosamid = ১০ mg/kg, Bithional = ২৫ mg/kg – শুধুমাত্র ভেড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর।
২. গরুর ক্ষেত্রে – Resorantul = ৬৫ mg/kg ও Oxyclozanid দিয়ে চিকিৎসায় প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক কৃমিতে ৯০% কার্যকরি।
৩. Carbontetrachlorid এবং Hexachlorlethane -শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমির বিরুদ্ধে কার্যকর।

#ভেটেরিনারি_ডাক্তারের_পরামর্শ_নিয়ে চিকিৎসা_করানো_উচিত।

প্রতিরোধ :

১. যেসব এলাকায় প্রতি বছর পাকস্থলীর কৃমি সংক্রমণ ঘটে, সে এলাকায় নিয়মিত চিকিৎসা দিতে হবে, যাতে করে প্রাপ্ত বয়স্ক কৃমি ধ্বংস হয়ে যায়!

২. নিচু জলা ভূমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শামুক নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে (Molluscicides).
Refer

কোন পোস্ট দেখে ঔষধ ইউজ করা থেকে বিরত থাকুন একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার এর কাছে পরামর্শ নিন .

পোস্টটি সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ছাগলের নিউমোনিয়া

ছাগলের নিউমোনিয়া  সঠিক সময় চিকিৎসা না দিলে ছাগল টিকানো কঠিন হয়ে পরে। লক্ষণ গুলো নিম্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »