Breaking News
গাভীর খাদ্য
গাভীর খাদ্য

গবাদীপ্রাণীর দানাদার খাদ্যকে নিরাপদকরণ:গাভীর ও দুগ্ধ গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

গবাদী প্রাণীর নিরাপদ খাদ্য (দানাদার খাদ্যকে নিরাপদ করণ):
আমাদের দেশে গবাদীপশুর খাদ্য হিসেবে দানাদার খাদ্যর প্রচলন খুবই ব্যাপক। তবে দানাদার খাদ্য গবাদীপশুর প্রকৃত খাবার নয়। আমরা গবাদীপশুর পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য দানাদার খাবারের সাথে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেল ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দিয়ে থাকি, কারণ দানাদার খাদ্যের মধ্যে থেকে সব পুষ্টি উপাদান গবাদীপশু গ্রহণ করতে পারেনা।

আপাতত যতদিন পুষ্টিগুণসম্পন্ন গবাদিপশুর প্রকৃত খাদ্য (সজিনা পাতা হতে পারে উৎকৃষ্ট) নিশ্চিত করতে না পারছি, ততদিন শষ্যদানাকে পুষ্টিকর ও নিরাপদ করে তুলতে পারি। অঙ্কুরিত শষ্যদানা গবাদীপশুর নিরাপদ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কেন অঙ্কুরিত শষ্য দানা?
একটি বীজ (বা শষ্য) এর মধ্যে অনেক পুষ্টিরগুণ আছে, কিন্তু তাদের অনেকেই অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট (যেমন ফাইটিক এসিড) দ্বারা সঙ্কুচিত হয়। এটি প্রায় একটি ছোটখাটো গুপ্তধনের সিন্দুকের মতো, কিন্তু এটি খোলার সঠিক চাবির সন্ধান পেতে সক্ষম হতে হবে। অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া একটি বীজ/শষ্যদানা কে জীবন্ত করে করে তোলে, যেন একটি জিবন্ত গাছ।

এই প্রক্রিয়া এন্টি-নিউট্রিয়েন্টকে দুরে সরিয়ে রাখে, এটি পরিবর্তিত হয় ভিতরে এবং বাইরে, এবং যখন আপনি সেই বীজ/শষ্যদানাটি খেয়ে থাকেন, তখন আর আপনি কেবলমাত্র একটি বীজ খাচ্ছেন না, পরিবর্তে আপনি একটি জীবন্ত ক্ষুদ্র উদ্ভিদ খাচ্ছেন। বীজ থেকে ক্ষুদ্র উদ্ভিদে পরিবর্তন হওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ, কিন্তু যে পরিবর্তনগুলি হয় তা বিশাল।
Phytic অ্যাসিড ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, তামা, এবং দস্তা সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে, যা আপনাকে ঐ সকল পুষ্টি ‘গ্রহণ/শোষণ’ অসম্ভব/কঠিন করে তোলে।

এটি আপনার হজম প্রক্রিয়ায়/পাচনতন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করে। অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়ায় শষ্যদানা থেকে আপনি খুব কার্যকরভাবে phytic অ্যাসিড এর কার্যকারিতা প্রশমিত (neutralize)করতে পারবেন।এছাড়া অঙ্কুরিত শষ্যদানা হজম প্রক্রিয়াকেও সহজ করবে।

শষ্যদানায় পানি লাগার ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পর বিভিন্ন এনজাইম বিক্রিয়া শুরু করে। যার ফলে amino acids তৈরী হয়ে থাকে। জীবন ধারনের জন্য Essential Amino Acids এর সংখ্যা ২০ টি। সদ্য গজানো Grammenae (অর্থাৎ ধান,গম, কাউন, চিনা, মিলেট জাতীয় একবীজপত্রী শষ্য গোত্র) চারায় ১৯ টি essential amino acids থাকে (বাকি ১ টি প্রানীদেহে হয়, উদ্ভিদে হয়না)।

অঙ্কুরিত শষ্যদানা উৎপাদন পদ্ধতিটি নিম্নে দেয়া হল-
১) প্রথমেই আপনি যে বীজগুলো(যেমন- গম, ভুট্টা ইত্যাদি) অঙ্কুরিত করবেন বলে ভাবছেন সেগুলো ভালভাবে পানিতে ধুয়ে নিন।
২) এরপর একটি পাত্রে পরিস্কার পানিতে বীজ গুলোকে গমের ক্ষেত্রে ৮-১২ঘণ্টা এবং ভুট্টার ক্ষেত্রে ২০-২৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন.
৩) এভাবে ভিজিয়ে রাখার পর বীজগুলোকে পুনরায় পানিতে কয়েকবার করে ধুয়ে নিন এবং শষ্যদানা থেকে পানি নিঙরিয়ে নিন…
৪) এবারে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিন এবং এটি দিয়ে বীজসমৃদ্ধ পাত্রটি ঢেকে ফেলুন অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে শষ্যদান পুটলি বেধে ছায়াযুক্ত এমন একটি স্থানে রেখে দিন যেখানে তাপমাত্রা খুব বেশি নয়।

এভাবে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আপনার শষ্যদানা অঙ্কুরিত হবে।
৫)এবার অঙ্কুরিত শষ্যদানা ধুয়ে নিয়ে গবাদীপশুকে পরিবেশন করুন পুষ্টিকর sprouted grain/অঙ্কুরিত শষ্যদানা।
গবাদীপশুর নিরাপদ উৎপাদনের স্বার্থেই অঙ্কুরিত শষ্যদানার ব্যবহার করা আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

**যতদিন বিকল্প খাবার নিশ্চিত না হচ্ছে এবং দানাদার খাওয়াতে হবে, ততদিন অঙ্কুরিত শষ্যদানা খাওয়ান। শুধু হাইড্রোপনিক ঘাসেও হবে, তবে সব পুষ্টি পরিপূণ মিটবে না তাতে ক্ষতিও হবেনা।

আপনি শুধু হাইড্রোপনিক ঘাস খাইয়েও উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পাবেন এবং অন্যান্য অনেক খরচ কমে যাবে।

সাথে সজিনা যোগ করতে পারলে দুধের উৎপাদন ৬৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।

আবার মোটাতাজাকরণের ক্ষেত্রে গরুর ওজন প্রতিদিন ১.৫ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়।

কালেক্টেড

গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ
গাভীর শরীর রক্ষা, দুধ উৎপাদন, প্রজনন ক্ষমতা, গর্ভাবস্থায় ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য সুষম খাদ্যের গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রয়েছে।

দুগ্ধবতী ও গর্ভবতী গাভীকে সুষম খাদ্য না খাওয়ালে দ্রুত স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের শিকার হয়ে থাকে।

গাভীর চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে কাঙ্খিত ফল লাভ করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশে অনেক খামারি আছে যারা গবাদিপ্রানীর সুষম খাদ্যের বিষয়ে সঠিক ধারনা জানে না।

যার ফলে কাঙ্খিত দুধ, মাংশ পায় না এবং আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

সুষম খাদ্যঃ
যে সব খাবারে গবাদিপশুর জাত, বয়স ও প্রকার ভেদে প্রধানত পাঁচটি উপাদান যেমন-

১।প্রোটিন,.

২।শর্করা,

৩।চর্বি,

.৪।ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজনীয় পরিমানে বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলা হয়।

যেমন- দানাদার খাদ্য হিসাবে গম ভাঙ্গা, গমের ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, চালের কুড়া, খেসারী ভাঙ্গা, খেসারীর ভুষি, মুুসুর, মুগ,এ্যাংকরের ছোলা, সয়ামিল, ছোলা, চিটাগুড়, তিলের খৈল, নারিকেলের খৈল, সয়াবিনের খৈল, শরিষার খৈল, ফিস মিল, মিট মিল, ইত্যাদি।

আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস (নেপিয়ার, পাকচং, জাম্বু, ভুট্টা গাছ, জার্মান ঘাস, প্যারা, ইপিল ইপিল, দুবরা, লতাপাতা) ইত্যাদি।
৫।এ সকল খাদ্য উপাদান ছাড়াও গাভীকে পর্যাপ্ত পরিমানের বিশুদ্ধ খাবার পানি (Free of Choice) হিসাবে ২৪ ঘন্টাই সরবরাহ করতে হবে।

সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য

সুষম খাদ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকতে হবে।
> সুস্বাদু, সহজপাচ্য, সহজলভ্য এবং অপেক্ষাকৃত সস্তা হতে হবে।
> আঁশ জাতীয় খাদ্যের মধ্যে অবশ্যই সবুজ তাজা ঘাস থাকা চাই।

গবাদিপশুর সুষম খাদ্যের প্রধানতম উপাদান হলো কাঁচা ঘাস। ঘাসে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেল ও পানি রয়েছে।

পুষ্টি উপাদানের সিংহ ভাগই আসে ঘাস থেকে। কাজেই ঘাসের বিকল্প কিছু নেই।
> দানাদার খাদ্যে ১৫-১৬% প্রোটিন থাকতে হবে।
> খাদ্য অবশ্যই টাটকা ও যথা সময়ে সরবরাহ থাকতে হবে।
> খাদ্যে ময়লা, কাঁকর, পাথর, বালি, ছত্রাক, দুর্গন্ধ ইত্যাদি মুক্ত হতে হবে।

খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ
খাদ্য উপকরণ সমুহ স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে সঠিক ভাবে প্রস্তুত ও সঠিক আদ্রতায় মজুদ রাখতে হবে।

যে সমস্ত খাদ্য আস্ত খাওয়ালে গাভীর স্বাস্থ্যের জন্য কম কাজ করে সেই সমস্ত খাদ্যকে ভেঙ্গে বা গুড়া করে নিতে হবে।

যেমন- গম, ভুট্টা, ছোলা, খেসারী, মাসকলাই, যব, খৈল ইত্যাদি মিশ্রনের পুর্বে ভেঙ্গে নিতে হবে। এতে করে সুষম ভাবে মিশানো যাবে ও সহজেই হজম হবে এবং পুষ্টিমান ঠিক থাকবে।

আবার আঁশ জাতীয় খাবার যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস (ভুট্টা গাছ, নেপিয়ার, পাকচং, জার্মান, জাম্বু, প্যারা) ইত্যাদি আস্ত না খাইয়ে কেটে টুকরো করে বা সাইলেজ করে খাওয়ালে একদিকে যেমন খেতে সুবিধা ও হজমে সহায়ক হয় অপর দিকে অপচয় কম হবে। সরাসরি শুকনো খড় খাওয়ানো উচিত নয়। খড়ের গুনগত মান বজায় রাখতে, খাওয়ানোর সময় পানি ছিটিয়ে দিলে ভাল হয়।

দানাদার খাদ্য মিশ্রন ফর্মুলা
গাভীর স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলী, গর্ভাবস্থায় ও দুগ্ধ প্রদানকালে নির্দিষ্ট অনুপাতে সুষম দানাদার খাবার সরবরাহ করা জরুরী। সুষম দানাদার খাদ্য মিশ্রনের একটি গুরুত্বপুর্ন অনুপাত দেওয়া হলো।

গমের ভুষি………….৫০%
ভুট্রা ভাঙ্গা…………..১০%
ধানের গুড়া…………১০%
খেসারী/ডাল ভাঙ্গা..২০%
খৈল/সয়াবিন……….১০%
এছাড়াও অতিরিক্ত শতকরা ১% হারে খনিজ পদার্থ DCP এবং আয়োডিনযুক্ত লবন যোগ করে নিতে হবে।

খাদ্য প্রদান পদ্ধতি
গাভীর সুষম খাদ্য ব্যবস্থাপনাকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে।

স্বাভাবিক বডির জন্য এক রকম, দুধ উৎপাদনের জন্য ও গর্ভাবস্থার জন্য ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

1. স্বাভাবিক বডি→ সংকর জাতের গাভীর জন্য সুষম দানাদার খাদ্যের পরিমান হবে দৈনিক ৩  কেজি। সবুজ তাজা কাঁচা ঘাস ১০  কেজি এবং খড় ৩-৪ কেজি।

2. দুগ্ধবতী গাভীর জন্য→দৈনিক সুষম দানাদার খাদ্য প্রথম ১ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি এবং পরের ২ লিঃ দুধের জন্য ১ কেজি হিসাবে দিতে হবে। সবুজ তাজা কাঁচা ঘাস কমপক্ষে ২০-৩০ কেজি এবং খড় ৩-৪ কেজি।

3. গর্ভবতী গাভীর জন্য→ সংকর জাতের গর্ভবতী গাভী বা বকনার জন্য দৈনিক সুষম দানাদার খাদ্যের পরিমান হবে (৩+১)=৪ কেজি। এখানে ৩ কেজি হলো গাভীর জন্য এবং ১ কেজি গাভীর গর্ভস্থ বাছুরের জন্য।

প্রয়োজনে গাভীর স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে আরও ১ কেজি দানাদার খাদ্য বাড়িয়ে দেওয়া যাবে। যা চলবে বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত। দৈনিক সবুজ তাজা কাঁচা ঘাস কমপক্ষে ২০-২৫ কেজি এবং খড় ৩ কেজি।
সাথে থাকবে পর্যাপ্ত পরিমানের বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ (Free of Choice) হিসাবে।

গাভীর দানাদার খাবার দুই ভাগ করে দৈনিক ২ বারে খাওয়াতে হবে।

দুগ্ধবতী গাভীকে দানাদার খাবার অবশ্যই দুধ দোহনের শেষে খাওয়াতে হবে।
খড় এবং ঘাসের সাইলেজ একত্রে মিশিয়ে তিন ভাগ করে দৈনিক ৩ বার খেতে দিতে হয়।
প্রচুর পরিমানে দুধ পেতে হলে আনুপাতিক হারে খড় কমিয়ে কাঁচা ঘাসের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারেন।

প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে ৫ লিটার পরিষ্কার পানি পান করানো প্রয়োজন।

খাদ্যের অপচয় রোধ করণ
বর্তমান বাংলাদেশে গো-খাদ্যের দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। অপর দিকে গাভীতে খাদ্য প্রদানের সঠিক ধারনা না থাকায় দৈনিক অতিরিক্ত পরিমান দানাদার ও আশযুক্ত খাবার সরবরাহের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, খাদ্য সরবরাহের ভুল পদ্ধতি, খাদ্যের পাত্র ইত্যাদির কারনে দানাদার খাবার মাটিতে বা মেঝেতে পরে নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচা ঘাস ও খড় আস্ত সরবরাহ করলে অনেক সময় গাভীর পায়ের নিচে পরে নষ্ট হয়ে যায়, পক্ষান্তরে কেটে টুকরো বা সাইলেজ করে খাওয়ালে এই অপচয় রোধ করা যায়।

একটু ভেবে দেখুন তো….
প্রতিদিন একটু একটু করে খাদ্য অপচয় সাময়িকভাবে খুব সামান্য মনে হলেও দিন, মাস, বছরে শেষে তা যোগ করলে বিরাট অংকে গিয়ে পৌছাবে। অথচ খামারীরা একটু সচেতন হলেই এই বিশাল পরিমানের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

রুহুল আমিন রাসেল
শাম ডেইরী ফার্ম
টেপামধুপুর, কাউনিয়া, রংপুর

একটি দুধাঁলো গাভীকে কি পরিমাণ এবং কি ধরণের খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন?
—————————————–
সুষম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা গাভীর দুগ্ধ উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল। দুগ্ধ উৎপাদনের প্রথম ৩ কেজির জন্য প্রয়োজন, ৩ কেজি মিশ্র দানাদার খাদ্য এবং পরবর্তী প্রতি ৩ কেজির জন্য প্রয়োজন ১ কেজি মিশ্র দানাদার খাদ্য।

অবশ্য যদি দুধে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ শতকরা ৪ ভাগ বা তার নিম্নে থাকে।

দুধে স্নেহ পদার্থের পরিমাণ শতকরা ৪ ভাগের উর্ধ্বে হলে প্রতি ৩ কেজি দুধের পরিবর্তে প্রতি আড়াই কেজি দুধের জন্য ১ কেজি মিশ্র দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

এ হিসাবে দেশি ও সংকর জাতের গাভীকে সর্বোচ্চ ৬ কেজি এবং বিশুদ্ধ বিদেশি গাভীকে সর্বোচ্চ ৮ কেজি মিশ্র দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয়।
লবণের চাহিদা পূরণের জন্য গাভীকে মাথাপিছু প্রতিদিন ৬০ গ্রাম খাওয়ার লবণ এবং ৬০ গ্রাম জীবাণুমুক্ত হাড়ের গুঁড়া খাওয়াতে হবে।

রসদে সরবরাহকৃত সবুজ ঘাস গাভীর ‘এ’ ভিটামিনের চাহিদা মেটাতে পারে।

‘বি’ ভিটামিন গবাদিপশু স্বয়ংপ্রক্রিয়ার প্রস্তুত করতে পারে।

গাভীকে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।

দুগ্ধ গাভীর খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

গাভীর খাদ্য : কাঁচা ঘাস গবাদিপশুর প্রধান খাদ্য।

এ ছাড়া, সাধারনতঃ কৃষিজাত পণ্যের উপপণ্য যেমন, চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ, ছোলা, ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গো খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
উপরে বর্নিত গবাদি পশুর খাদ্যগুলিকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি, যথা –

(১) দানাদার খাদ্য যেমনঃ- চালের কুড়া, গমের ভুষি, খেসারি ভুষি, ভুট্টা ভাঙ্গা, মুশুর, মুগ, ছোলা ও মটরের ভুষি, তিলের খৈল, তিষির খৈল ইত্যাদি দানাদার খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত।

এ সকল খাদ্য উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে সুষম দানাদার খাদ্য তৈরী করা হয়। সুষম দানাদার খাদ্য খামারীগণ নিজে খামারে তৈরি করতে পারেন। তা ছাড়া খাদ্য কারখানায় উৎপাদিত সুষম দানাদার খাদ্য বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। এ গুলি প্রয়োজনীয় মাত্রায় গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়।

(২) আঁশ জাতীয় খাদ্য যেমনঃ- কাঁচা ঘাস, ধানের খড়, ভুট্টার খড় ইত্যাদি গবাদি পশুর আঁশ জাতীয় খাদ্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
আঁশ জাতীয় খাদ্য দুই ভাগে বিভক্ত যেমনঃ (ক) কাঁচা ঘাস (খ) শুকনো খড় ইত্যাদি।

আমাদের দেশে গো- চারন ভূমি নেই বললেই চলে। তাই কাঁচা ঘাসের ভীষন অভাব। সাধারনতঃ ফসলের জমিতে যে সব আগাছা জন্মায় ঐগুলিই ঘাস হিসাবে গবাদি পশুকে খাওয়ানো হয়।

কিন্তু, এ ঘাস খামারে গাভী পালনের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, খামারের গাভির জন্য ফসলের জমিতে ঘাস চাষ করা প্রয়োজন।

আমাদের দেশে বর্তমানে উন্নত জাতের ঘাসের বীজ পাওয়া যায়। যেমন- নেপিয়ার, পারা, হাইব্রীড সরগম (জাম্বো), জার্মান গ্রাস, আলফা আলাফা, লুসার্ন ইত্যাদি।

নেপিয়ার, জাম্বু ইত্যাদি ঘাস ১ বিঘা জমিতে বছরে প্রায় ১৮ মেঃ টন পর্যন্ত উৎপাদিত হয় ।
১ বিঘা জমির উৎপাদিত ঘাস দিয়ে ৩টি গাভীকে সারা বছর কাঁচা ঘাস খাওয়ানো যায়।

ধানের খড় আমাদের দেশে সারা বছর জুড়েই পাওয়া যায়। গবাদি পশুর খাদ্যের চাহিদা মিটাতে ধানের খড় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে ভুট্টার চাষ আমাদের দেশে ব্যপকভাবে হয়ে থাকে।

শুকনো ভুট্টার গাছ ও পাতা গবাদি পশুর জন্য একটি উপাদেয় আশ জাতীয় খাদ্য ।

দুগ্ধবতী গাভীর সুষম দানাদার খাদ্য তৈরির তালিকাঃ

১ . গমের ভুষি- ৩৫%
২. চালের কুড়া – ৩০%
৩. খেসারি /ডাল /ছোলা / মটর ভুষি – ১০%
৪. তিলের খৈল/ সয়াবিন মিল – ২০%
৫. চিটা গুড়- ২%
৬. লবন- ০.৭৫ %
৭. ডি সি পি – ২%
৮. ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স -০.২৫ %
মোটঃ ১০০

উপরের তালিকা অনুযায়ী তৈরী খাদ্য গাভীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য(৩ লিটার দুধ পর্যন্ত) ২.৫-৩ কেজি দানাদার খাবার দিতে হবে

এবং তারপর প্রতি ২.৫-৩ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি হারে দানাদার খাবার খাওয়াতে হবে।

এ ছাড়া দুগ্ধবতী গাভীকে প্রতিদিন ১-২ কেজি চাউলের খুদ আথবা ভুট্টা ভাঙ্গা সিদ্ধ করে খাওয়াতে হবে।

কাঁচা ঘাস ও খড় খাওয়ানো:

একটি শংকর জাতের দুগ্ধবতী গাভী যার দৈনিক দুধ উৎপাদন ১০ লিটার তাকে ২০-২৫ কেজি কাঁচা ঘাস ও ৪ কেজি শুকনো খড় খাওয়াতে হবে।

দুধ উৎপাদন ১০ লিটারের বেশী হলে প্রতি ২.৫-৩ লিটার দুধের জন্য ১ কেজি হারে কাচা ঘাসের ও খড়ের পরিমান বাড়াতে হবে। শুষ্ক, বকনা, গর্ভবতী গাভী ও ষাঁড়কে দৈনিক ১০ থেকে ১৫ কেজি ঘাস ও ২ থেকে ৪ কেজি খড় খাওয়াতে হবে ।

বাছুর লালন পালন:

দুগ্ধ খামারের বড় সম্পদ তার বাছুর। তাই খামারে বাছুরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। বাছুর জন্মাবার পর থেকেই এর যথাযত যত্ন নিতে হবে।

জন্মের সাথে সাথে এর নাক মুখ পরিষ্কার করে শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে এবং গাভীকে দিয়ে গা চাটাতে হবে।

নিয়মিত শাল দুধ পরিমান মত দিনে ৫/৬ বার খাওয়াতে হবে।

শাল দুধ শেষ হলে নিম্ন বর্নিত ভাবে প্রতিদিন পরিমান মত দুধ খাওয়াতে হবে ।

১ম মাসঃ দৈনিক ২ থেকে ৩ লিটার
২য় মাসঃ দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার
৩য় মাসঃ দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার
৪র্থ মাসঃ দৈনিক ৪ লিটার উল্লেখিতভাবে বাছুরকে দুধ খাওয়ালে বাছুরে দৈহিক বৃদ্ধি তরান্বিত হবে এবং ১৫-১৬ মাস বয়সে বকনা বাছুর গর্ভ ধারনের ক্ষমতা অর্জন করবে।

পরিচর্যা:

গাভীর সঠিক পরিচর্যা না করলে উন্নত জাতের গাভী পালন করেও গাভীকে সুস্থ সবল উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব হবে না।

ফলে গাভী হতে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ দুধ, মাংস পাওয়া যাবে না এবং গাভী পালন অলাভজনক হবে।

দুধ দোহন:

গাভীর দুধ দৈনিক ভোরে একবার এবং বিকালে একবার নির্দিষ্ট সময়ে দোহন করতে হবে।

দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর উলান ও দোহনকারীর হাত পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »