খামার পরিচালনা করতে গিয়ে নতুন/পুরাতন
অনেক খামারীরা কিছু ভুল করে।
সামনে দেখে অনেক লাভ,
পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভয়াবহ কাহিনী।
আমরা অনেক ৫/৬/৭/৮ মাসের গাভীন গরু কিনে থাকে, কারণ গাভীন কিনলে বাচ্চা দিলেই ডাবল দাম।
তবে এই ভুল কেউ করবেন না। করলে ও বুঝে শুনে করবেন।
পুরাতন খামারীরা হয়তো জানে গাভীন গরু কিনলে কতটা মধু স্বাদ পাওয়া যায়,আর কতখানি কষ্ট ও সইতে হয়।
নতুন খামারীদের বলছি এই ভুল করবেন না।
তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এত্তো এত্তো গাভীন গরু যে বিক্রি হচ্ছে এগুলো মানুষ কিনতেছে না????
হ্যাঁ কিনতেছে, তবে খুঁজ নিয়ে দেখেন কতজন কথা কাজে মিল পেয়েছে।
খুবই কম সংখ্যা হবে যে গাভীন গরু কিনে লাভমান হয়েছে।
নতুন খামারী ভাই/বোনদের বলছি গাভীন গরু না কিনার জন্য, বলছি কি জন্য সেগুলো এক নজরে দেখুনঃ
====================================
★গাভীন গরু কিনার আগে আপনাকে বলা হবে গত বিয়ানে দুধ ছিল ১৫/২০ লিটার বা বাচ্চা দিলে ১৫/২০ দুধ দিবে, বাচ্চা দেওয়ার পর আপনি কথা কাজে কোন মিল পাবেন না।
দুধ এসে যেতে পারে ৭/৮ লিটার। [প্রমানিত]
★অনেক সময় দেখা যায় গাভীন গরু ৭/৮ মাসের বাচ্চা ফেলে দেয়। [প্রমানিত] সুতরাং যিনি কিনল পুরা লসের মুখে পড়ে গেল।
★১_২ টি বাট দিয়ে দুধ আসার কথা ৫/৬ কেজি কিন্তু ম্যাস্টাটিস হওয়ার কারণে দুধ আসে ২ টি বাট দিয়ে ১/২ কেজি , লাথি মারে, নড়াচড়া করে এমন অনেক গরু আছে।
তখন সেই মূহুতে গরু বিক্রি করা সমস্যা হয়ে পড়ে বিধায় ৭/৮ মাসের গাভীন রেখে বিক্রি করে ফেলে।
তখন ঐ সমস্যাগুলো পূবে’ ছিল বোঝা বড্ড কঠিন।
কেউ বিক্রি করে বাজারে,বাড়িতে বা অনলাইনে।
[প্রমানিত]
★ম্যাস্টাটিস হওয়ার কারণে বাট দিয়ে রক্ত আসে,
বাট ১/২ টি একবারে বন্ধ ঐ বাটগুলো দিয়ে দুধ আসে না।
এমন ও কিছু করা আছে ৬/৭ মাসের গাভীন রেখে বিক্রি করে দেয় বাজারে,বাড়িতে, অনলাইনে।
আর গাভীটির ঐ সমস্যা গুলো একজন নতুন খামারী বুঝতে পারে না। [প্রমানিত]
★অনেক সময় দেখা যায় গাভীন গরু বাচ্চা দেওয়ার পর পরই বাচ্চা মারা যায়, বাচ্চা চোখে দেখে না, পা বাঁকা ইত্যাদি সমস্যা গুলো হওয়ার কারন প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও সুষম খাদ্য না পাওয়ার জন্য। [প্রমানিত]
★কিছু গরু আছে বাট গুলো চারটি ধরেই ঠিক আছে, দুধ সমান ভাবে আসে কিন্তু দুধ দহন করতে প্রচন্ড কষ্ট
হয় কারণ শক্ত লাগে তখন শুরু হয়ে যায় শক্তি পরীক্ষা।
যা নতুন খামারীর জন্য বিপদজনক।
সুতরাং এবার আপনি ভেবে দেখুন নতুন খামারী হিসাবে গাভীন গরু আপনার জন্য কতটুকু লাভজনক হতে পারে??
তবে গাভীন গরু কোনটি কিনবেন/ কখন কিনবেন জেনে নিনঃ
====================================
★আপনি নিজ চোখে দেখেছেন গাভীটির দুধ দহন,৪ টি বাট দিয়ে সমান ভাবে দুধ আসে, শক্ত নয়, লাথি বা নড়াচড়া করে না এমন গাভীন গরু হলে কিনুন।
বাকীটা আপনার নসিব।
★আপনার নিকটস্থ বা বিশ্বাস যোগ্য ব্যক্তির গাভীন গরু হলে কিনতে পারেন।
তবে বিশ্বাসের ঘরে আগুন দেয় এমন ব্যক্তির কাছ থেকে নয়।
মোঃ জুলমত আলী
আমার পাশের ২ টা ফার্মই বন্ধ হয়ে গেলো!!!!
গতকাল হঠাত ই শুনলাম আমার পাশের খামারী নজরুল সাহেব তার ফার্ম বন্ধ করে গরুগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে। শুনে সত্যি খুব খারাপ লাগলো। কত আশা নিয়ে আমরা একটা ফার্ম শুরু করি। নানান প্রতিবন্ধকতা আমাদের স্বপ্ন থেকে দুরে ঠেলে দেয়, পেরে ওঠা হয়না প্রতিকুলতার সাথে এত যুদ্ধ করে। হাতে টাকা থাকলেই ব্যবসাকে লাভবান করা যায়না। ব্যবসা ভাল করতে হলে সঠিক কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই দরকার।
আমি যদি এনালাইসিস করে বলি যে কি কি কারনে ওনার ফার্ম বন্ধ করে দিতে হল তার কিছু কারন নিম্নরুপ:
১) ব্যবসা না বুঝেই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সব এক সাথে ১৫ টা দুধের গরু কিনে ফেলেছেন। সব গরুগুলো একসাথে যখন ড্রাই হয়ে গেলো বা দুধ ছেড়ে দিলো তখন ফার্ম চালানো মুশকিল হয়ে দাড়ালো মুলধনের অভাবে অন্যদিকে ব্যাংকের কিস্তি। ওনি যদি সব দুধের গরু এক সাথে না কিনে একটা সার্কেলের মধ্যে আনতেন তাহলে সব সময় ফার্মে দুধের যোগান থাকতো। যেমন: প্রথম ৭ টা কিনে এরপর এগুলোর দুধ শেষ হয়ে গেলে আবার ৭ টা।
২) ফার্ম কে লাভবান করার জন্য সব থেকে জরুরী খরচ কমিয়ে আনা। এর জন্য আর কিছু না হলেও ঘাস করা অত্যান্ত জরুরী। ওনি যদি ঘাস করতেন তাহলে এখন শুধু ঘাস খড় খাইয়ে গরুগুলাকে পালন করতে পারতেন এখন।
৩) গরুর ভালো জাত বুঝে কিনতে পারেনি। মানুষ ঠকিয়েছে। বলেছে যে দুধ হবে আসলে তা হয়নি। এরপর সময়মত হিটে না আসা, বীজ না ধরা এসব সমস্যা কম বেশী লেগেই ছিল।
৪) ড্রাই সময়টা কিভাবে মুলধনের ব্যাক আপ দেবে এটার কোন পরিকল্পনা ছিলনা। হা গরু বিক্রি করে ওনি এখন ফার্ম চালিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু ব্যাংক লোনের চাপ, কর্মচারীর বেতন এসব নিয়ে মোটামুটি হিমসিম অবস্থা।
৫) ফার্মের খরচ কি করে কমিয়ে আনা যায় এটা নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি। ঘাস খড় কাটার মেশিন না থাকাতে লেবার খরচ ছিল অনেক বেশী।
৬) দুধ বিক্রির জন্য চ্যানেল বা মার্কেটিং পদ্ধতি গুলো সঠিক ছিলনা। যে এরিয়াতে ব্যবসা করতে হয়, আশে পাশের মানুষদের যদি কিছুটা সুযোগ সুবিধা না দেয়া হয় তাহলে ব্যবসা করা বাস্তবে অনেক কঠিন। কেজি প্রতি ১-২ টাকা বেশী পাবার জন্য লোকাল দুধ ক্রেতাদের কাছে না দিয়ে নিজেই মিষ্টির দোকানে সাপ্লাই দিয়েছেন। এর ভাল মন্দ দুটো দিকই আছে।
৭) শুধু ডেইরী করে ছোট আকারের ফার্ম লাভবান করা কঠিন যদি না ভালো দুধের গরু পাওয়া যায়। হা প্রতিটা যদি ২০ লিটার দুধের গরু পাওয়া যায় তাহলে দ্রুত লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু তা পাওয়া যায়না। পাশাপাশি ফ্যাটেনিং অবশ্যই করা উচিত যেন কম বেশী ১-২ টা গরু প্রতিমাসেই বিক্রি করা যায়। আমার মতে আগে ফ্যাটেনিং দিয়ে শুরু করা উচিত। এই ভুলটা আমিও করেছি। ডেইরী বাড়ানো উচিত ধীরে ধীরে।
৮) ধৈর্য ধরে জাত উন্নয়নের কাজ করতে হবে নিজেকে। অতিরিক্ত মুলধন না থাকলে এই ব্যবসাগুলোতে প্রথম অবস্থায় ব্যাংক লোন নিয়ে আগানো ঠিক না। একটা ভালো অবস্থানে আসার জন্য ৫ বছর অপেক্ষা, পরিকল্পনা এবং মুলধনের ব্যবস্থা খুবই জরুরী।
৯) ছোট খামারীদের অবশ্যই নিজেকে করতে হবে। শুধু কর্মচারী নির্ভর হলে হবেনা। সাথে যদি পরিবারের লোকজনদের নিয়ে আগানো যায় এতে খরচ যেমন কমবে, অনেক চুরি বাটপারী ও থাকবেনা। ওনার ফার্মের পাশেই গরীব খামারী দুলাল -ফটিকের দিন দিন উন্নতি হচ্ছে, পারছিনা শুধু আমরা শিক্ষিতরা। শ্রমিক ব্যবস্থাপনা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। নিজেরা থেকে করতে পারলে ফার্ম লাভবান হবেই কনফার্ম।
আগে শিখতে হবে, ট্রেনিং নিতে হবে, বিভিন্ন ফার্ম ভিজিট করে পরামর্শ নিতে হবে অভিজ্ঞদের কাছ থেকে মিনিমাম ১ বছর। শুরুটা এমন হলেই মনে হয় ভালো হয় নতুনদের জন্য।
Collected