Breaking News

কবুতরের ক্যাঙ্কার(ট্রাইকোমোনিয়াইস) এবং ক্লামিডিয়া / অর্নিথসিস

 

#ক্যাংকার

Canker – Trichomoniasis canker

ক্যাংকার। মাইক্রোস্কোপিক প্রোটোযোয়া ট্রাইকোমোনিয়াসিস থেকে হয়। এটা কবুতরের খুব কমন একটি রোগ যা সহযেই এক কবুতর থেকে অন্য কবুতরে ছড়াতে পারে। সাধারনতঃ বয়ষ্ক কবুতরের ক্ষেত্রে খাবার পানির স্যাহায্যে এবং বাবা-মা এর থেকে বেবীদের মধ্যে সংক্রামিত হয়। এছাড়াও আক্রান্ত কবুতরের মুখ থেকে পরা খাবার বা আক্রান্ত কবুতরের লালা যুক্ত যেকোন কিছু থেকে অন্য কবুতরে সংক্রামিত হতে পারে।

আক্রান্ত কবুতরের মুখের ভেতর হাল্কা হলদে রঙের ঘা এর মতো দেখতে পাওয়া যায়। ক্যাংকার নডুল কবুতরের মুখ, গলা, ক্রপ সহ পরিপাক তন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট অঙ্গে পাওয়া যেতে পারে। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নেস্টের বেবীর নাভীতে অথবা কবুতরের সাইনাসেও দেখা যেতে পারে।
চিকিৎসায় অবহেলা হলে কবুতর মারা যায়।

?লক্ষন:
দেহের কোথায় ক্যাংকার সংক্রমন হয়েছে তার ঊপর নির্ভর করে রোগের লক্ষন বিভিন্ন হতে পারে।
(ক) মুখ গহবরে হাল্কা হলদে ঘা।
(খ) প্রচুর পানি পান করা। ওয়েট নেস্ট বা বেবীদের ড্রপিংসে প্রচুর পানি থাকার কারনে আতুড় সব সময় ভেজা থাকা – সাধারনত আক্রান্ত বাবা-মা নিজেরা বেবীদেরকে প্রচুর পানি খাইয়ে দেয়।
(গ) উষ্ক-খুষ্ক পালক।
(ঘ) বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে থ্রোটে সংগক্রমনের ফলে টনসিলে নডুলের কারনে শ্বাস কষ্ট একটি কমন লক্ষন। ওড়ার পর বার বার ঢোক গিলার মতো করা।
(ঙ) খাবারে অনীহা এবং ওজন হ্রাস
(চ) হজমে সমস্যা
(ছ) ডা্য়রিয়া
(জ) ল্যাথার্জি বা অবশাদগ্রস্থতা, এক্টিভিটি কমে যাওয়া, উড়তে না চাওয়া।
(ঝ) মুখ থেকে রক্ত পড়া

?প্রতিরোধ:
(ক) খাবার এবং পানির ক্ষেত্রে #বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা।
(খ) নতুন কবুতর সংযোজনের ক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলা।
(গ) লফটে স্ট্রেস নুন্যতম পর্যায়ে রাখা।
(ঘ) নিয়মিত ক্যাংকার প্রতিরোধী ড্রাগ বা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা। এক্ষেত্রে লফটে ক্যাংকারের উপদ্রবের মাত্রা অনুযায়ী ভেটেরিনারী বিশেষজ্ঞ দের মতামত নিয়ে মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভাবে এন্টি ফাংগাল এবং মেট্রোনিডাযোল  গ্রুপের ড্রাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকেই প্রাকৃতিক উপাদান দাড়ুচিনির গুড়া ব্যবহার করেও ভালো ফল পাচ্ছেন।

? অনেক লফটের প্রায় সব কবুতর জোড়ার বেবীদের মুখে ঘায়ের সমস্যা দেখা যায়। আবার অনেক নির্দৃষ্ট জোড়ার বেবীদের প্রায়শই এই সমস্যা দেখা যায়। এসব জোড়া ডিম দেবার পর এবং বেবী ফুটার পর ৩ দিন মেট্রোনিডাযোল ঔষধ দেয়া হলে ইনশা আল্লাহ এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে।

?মেট্রোনিডাযোল গ্রুপের মানুষের ঔষধগুলোর ভেতর ফ্লাজিল, এমোডিস, ফিল্মেট ইত্যাদি সহ আরো বিভিন্ন ব্রান্ড আছে।
ভেট ঔষধের ভেতর ডাইরোভেট বোলাস, ডাইরোভেট WSP, এমোডিস বোলাস সহ আরো অনেক ব্র্যান্ড বাজারে অয়াওয়া যায়।

?এমোডিস/ফ্লাজিল/ফিল্মেট ৪০০ মিগ্রা ট্যাব্লেটেঃ
একমাসোর্ধ কবুতরঃ ছয় ভাগের এক ভাগ করে ১২ ঘন্টা পর পর। ৩-৫ দিন
বেবী কবুতরঃ আট ভাগের এক ভাগ করে ১২ ঘন্টা পর পর।৩ দিন।

?এমোডিস/ফ্লাজিল/ফিল্মেট সাস্পেনশনঃ
একমাসোর্ধ কবুতরঃ
বেবী কবুতরঃ

?ডাইরোভেট WSP: ১ গ্রাম প্রতি লীটার খাবার পানিতে। ৫ – ৭ দিন

?ডাইরোভেট বোলাসঃ ৫ লিটার পানিতে ১ টি বোলাস। এক দিন পর একদিন এভাবে ৫ দিন।

লিংক

https://www.facebook.com/209119289678723/posts/470168566907126/

#####

Chlamydia / Ornithosis / Chlamydiosis / Chlamydophilosis

ক্লামিডিয়া / অর্নিথসিস / ক্লামিডিওসিস / ক্লামিডোফিলোসিস

Dr Colin Walker BSc, BVSc, MRCVS, MACVSc (Avian health) এর CHLAMYDIA INFECTION IN BIRDS অবলম্বনে।

অনুবাদ/রূপান্তরে Abdullah Mir Wahidur Rahman

পোস্টের সংক্ষিপ্ত রূপঃ
? ক্লামিডোফিলা সিটাসি জীবানু থেকে যে রোগটি হয় তার নাম #সিট্টাকোসিস (অথবা অন্য নামে #অর্নিথসিস#ক্লামিডাইওসিস অথবা #ক্লামিডোফিলোসিস)।
? দুই পথে রোগ সংক্রমনের সৃষ্টি হয়ঃ
– যখন পাখি স্ট্রেসের সম্মুখীন হয় এবং তার প্রাকৃতিক ইমিউনিটি এই স্ট্রেস মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট্য শক্তিশালী নয়।
– যখন পাখি নতুন এমন কোন ক্ষতিকারক ক্লামিডিয়াল স্ট্রেইন এর সংস্পর্শে আসে যে স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে তার প্রাকৃতিক ইমিউন নেই৷
? ক্লামিডোফিলা সিটাচি মূলতঃ আপার রেস্পিরেটরি ইনফেকশনের কারন হলেও, সাধারনতঃ পাখির সাইনাস, চোখের চারপাশের মেমব্রেন, পিশির লাইনিং (কঞ্জাংটিভা) এবং আপার উইন্ডপাইপকে টার্গেট করে।
? সাধারনতঃ ক্লামেডিয়া সিটাচি আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক সহ স্পলীন, লিভার, বাওয়েল, লাং, এয়ার স্যাক, লিঙ্গ এ সব কিছুকেই প্রভাবিত করার ক্ষমতা এদের আছে৷
? আক্রান্ত পাখিগুলো নিশ্চুপ হয়ে যায়, ওজন হারাতে থাকে, সবুজ ড্রপিংস এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
? ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে, অনেক  পাখি মারা যেতে পারে।

কাকাতুয়ার বিভিন্ন প্রজাতি বা ককাটিয়েল, বাজ্রিগার এবং কবুতরের লাল চোখ (কখনো কখনো ট্যারা ভাবে তাকানো), চোখে ময়লা এবং Cere বা নাকে ময়লা আমরা প্রায় সবাই দেখেছি। প্রায় নিশ্চিত ভাবেই এর পেছনের কারনটি হলো #ক্লামিডোফিলা_সিটাসি

? রোগের ধরনঃ
বেশীর ভাগ কাকাতুয়া প্রজাতী এবং কবুতর তাদের আপন দেহে প্রায় সব সময়ই ক্লামিডোফিলা সিটাসি নামক একক সেলের জীবকে বয়ে বেড়ায়৷ এটা মুরগী সহ আরো বেশ কিছু ধরনের পাখির ভেতরেও সংক্রমিত হতে পারে। ক্লামিডোফিলা সিটাসি জীবানু থেকে যে রোগটি হয় তার নাম #সিট্টাকোসিস (অথবা অন্য নামে #অর্নিথসিস, #ক্লামিডাইওসিস অথবা #ক্লামিডোফিলোসিস)। এটা খুবই কমন এক ধরনের ইনফেকশন। ইনফেকশনের ফলে সাধারনতঃ রেস্পিরেটরি সিস্টেম আক্রান্ত হলেও আক্রান্তের ভেতর নানা ধরনের সমস্যা বা লক্ষন ফুটে উঠতে পারে।

প্রায় সব এভিয়ারী বা পাখিরালয়ে এক বা একাধিক অধিবাসী ক্লামিডোফিলা স্ট্রেইন থাকে বা আছে। প্রায় প্রতিটি পাখিই তাদের বাবা-মা থেকে শিশূ বয়সেই প্যাসিভ সংক্রমনের (passively infected by their parents) স্বীকার হলেও অসুস্থ্ না হয়ে সংক্রমনের বিপরীতে সিম্পলি দৈহিক প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজে লাগায় এবং এই জীবের বিরুদ্ধে দেহে প্রাকৃতিক ইমিউন বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে শুরু করে৷ শৈশবকালীন সময়ে নিরন্তর ভবে স্বল্পমাত্রায় জীব/জীবানুর সংস্পর্শ-প্রভাব পাখির গড়ে উঠতে থাকা প্রাকৃতিক ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী এবং অভেদ্য হয়ে উঠতে সাহায্য করে। বেশীরভাগ কবুতর এবং কাকাতুয়া প্রজাতীর বয়স ৬ মাস হতে হতে এবং প্রায় প্রতিজনেরই ১২ মাস বয়স হতে হতে রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরি হয়ে যায়। এ কারনে ১২ মাস বয়সোর্ধ পাখির রোগাক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বেশ আন কমন।কিন্তু খারাপ বা নিম্নমানের ব্যবস্থাপনা, অস্বাস্থ্যকর খাবার, পানি এবং পরিবেশ ইত্যাদি থেকে জন্ম নেয়া স্ট্রেস পাখির দেহে গড়ে ওঠা এই শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমকে চ্যালেঞ্জের ভেতর ফেলে দেয় এবং এক সময় ক্রমাগত স্ট্রেসের মুখে পুরো ইমিউন সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ে।

? সাধারনতঃ নীচের দুইটি কারনের যেকোন এক পথে রোগের আবির্ভাব হয়ঃ

1⃣ যখন পাখি স্ট্রেসের সম্মুখীন হয় এবং তার প্রাকৃতিক ইমিউনিটি এই স্ট্রেস মোকাবেলা করার জন্য যথেষ্ট্য শক্তিশালী নয়।
এ ধরনের অবস্থায় মুলতঃ নবীন/তরুন বেবীর ভেতর রোগ দেখা দিবে। খুব সহযেই আমরা বুঝি যে নবীন বা তরুন বেবীরা বয়ষ্ক কবুতরের সমপরিমান ইমিউনিটি গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত বয়স পায় নি। ফলে অপেক্ষাকৃত কম স্ট্রেসের থেকেই রোগের সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। ওভারক্রাউডিং বা ঘনবসতী, নিম্ন মানের হাইজিন এবং পক্ষীশালা বা এভিয়ারীর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ – এগুলো সবই স্ট্রেস বা চাপের একদম কমন কারন।

2⃣ যখন পাখি নতুন এমন কোন ক্ষতিকারক ক্লামিডিয়াল স্ট্রেইন এর সংস্পর্শে আসে যে স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে তার প্রাকৃতিক ইমিউন নেই৷
পাখিরা নিজ এভিয়ারীর/লফটের অধিবাসী ক্লামায়ডিয়ার স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে প্রকৃতিক ইমিউন তৈরি করে নেয়। কিন্তু নতুন সংগৃহিত পাখি এভিয়ারী বা লফটে নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আসতে পারে, যা থেকে রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। একই ভাবে নতুন সংযোজিত পাখিটি নতুন লফটে যদি এমন কোন অধিবাসী স্ট্রেইনের সংস্পর্শে আশে যে স্ট্রেইনের মুখোমুখী সে এর আগে হয়নি, তবে সেও অসুস্থ্য হয়ে পড়তে পারে। বেশীর ভাগ সময় দোকানের পাখি অথবা হাটের পাখিগুলো বেশী ঝুকিপূর্ন হয়। অনেক সময়েই এসব যায়গার পাখিগুলো কম বয়সী এবং দুর্বল প্রাকৃতিক ইমিউনিটির আধিকারী হয়ে থাকে। একটা পাখির দোকানের সাথে অনেক ধরনের স্ট্রেস বা চাপ যুক্ত থাকে। স্থানান্তর এবং বাসা বদলের চাপ ছাড়াও দোকানে/হাটে সাধারনতঃ অনেক বেশী শব্দ থাকে, অনেক বেশী নারাচাড়া এবং ঘাটাঘাটির মুখোমুখী হয়, সাথে থাকে স্বল্প পরিসরে অনেক বেশী পাখির উপস্থিতি৷ একই সময় বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাখিরা সরাসরি পারষ্পরিক সংস্পর্শে এসে, রোগের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয় হাজার গুন।

? যে সকল লক্ষন পর্যবেক্ষন করা উচিৎঃ

ক্লামিডোফিলা সিটাচি মূলতঃ আপার রেস্পিরেটরি ইনফেকশনের কারন হলেও, সাধারনতঃ পাখির সাইনাস, চোখের চারপাশের মেমব্রেন, পিশির লাইনিং (কনজাংটিভা) এবং আপার উইন্ডপাইপকে টার্গেট করে। স্তন্যপায়ী প্রানীদের তুলনায় পাখিদের সাইনাস সাধারনতঃ অনেক বড় হয়ে থাকে।

আমাদের নাকের মতোই সাইনাস হলো মেমব্রেনের সারিকৃত হাড়ের গহবর। আমাদের নাকের মেমব্রেনের মতই, ইনফেক্টেড হলে, সাইনাসের মেমব্রেন থেকে তরল প্রদাহ (inflammatory fluid) নিঃসরন হয়। সাইনাসগুলো সংকীর্ন নালীর মাধমে একে অপরের সাথে যুক্ত এবং নাক (cere) এর নীচ থেকে প্রবাহিত হয়ে পাখির মুখ গহবরের ওপরের স্লটে (Choana) এসে পড়ে। প্রায়ই সাইনাসে যে পরিমান তরল প্রদাহ তৈরি হয় সে পরিমান তরল প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে সাইনাস তরল প্রদাহে পরিপূর্ন হয়ে ওঠে। যেহেতু পাখির সাইনাস সিস্টেমের বাহ্যিক দেয়াল নরম টিস্যু দিয়ে তৈরি (যা স্তন্যপায়ী প্রানীদের ক্ষেত্রে হাড়ের দেয়াল হয়), এই তরল প্রদাহ জমা হয়ে হয়ে সাইনাস ফুলে ওঠে। স্ফীত সাইনাস থেকে তরল প্রদাহ বের হবার পথে কিছু নাক (cere) থেকে চুইয়ে বের হয়ে এসে হাচি এবং ঠোটের গোড়ায় পালকে ম্যাটিং এর সৃষ্টি করে। এই তরল যখন choana এর ভেতর থেকে প্রবাহীত হয় তখন এটা Choana কে ব্লক করে দিতে পারে। ফলে পাখি cere (নাক) দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস করতে না পেরে ঠোট খুলে শ্বাস প্রশ্বাসের কাজ চালাতে শুরু করে, যা অনেকটা হাপানীর মতো দেখায়।

সাধারনতঃ ক্লামেডিয়া সিটাচি আপার রেস্পিরেটরি ট্র্যাক্টের ভেতরে অবস্থান করে, তবে বাজে ব্যবস্থাপনার এভিয়ারীর দুর্বল পাখিদের ক্ষেত্রে এই জীবানু অভ্যান্তরীন রোগেরও কারন হয়ে দঁড়াতে পারে।স্পলীন, লিভার, বাওয়েল, লাং, এয়ার স্যাক, লিঙ্গ এ সব কিছুকেই প্রভাবিত করার ক্ষমতা এদের আছে৷ আক্রান্ত পাখিগুলো নিশ্চুপ হয়ে যায়, ওজন হারাতে থাকে, সবুজ ড্রপিংস এবং শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়। একবার যদি এই রোগ গেড়ে বসে, ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে, উল্ল্যেখ্যোগ্য সংখ্যক পাখি মারা যেতে পারে। যেসব পাখির লিঙ্গ আক্রান্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রজনন, ডিম-বেবীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।

? প্রতিকার ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা কেমন হবে?

ক্লামিডোফিলোসিস রোগের প্রতিকারের জন্য পছন্দনীয় ড্রাগ হচ্ছে #ডক্সিসাইক্লিন নামক এন্টিবা্টিযোটিক। আমাদের দেশে এটা ভেট ঔষধের ক্ষেত্রে পানিতে দ্রবনীয় পাউডার হিসেবে পাওয়া যায়। তাত্ত্বিকভাবে ৩০-৪৫ দিন ক্রমাগত চিকিৎসা দিলে পাখিদের ভেতর থেকে সম্পূর্নরূপে ক্লামিডোফিলা জীবানু দুর করা সম্ভব৷ যেহেতু পাখিদের ভেতর পানি গ্রহনের পরিমান বিভিন্ন হয় তাই বাস্তবিক ভাবে যদি প্রতিটি পাখিকে সম্পূর্ন জীবানু মুক্ত করার চেষ্টা করতে হলে প্রতিটি পাখিকে আলাদা আলাদা ভাবে মুখে ঔষধ খাওয়াতে হবে।

পাখিদেরকে সম্পূর্নরূপে জীবানু মুক্ত করার লক্ষে চিকিৎসা দেয়াটা যদিও যৌক্তিক মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তব অবস্থাটা একটু ভিন্ন রকম। যদি পাখির দেহ থেকে সব জীবানু সরিয়ে ফেলা হয় তাহলে পাখিটি আর সরাসরি সংস্পর্শে থাকবে না এবং খুব দ্রুত তার প্রাকৃতিক ইমিউন হ্রাস পাবে। এর পর এই পাখিটি যদি আবার এই জীবানুর সংস্পর্শে আসে (এবং এটাই অবশ্যাম্ভাবী যে পাখিটি অন্য পাখির সংস্পর্শে এসে আবারো এই জীবানুর মুখোমুখী হবে) তখন পাখিটি এই রোগে আবার আক্রান্ত হবার ব্যাপারে দারুন ভালনারেবল থাকবে।

ক্লামিডোফিলা সংক্রমনের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময়েই চোখে সমস্যা দেখা দেয়। পাখির চোখ লাল হয়ে ফুলে ওঠে, ময়লা জমে এবং পানি পড়া শুরু হয় এবং বেশীর ভাগ ফেন্সিয়াররাই চোখের এন্টিবায়োটিক ড্রপ দিয়ে এর চিকিৎস করার চেষ্টা করেন। যেহেতু রোগটি সিস্টেমেটিক, শুধুমাত্র চোখের চিকিৎসা দেবার ফল সীমাবদ্ধ এবং এর থেকে মৌখিক ভাবে এন্টিবায়োটিক খাওয়ালে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে। উষ্ণ পানি অথবা স্যালাইন পানি দিয়ে চোখ ধুয়ে দিলে ব্যাক্টেরিয়া এবং তার সাথে এদের টক্সিন ও ময়লা দুর হয়ে যাবে এবং এর ফলে পাখিরা শুধু আরামই পাবে না বরং ভালো হয়ে ওঠাটা তড়ান্বিত হবে৷

ক্লামিডোফিলা সিটাচি রোগটি মানুষেরব ভেতর সংক্রমন সৃস্ট করার ক্ষমতা রাখে। তবে, আশার কথা বেশীর ভাগ মানুষই এই রোগের বিরুদ্ধে প্ররাকৃতিক ইমিউন এর অধিকারী। তবে যে সব ব্যক্তির স্বাস্থ্য আগেই ভেঙ্গে পড়েছে তারা অনেক বেশী সাসেপ্টিবল। পাখিরা গুরিত্বপূর্ন হলেও মানুষ আরো বেশী গুরুত্বপূর্ন। তাই যখন দেখভাল করার মানুষটি ঝুকি পূর্ন হয়ে পড়ে তখন সম্পূর্ন জীবানূ দুর করার কথা চিন্তা করতে হবে অথবা পাখিটি বাতলের ভেতরে ফেলতে হবে৷

আমেরিকাতে সাম্রতিক এক গবেষনায় প্রায় ১২ মাস ব্যাপি ১৮ মিলিয়ন পাখি ফেন্সিয়ারদের শারারীক অবস্থা পর্যর্যবেক্ষন দেখা গেছে ৭৮ জন এই রোগে সংক্রামিত হয়েছিলো। অর্থাৎ প্রতি ২,৩১,০০০ পালকের ভেতর ১ জন এই রোগাক্রান্ত। অর্থাৎ আক্রন্তের হার খুবই কম হলেও সম্ভাবনা থেকেই যায়, আ আমাদের মাথায় রাখা উচিত। আক্রান্ত এভিয়ারীতে বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের গমনা গমন নিয়ন্ত্রন করা উচিত।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রায়সঃই যেটা করা হয়, পাখি সুস্থ্য হওয়া পর্যন্ত চিকিৎস করা হয় এরপর চিকিৎসা বন্ধনকরে দেয়া হয়।কতদিন পাখিকে চিকিৎসা করাতে হবে তা নির্ভর করে প্রাথমিক সংক্রমনের তিব্রতা এর ওপর এবং চিকিৎসাতে পাখির রেস্পন্স রেট কেমন তার ওপর। তবে ৭-১৪ দিন চিকিৎসা দেয়াটা কমন।

? যখন যখন দুএকটি পাখি আক্রান্ত হয় তখন অবশ্যই সেই পাখিগুলোকে আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু পুরো এভিয়ারীতে রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে কি করা উচিত? এর উত্তর মূলত; নির্ভর করে কয়টা কবুতর আক্রান্ত হয়েছ। যদিও আরো অনেক দিক, যেমন পাখিরা ব্রীডিং এ আসছে কিনা সেটাও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। যদি অল্প সংখ্যক পাখি ক্লিনিকালি প্রভাবিত হয়ে আক্রান্ত হয় তবে তাদেরকে আলাদা করে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। সাধারনতঃ যতদিন পর্যন্ত পাখির সুস্থ্যতা ফিরে না আসে।

আর অন্যদিকে এটা খুব গুরুত্বপূর্ন যে পাখিদের জন্য ভালো পরিবেশের ব্যবস্থা করা এবং এভিয়ারীতে বিরাজমান স্ট্রেস চিহ্নিত করে সেই স্ট্রেস দুর করার চেষ্টা করা। ক্লামিডিয়া সিটাচি পাখিদের ড্রপিংসে ৭ দিন পর্যন্ত বেচে থাকতে পারে। তাই পুরো এভিয়ারী পরিষ্কার করে ফেলার মাধ্যমে পাখিদের এই জীবানুর সংস্পর্শ এড়াতে সাহায্য করবে। এ সময় একজন ভেট চিকিৎসক দিয়ে অসুস্থ্য পাখিদের পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি সুস্থ্য পাখিদেরও দেখানো উচিত, যাতে করে অন্যান্য রোগ বিশেষকরে প্যারাসিটিজম এর সমস্যা থাকলে সেটা ধরা পড়ে। এছাড়াও একজন ভেটেরিনারিয়ান পাখিদের নিউট্রিশন এবং সাধারন ব্যবস্থাপনার দিকটাও চেক করে তার বিজ্ঞ মতামত দিতে পারবেন।

? যদি উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক পাখি আক্রান্ত হয় এবং দু একদিন পর পর নতুন পাখি আক্রান্ত হতে থাকে তখন সাধারনতঃ ফ্লক ট্রিটমেন্ট করার কথা বলা হয়। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় দেখা যায়, পাখিগুলো যতটা না জীবানু বিস্তারের কারনে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে তার থেকে বেশী অসুস্থ হচ্ছে লম্বা সময় ধরে বিরাজমান কোন স্ট্রেসের মুখে সবগুলো পাখির ইমিউন সিস্টেম এক সাথে ভেঙ্গে পড়ার কারনে। একারনে যেকোন রোগ ব্যাপক আকারে দেখা দিলে এভিয়ারী ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ এর পর্যালোচনা খুব জরুরী। এসব ব্যাপারে যে কোন দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা ঠিক করে নিতে হবে। যদি তা করা না হয় তবে বেস্ট ঔষধের প্রতিও পাখিদের রেস্পন্স হবে খুব কম এবং ঔষধ বন্ধ করার পর রোগ পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়।

ফ্লোক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় সাধারনতঃ এককালীন ৭-১৪ দিনের জন্য ঔষধ দেয়া হয়। বিশেষ প্রয়োজনে কোন কোন লফটে পালস চিকিৎসা পদ্ধতি অর্থাৎ প্রতি ২-৩ সপ্তাহ পর পর ৩ দিনের জন্য ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। এতে করে ক্লামিডিয়া নিয়ন্ত্রনে থাকার পাশাপাশি পাখিরা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জীবানুর সংস্পর্শে থাকতে পারে। পাশাপাশি ক্রমাগত ভালো দেখভালের ফলে সময়ের সাথে সাথে পাখিদের প্রাকৃতিক ইমিউনিটি গড়ে ওঠে। অধিকাংশ সময় কয়েকবার কোর্স করাবার পর আর চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না, ঔষধ বন্ধ করে দেয়া হয়, এবং পাখিরা সুস্থ্য থাকে৷

Please follow and like us:

About admin

Check Also

হাঁসের রোগ সমূহ

হাঁসের রোগ সমূহ এবং টিকার সিডিউল

হাঁসের রোগ সমূহ; ১।ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস #এটি মারাত্মক  সংক্রামক রোগ যা picorna virus দিয়ে হয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »