Breaking News
হিট ডিটেকশন কাহিনী
হিট ডিটেকশন কাহিনী

“হিট ডিটেকশন” কাহিনীঃ

“হিট ডিটেকশন” কাহিনীঃ

আপনার গাভী বা বকনা হীটে আসল কিনা এটা বুঝতে পারাটা অত্যন্ত জরুরী একটা দক্ষতা- বিশেষকরে ডেইরী খামারীদের জন্য।

সকল রথী-মহারথীই একথা এক বাক্যে স্বীকার করেন যে- যদি একটি গরু দুধ কিছু কমও দেয়, কিন্তু প্রতিবছর বাচ্চা দেয় তবে আপনি কখনোই লসে পড়বেন না। তো গাভির ১২/১৪/১৫ মাসের মাঝে বাচ্চা দিতে হলে- সময়মত সিমেন দিতে হবে।

আর সিমেন দিবেন কিভাবে যদি হীটই বুঝতে না পারেন???

হীটের লক্ষণসমূহঃ

গরু আমরা দুইভাবে পালতে পারিঃ-
১. দিনরাত শেডে বেঁধে রেখে।
২. সারাদিন বেঁড়া দেয়া উন্মুক্ত স্থানে ও রাতে শেডে বেঁধে রেখে।

হীটের লক্ষণসমূহ এই উন্মুক্ত পালন ও ২৪ ঘন্টা বেঁধে রেখে পালনের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

হীটের লক্ষণগুলোকে দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ-

একঃ- প্রধান লক্ষণ (primary sign):-

হীটের প্রধান লক্ষণ একটিই- আর তা হল “স্ট্যান্ডিং হীট”।

গাভী উন্মুক্ত বেড়া দেয়া স্থানে ছেড়ে রাখলে দেখবেন মাঝে মাঝে একটি আরেকটির উপর উঠে যায়।

তখন যার উপরে উঠল সে দৌড়ে সরে যায়।

কিন্তু যদি সরে না গিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে থাকে- অর্থাৎ উপরে ওঠা গাভীটিকে উপরেই থাকতে দেয় তবে বুঝে নিতে হবে নিচের স্থির হয়ে থাকা গাভিটি হীটে এসেছে।

এটিই ‘স্ট্যান্ডিং হীট’। এটাই গাভীর হীটে আসার প্রধান ও শিওর লক্ষণ।

কিন্তু ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখা গাভীর জন্য এটি বোঝার রাস্তা নেই।

দুইঃ- সাধারণ লক্ষণ (secondary sign):-

১। অন্য গরুর উপর উঠে যাওয়াঃ

যে গরুটি অন্য গরুর উপর উঠল- তারও হীটে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তাকেও খেয়ালে রাখতে হবে।

অন্য আরেকটি গরু তার উপরে উঠলে সে যদি না সরে দাঁড়িয়েই থাকে (স্ট্যান্ডিং হীট)- তবে সে শিওর হীটে এসেছে।
বেঁধে রাখা গাভীর ক্ষেত্রে এ পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়।

২। মিউকাস বের হওয়াঃ

গাভী হীটে আসলে ডিমের সাদা অংশের মত আঠালো, স্বচ্ছ, লম্বা মিউকাস বের হয়।

তবে অনেকসময় গাভী এই মিউকাস ছাড়ে না। কেবলমাত্র পায়ুপথে হাত ঢুকিয়ে ম্যাসাজ করলে (Rectal palpation) মিউকাস ছাড়ে।

এটিই চোরা হীট। নতুন খামারীর পক্ষে ২৪ ঘন্টা বেঁধে রাখা খামারে চোরা হীট তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পরে না।

ফলে কোন রকম রোগবালাই, অক্ষমতা না থাকলেও হীট ডিটেক্ট করতে করতে অনেক দেরি হয়ে যায়।

আবার সিমেন দিলে যদি সেটি মিস হয় তবেও চোরা হীটের কারনে সেটি বহুদিন ধরা পড়ে না। তখন শুধু লস আর লস।

৩। যোনীমুখ ফুলে যাওয়া ও লাল হওয়াঃ

হীটে আসলে যোনীমুখে ফোলাফোলা ভাব আসে এবং যোনীমুখটি গাঢ় গোলাপি থেকে লালচে রংয়ের হয়ে ওঠে।

সাধারণ অবস্থায় যোনীমুখ থাকে শুকনা ও সাদাটে গোলাপি রংয়ের।

কিন্তু আপনি যদি এই ফোলাভাব ও রংয়ের পার্থক্য বুঝতে চান তবে হীট না থাকার সময় যোনীমুখের চেহারাটা আপনার মুখস্ত থাকতে হবে।

অনেক গাভীর যোনীমুখ এমনিতেই ফোলাফোলা থাকে- তাই এটি আরও ফুলে উঠল কিনা তা বোঝা কঠিন।

৪। ডাকাডাকি ও চঞ্চলতাঃ-

হীটে আসলে গরু সাধারণত ডাকাডাকি করে- আবার নাও করতে পারে।

কখনো কখনো হীটে না আসলেও ডাকতে পারে। তাই এটি নির্ভরযোগ্য লক্ষণ নয়।

তবে ডাকাডাকি করলে হীটের অন্যান্য লক্ষণগুলো খুজতে হবে।

দিনে ছেড়ে পালা গরু হীটে আসলে বসে থেকে জাবর না কেটে হাটাহাটি করবে এবং সতর্ক থাকবে।

৫। থুতনি দিয়ে পিঠ ঘষাঃ-

গাভী একটি আরেকটির উপর লাফানোর আগে অনেকসময় থুতনি পিঠের উপর রেখে পরীক্ষা করে দেখে।

এরকম দেখলে উভয় গাভীতেই হীটের অন্যান্য লক্ষণগুলো খুজে দেখতে হবে।

৬। গন্ধ শুকা (হীটে আসা গাভীর নিঃসৃত ফেরোমনের গন্ধের কারণে), পিঠে ঘষার দাগ, কান নাড়াচাড়া, অল্প অল্প করে প্রস্রাব করা, দুধ কমে যাওয়া, খাদ্য কম খাওয়া ইত্যাদি তেমন সুনির্দিষ্ট লক্ষণ নয়।

তবে চোখে পড়লে অন্যান্য সুনির্দিষ্ট লক্ষণ খুঁজতে হবে।

আমাদের দেশে বেশিরভাগ খামারই ২৪ ঘন্টা বেঁধে রাখা খামার।

তাই এখানে গাভীগুলো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলেও মেলামেশার সু্যোগ একেবারেই নাই।

তাই বিশেষ করে নতুন খামারীদের পক্ষে শুধুমাত্র মিউকাস ও ডাকাডাকি দেখে হীট বুঝে নেয়া অত্যন্ত কঠিন আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর কপালে চোরা হীটের গাভী পড়লে তো দফা ঠান্ডা!!!

তাই ভাই, যদি জায়গা থাকে তবে বেড়াযুক্ত খোলা জায়গায় দিনের বেলা গরু ছেড়ে পালুন আর রাতে শেডে বেঁধে রাখুন।

তাতে অনেক সুবিধাঃ-

ক) হীট ডিটেক্ট খুব সহজে হয়ে যায়। ফলে বছর বছর বাচ্চা পাবেন।
খ) গরু হাটাচলা করাতে তার রোগবালাই, পায়ের সমস্যা অনেক কমে যায়।
গ) গরুর আয়ু ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়ে।

কিন্তু গরু বেড়ার ভেতর রেখে পালতে চাইলে কয়েকটি শর্ত খুব জরুরিঃ-

১. ডিসবাডিংঃ-

গরু শিং দিয়ে একে অন্যকে আহত করতে পারে।

তাই বাছুরের বয়স দুই মাস হলেই এর শিং গজানোর জায়গাটি অবশ করে পুড়িয়ে দিতে হবে।

। ডিসবাডিং করা বাছুরের শিং গজাবে না- তাই ভবিষ্যতে ছেড়ে পালা সহজ হবে।

তবে বড় গরুর শিং কাটা (ডিহর্নিং) না করাই ভাল। এটি বেদনাদায়ক।

২. খোলা জায়গাটি বালিযুক্ত নরম মাটির হলে ভাল হয়।

৩. দুপুরের কড়া রোদে বিশ্রাম নেয়ার জন্য গাছ বা খোলা চালার ব্যবস্থা করতে হবে।

৪. বিভিন্ন গাভীর দানাখাদ্যের চাহিদা যেহেতু ভিন্ন- তাই এ ব্যপারটি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

স্থায়ী খাদ্যপাত্র তৈরি করে- দানাখাদ্য খাওয়ার সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। ঘাস, খড়, সাইলেজ একসাথে খেলে সমস্যা নেই।

হীট খোজার সময়ঃ

খুব সকাল ও সন্ধ্যার শুরুতে হীট খুজতে হবে।

সারাদিনও খেয়াল রাখতে হবে। গাভী বাচ্চা দেয়ার পর ১ম ও ২য় হীটটিতে সিমেন দেয়া যাবে না।

কিন্তু তারিখগুলো লিখে রাখলে- ২য় হীটের ১৮-২৪ দিনের মধে ৩য় হীটের সন্ধান করতে হবে।

তাই রেকর্ড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, ১ম-২য়-৩য় ব্যাপার না- মূল কথা হল ৬০ দিন।

অনেকের গাভীতে ৪৫ দিনেই ২ টি হীট চলে আসে- তাই ৩য় হীটের কথা বলছি।
“বাচ্চা হওয়ার আগের ৬০ দিন দুধ বন্ধ – পরের ৬০ দিন গর্ভ নয়”- এটি মানলে দীর্ঘ মেয়াদে ভাল।

সিমেন দেয়ার সময়ঃ-

গরু বাচ্চা দেয়ার কমপক্ষে ৬০ দিন অতিক্রম করলে হীট ডিটেক্ট করার ১২ ঘন্টা পর সিমেন দেয়া সর্বোত্তম।

অর্থাৎ সকালে হীট আসলে সন্ধ্যায় আর সন্ধ্যায় আসলে পরদিন সকালে সিমেন দিতে হবে।

অতএব, হীট নিয়ে যারা প্রবল সমস্যায় আছেন তারা গরু দিনে ছেড়ে পালার চেষ্টা করুন- সমাধান সহজ হবে।

নতুনদের জন্য ২৪ ঘন্টা বেঁধে রাখা শেডে গাভী পালনের চিন্তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।

কারণ “স্ট্যান্ডিং হীট”ই একমাত্র প্রধান লক্ষণ – যেটি আপনি পাচ্ছেন না।

গরু সামাজিক প্রাণী। এদের আবেগ  প্রবল।

এদের শেখার ক্ষমতা আছে। এদের নিজস্ব ভাষা আছে।

এদের পরস্পরের প্রতি মায়া-মহব্বত আছে। এরা নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয়।

এদের স্বজাতি বিপদে পড়লে সাহস করে এগিয়ে আসে।

বন্দী অবস্থায় কয়েদী স্টাইলে পাললে এদের সমাজব্যবস্হা গড়ে উঠে না।

ফলে জেনেটিক মেরিটের কাছাকাছি উৎপাদন পাবেন না, এদের আয়ু আর আপনার আয়- দুটোই কমে যাবে।

বাচ্চা কম পাবেন। Exercise না করার কারনে এদের পায়ে সমস্যা বাড়বে- রোগ বালাই বাড়বে।

তাহলে এবার ভাবুন তো, কোনটা করা উচিৎ????

কালেক্টেড

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »