*** হাঁস পালন পদ্ধতি ****
দেশে প্রায় ৫ কোটি হাস আছে যা ২০% ডিমের চাহিদা পূরণ করে।
শীতকালেই বেশির ভাগ প্রডাকশন হয় বিশেষ কিছু অঞ্চলে।
হাঁসের জাত সমুহ—
পিকিং /ব্রয়লার হাঁস/ বেইজিং( anas platynch0s)
উৎপত্তিঃ এ জাতের হাঁসের উৎপত্তি চীন দেশে।
বৈশিষ্ট্যঃ—১. পালকের রং সাদা। ২. ডিমের রং সাদা। ৩. দেহের আকার বড়।
উপযোগীতাঃ ইহা মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক একটি হাঁসা প্রায় ৪.৫ কেজি এবং একটি হাঁসী ৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বৎসরে গড়ে প্রায় ১৫০ টি ডিম দেয়।
মাসকোভি/চীনা হাঁস (cairina moschata)
উৎপত্তিঃ এ জাতের হাঁসের আদি জন্মস্হান দক্ষিণ আমেরিকা।
বৈশিষ্ট্যঃ–১. পালকের রং সাদা ও কলো। ২. মাথায় লাল ঝুটি।
৩. ডিমের রং সাদা। ৪. দেহের আকার বড়।
উপযোগীতাঃ এ জাতের হাঁস মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক একটি হাঁসা প্রায় ৫ কেজি এবং একটি হাঁসী ৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বৎসরে গড়ে প্রায় ১২০ টি ডিম দেয়।
খাকী ক্যাম্পবেলঃ
উৎপত্তিঃইহার উৎপত্তিস্হল ইংল্যান্ড।
বৈশিষ্ট্যঃ—১. পালকের রং খাকী বিধায় খাকী ক্যাম্পবেল নামকরণ করা হয়েছে। ২. ডিমের রং সাদা। ৩. ঠোঁট নীলাভ/কালো।
উপযোগীতাঃ ডিম-এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হয়। বার্ষিক ডিম উৎপাদন গড়ে ২৫০- ৩০০ টি। বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন ২- ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
জিনডিংঃ
উৎপত্তিঃ ইহার উৎপত্তিস্হল চীন।
বৈশিষ্ট্যঃ—১. হাঁসীর পালকের রং খাকীর মাঝে কালো ফোটা এবং হাঁসার কালো ও সাদা মিশ্রিত। ২. ডিমের রং নীলাভ। ৩. ঠোঁট নীলাভ/হলদে।
উপযোগীতাঃ ডিম এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হয়। বার্ষিক ডিম উৎপাদন গড়ে ২৭০-৩২৫ টি। বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন ২- ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
রাজহাঁস (ansar ansar) ঃ
প্রাপ্ত বয়সের ওজন ৬কেজি পর্যন্ত হয়।মাংসের দাম কেজি ৫০০টাকা করে পড়ে।
হাঁস এর বাসস্হানের জন্য স্হান নির্বাচনঃ
১. উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে যেন বন্যার সময় পানিতে ডুবে না যায়।
২. বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকতে হবে।
৩. ভালো যোগাযোগ ব্যবস্হা থাকতে হবে।
৪. মাংস ও ডিম বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
৫. পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্হা থাকতে হবে।
৬. পানি নিস্কাশনের ব্যবস্হা থাকতে হবে।
৭. চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
৮. খোলামেলা ও নিরিবিলি পরিবেশ হতে হবে।
ঘরের প্রকৃতিঃ
হাঁস পালনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে এদের ঘর বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- হ্যাচারি ঘর, বাচ্চার ঘর, গ্রোয়ার ঘর, ডিমপাড়া ঘর। যেমন- একচালা বা শেড টাইপ, দোচালা বা গ্যাবল টাইপ (‘অ ’ টাইপ), কম্বিনেশন টাইপ ও মনিটর বা সেমিমনিটর টাইপ। হাঁস পিছু কতটা জায়গা দিতে হবে– বয়স্ক হাঁস পিছু ২ থেকে ৩ ব: ফু: জায়গা দিতে হবে।
ঘরের পরিচর্যা ও জীবাণুমুক্ত করণ পদ্ধতিঃ
ঘরের লিটার পরিস্কার হতে হবে এবং জীবাণুনাশক, যেমন- চুন দিয়ে তা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ঘরের দেয়াল-মেঝে ভালমত পানি দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। তবে কস্টিক সোডা দিয়ে পরিষ্কার করলে ভালো হয় । ফিউমিগেশন শুরু করার পূর্বে দরজা, জানালা, ভেন্টিলেটর প্রভৃতি বন্ধ করতে হবে যাতে ঘরে কোনো বাতাস না ঢুকে। ঘরের প্রতি ২.৮ ঘন মিটার জায়গার জন্য ৬ গ্রাম পটাসিয়াম পার-ম্যাঙ্গানেট ও ১২০ মি.লি. ফরমালিন (৪০%) দিয়ে ফিউমিগেট করতে হবে।
বাচ্চা পালন —–
বাচ্চা রাখার ঘর বা শেড অবশ্যই উঁচু জায়গায় (সমতল ভূমি হতে ১-১.৫ ফুট উচুঁ) নির্মাণ করতে হবে যেন ঘরের ভিটি কোন অবস্হায় ভিজা বা স্যাঁতস্যাঁতে না হয়। ঘরের মেঝে পাকা হলে ভাল হয়। ২-৩ ইঞ্চি পুরু করে ধানের শুকনো তুষ বা শুকনো কাঠের গুঁড়া মেঝের উপর বিছিয়ে দিতে হবে। মেঝে নিচ থেকে ভিজে উঠতে পারে সেজন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২/৩ বার লিটার উল্টিয়ে চুন মিশাতে হবে। এতে লিটার শুকনো থাকবে, জীবাণু ধংস হবে এবং দুর্গন্ধ দুর হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনো অবস্হাতেই বৃষ্টির পানি ঘরের মেঝের উপর না পরে। এবং যেন পানির পাত্র হতে খাবার পানি ঘরের মেঝের উপর না পরে। কখনও লিটার ভিজে গেলে উহা ফেলে দিতে হবে এবং সাথে সাথে শুকনো লিটার দিতে হবে।
বাচ্চা সংগ্রহের পর এদেরকে প্রথমে ভিটামিন মিশ্রিত পানি খেতে দিতে হবে।বাচ্চাদের ২-৩ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রারম্ভিক খাদ্য, ৪-১৯ সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ন্ত এবং ২০ সপ্তাহের পর লেয়ার খাদ্য দিতে হয়। প্রতিটি বাচ্চা হাঁসকে ১ম সপ্তাহে ১০-২০ গ্রাম, ২য় সপ্তাহে ২১-৩১ গ্রাম, ৩য় সপ্তাহে ৩১-৪১ গ্রাম, ৪র্থ সপ্তাহে ৪১-৫৫ গ্রাম ও ৫ম সপ্তাহে ৫৫-৬৫ গ্রাম খাদ্য দিতে হয়। শুকনো খাবার সামান্য পানিতে ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩/৪ বার বাচ্চাকে খাবার দিতে হবে এবং প্রতি বাচ্চাকে ৫-১০ গ্রাম করে সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ছোট বাচ্চার বেলায় খাবার দেবার সময় অবশ্যই পানির পাত্রে আগে পানি দিয়ে রাখতে হবে অর্থাৎ প্রথমে পানি দিয়ে পরে খাবার দিতে হবে নতুবা শুকনো খাবার বাচ্চার গলায় আটকে বাচ্চা মারা যেতে পারে। এক দিন বয়সের বাচ্চার জন্য ব্রুডিং-এর প্রয়োজন রয়েছে। হাঁসের বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা হচ্ছে- ১ম সপ্তাহে ৩২ সে., ২য় সপ্তাহে ২৯ সে., ৩য় সপ্তাহে ২৬ সে., ৪র্থ সপ্তাহে ২৩ সে., ও ৫ম সপ্তাহে ২১ সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন।
বাচ্চা ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে ব্রুডারের তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে। গরমকালে ৪ সপ্তাহ এবং শীতকালে ৫-৬ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁসের বাচ্চাকে তাপ দিতে হয়। তবে অতি খরা অথবা অতি শীতে এর কিছুটা তারতম্য হতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামের অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ নেই, থাকলেও পর্যাপ্ত নয়, সে সব এলাকার ক্ষুদ্র খামারী হ্যারিকেন, হ্যাজাকলাইট, কেরোসিন অথবা মাটির চুলা ব্যবহার করে হাঁস-মুরগির বাচ্চাগুলোকে তাপ প্রদানের ব্যবস্হা করতে পারেন।
হাঁস এর খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্হাপনাঃ
হাঁসের খাদ্যঃ
হাঁস প্রধানত দুই রকমের খাদ্য খায়। যেমন- প্রাকৃতিক খাদ্য ও সম্পূরক খাদ্য। পারিবারিকভাবে পালিত হাঁস জলাশয়ে এবং ক্ষেতখামারে চরে জীবন ধারন করতে পারে। কিন্তু উন্নত জাতের হাঁস পালনের ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। সে ক্ষেত্রে সম্পুরক খাদ্য কমপক্ষে ৩ বার দিতে হবে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক খাবার যেমন – শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, কেঁচো, শাপলা, ক্ষুদেপানা, ছোট মাছ ও নানা ধরনের কীটপতঙ্গ মুক্ত অবস্হায় জলাশয়ে পাওয়া গেলে শুধু সকাল ও বিকালে পরিমিত পরিমান দানাদার খাবার সরবরাহ করলেই চলবে। হাঁসের খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি সরবরাহ করতে হয়। হাঁসকে শুস্ক খাদ্য দেয়া ঠিক নয়। এদের সবসময় ভেজা ও গুঁড়ো খাদ্য দেয়া উচিত। প্রথমে ৮ সপ্তাহ হাঁসকে ইচ্ছামত খেতে দেয়া উচিত পরবর্তীতে দিনে দু’বার খেতে দিলেই চলে ।
সুষম খাদ্য তৈরিঃ
১ সপ্তাহ থেকে ৩ সপ্তাহ বয়সের হাঁসদের খাবারে থাকবে আমিষ- ১৯.৫%, স্নেহপদার্থ- ৪.৫%, তাপ বা শক্তির জন্য আঁশ ওলা খাবার দিতে হবে- ৪.৮%, ক্যালসিয়াম- ১.৭%, ফসপরাস- ০.৮৬% । তিন সপ্তাহের থেকে বড় হাঁসদের খাবারে আমিষ শতকরা ১৭ ভাগ হলে চলবে। তিল এবং বাদাম ছাড়া অন্য কোন খোসা জাতীয় খাবার হাঁসকে না দেয়াই ভাল।সুষম খাদ্য তৈরির পূর্বে প্রতিটি হাঁস পালনকারীকে খোয়াল রাখতে হবে যেন সুষম খাদ্যের প্রতিটি উপাদানই সহজলভ্য, সস্তা, টাটকা এবং পুষ্টিমান সঠিকভাবে বিদ্যমান আছে। কোনো অবস্হাতেই বাসি পঁচা বা নিম্নমানের ফাংগাসযুক্ত খাবার হাঁসকে দেয়া যাবে না। খাদ্যের প্রকৃতি, মিশ্রণ পদ্ধতি, হাঁসের জাত, ওজন, ডিম উৎপাদনের হার এবং সর্বোপরি শামুক, ঝিনুক, ধান, সবুজ শেওলা বা শৈবাল এবং শাকসবজীর প্রাপ্যতা অনুসারে খাদ্য খাওয়ানোর কর্মসূচি তৈরি করতে হবে।
নিচে হাঁসের সুষম খাদ্য তৈরির খাদ্য উপাদান উল্লেখ করা হলো :
খাদ্যউপাদান—- বাচ্চার খাদ্য(গ্রাম)– পূর্ণবয়স্ক হাসের খাদ্য (গ্রাম)
ভাঙা গম———- ৪৫০—————– ৪৫০
চালের কুঁড়া——-২৭০——————৩০০
তিলের খৈল——-১৪০——————১২০
শুঁটকী মাছের গুঁড়া-১২০—————–১০০
ঝিনুক চূণ———১৫——————–২৫
লবণ—————-৫———————-৫
_______________________________________
মোট = ১০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
ভিটামিন মিনারেল বাচ্চার জন্য ১.৫ গ্রাম ও বয়স্ক হাসের জন্য ২.০ গ্রাম প্রতি কেজি খাবারে সংযুক্ত করা যেতে পারে।
খাবার পাত্র ও পানির পাত্রঃ
বয়স অনুযায়ী হাঁসের জন্য খাবার পাত্র ও পানির পাত্রের পরিমাণ-
বয়স —————— জায়গার পরিমাণ —– খাবার পাত্র ——- পানির পাত্র
১ দিন -৩ সপ্তাহ——–২.০ বর্গ ফুট———–২.৫ সেমি———-২.৫ সেমি
৪ সপ্তাহ – ৮ সপ্তাহ—–৩.০ —————— ৩.০ —————-৪.০
৮ সপ্তাহ – ১৬ সপ্তাহ—-৪.০——————-৪.০ —————-৫.০
খামার ব্যবস্হাপনা ও দৈনিক কার্যক্রম সূচিঃ
যে কোনো ধরনের খামারই হোক না কেনো তার ব্যবস্হাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, প্রকৃতপক্ষে খামার ব্যবস্হাপনার উপরই খামারের লাভ লোকসান এমনকি খামারের ভবিষ্যত সসপ্রসারণ নির্ভর করে ।
সকাল ৭ – ৯ টাঃ
১. জীবাণুমুক্ত অবস্হায় শেডে প্রবেশ করতে হবে এবং হাঁস-মুরগির সার্বিক অবস্হা ও আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
২. মৃত বাচ্চা/বাড়ন- বাচ্চা/মুরগি থাকলে তৎক্ষণাৎ অপসারণ করতে হবে।
৩. ডিম পাড়া বাসার দরজা খুলে দিতে হবে।
৪. পানির পাত্র/ খাবার পাত্র পরিস্কার করতে হবে।
৫. পাত্রে খাবার ও পানি না থাকলে তা পরিস্কার করে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
৬. লিটারের অবস্হা পরীক্ষা করতে হবে ও প্রয়োজন হলে পরিচর্যা করতে হবে।
৭. খাবার দেবার পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
সকাল ১১- ১২ টাঃ
১. খাদ্য নাড়াচাড়া করে দিতে হবে।
২. পানি গরম ও ময়লা হলে পরিবর্তন করে পরিস্কার ও ঠান্ডা পানি দিতে হবে।
৩. ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
বিকাল ৪ – ৫ টাঃ
১. পাত্রে খাদ্য পানি না থাকলে তা সরবরাহ করতে হবে।
২. ডিম সংগ্রহ করতে হবে।
৩. ডিম পাড়ার বাসা/বাক্সের দরজা বন্ধ করতে হবে।
৪. আচরণ পরীক্ষা করতে হবে।
সাপ্তাহিক কাজঃ
১. খাদ্য তৈরি করতে হবে।
২. বাচ্চা/ডেকী মুরগী/মুরগীর নমুনা ওজন গ্রহণ করতে হবে।
৩. ঘর পরিস্কার করতে হবে।
৪. ঘরের বাতি সপ্তাহে ২ দিন পরিস্কার করতে হবে। খাদ্য ও পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে এবং লিটার পরিচর্যা করতে হবে।
রোগ-বালাইঃ
হাঁসের প্লেগ রোগ—
–প্লেগ হাঁসের একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এ রোগকে ডাক ভাইরাস এন্টারাইটিসও বলা হয়। ১৯২৩ সালে বাউডেট নামক জনৈক বিজ্ঞানী নেদারল্যান্ডে হাঁসের মরক হিসেবে রোগটি প্রথম সনাক্ত করেন। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই হাঁসের প্লেগ রোগ দেখা যায়। প্রাকৃতিক নিয়মেই সব বয়সী গৃহপালিত ও বন্যহাঁস, রাজহংসী এই ভাইরাসের প্রতি সংবেদনশীল। আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে, দূষিত খাদ্যদ্রব্য ও পানির সাহায্যে সুস্থ পাখিতে এ রোগের ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আমাদের দেশে হাট-বাজারে রুগ্ন হাঁস কেনা-বেচার মাধ্যমে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এ রোগটি ছড়ায়। আবার কীট-পতঙ্গের মাধ্যমেও এ রোগের জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। তবে ডিমের মাধ্যমে রোগের সংক্রমই হয় না।
প্লেগ রোগের লক্ষণঃ
আক্রান্ত হাঁসের ক্ষুধা কমে যায় কিন্তু বার বার পানি পান করে। চোখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ নিঃসৃত হয়। আলো দেখলে ভয় পায়। চোখের ঝিল্লির প্রদাহের কারণে চোখ বন্ধ করে রাখে। ডিম পাড়া হাঁসের ডিম দেয়া কমে যায়। মাথা নিচু করে রাখে। চলাফেরায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। আক্রান্ত পাখিতে ডায়রিয়া হয়। পাতলা পায়খানা লেজের আশে পাশে লেগে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হাঁসের হঠাৎ করে মৃত্যু হয়। এ রোগে ভাল সাস্থ্যের অধিকারী বয়স্ক হাঁসেরও মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০০% হয়ে থাকে।
চিকিৎসা হিসেবে রোগাক্রান্ত হাঁসের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যাকটিরিয়ার সংক্রামণ থেকে রক্ষা করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিক যেমন- এনরোফ্লক্সাসিন, নরফ্লক্সাসিন, ইত্যাদির যেকোনো একটি দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। ভাইরাসজনিত রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই রোগ যাতে না হয় সে জন্য হাঁসকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
ডাক কলেরাঃ
কারন—- ব্যক্টেরিয়া জনিত।
লক্ষনঃ-তরল পায়খানা হবে। ঘনঘন পায়খানা হবে। মৃত্যু হার ৮০-৯০ ভাগ।
প্রতিরোধ— ডাক কলেরার ভ্যাকসিন দিতে হবে।
টীকা চক্রঃ
ডাক প্লেগ— প্রথম ডোজ ২১-২৫ দিন বয়সে। ২য় ডোজ প্রথম ডোজ দেয়ার ১৫ দিন পরে।পরবরতিতে প্রতি ৫ মাস অন্তর নিয়মিত দিতে হবে।
ডাক কলেরা—-প্রথম ডোজ ৪৫ দিন বয়সে। ২য় ডোজ প্রথম ডোজ দেয়ার ১৫ দিন পর। পরবরতিতে প্রতি ৬ মাস অন্তর টীকা দিতে হবে।
বাচ্চা কোথায় পাবেন ?
সততা হ্যাচারী ও হাঁসের খামার
প্রধান অফিস – বালালী রোড, কোঠূরীকোনা, মদন-২৪৯০, নেত্রকোনা।
Cell : 01967-109305/01966-732340
কালেক্টেড।
###উন্নত জাতের একটি হাঁস বছরে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে। এ হাঁসের নাম হলো খাকী ক্যাম্ববেল ও ইন্ডিয়ান রানার। নদীর তীর, পুকুর পাড় ও আর্দ্র ভূমিতে হাঁস পালন খুবই লাভজনক।হাস বনো হাস ম্যালারড থেকে এসেছে।জল ছাড়া হাস পালা যায় কিন্তু সে হাসের বাচ্চা হবেনা কারণ হাস পানিতে সেক্স করে।
উন্নত হাস সাড়ে ৪ মাসে আর দেশি হাস ৬ মাসে ডিম দেয়।মেশিন দিয়ে ফোটানো যায় কিন্তু ফোটার হার ৩০% হয়।
হাস প্রায় ২.৫ বছর ডিম পাড়ে।
দেশি হাস দিয়ে ডিম ফোটানো যায়না তাই মুরগি দিয়ে ডিম ফোটানো হয়.
হাসে পানিতে নামলেও ভিজেনা কারন তার পালক এবং চামড়ার নিচের চর্বি।
হাস উভয়ভোজী মানে আমিষ ও শর্করা দুটি ই খায়।মুরগির খাবারের মত কিন্তু ডাইরেক মুরগির খাবার ভাল নয়।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ,নওগা,সোনাগাজি,ফেনী,গোপালগঞ্জ,সুনামগঞ্জ,রাংগামাটি,চুয়াডাংগা,মানিকগঞ্জ,পটুয়াখালী,জামালপুর,নবাবগঞ্জ , বাগেরহাট এবং খুলনার দোলতপুর থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করা যাবে। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়াস্থ কেন্দ্রীয় হাঁসের খামার থেকেও বাচ্চা নেয়া যায়।
হাসের জাত পরিচিতি;
জাত উদ্দেশ্য বছরে ডিমের সংখ্যা ওজন
খাকি ক্যাম্পেল ডিম ২৫০-৩০০ ২.৫ কেজি
ইন্ডিয়ান রানার ডিম ২০০-২৫০ ২.৫কেজি
বেজিং বা পিকিং মাংস +ডিম ১৫০ ৫কেজি
জিংন্ডিং ডিম ২৭০-৩২৫ ২- ২.৫কেজি
মাস্কোভিস মাংস ১২০ ৪-৫ কেজি
দেশি ডিম+মাংস ৮০-১০০ ২ -২.৫কেজি
পালন পদ্ধতি;
ব্রডিংঃ
গরম কালে ৫ সপ্তাহ শীতকালে ৪ সপ্তাহ তাপ দিতে হয়।
বাচ্চা তারজালের উপর রাখা উচিত এতে রোগ ব্যাধি কম হবে।
তাপমাত্রা
১ম সপ্তাহ ৯৫ডিগ্রি ফারেনহাইট
২য় ৯০
৩য় ৮৫
৪র্থ ৮০
৫ম ৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট
২০-২৫ দিনে হাসকে মেঝেতে ছাড়া যায়।লিটার ৪-৫ ইঞ্চি পুরু দিতে হবে।
ঘেরার মধ্যে হাস পালন করলে হাস প্রতি ৩ বরগফুট আর যদি এদের চড়াবার ব্যবস্থা থাকে তবে রাতে আস্তানার জন্য ২ বরগফুট জায়গা লাগবে।
বয়স মেঝেতে জায়গা
০-১ সপ্তাহ .২৫ বরগ ফুট
১-২ .৩৩
২-৩ .৫
৩-৭ ১.৫
১।ছাড়া অবস্থায়;
মুক্ত এবং প্রাকৃতিক জলাশয়ে দিনের বেলায় ছাড়া অবস্থায় থাকবে এবং সেখানে খাবে,রাতের বেলায় ঘরে আসে।জলাশয়ে যদি খাবার কম পায় তাহলে সকালে এবং সন্ধায় প্রতি হাসের জন্য ৬০-৮০ গ্রাম খাবার দিতে হয় ,পরিমাণ নিরভর করে কতটুকু খাবার কম পেল তার উপর।
এভাবে ১ একর জমিতে ৮০০-১০০০ হাস পালা যায় এবং লাভ বেশি হয়।
২। আধা আবদ্ধ পদ্ধতি;
জলাশয়ের ধারে বা বাড়ির আংগিনায় হাসের বাসস্থান তৈরি করতে হয়,হাস জলাশয় এবং আংগিনায় ২ জায়গায় থাকবে।প্রতিটি হাসের জন্য ২-৩ বরগফুট এবং রানের (বিচরণ স্থান) জন্য ১০-১২ বরগ ফুট জায়গা লাগবে,আর উচ্চতা হবে ৭-৮ ফুট।
জলাশয়ে খাবার ভাল থাকলে ১৪০ গ্রামের কম খাবার দিলেও চলবে।
জলের জন্য নালা করলে ঘরের সমান করে ১৫ ইঞ্চি চওড়া আর ৯ ইঞ্চি গভীর করতে হবে।
৩।আবদ্ধ পদ্ধতি;
জলাশয় না থাকলে দিন রাত্রি ঘরে রেখেও পালা যায়,প্রতি হাসের জন্য জায়গা লাগবে ৩-৪ ফুট এবং নিয়মিত সুষম খাদ্য দিতে হবে।অরধ আবদ্ধ অবস্থার মত ঘর তৈরি করতে হবে।ঘরটাকে আলো আধারি করা যাবেনা ,ঘর অন্ধকার করে রাখতে পারেন,হাস যাতে মাথা উচু করে রাখতে পারে।তবে ইচ্ছে করলে জলের ব্যবস্থা করতে পারেন যা ১০টি হাসের জন্য গভীর ৯ ইঞ্চি,লম্বা ৬ আর প্রস্থ ৫ ইঞ্চি
প্রতিদিন প্রতি হাসের জন্য ১৬০ গ্রাম খাদ্য দিতে হবে।
নিম্নে ৫০০ হাঁস ও ৩০টি হাঁস পালনের হিসেব দেয়া হলো।
ডিম পাড়া ৫০০ হাঁস পালার যাবতীয় তথ্য :
প্রতি হাঁসের জন্য ২ বর্গফুট হিসেবে ১০০০ বর্গফুটের ঘর তৈরি করতে হবে। পাকা হলে প্রতি হাঁসের জন্য কমপক্ষে ২ বর্গফুট হিসেবে ১০০০ বর্গফুট। কাঁচা হলে প্রতি হাঁসের জন্য ১০ বর্গফুট হিসেবে ৫০০০ বর্গফুট। ওয়াটার চেনেলের গভীরতা ৯, প্রস্থ ২০ ইঞ্চি রাখুন। ৬ মাস পর্যন্ত প্রতিপালন করতে প্রতিটি হাঁসের জন্য ১৫ কেজি খাবার দরকার হবে। ৬ মাস পর প্রতি হাঁসের জন্য দৈনিক ১৬০ গ্রাম (আড়াই ছটাকের কিছু উপরে) হিসেবে খাবার লাগবে।
আবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি : ক. ফিডার বা ফিড হপার টিন বা প্লাস্টিকের বা কাঠের তৈরি এবং উভয় দিক দিয়ে খেতে পারে এরূপ ৪ ফুট লম্বা ১০টি ফিডার;
খ. লিটার: ধান,ভুট্রা, বা গমের খড়, শুকনা পাতা এবং ঘাস,ধানের তুষ ব্যবহার করা যায়, তবে খড় ব্যবহার করাই উত্তম;
গ. ডিম পাড়ার ঘর: হাঁসির জন্য ডিম পাড়ার ঘর তেমন দরকার হয় না। মূল ঘরের কোনায় বা দেয়ালের সঙ্গে ধানের খড় দিলে এতে হাঁসি ডিম দেবে এবং ওই ডিম পরিষ্কার থাকবে।
ঝুড়ি বা ট্রেতে করে ডিম সংগ্রহ করতে হবে। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত খরচ (জমি ও ঘর বাদে): ১১০০ বাচ্চার দাম প্রতিটি ৩০ টাকা হিসেবে ৩৩ হাজার টাকা। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত ৫৫০ বাচ্চার খাবার খরচ (খাবার ৬ মাস বয়স পর্যন্ত ১৫ কেজি এবং প্রতি কেজি খাবারের মূল্য ৩০ টাকা) ২৪৭,৫০০ টাকা। অন্যান্য খরচ বাবদ ৫,০০০ টাকা। মোট বিনিয়োগ ২ লাখ ৮৫হাজার ৫০০ টাকা
৬ মাস বয়সের পর ডিম ও খাবারের হিসাব (লাভ-লোকসান)
দৈনিক ৫০০ হাঁসির খাদ্য (প্রতিটির জন্য ১৫০ গ্রাম) = ৭৫ কেজি। প্রতি কেজি ৩০ টাকা হারে ২২৫০ টাকা। দৈনিক ডিম উত্পাদন (৭০% উত্পাদন হিসেবে) ৩৫০টি। (১০০ ডিম = ৮০০ টাকা হিসেবে) ২৮০০ টাকা, ১দিনে খাবার খরচ বাদে থাকে (২৮০০-২২৫০) ৫৫০,মাসে থাকে ১৬,৫০০ টাকা,।
ছোট খামার হিসেবে জমির দাম, ব্যবস্থাপনা খরচা ইত্যাদি বিবেচনা না করে শুধু বাচ্চার মূল্য, খরচ ও নিজের শ্রম বিবেচনা করা হয়েছে। বাচ্চা মর্দা এবং মাদী শনাক্ত করা না থাকলে ১১০০ বাচ্চা ক্রয় করতে হবে। অন্যথায় ৫৫০টি বাচ্চা ক্রয় করলেই চলবে। মৃত্যুর হার ৬ মাস বয়স পর্যন্ত ৫% ধরা হয়েছে বলে ৫০০ হাসির জন্য ৫০টি বাচ্চা বেশি ক্রয় করতে হবে। দুই মাস বয়স পর্যন্ত মর্দা বাচ্চা পালন করতে যা খরচ হবে, ওই বয়সে ওই বাচ্চাগুলো বিক্রয় করে খরচের টাকা উঠে যাবে। তাই কেবল ৫৫০টি বাচ্চার খাদ্য খরচ দেখানো হলো।
৩০টি হাঁস পালন
: ক. সর্বদা বদ্ধ অবস্থায় : ঘরের জায়গার পরিমাণ : প্রতি হাঁসের জন্য ৫ বর্গফুট হিসেবে ১৫০ বর্গফুট = ১৫ × ১০ একটি ঘর। দৈনিক খাবার ৫ কেজি = ১৫০ টাকা।
দৈনিক গড় ডিম = ২০টি-২০*১০ঃ২০০ টাকা দৈনিক লাভ ২০০-১৫০ = ৫০টাকা। মাসে লাভ ১৫০০ টাকা।
খ।অর্ধ ছাড়া অবস্থায় : ঘরের জায়গার পরিমাণ ২ বর্গফুট হিসেবে = ৬০ বর্গফুট। ঘরের বাইরে রানের পরিমাণ = পাকা হলে ২-৫ বর্গফুট হিসেবে ৬০ বা ১৫০ বর্গফুট। দৈনিক গড় ডিম উত্পাদন ক২০টি ১০*২০ঃ২০০টাকা। খাবার ৫ কেজি ৩০ টাকা করে ১৫০টাকা,দৈনিক লাভ ২০০-১৫০ = ৫০ টাকা। মাসে লাভ ১৫০০ টাকা।খাবার ১ কেজি কম লাগবে তাতে আরো দিনে ৩০টাকা করে মাসে ৩০*৩০ঃ৯০০টাকা,১৫০০+৯০০ঃ২৪০০টাকা
ছাড়া অবস্থায় : ঘরপ্রতি হাঁসের জন্য দেড় থেকে ২ বর্গফুট হিসেবে = ৪৫ বর্গফুট। দৈনিক গড় ডিম উত্পাদন ১৫টি = ১৫০ টাকা (ডিম উত্পাদন ৫০% প্রতিটি ডিম ১০ টাকা) যদি কোনো খাবার খরচ না লাগে তবে মাসে লাভ ৪৫০০ টাকা। যদি অর্ধেক খাবার সরবরাহ করতে হয় তবে লাভ হবে তার আরধেক। (মাসে অর্ধেক খাবারের পরিমাণ = ৭৫ কেজি*৩০ঃ-২২৫০ টাকা (১ কেজি খাবারের মূল্য ৩০ টাকা) = ৪৫০০-২২৫০ঃ২২৫০ টাকা।
হাঁস ও মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতি : মাছের সঙ্গে হাঁসের চাষ একটি সমন্বিত খামার পদ্ধতি। একে অন্যের সহায়ক। পুকুরে মাছ ও হাঁস পালন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটাতে পারলে সীমিত জায়গায় উত্পাদন বেশি পাওয়া যাবে। এ চাষ পদ্ধতি সবার জানা থাকলে বাংলাদেশের অনেকেই দ্বিগুণ ফসল ফলাতে পারবেন। অল্প জায়গায় মাছ ও হাঁস পালন পদ্ধতি অনেক উন্নত দেশে চালু আছে। তাইওয়ান, হংকং, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশে এর ব্যাপক প্রসার হয়েছে। হাঁসকে পুকুরে জৈবসার উত্পাদনকারী মেশিন বলা যেতে পারে। মাছ চাষের জন্য পুকুরে হাঁস পালন করলে খুব কম খরচে অনবরত জৈবসার ছড়ানো যায়।
হাঁস ও মাছ চাষের প্রধান সুবিধাগুলো হলো : ১. একটি হাঁস প্রতি মাসে ৩-৪ কেজি জৈবসার পুকুরে ছড়িয়ে দিতে পারে। ৩-৪টি হাঁসের জৈব সার থেকে ১ কেজি বাড়তি মাছ উত্পন্ন হতে পারে।
২. হাঁস পুকুরের অবাঞ্ছিত আগাছা খেয়ে মাছ চাষে সাহায্য করে।
৩. শামুক, ব্যাংগাচি, পোকা-মাকড় যা মাছের কোনো কাজে আসে না এমন জিনিস খেয়ে হাঁস ডিম উত্পাদন করে।
৪. পুকুরে মাছ ও হাঁসের চাষ একসঙ্গে করে বছরে প্রতি হেক্টরে ১-১৫ টন (মাছ হাঁস) উত্পাদন বাড়ানো যেতে পারে।
বাসস্থান : হাঁসের ঘর পুকুরের উপর যে কোনো পাশে অথবা পুকুরের পাড়ে নির্মাণ করা যেতে পারে। পুকুরের উপরে নির্মিত ঘরে হাঁসের বিষ্টা ও উচ্ছিষ্ট সরাসরি পানিতে পড়বে এবং মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর পুকুরের পাড়ে হাঁসের ঘর থাকলে ড্রেনের মাধ্যমে হাঁসের ময়লা পুকুরে দেয়া সহজ হবে।
লাভটা নিরভর করে কে কতটুকু কম খাবার দিয়ে বাহিরের খাবার খাওয়াতে পারবে,তাছাড়া হাস ২ বছরের বেশি ডিম দেয়।
আর লস টা হয় যদি হাস মারা যায়।তাই টিকা দিতে হবে এবং ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
১টি হাসের লাভ লস
১ টি হাস ডিম পাড়া অবস্থা থেকে পরবর্তী ৩৬৫ দিনে ১৫০গ্রাম করে বছরে খাবে ৫৪কেজি।
বাচ্চা থেকে ডিম পাড়া পর্যন্ত ১২ কেজি তাহলে মোট খাবার ৫৪+১২=৬৬কেজি
যাহ দাম ৩০*৬৬ঃ১৯৮০টাকা ,বাচ্চা এবং অন্যান্য মিলে ৭০টাকা ধরে ১৯৮০+৭০ঃ২০৫০টাকা
আয় ২৮০ডিম *৯ঃ২৫২০টাকা,রিজেক্ট হাঁস ২৮০ টাকা ধরে মোট ২৮০০টাকা
১টা হাঁসে লাভ ২৮০০-২০৫০ঃ৭৫০টাকা
১০০০ হাঁস পালন করলে সাড়ে ৭লাখ টাকা লাভ।
লেবার ও অন্যান্য খরচ দেড় লাখ বাদ দিলে লাভ বছরে ৬লাখ ,মাসে ৫০হাজার।
খাল বিল হাওর বাওড় ,নদীতে পালন করলে খাবার লাগবে না,সব ই লাভ মানে ২০লাখ।
তবে হাসের জাত যদি ভাল হয়,ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকতে হবে।
কোন কারণ ডাক প্লেগ বা কলেরা হলে সব হাঁস মারা যেয়ে লস ও লতে পারে।
তবে ফিল্ডে প্রডাকশন ৭৬% আসতে হবে মানে বছরে ২৮০টি ডিম দিতে হবে।
কালেক্টেড হিসেব
বয়স অনুসারে হাসের খাবার ফরমুলেশন
উপাদান ০-৮ সপ্তাহ ৯-২০ সপ্তাহ ২১-বিক্রি
গম /ভুট্রা ভাংগা ৪৫ ৪৩ ৪৮
চালের কুড়া ১২ ৩০ ১২
গমের ভুসি ৫ ১০ ৫
তিলের খৈল ২২ ৮ ১৬
শুটকি মাছের গুড়া ১৫ ৭ ১৩
ঝিনুকের চূন্ন ০.৫০ ১.৫০ ৫.৫০
লবন ০.২৫ ০.২৫ ০.২৫
ভিটামিন মিনারেল ০.২৫ ০.২৫ ০.২৫
টোটাল ১০০কেজি ১০০ ১০০কেজি
ডিম পাড়ার আরেক ফরমুলেশন
গম ৩০%
ধান ভাংগা ৪০
কালো তিল খৈল ১০
সয়াবিন খোল ১০
শুটকি মাছের গুড়া ৮
ঝিনুক ভাংগা ২%
টোটাল ১০০কেজি
নিচে বিভিন্ন বয়সের হাঁসের জন্য সুষম খাদ্য তৈরির একটি ফরমোলেশনঃ
=============================================
*******টেবিল-১******
খাদ্য উপাদান (%) > > > বাচ্চা হাঁস(০-৬ সপ্তাহ) > > > বাড়ন্ত হাঁস(৭-১৯ সপ্তাহ)
গম ভাঙা ————- ৩৬.০০ ———————— ৩৮.০০
ভুট্টা ভাঙা ———— ১৮.০০ ————————- ১৮.০০
চালের কুঁড়া ———- ১৮.০০ ————————- ১৭.০০
সয়াবিন মিল ——— ২২.০০ ————————- ২৩.০০
প্রোটিন কনসেনট্রেট – ২.০০ —————————- ২.০০
ঝিনুক চূর্ণ ———— ২.০০ —————————- ২.০০
ডিসিপি ——— ——১.২৫ —————————- ১.২৫
ভিটামিন প্রিমিক্স —- ০.২৫ —————————- ০.২৫
লাইসিন ————— ০.১০ ————————— ০.১০
মিথিওনিন ———— ০.১০ ————————– ০.১০
লবণ ——————- ০.৩০ ————————- ০.৩০
———————————————————————————
মোট === ======১০০.০০ কেজি———————— ১০০.০০কেজি
নিচেরটা ও অনুসরণ করা যায়
===========================================
**********টেবিল-২*********
খাদ্য উপাদান পরিমান (%)
———————————
গম ভাঙা ৪৫
চালের কুঁড়া ২০
গমের ভুষি ১২
তিলের খৈল ১২
শুটকি মাছের গুঁড়া ১০
লবন ০.৫
ভিটামিন ০.২৫
—————————-
মোট ১০০
ডিম পাড়া শুরুর ২ সপ্তাহ আগে থেকে শেষ পর্যন্ত
বা ডিম পাড়া হাঁস(২০ সপ্তাহ থেকে তদুর্ধে) হাঁসকে খাওয়ানোর চার্টঃ
***************টেবিল-৩******************
খাদ্য উপাদান >>>> পরিমান (%)
————————————-
গম ভাঙা ৪০
চালের কুঁড়া ২৫
গমের ভুষি ৫
তিলের খৈল ১২
শুটকি মাছের গুঁড়া ১০
ঝিনুক ভাঙা ৭.২৫
লবন ০.৫
ভিটামিন ০.২৫
——————————–
মোট ১০০কেজি
অনেকগুলো ফরমোলা দেয়া হয়েছে ইছা অনুযায়ী ব্যব হার করা যায়।
খাওয়ানোর নিয়মঃ
============ বর্ষা মৌসুমে অর্ধছাড়া অবস্থায় পালনকৃত বাচ্চা হাঁসকে দৈনিক ৪০ গ্রাম এবং বয়স্কগুলোকে ৬০ গ্রাম হারে সুষম খাদ্য দিতে হবে। তবে শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক খাদ্যের পরিমান কমে যায় বলে এসময় ছেড়ে খাওয়ানোর পাশাপাশি ৭০ থেকে ৮০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করা দরকার। তবে প্রাকৃতিক খাদ্য না দিতে পারলে খাকী ক্যাম্পবেল হাঁসকে দৈনিক ১৭৬ গ্রাম হারে এবং জিন্ডিং হাঁসকে দৈনিক ১৬০ গ্রাম হারে খাদ্য দিতে হবে।
ভিটামিন
ভিটামিন প্রিমিক্স ১০গ্রাম।
প্রতি কোইন্টালে ক্লোলিন ক্লোরাইড ৫০ গ্রাম।
কক্সিডিওস্টট ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ১০০কেজিতে ৫০ গ্রাম।
বাচ্চার খাবারে ২১% প্রোটিন ,স্নেহ ৪.৫%এবং ডিম পাড়া অবস্তায় ১৮% প্রোটিন লাগবে।
তিল বা বাদাম ছাড়া অন্য কোন খৈল হাস কে দেয়াই ভাল।
সুযোগ থাকলে শামুক বা গুগলি,ফেলনা ভাত,চাল ধোয়া জল,আনাজ খোসা,মাছের আশ কাটা।
৮ সপ্তাহ পরযন্ত ৪-৫ কেজি খাবার খায়।
২০ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি হাসের জন্য ১২.৫ কেজি খাদ্য লাগবে এবং ফুল ডিম আসতে ১৫ কেজি খাদ্য লাগবে।
জলাশয় থেকে প্রতি হাস প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম খাদ্য পায়।
কতবার খাবার দিতে হবে
০-৪ সপ্তাহ ৪ বার
৪-৮ ৩ বার
৮ এর বেশি ২ বার
বয়স খাবার্
১ম ১০-২০গ্রাম
২য় ২১-৩১
৩য় ৩১-৪১
খাবার দিলে পানি দিতে হবে,হাস খাবার নেয়ার পর পানি নেয় তাছাড়া ঠোট ও চোখ পরিস্কার করার জন্য পানি লাগে।গ্রামে মাটির গামলায়জল দেয়া যায়।বাচ্চা ফুটাতে হলে ৫ টি হাসির জন্য ১ টি হাস দিতে হয় আর বাচ্চা না ফুটাতে চাইলে ১০-১৫ টি হাসির জন্য ১টি হাস দিলে ভাল পানি ছাড়া হাস খাবার খেতে পারেনা।হাস মুরগির ডাবলের চেয়ে একটু কম খায়,পার্থক্য হল হাস কিছু মানে তিনের এক ভাগ বাহির থেকে খায়।
১দিন বয়সে হাসা বা হাসি নির্ণয় ঃবাচ্চার লেজের দিক টা বা হাত ধরে উলটে দিন,ডান হাতের বুড়ো আংগুল আর তরজনীর সাহায্যে জোরে মলদার টিপে ধরুন কিছুটা এগিয়ে নিন।নর হলে ছোট লিংগটা ছোট কাটার মত বেরিয়ে আসবে,নারী হলে কিছুই বের হবেনা।বড় হাসের কন্ঠসর তীক্ষ্ণ আর মদ্দার সর ফ্যাসফ্যাসে।
মর্দার লেজের পালক কোকড়ানো এবং ওপর দিকে তোলা
হাঁসের রোগ সমূহ;
১।ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস
#এটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা picorna virus দিয়ে হয়।
# হঠাত আক্রান্ত হয় এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করে ও সবুজ পায়খানা করে।
#বাচ্চা গুলি চোখ বন্ধ করে রাখে এবং বসে থাকে ও এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে থাকে।
চিকিৎসাঃ চিকিসায় ভাল রিজাল্ট পাওয়া যায়না
টিকাঃ হেপাটোভেক্স ০.৩ সি সি করে;৩-১১ সপ্তাহে ১ম টিকা চামড়ার নিচে এবং ৪ সপ্তাহ পর আবার দিতে হবে
২।ডাক প্লেগ।
এটি ডাক প্লেগ ভাইরাস দিয়ে হয়।
প্রতি বছর অনেক হাস এই রোগে মারা যায়।মৃত্যহার ১০০ পর্যন্ত হতে পারে।
#হঠাত আক্রান্ত হয় এবং অনেক মারা যায় যেতে থাকে ও ডিম কমে যায়।
#পানি বেশি খায় এবং পুরুষ হাসের পুংলিংগ অবশ হয়ে বের হয়ে আসে।
চোখের পাতা ফুলে যায়,পানি পড়ে ও ময়লা জমে,ঘাড় পাশে বা পিছনের দিকে বেকে যায় ও মারা যায়।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসা দিলে ভাল রিজাল্ট পাওয়া যায় না।
টিকাঃ
১ম বার ২১-২৮দিনে,২য় বার ১৫ দিন পর মানে ৩৬-৪৩ দিনে বুকের মাংসে।পরবরতিতে ৪-৫ মাস পর পর।
সরকারী টিকা ১০০ডোজ,১০০ মিলি ডিস্টিল পানির সাথে মিশিয়ে বুকের মাংসে ১এম এল করে ইনজেকশন দিতে হবে।
৩।ডাক কলেরা;
এটি পাস্টোরেলা মাল্টোসিডা নামক ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে হয়।মৃত্যহার ৫০%।৪ সপ্তাহের অধিক বয়সের হাস আক্রান্ত হয়।
#খাবার কমে যায় এবং জর আসে।
#পা প্যারালাইসিস হয় এবং সবুজ পায়খানা হয় ও পানি বেশি খায়।
চিকিৎসাঃ
জেন্টামাইসিন এবং পটেনশিয়াল সালফোনেমাইড( মাইকোনিড, কসুমিক্স ভাল কাজ করে।
টিকাঃ
১ম বার ৪৫-৬০ দিনে ,২য় বার বুস্টার ডোজ ১৫ দিন পর ৬০-৭৫ দিন পর,ডানার তলদেশে পালক এবং শিরা বিহীন স্থানে চামড়ার নিচে।পরবরতিতে ৪-৫ মাস পর পর।
১০০ ডোজ
৪।মাইকোটক্সিকোসিস
হাস বাহিরে খায় বলে অনেক ছত্রাক আক্রান্ত খাবার এবং দূষিত পানি খেয়ে ফেলে ফলে সহজেই এরা আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
#খাবার কম খায়,ডিম কমে যায়, খোসা পাতলা হয় ও ডিমে রক্ত দেখা যায়
#হঠাত মারা যায়
চিকিৎসাঃ
পুরান খাবার বাদ দিয়ে নতুন ভাল খাবার দিতে হবে এবং টক্সিনিল প্লাস পানিতে দিতে হবে ৫-৭ দিন।
৫।আমাশয়ঃ
হাসে বাচ্চা আক্রান্ত হয়,টাইজেরিয়া পারনিসিয়া নামক প্রোটোজোয়া দিয়ে এ রোগ হয়।
লক্ষণঃ
#ওজন কমে যায়,খাবার কম খায়না,দুরবল হয়ে পড়ে এবং দাড়াতে পাড়েনা।
#প্রথমে সাদা ,পড়ে রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে ও মারা যায়।
চিকিৎসা
ই এস বি৩ ২-২.৫ গ্রাম প্রতিলিটার পানিতে সব সময় ৫ দিন ।
৬।বটুলিজম
৭।ডিম আটকে যাওয়া
৮।পায়ে সমস্যা মানে ভিটামিন নিয়াসিনের ঘাটতি হয় বাচ্চা অবস্থায়।
৯।এ আই
১০।মাইকোপ্লাজমোসিস
প্রধান সমস্যাঃ
রোগ হয়ে মারা যায়।
সঠিকভাবে সব টিকা না দেয়া।
সব সময় ডাক্তার পাওয়া যায়না।
সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব
নিচের অংশ টুকু লিখেছেন Dr Mosud Ahmed
১. হাওরে ডিমের জন্য খাকিক্যাম্পবেল ভাল কিন্তু এর খাঁটি জাত এখন প্রায় বিলুপ্ত
মাংসের জন্য বেইজিং সেরা কিন্তু প্যারেন্ট ষ্টক হিসাবে ও আশানরুপ ডিম দেয় না তার পর ও মাংসের জন্য এ জাত ভাল
২. হাওরে মিক্সড জাত ই এখন পাওয়া যায়, খাঁটি কোন জাতই নাই….( হাঁসে জাতের বিশুদ্ধতা রাখা মুশকিল কারণ হাঁস ছেড়ে পালন করা হয়)
৩. হাঁস কে ০-৩০ দিন বয়স পর্যন্ত ব্রয়লার স্টার্টার ফিড দিতে হবে
এর পর থেকে মাঠে ছেড়ে পালন করতে হয়, তখন প্রচলিত খাবার শামুক, ঝিনুক, ধান খেতে দিলে ই চলে। এত ব্যালেন্স রেশন দিয়ে হাঁস পালনে লাভ করা যায় না
শামুক না থাকলে হাঁস পালন লাভজনক হবে না
৪. ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্ছা কে অবশ্য মুরগীর বাচ্ছার মতো ব্রুডিং করতে হবে
এ সময় পানিতে নামানো যাবে না
নাভি শুকনো বাচ্চা কিনতে হবে, না হলে বাচ্চার মৃত্যু বেশি হবে।
১৫-২১ দিন বয়সে প্লেগ এর টিকা দিতে হবে
তার ১৫ দিন পর অবশ্য বুষ্টার ডোজ দিতে হবে
৪৫ দিন বয়সে কলেরার টিকা দিতে হবে এবং এটার ও বুস্টারিং করতে হবে।
২/৩ মাস পর পর কৃমির ঔষধ অবশ্য খাওয়াতে হবে।
হাঁসের ঘর অবশ্য শুকনো রাখতে হবে
সপ্তাহে অন্তত ১ বার ঘরে চুন ছিটাতে হবে।
একটা হাঁসের জন্য ১.৫ বর্গ ফুট জায়গা অবশ্য ই রাখতে হবে
তা না হলে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো মুশকিল।
১ বার কলেরা আক্রান্ত ফ্লক রাখা যাবে না
প্রথম বার কলেরা আক্রান্ত খামারের জায়গায় ২য় বার আর খামার করা যাবে না, আলাদা জায়গায় করতে হবে।