লাম্পি স্কিন ডিজিজ (Lumpy Skin Disease)
————————-ডাঃ সুখেন্দু শেখর গায়েন।(27/06/19)
লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা ত্বকের লাম্প রোগ
গরুর মস্ত দুর্ভোগ,
দেশে এবার বেশ জায়গায় দেখছি,
মনিরামপুর,কেশবপুর,
দাকোপ,বটিঘাটা,শার্শায়ও একই সুর,
কম বেশির খবর শুনছি।
এ রোগ প্রথম জাম্বিয়ায় মহামারী আনায় (1929),
পরে জিম্বাবোয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকায়(1949),
সারা আফ্রিকায় তৎপরে(1950–1980),
এশিয়ায় ঊনিশ শ নব্বই-এ(1990),
দেখা যায় পানির মহিষে(Bubalus bubalis)(পাঁচটি কেস পাওয়া যায় মাত্র )
আমার দেশে কি এবারে?
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস(LSDV),
অন্য নাম নেথলিংভাইরাস(Neethling virus),
পক্সভিরিডি (poxviridae)এর পরিবার,
কেপ্রিপক্স ভাইরাস (Capripoxvirus)-জেনাস ,
একই জেনাসের সীপ পক্স ও গোট পক্স ভাইরাস ,
ডাবল স্ট্রান্ডেড ডিএনএ জেনম তার।
সে কারনে এ রোগ দমনে,
ছাগল ও ভেড়ার ফক্স টিকার ব্যবহার কোন কোনখানে(যেমন কেনিয়ায় ),
তবে প্রতিরোধ হয় না তেমন,
এ টিকায় জীবন্ত ভাইরাস আছে,
একই (ছাগল-ভেড়ার পক্সের উপযোগী )এটেনিউয়েশন (রোগ তৈরির ক্ষমতা কমানো)রয়েছে,
গরুতে দিলে তাই ছাগল ভেড়ায় পক্স হতে পারে তখন(যদি এ পক্সের উপস্থিতি থাকে এলাকায়)।
দক্ষিণ আফ্রিকায় Neethling virus নিয়ে,
বিশ বার ডিমের chorio-allantoic membrane এ প্রবেশ করিয়ে,
তৎপরে cell culture এ রাখে,
এ মাধ্যমে তৈরি টিকায়,
ক্ষতির সম্ভবনা কম থাকায়
বহুল ব্যবহার হয়ে থাকে ।
লাম্পি স্কীন ডিডিজ ভাইরাস (LSDV)দেহে ঢোকার পর,
জ্বর চল্লিশ থেকে একচল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপর,
থাকেও সাত দিন,
এ সময় দেহ জুড়ে,
বাহ্যিক লিম্মনোড ফুলে পড়ে,
ত্বকে ও মিউকাস (শ্বাস ,জনন ও পরিপাক নালীর)পর্দায় নোডিউল(Nodule/পিন্ড)জন্মায়
জেনে নিন।
ভাসাভাসা(superficial )লিম্পনোডগুলো(Lymphnode),
জীবানুর আক্রমণ ও পানি (oedema) জমে ফুলো ফুলো
সহজে দৃশ্য মান,
নোডিউলগুলোও ফোলা ফোলা,
ত্বকে ত্বকে যেন পিণ্ডের দলা,দলা,
সব জায়গায় নয় সমান।
পানি(plasma) জমাতে পা (বা ব্রিসকেট )ফোলে ,
চলাফেরা করে না ফলে,
তাইতো গরু খোঁড়ায়,
দুর্বল হয়,দুধ কমে যায়,
উর্বরতা কমে,গর্ভপাত হয়,
অধিক দুর্বলতায় মারাও যেতে পারে।((Euthanasia বা কষ্টহীন মৃত্যু হয়)
পাঁচ থেকে পঞ্চাশ, এ রোগ হওয়ার হার,
মৃত্যুর হার কম (সর্বোচ্চ শতকরা চল্লিশ)আবার,
আরোগ্যলাভ করলেও চামড়া নষ্ট হয়,
মূলত অর্থনৈতিক ক্ষতি,
খামারীদের দুর্গতি,
চামড়া বিক্রয়ে বিপর্যয় ।
সুপ্তিকাল চার থেকে চৌদ্দ,
সপ্তাহখানেক ধরা হয়ও ,
প্রথম প্রকাশ জ্বরে,
ভাইরাস দেহে ঢোকার সাত থেকে ঊনিশ দিন পর,
ত্বকে নোডিউলের প্রকাশ আক্রান্ত গরুটার,
নাক ও চোখ দিয়ে পরে পুঁজালো মিউকাস ঝরে।
নোডিউল আক্রান্ত করতে পারে ত্বকের তিনটি লেয়ার,
এপিডারমিস,ডারমিস ও কিউটিস-টার(বা হাইপোডারমিস),
এমন কি মাংস পর্যন্ত যায়,
নোডিউল দেখা যায় সারা দেহে বটে,
মাথা,ঘাড়,আডারে বেশি বেশি ফোটে,
এবং স্ক্রুটাম(পুরুষ জননাঙ্গে),পেরিনিয়াম(জননাঙ্গ ও পায়ুর আশপাশ) ও ভালভায়(স্ত্রী বহিঃজননাঙ্গে)।
চোখের পর্দায়ও নোডিউল হয়,
মাজেলেও দেখা যায়,
মুখের ভেতরেও বটে,
খেতে গরু কষ্ট পায়,
মুখগহ্বরে যেই নোডিউল জন্মায়
চিবাতে কষ্ট ,ব্যথার চোটে।
চোখের কন্জাংটাইভায়(conjunctivitis )
এমনকি কর্নিয়ায়(keratitis)
প্রদাহ হয়,
চোখ দিয়ে পানি পড়ে,
ক্ষুধা মন্দা করে,
চলিতে নাহি চায় ।
দ্রুত নোডিউল বিলিন হয় ত্বকে (কোন কোন রোগীর),
শক্ত লাম্প বা পিন্ডময় থাকে (কোন কোনটায় ),
পরে লাম্পে জীবানু সংক্রমণে পুঁজে বর্তায়,
দুই সপ্তাহ পর নোডিউল বা পিন্ডটায়,
মোচার মত মরা কোষে ভরে যায়
তারপর খোঁস উঠে গর্তের মত দেখায় (এইগর্তকে sit fast বলে)।
মশা ও মাছি এ রোগের মস্ত বাহক,
ওসব রক্তখাদক ছড়ায় এ রোগ,(বিশেষ করে মাছি Stomoxys Calcitrans এবংমশা Biomyia fasciata)
পানির মহিষ,জিরাফেও এ রোগ হয়,
ভাল চামড়ার ফ্রিজিয়ান ও জার্সিতে বেশি, (Bos taurusএ),
চামড়া পুরুর গরুতে কম হয় জেনেছি(Bos indicus)
কেননা মশা ,মাছি এদের কম হুল ফোঁটায় ।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ(LSD) হয় সব বয়সীর,
তবে বেশি দেখা যায় বাছুর ও দুগ্ধবতীর,
প্রভাব রয়েছে বেশি তাপ ও হিউমিডিটির(আর্দ্রতা)
গ্রীষ্ম, শরৎ ও শুষ্ক ঋতুতে,
সুবিধা তাই এ রোগ হতে,
হলে হয় প্রায় বিচ্ছিন্ন প্রকৃতির (sporadic)।
স্পোরাডিক হওয়া রোগের নিয়ম,
তবে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকলে কম,
বেশ জায়গায় বেশ গরুতে ছড়ায়,
সেই কারনে সবখানে,
কম বেশি পরিমানে,
এবার এ রোগ দেখা যায়।
দুধের মাধ্যমে যায় বাচ্চায়,
জ্বরের এগারদিন পর আসে লালায়,
সিমেন বা বীর্যে বাইশ দিন পর,
প্রস্রাব পায়খানায় আসার খবর নেই,
কোষ বা কলার ক্ষতে এক’শ বিশ দিন থাকতে পারে সক্রিয়ই,
সবারই স্মরণ রাখা দরকার।,
একবার যদি এ রোগ হয়,
বাঁচলে প্রতিরোধ সারা জীবনটায় ,
এটা একটা ভাল খবর,
বছরে একবার টিকায়,
এ রোগের প্রতিরোধ হয়,
টিকা চাই বছর বছর।
রোগ থেকে সুস্থ হওয়া গাভীটার,
জন্ম নেয়া বাচ্চাটার ,
ছ’মাস টিকার প্রয়োজন নেই,
এরপর লাগবে টিকাই,
অন্য গরুগুলোরও টিকা চাই-ই চাই,
প্রতিরোধ টিকা দিলেই।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ( LSD) নমনীয় আকারে( mild form)হলে,
অনেকে ”সিউডো লাম্পি স্কিন ডিজিজ” বলে গুলিয়ে ফেলে((confuse করে),
যেটা করায় বোভাইন হারপিস ভাইরাস টু(Bovine Herpes virus-2),
তবে এর লক্ষণ ভাসাভাসা(superficial ),
লক্ষণ অল্পক্ষণের জন্যে আসা,
নেই তেমন ভয়ের কিছু।
সিউডো লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রায়ই বাঁট ও আডারে হয়,
অবশ্য তখন বোভাইন মেমিলাইটিস নামে কয়,
এই রোগটারে,
পৃথক করা কঠিন তো নয়,
দেখলেই অনেকটা বোঝা যায়,
কোনটা কি হতে পারে।
তবুও নমুনা নিয়ে জানতে হবে,
এটারে কি লাম্পি স্কিন ডিজিজই কবে?
না অন্য কোন রোগ,
হয়ত লাম্পি স্কিন ডিজিজই
তবুও পরীক্ষা করে দেখি,
কমাতে এ দুর্যোগ।
ভাল খবর এই,
চিকিত্সাতে সাড়া দেবেই,
সকাল বিকেল এন্টিবায়োটিকই উত্তম,(Ceptriazone-এ বেশ ভাল ফল)
এন্টি হিস্টামিনিক সাথে চাই,
মশারির ব্যবহার বাড়াই,
মৃত্যুর ঝুঁকি কম।।
Lumpy Skin Disease (LSD).
Lumpy অর্থ পিন্ড আকার। সাধারনত চামড়ার নিচে পিন্ড আকার গোটা গোটা হয়ে থাকে। ইহা ভাইরাস জনীত রোগ। LSD মুলত Immunity কে Suppress করে। ইহাকে ইকোনোমিক্যাল রোগ ও বলে। কারন যদি গোটা গুলো ফেটে যায় তাহলে চামড়ার ক্ষতি হয়ে যায়। অনেক সময় LSD হলে ওলানে বা ভ্যাজাইনাল ওয়ালের পাশে চাকতির মত গোটা গোটা পাওয়া যায়, সাথে গাভীর/গরুর পায়ের হাঠু ফুলে যেতে পারে।
চিকিৎসা
– যেহেতু ভাইরাল রোগ (Immuno Suppress Disease) তাই এর চিকিৎসা গরুর অবস্থা অনুযায়ী।
১। Andopan Powder
(Treat viral diseases, Improve immunity, Reduce inflammation),
/FRA-C 12- Improve immunity.
/Lysovit- Improve immunity.
০২। Vit. C
০৩। Antibiotics (Amoxycillin/Ceftriaxone/Ceftiofur/Penicillin অবস্থা অনুযায়ী যেকোন একটি এন্টিবায়োটিক চয়েজ করা যেতে পারে)
০৪। Antihistaminic.
০৫। জ্বর বেশি হয় তাই- (অনেক সময় হাটুঁ ফুলে যায়)
Tolfenamic Acid/
Ketoprofen/Paracetamol+Meloxicam ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৬। যদি গোটা ফেটে যায়-
Sumid vet powder/Negutox powder. ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৭। অবস্থা অনুযায়ী Ivermectin. ব্যবহার করতে পারেন।
০৮। শেড পটাশ পানিতে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
গরুর খাওয়ার পানিতে খাবার সোডা (প্রতি লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম খাবার সোডা) ব্যবহার করলে ভাল রেজাল্ট পাওয়া যায়।
LSD আক্রান্ত গরুকে মশারীর মধ্যে রাখা দরকার। যাহাতে মশা/মাছির মাধ্যমে ইহা ছড়াতে না পারে।
গরুর ঘরে (শেডে) মশারী/মশা তাড়ানো কয়েল নিয়মিত ব্যবহার করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে ২ দিন শেড জীবনুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন।
(LSD আক্রান্ত হলে (গরু) সাথে সাথে নিকটস্থ প্রানী হাসপাতাল কে অবহিত করুন ও পরামর্শ ও চিকিৎসা গ্রহন করুন/ একজন অভিজ্ঞ ডিভিএম ডাক্তারের এর পরামর্শ গ্রহন করুন।
ধন্যবাদ;
ডাঃ মোঃ শাহ্-আজম খান
(ডিভিএম, এমএস ইন এনিমেল সায়েন্স)
সিনিয়র কাস্টমার সার্ভিস অফিসার (ক্যাটল বিভাগ)
নারিশ পোল্ট্রি এন্ড হ্যাচারী লিমিটেড
রংপুর জোন।