মুরগির খাবার ছিটানোর কারণ ও প্রতিকার,খাবার বেশি খায় কেন
#খাবার ছিটানোর কারণঃ
১০০০ মুরগীতে প্রতি মুরগী যদি প্রতিদিন ২ গ্রাম করে খাবার ছিটিয়ে নষ্ট করে তাহলে ৩০ দিনে (১০০০*৩০*২) গ্রাম= ৬০,০০০ গ্রাম বা ৬০ কেজি খাবার নষ্ট হয়। যার মূল্য প্রায় ২,৫০০ টাকা। সোনালীর বা ককের ক্ষেত্রে ৬০ দিনে ক্ষতি প্রায় ৫,০০০ টাকা।
নিচে খাবার ছিটানোর কয়েকটি কারণ দেয়া হলো।
#ব্যবস্থাপনাজনিতঃ
১.অল্প জায়গায় বেশী মুরগী পালন করলে।
২. প্রয়োজনের তুলনায় কম সংখ্যক খাবার ও পানির পাত্র দিলে।
৩. হটাৎ খাদ্য পরিবর্তন করলে।অর্থাৎ হটাৎ প্রিস্টার্টার খাদ্য থেকে স্টার্টার খাদ্য বা স্টার্টার খাদ্য থেকে গ্রোয়ার খাদ্য দিলে হতে পারে।
৪. ১৪ দিনের আগে পিলেট খাবার দিলে।
৫. শেডে আলোর তীব্রতা বেশি হলে।
৬. খাবারের পাত্র সঠিক উচ্চতায় স্থাপন না করলে ।
৭. খাবারের পাত্র পূর্ন করে খাবার দিলে ।
৮।অপ্রচলিত খাবার পাত্র দিলে।
#রোগ
৮. কক্সিডিওসিসের লোড থাকলে ।
৯. কৃমির সংক্রমন বিশেষ করে সোনালী বা কক মুরগীতে গোলকৃমির কারণে
১০. মাইকোটক্সিকোসিস
১১. মুরগীর গিজার্ড ইরোশন
১২।এমোনিয়া হলে
#আবহাওয়া
১০. অত্যাধিক গরম বা শীত
#মেটাবলিক
৫. শরীরে ভিটামিন-মিনারেলের অভাব দেখা দিলে।
#অন্যান্য
৮. পিলেটের সাইজ বড় হলে।
৯. পিলেট যদি বেশি শক্ত হয়।
১০।খাবারে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকলে
১১।খাবার যদি পচে যায়
#প্রতিকারঃ
১. মুরগীর জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বরাদ্দ রাখুন। বেশী লাভের আশায় অল্প জায়গায় বেশী মুরগী পালন করা উচিত না।
২. মুরগীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানির পাত্র দিতে এবং খাদ্য হবে ও পানীর পাত্র দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দিন।খাদ্যের পাত্র মুরগীর পিঠ বরাবর ও পানির পাত্র মুরগীর চোখ বরাবর ঝুলিয়ে দিন।মুরগি থেকে ২ ফুট দূরে খাবার পাত্র থাকতে হবে।
৩. গরমের সময় ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।।স্ট্যান্ড ফ্যান দিলে ভাল যদিও অনেক ব্যয় বহুল ।
৪. ফ্লকে কক্সিডিওসিস এর লোড থাকলে চিকিৎসা করতে হবে।
৫. এক দিনে খাবার পরিবর্তন করা যাবে না।যে কোন ফিড পরিবর্তন করতে হলে আগের খাবার থেকে ২৫% খাবার বাদ দিয়ে নতুন ২৫% খাবার এড করতে হেব এভাবে ২৫%,৫০%,৭৫%, ১০০% এই অনুপাতে ৪ দিন সময় নিয়ে পরিবর্তন করতে হবে।
৬. খাবার পরিবর্তনের সময় এনজাইম দেয়া যায়।
৭. আলোর তীব্রতা বেশী হলে কমাতে হবে অথবা লাল আলো দেয়া যায়।
৮. খাদ্যের বস্তা রোদে রাখার দরকার নাই ।এতে খাবার শক্ত হয়ে যেতে পারে ।
৯. উপরের প্রক্রিয়াগুলো ঠিক থাকার পরেও যদি সমস্যা দেখা দেয় তবে ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ব্যবহার করতে পারেন।
ড ছিটানোর কারন সমুহঃমুরগির খাদ্য ছিটানোর কারণ ও প্রতিকারঃ
খাদ্য ছিটানো ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ার পুলেট ও ডিমপাড়া মুরগির একটি বদ অভ্যাস। যে কোনো ঋতুতে এ বদ অভ্যাস হতে পারে। তবে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে ইহা সবচেয়ে বেশি হয়, সাধারণত শীতকাল হতে বসন্তকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় ও গ্রীষ্মকালে ইহা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সচেতন হলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
কারণ- ১ঃ
বাচ্চার খাদ্যথলি, গিজার্ড, কলিজা, অগ্নাশয় ও খাদ্যনালী পরিমিতভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া। তাই খাদ্য সঠিকভাবে হজম হয়না এবং মুরগি খাদ্য ছিটায়। এসব অঙ্গের সঠিক বৃদ্ধির জন্য ব্রুডিংকালীন সময়ে পরিমিত তাপ প্রয়োজন। যেহেতু ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে তাপমাত্রা রাতে কম ও দিনে বেশি থাকে তাই ব্রুডিংকালীন সময়ে সঠিক তাপমাত্রা ধরে রাখা একটু কঠিন বটে।
সমাধানঃ
সঠিকভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ব্রুডিং করা।
কারণ- ২ঃ
প্রথম দিনই খাদ্যথলি, গিজার্ড, কলিজা, অগ্নাশয় ও খাদ্যনালীর বৃদ্ধির জন্য স্টিমুলেশন বা উদ্দীপনা না পাওয়া। এই স্টিমুলেশনের জন্য বাচচাকে ব্রুডারে ছাড়ার ১ম ২৪ ঘন্টার মধ্যে খাদ্যথলি ১০০% পূর্ণ করা বাধ্যতামুলক। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ খামারিগণ ১ম দিন বাচ্চাকে পানির সাথে চিনি বা গ্লুকোজ খাইয়ে থাকেন। এই জন্য বাচ্চার ক্ষুধা কমে যায় এবং ১ম দিন পরিপূর্ণভাবে খাদ্য খায়না, ফলে পরিপাকতন্ত্র বৃদ্ধি পায়না। তাই খাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাচ্চা খাদ্য পরিমিতভাবে খেতে পারেনা এবং ঠুকুর দিয়ে ছিটায়।
সমাধানঃ
১ম দিন বাচ্চাকে পানির সাথে চিনি বা গ্লুকোজ না খাওয়ানো। ১ম ৩-৫ দিন এন্টিবায়োটিক না খাইয়ে প্রোবায়োটিক খাওয়ানো উত্তম।
কারণ- ৩ঃ
পর্যাপ্ত পানি ও খাবার পাত্র না থাকা। তাই সকল বাচ্চা সমানভাবে খাদ্য খেতে পারেনা, এইজন্য কিছু বাচ্চা ছোট হয়। এই ছোট বাচ্চাগুলো খাবার ছিটায়।
সমাধানঃ
সাধারণত ১০০ বাচ্চার জন্য ১ম সপ্তাহে ১টি, ২য় সপ্তাহে ২টি, ৩য় সপ্তাহে ৩টি, ৪র্থ সপ্তাহে ও পরে ৪টি করে পানি ও খাবার পাত্র সরবরাহ করতে হবে।
কারণ- ৪ঃ
খাদ্য পাত্রের উচ্চতা সঠিক না থাকা।
সমাধান-
মেঝেতে মুরগি পালনের ক্ষেত্রে পাত্রে খাদ্যের লেভেল বাচ্চার খাদ্যথলির সমান উচ্চতায় থাকতে হয় এবং বাচ্চার বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাত্রের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে হবে।
কারণ- ৫ঃ
পাত্রে অতিরিক্ত খাদ্য সবসময় সরবরাহ করা। অনেকে সারাদিনের খাবার দিনে ১ বার বা ২ বার পাত্র পূর্ণ করে দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত খাদ্য বাচ্চা ঠুকুর দিয়ে ফেলে দেয়।
সমাধানঃ
পাত্রে খাবার দেওয়ার সময় কমপক্ষে তিন ভাগের এক ভাগ খালি রাখতে হবে। দিনে রাতে ৪-৫ বার খাবার সরবরাহ করতে হবে। বাচ্চার বয়স ২ সপ্তাহের পর হতে প্রতিবার খাবার দেওয়ার পূর্বে ১-২ ঘন্টা পাত্র সম্পূর্ণরূপে খালি রাখতে হবে বা পাত্র উঠিয়ে নিতে হবে। এতে বাচ্চার বেশি ক্ষুধা লাগবে, ফলে খাওয়ার প্রতি বেশি মনোযোগী হবে এবং খাদ্য ছিটাবেনা।
কারণ- ৬ঃ
এন্টারাইটিস বা আমাশয়। বাচ্চার এন্টারাইটিস বা সাবক্লিনিক্যাল আমাশয় থাকলেও খাবার খাওয়ার রুচি কমে যায়।
সমাধান-ঃ
যথাযথ চিকিৎসা করা। এন্টারাইটিস বা আমাশয় থাকলে এনজাইম বা ভিটামিন জাতীয় ঔষধ না খাওয়ানো।
এছাড়া আলোর উজ্জ্বলতা বেশি, ঠোট বড় হয়ে যাওয়া, মুরগি ঘনত্ব বেশি হলেও এই সমস্যা হতে পারে । তাই সময়মত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
সর্বোপরি একজন রেজিষ্টার্ড দক্ষ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
—————————————
১. ফিড নিউট্রিশন ও কোয়ালিটিগত সমস্যাঃ
————————————————————–
#পিলেট বেশী শক্ত হয়ে গেলে ( পিলেট ফিড উলম্ব ভাবে দুই আঙ্গুলে রেখে চাপ দিলেই বুঝা যাবে।শক্ত হলে সহজে ভেঙ্গে যাবে না)
#ফিডে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর ( arabinoxylans, beta-glucans, cyclopropenoid fatty acid, saponins, tannins, phytic acid, lectins, gossypol, amylase & protease inhibitor, goitrogens etc) উপস্হিত থাকলে। ( মুলতঃ সয়াবিন মিল ও সয়াবিন ফুল ফ্যাটে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর থাকে যেগুলো ব্রেক ডাউনের জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের ( protease, xylanase, phytase etc)প্রয়োজন হয়।তবে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর উপহিত আছে কি না বোঝা যাবে ফিড ছিটানোসহ ফিড ইনটেক কমে যাওয়ার মাধ্যমে।
# ফিডে ফাংগাস পরে বা অন্য কোন কারনে ফিড পচে গেলে।
# প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি থাকলে।
# DEB ( Dietary Electrolyte Balance) ঠিক না থাকলে।এটা নরমালি ২৫০ এর কাছাকাছি থাকে।DEB মুলত সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম এর অনুপাত ব্যালেন্স।এটা ঠিক আছে কিনা বুঝা যায়, সল্ট ট্রিটমেন্ট এ যদি ফিড ছিটানো বন্ধ হয়।
২. মেটাবলিক কারনঃ
——————————
মুরগীর শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল এর ঘাটতি থাকলে।
৩.আবহাওয়াগত কারনঃ
———————————
অত্যাধিক গরম বদ-অভ্যাসের কারনে ফিড ছিটাতে পারে।অস্বস্হি লাগার কারনে ফিডারে পা ডুকায়ে ফিড ছিটাতে পারে।এক্ষেত্রে গ্রিল যুক্ত ফিডার ব্যবহারে সমাধান আসে।
৪.রোগের কারনেঃ
————————–
★ সাবক্লিনিকাল কক্সিডিওসিস ( acervulina infection) থাকলে।
★Round Worm infestation বিশেষ করে সোনালিতে।
★ Mycotoxicosis ( Gizzard Erosion)
★শীতকালে এমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশী হলে।
★ Reo virus infection & General Enteritis.
৫. খামাড় ব্যবস্হাপনায় ত্রুটিজনিত কারনঃ
———————————————————–
★ জায়গার তুলনায় মুরগীর সংখ্যা বেশী
★অপ্রতুল খাবার ও পানির পাত্র
★শেডে আলোর তীব্রতা বেশী
★খাবার পাত্র সঠিক উচ্চতায় ( Crop বরাবর দাড়ানো অবস্হায়) না থাকলে।
★খাবার পাত্র পুর্ন করে খাবার দিলে।
★ক্রাম্বল থেকে মিক্সিং না করে একেবারে পিলেট খাবার দিয়ে দিলে। ২৫ঃ৭৫, ৫০ঃ৫০, ৭৫ঃ২৫ অনুপাতে তিনদিন ধরে এডজাস্টমেন্ট করলে প্রতিকার পাওয়া যায়।
★শেডে ফ্যান না থাকায় অস্বস্হিকর গরম থাকলে
★ খাদ্যের বস্তা অত্যাধিক গরম জায়গায় স্টোর করলে রোদে ফিড ময়েশ্চার ( নরমালি ফিড তৈরীর সময় ১১-১২% রাখা হয়) কমে ফিড পিলেট শক্ত হয়ে যায়।
প্রতিকারঃ
—————
সম্ভ্যাব্য কারনগুলো সমাধান করতে পারলে প্রতিকার সম্ভব।
###
#খাবার কম খাওয়া দুর করতে ফিড এট্রাকটেন্ট ( হলুদ/ ফিস অয়েল/ কড লিভার অয়েল/ স্কুইড অয়েল/ এলিছিন) ব্যবহার করা যেতে পারে।
#### ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স রোধে Anise oil + Inositol এর কম্বিনেশন ব্যবহার করা যেতে পারে।এটা পানি সুমিস্ট করে।
ভুল সংশোধনঃ
———————–
★ ভুট্টার ময়েশ্চারের সাথে ফিড ছিটানোর কোন সমপর্ক নাই।ফিড পিলেট তৈরী হয় কাঁচামালকে ৮০-৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্টিম কুকিং করে ৭-১০ মিনিট কুলিং করা হয়।ম্যাশ ফিড লেয়ার বার্ড ফিড ইনটেক কমায় ভুট্টার ময়েশ্চার বেশী হলে, কারন সেখানে কুকিং, কুলিং করে ময়েশ্চার কন্ট্রোল করা হয় না।
মেইন কারণ গুলি হলোঃ
খাবার পরিবর্তন
খাবার শক্ত হলে।
কক্সিডিওসিস
অসুস্থ হলে (বিশেষ করে রিও ভাইরাস ও এন্টারাইটিস)
মাইকোটক্সিন
বাচ্চার মান যদি ভাল না হয় বা হাচারীতে থেকে যদি ভাল বাচ্চা না আসে।ফলে বাচ্চার পরিপাক নালীর বৃদ্ধি ভাল হয় না,পরিপাক নালীর বৃদ্ধি কম হলে খাবারের ইউটিলাইজেশন কম হয়।রুচি কম থাকে ফলে কম খায়।
খাবার বেশি খাওয়ার কারণ
খাবারের অপচয় হয় হলে
লেবার ম্যানেজমেন্ট (শ্রমিক যদি খাবার বেশি দেয়)
ঘনত্বঃ মুরগি পাতলা হলে খাবার বেশি খায়
এনার্জি কম হলে
লবণ কম দিলে
তাপমাত্রা কম হলে
সেডের উচ্চতা বেশি হলে গরমে বেশি গরম হয় না ফলে খাবার ভাল খায়
আনডাইজেস্টিবল প্রোটিন
হাইলি ডাইজেস্টিবল এনার্জি(চাল ভাংগা,রাইস ব্রান)
খাবারের সাইজ বড় হলে( ৪ মিলি)
আর্দ্রতা বেশি হলে
খাবার অফ রাখলে
মিড নাইট লাইট দিলে খাবার বেশি খায়
কৃমি হলে
গাট হেলথ ভাল হলে মানে ভিলাই এর সাইজ বড় হলে খাবার শোষণ ভাল ফলে খাবার বেশি খায়
খাবারে বা পানিতে এসিডিফায়ার দিলে খাবার বেশি খায়
খাবার দেয়ার মাঝখানে গ্যাপ বেশি দিলে খাবার ভাল খায়
খাবারে হলুদ বা ফিশ অয়েল দিলে খাবার বেশি খায়।
কিভাবে খাবার অপচয় হয়
খাবার পাত্র পরিপূর্ণ করে দিলে ৩০% নস্ট হয়
৩ভাগের ২ ভাগ ভরে দিলে ১০% নস্ট হয়
অর্ধেক ভরে দিলে ৩% নস্ট হয়
৩ভাগের ১ভাগ ভরে দিলে ১% অপচয় হয়
যারা কর্মচারী দিয়ে মুরগি পালন করে তাদের ক্ষেত্রে খাবার অপচয় বেশি হয় কারণ তারা পাত্র ভর্তি করে খাবার দিয়ে দেয়।
Please follow and like us: