Breaking News

মহিষ – রিভার টাইপ আর সুয়াম্প টাইপ এর পার্থক্যঃ

মহিষ – রিভার টাইপ আর সুয়াম্প টাইপ এর পার্থক্যঃ

আসলে সাধারনত, দক্ষিণ পূর্ব এশীয়ায় অরিজিনেটেড মহিষগুলাকে সুয়াম্প টাইপ, এবং দক্ষিণ এশিয়া থেকে পশ্চীমের মহিষগুলোকে বলা হয় রিভার টাইপ। বাংলাদেশ এই দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মধ্যবর্তি হউয়ায় দুই ধরনের জাতই পাওয়া যায়, তাছাড়া বাংলাই এদের আদিপুরুষ বুনোমোষের আবাসস্থল।

সাধারণত সুয়াম্প টাইপ মোহিষগুলো হালচাষ ও গোস্তের জন্য পালা হয়, রিভার টাইপ দিনে দিনে দুধের প্রতি লক্ষ্য রেখে ডেভেলপ করা হয়েছে। আর বুনোমোষের সাথে সুয়াম্প টাইপেরই বেশী সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। জেনেটিক্যালি দুইটা টাইপের মধ্যে পার্থক্য আছে, সুয়াম্প টাইপ এর ক্রোমোজোম সংখ্যা ৪৮ অন্যথায় রিভার টাইপ এর ক্রমোজোম সংখ্যা ৫০। এদের ক্রসব্রীডের ক্রমোজোম সংখ্যা ৪৯। বেজোড় সংখ্যা হলেও এই ক্রসব্রীডের বকণা বা বাছুর ফার্টাইল হয়, অর্থাৎ বাচ্চা ধারন বা উৎপাদন করতে পারে।

সাধারণত সুয়াম্প টাইপ ডেভেলপমেন্টের পাঁয়তারা তেমন একটা না হউয়াই এরা এদের আদিপুরুষের অধিক নিকটবর্তি, রিভার টাইপ এর তূলনায়। এদের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ভালই, তবে ১৫০০ থেকে ২৫০০ কেজির মধ্যেই বেশী। যেখানে দুধ উৎপাদনে মনযোগী হউয়ায়, দিনে দিনে রিভার টাইপ এর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ৪৫০০-৬০০০ কেজি হলেও অধিকাংশ জাতের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ১৫০০-২৫০০ই থেকে গেছে, যেগুলো সুয়াম্প টাইপের মতই তেমন একটা ইম্প্রুভ করার চেষ্টা হয়নি। সাধারণত মুররাহ স্ট্রেইনের জাতগুলোই অধিক দুধ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এদের বিভিন্ন জাত (মুররাহ) বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত আছে। বাংলাদেশের মুররাহ ১০-১২ কেজি দুধ দেয়, ভারতীয় পশ্চীমা মুররাহ ২৬ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়, পাকিস্তানি মুররাহ ২৩ কেজি পর্যন্ত।

আসলে মুররাহ জাতের মহিষে, বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে এটা ভাবার কোন কারন নেই। কারন সাইজ প্রায় অর্ধেক। খায়ও অর্ধেক। তাহলে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কম এটা ভাবা অমূলক। অবশ্য মুররার দুধ মহিষের জাত সমূহের মধ্যে সবথেকে পাতলা হয়। এর পরেই নিলিরাভী জাতের মহিষের অবস্তান। এটা পাকিস্তানি টাইপ। এরও দুধ উৎপাদন ক্ষমতা মুররার কাছাকাছি, কিন্তু দুধের মান বেশ উন্নত। রিভার টাইপ মহিষের মধ্যে আরও কিছু জাত আছে, যেমন বান্নি জাতের আলাদা মোষ থাকলেও এটি মূলত মুররাহ টাইপ। জাফরাবাদি আসলে রিভার বা সুয়াম্প কোন টাইপই না, এটা আফ্রিকান-এশিয়ান (ওয়াটার) মিক্স। বাংলাদেশেও কিছু স্থানীয় জাতের মোষ আছে, যেগুলোর রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। এদের মধ্যে ভোলার লম্বা শিংওয়ালা জাতটা খুবই ভাল স্থানীয় ও ইউনিক টাইপ এর জাত ছিল। ১০-১২ কেজি করে দুধ দিত। খাদ্যের অভাব, ইনব্রিডীং এর ফলে জাতটা তার স্বকিয়তা হারিয়েছে। তবুও এখনি উদ্যোগ নিলে কিছু ভাল স্ট্রেইনের গাভী, ষাঁড় বাছাই করে এর পূর্বের জৌলুস ফেরান সম্ভব। খুলনাতে আমি ছোট থাকতে একটা মোষ দেখতাম, বেশ বড় হোত। পুরাই দেশী। শিং মুররাহ বা নিলিরাভীর মত হত না। শিং না রিভার, না সুয়াম্প টাইপ। আবার বুনোমোষের ক্রসের মতও হত না। খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল, দুধ দিত সর্বনিন্ম ৮ কেজি। এর দুধে হাত চুবালেই ঘি (মাখন/ফ্যাট) হাতে লেগে যেত। যেগুলো আমরা চেটে চেটে খেতাম। জাতটা বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিনা জানিনা, খুজতেছি। এটির শিং দেখে আলাদা করা কঠিন হলেও, বডির গঠন রিভার টাইপ।

সুয়াম্প টাইপ বা বিলেন (জলাভূমি) মোষের আকার বেশ ছোট হয়, কিন্তু হয় হুলস্তুল। অবশ্য আসাম জাতের মহিষ এমন হয় না। আবার কয়েকটা জাত আছে যেগুলো রিভার টাইপের অধিকাংশ জাত থেকে বড় হয়। অসমিয় বিলেন মোষের আকার যাই হোক, দুধের মান ভাল। আসাম এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির করা এক সমীক্ষায় দেখা যায় এর দুধে ফ্যাটের পরিমান প্রায় ৮.৫%, ননফ্যাট সলিডস ৯% এর বেশী, আর টোটাল সলিডস সাড়ে ১৭% এর বেশী (বা ১৮% এর বেশী)। প্রফেসর গালিবুজ জামান এট’আল (আর এন গোস্বামী, আব্দুল আযি’য প্রমুখ) সমীক্ষাটা চালনা করেন। আমিও লক্ষ্য করেছি, সুয়াম্প টাইপ মোষের দুধ তুলনামূলক অধিক ঘন থাকে। আকার অনুযায়ী কারকাসের ওজন বেশী হয়। আকার অনুযায়ী শক্তিও বেশি হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ দুই টাইপের মিলনকেন্দ্র হউয়ায়, এদেশের দুইটাইপের মধ্যেই অন্য টাইপের কিছু গুন পরিলক্ষিত হয়। মজার কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রকৃতি গরু অপেক্ষা মহিষ পালনের জন্য অধিক বান্ধব। দেশে এখন পর্যন্ত তিনটা আর একটা ইন্ডেজেনস ক্রস গরুর জাত ডিস্কৃপ্টেড হলেও মহিষের জাত সাতটা ও একটা এন্ডেজেনস ক্রস ডিস্কৃপ্টেড হয়েছে। বাংলাদেশে মহিষে বিনিয়োগ সার্বিক বিচারে গরু থেকে অধিক লাভজনক।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ডেইরি গরুর ১০টি জাত

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা ডেইরি গরুর ১০টি জাত বাংলাদেশে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কৃষি খাতের মধ্যে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »