Breaking News

ভেড়া পালন বিষয়ক ২০১ প্রশ্ন-উত্তর:

ভেড়া পালন বিষয়ক ২০১ প্রশ্ন-উত্তর:

১. ভেড়া পালনের উপকারিতা কি?

• ভেড়া থেকে একই সাথে মাংস, দুধ ও পশম পাওয়া যায়।

২. ভেড়া পালনের সুবিধা কি?

• ভেড়ার জন্য আলাদা উন্নত বাসস্থানের প্রয়োজন হয় না। গরু ও ছাগলের মত একই সাথে পালন করা যায়।ভেড়া নিজেদের খাদ্য নিজেরাই যোগাড় করতে পারে। ভেড়া পালনে প্রাথমিক খরচ তুলনামূলক অনেক কম।ভেড়ার সংখ্যা অতি তাড়াতাড়ি বাড়ে, ভেড়ার মলমূত্র জমির সার হিসাবে ব্যবহৃত হয়, জমির আগাছা খেয়ে উপকার করে, জলাশয়ের ঘাস চরে খেতে পারে এবং ভেড়ার রোগ-ব্যাধি কম হয়।

৩. ভেড়ার অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য কি?

• ভেড়া দলবদ্ধ হয়ে বসবাস ও বিচরণ করে, চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কম, চড়ানোর জন্য বাড়তি কর্মীর প্রয়োজন নেই, অপেক্ষাকৃত কম খেয়ে অধিক মাংস ও পশম উৎপাদন করে।

৪. ভেড়া সব ধরণের খাবার খেতে পারে কি?

• ভেড়া তার নরম মুখ দিয়ে অতি ছোট ছোট ঘাস লতাপাতা খেয়ে কৃষি জমির আগাছা কমাতে পারে।

৫. দুধ ও মাংসের পাশাপাশি ভেড়া কত পরিমাণ পশম উৎপাদন করতে পারে?

• প্রতি বছরে প্রতিটি ভেড়া ৩.৫-৫.৫ কেজি পশম উৎপাদন করতে পারে।

৬. ভেড়া পালনে সাধারণ সাময়িক সমস্যা কি হতে পারে?

• ভেড়ার শরীরে অনেক সময় যে ময়লা লাগে তা পরিষ্কার করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়।

৭. গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে ভেড়ার সংখ্যা কি হারে বেড়েছে?

• ১৯৮৩-৮৪ সালে ভেড়া ছিল ৬,৬৭,১৮৯টি ও ১৯৯৬ সালে ছিল ১৬,৮০,০১১টি। গত এক যুগে বছরে প্রায় ১৫% আর বর্তমানে প্রতি বছরে ভেড়া বেড়েছে প্রায় ১২.৭৫%।

৮. বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ভেড়া পাওয়া যায়?

• উত্তর-পশ্চিম বরেন্দ্র অঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের যমুনা ও ব্রহ্মপূত্র অববাহিকা এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ভেড়া পাওয়া যায়।

৯. আমাদের দেশে ভেড়া পালনের কেমন সম্ভাবনা আছে?

• ভেড়া পালন খুবই সম্ভাবনাময় কারণ ভেড়া পালনে অতিরিক্ত তেমন কোন খরচ নেই। সামান্য যত্নে অতি তাড়াতাড়ি ভেড়া বংশ বিস্তার করে এবং দিনের বেলায় ফসলের খালি ক্ষেতে, রাস্তার ধারে ও ফলের বাগানে ছেড়ে বা বেধে পালন করা যায়।

১০. সারা দিনে ভেড়াকে কি ধরণের খাবার দিতে হয়?

• চাউলের সামান্য কুঁড়া, চাল-ভাজা বা ভাতের মাড় ভেড়াকে খাওয়ানো যেতে পারে।

১১. একজন খামারী বা কৃষক গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে কয়টি ভেড়া পালতে পারে?

• একজন খামারী ৩-৬টি ভেড়া পালন করতে পারে।

১২. ভেড়া পালন সহজসাধ্য করার জন্য বাংলাদেশের কোথায় কোথায় গবেষণার কাজ করা হয়?

• ঢাকার অদূরে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের সন্নিকটে বাংলাদেশ প্রাণি সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভেড়া উন্নয়ণের গবেষণা কাজ চলছে।

১৩. বর্তমান বিশ্বে আনুমানিক কত সংখ্যক ভেড়া আছে?

• সারা বিশ্বে ১০৬ কোটিরও বেশি ভেড়া আছে।

১৪. বিশ্বে ভেড়া পালন মূলত কিসের উপর নির্ভরশীল?

• আঞ্চলিক আবহাওয়া, পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং স্বল্প খরচে ও সহজ-প্রাপ্য খাদ্যসাম্গ্রীর উপর ভেড়া পালন নির্ভরশীল।

১৫. কোন কোন অবস্থা বা পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়?

• সম্পূর্ণ ছেড়ে খাওয়ানো, সম্পূর্ণ আবদ্ধ অথবা মিশ্র পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা যেতে পারে।

১৬. উপরিউক্ত পদ্ধতি ছাড়া আর কোন কোন পদ্ধতিতে সাধারণত ভেড়া পালন করা হয়?

• চারণ-ভূমিভিত্তিক এবং ভূমিহীন উৎপাদন ব্যবস্থায় ভেড়া পালন করা হয়।

১৭. পৃথিবীর কোন কোন এলাকায় বা দেশে চারণ-ভূমিতে ভেড়া পালন করা হয়?

• এ অবস্থায় খাদ্যর মূল উৎস্ চারণ-ভুমি। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকাসহ উন্নত প্রায় সব দেশেই চারণ-ভূমিতে ভেড়া পলন করা হয়।

১৮. বিশ্বের মোট ভেড়া উৎপাদনের কত অংশ চারণ-ভূমিতে পালিত হয়?

• প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ভেড়া চারণ-ভূমিতে পালিত হয়।

১৯. বাংলাদেশে ভেড়া উৎপাদন আরও সম্ভাবনাময় করার ক্ষেত্রে কোন দেশকে অনুসরণ করা হচ্ছে?

• কৃষি-উপজাত খাদ্য সামগ্রী যথা খড়, ভূষি ও কৃষি খামারের আগাছা সঠিকভাবে ব্যবহার করে পরিবেশ-বান্ধব ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গ-রাজ্যসমূহের অনুসরণে ভেড়া পালন করা হচ্ছে।

২০. বিশ্বের কোন কোন দেশে ভূমিহীন অবস্থায় ভেড়া পালন করা হয়?

• পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় সম্পূর্ণ আবদ্ধ রেখে ভূমিহীন অবস্থায ভেড়া পালন করা হয়।

২১. উন্নত দেশে ভূমিহীন অবস্থায় ভেড়াকে কি ধরণের খাবার দেয়া হয়?

• উন্নত দেশে তাজা কাঁচা ঘাস, সংরক্ষিত ঘাস, শুকণা ঘাস এবং দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয় যে কারণে অধিকাংশ সময়ই ভেড়া পালন ব্যয়বহুল হয়।

২২. সমগ্র বিশ্বে কত ভাগ ভেড়া ভূমিহীন অবস্থায় পালিত হয়?

• মাত্র ০.৬% ভেড়া ভূমিহীন অবস্থায় পালিত হয়। কৃষিজমি ও চারণ-ভূমি কমে যাচ্ছে বিধায় বাংলাদেশেও তাই ভূমিহীন পদ্ধতিতে ভেড়ার উৎপাদন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

২৩. বাংলাদেশে বিরাজমান বর্তমান আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে উন্নত পশম-উৎপাদনকরী ভেড়া পালন সম্ভবপর হবে কি?

• এদেশীয় গরম ও আর্দ্র জলবায়ূতে বিশেষভাবে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী স্থানীয় জাতের ভেড়া পালন করা যেতে পারে।

২৪. বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটার জায়গায় কয়টি ভেড়া পালন করা হয়?

• বাংলাদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫-৩০টির বেশি ভেড়া পালন করা হয়।

২৫. বাংলাদেশে কোন কোন ব্যবস্থাপনায় ভেড়া পালন করা যায়?

• আধা-নিবিড় সাবসিস্টেন্স পদ্ধতি, সম্পূর্ণ-ছেড়ে পালন, ক্ষুদ্র খামার পদ্ধতি এবং বরেন্দ্র এলাকার আধা-নিবিড় বানিজ্যিক পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা যায়।

২৬. আধা-নিবিড় সাবসিস্টেন্স পদ্ধতিতে ভেড়া পালন বলতে কোন ধরণের পদ্ধতি বুঝায়?

• খামারিগণ গরু-ছাগলের সাথে মিশ্রভাবে ৩-৬টি ভেড়া পালন করেন। ভেড়া রাতের বেলা আলাদা ঘরে থাকে অথবা গরুর সাথে থাকে, দিনের বেলায় ফসলের খালি মাঠে, রাস্তার ধারে, ফলের বাগানে, ছেড়ে বা বেধে পালন করা হয়।

২৭. আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে ভেড়াকে কি ধরণের খাবার দিতে হয়?

• সকালে বা সন্ধ্যায় কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য কুঁড়া, ভূষি, চাল-ভাঙ্গা বা ভাতের মাড় দেয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সবুজ খাবারের প্রাপ্তির বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

২৮. দেশীয় বা স্হানীয় ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদনের হার কেমন?

• স্হানীয় ভেড়া সাধারণত ১২-১৫ মাস পরপর বাচ্চা দেয় এবং প্রতিটি ভেড়া প্রতিবারে ১-৩টি বাচ্চা দেয়।

২৯. ভেড়ার বাচ্চার মৃত্যুর হার কখন কি রকম থাকে?

• বর্ষাকালে মৃত্যুর হার বেশি এবং শুকনা মৌসুমে কম থাকে। বয়স্ক ভেড়ার মৃত্যুর হার খুবই কম কারণ ভেড়ার রোগ-বালাই তেমন দেখা যায় না।

৩০. স্হানীয় ভেড়ার বংশ বাড়াতে কি সমস্যা হতে পারে?

• আন্ত-প্রজননের (ভাইবোন) ফলে বাচ্চার মৃত্যু বা দৈহিক বৃদ্ধি চরমভাবে ব্যাহত হতে পারে বা মারাও যেতে পারে। সাধারণত বানিজ্যিক দৃষ্টিতে এ ধরণের ভেড়া পালন দেখা যায় না।

৩১. সম্পূর্ণ ছেড়ে রাখা পদ্ধতিতে কিভাবে ক্ষুদ্র পরিসরে বানিজ্যিক ভেড়ার খামার করা যায়?

• এ পদ্ধতিতে আধা-নিবিড় পদ্ধতির অনুসরণ করে অনেকটা একইভাবে ভেড়া পালন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ১৫-৪০টি ভেড়া বানিজ্যিকভাবে পালা হয়। মাঠে, বাগানে, রাস্তার ধারে, গরুর সাথে বা এককভাবে ছেড়ে দেশীয় ভেড়া পালন করা হয়।

৩২. বাংলাদেশের কোন কোন জেলায় ছেড়ে-রাখা পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়?

• রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পাবনা জেলায় ছেড়ে-রাখা পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়।

৩৩. বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় শংকর জাতের ভেড়া উৎপাদন করা হয়?

• আবহাওয়া-উপযোগী নতুন জাত সৃষ্টির জন্য রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের কোন কোন খামারী ভারতের ছোট নাগপুরী জাতের ভেড়ার সাথে দেশী ভেড়ার শংকরায়ণ করে ভেড়া পালন করেন।

৩৪. শংকরায়ণের ক্ষেত্রে বাচ্চা উৎপাদনের হার কেমন হতে পারে?

• দেশী ভেড়ার ২-৩টি বাচ্চার তুলনায় শংকর জাতের ভেড়া ১-২টি বাচ্চা কম দেয় তবে শংকর জাতের ভেড়া আকারে বড় এবং ওজনে বেশি হয়।

৩৫. শংকর জাতের ভেড়ায় কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?

• রোগ-ব্যাধি বেশি হতে পারে এবং গর্ভপাত হতে পারে।

৩৬. ছেড়ে-রেখে পালন পদ্ধতির বিশেষ সুবিধা কি?

• তেমন কোন কৃমিনাশক ও খাদ্যের ব্যবস্হা করতে হয় না। ফলে ভেড়া পুষ্টিহীনহায় ভোগে যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে সকালে-বিকালে দুগ্ধবতী ভেড়ীকে প্রতিদিন ৫০-১৫০ গ্রাম কুঁড়া, ভূষি, চাল-ভাঙ্গা এবং ভাতের মাড় সরবরাহ করা হয়।

৩৭. ছেড়ে-রাখা পদ্ধতিতে ভেড়াকে কি সব সময়ই ছেড়ে রাখা হয়?

• দিনের বেলায় কখনও বাঁশের খুঁটি-ঘেরা চালাবিহীন আবদ্ধ স্হানে ভেড়া রাখা হয়। সাধারণত রাতে আলাদা ঘরে বা গরুর গোয়ালে ভেড়া রাখা হয়।

৩৮. শংকর জাতের ভেড়ার ক্ষেত্রে পশম পাওয়া যায় কি?

• সাধারণত বছরে ২-৩ বার পশম কাটা হয়। এ জাতীয় ভেড়ার উৎপাদনের মৌলিক যোগ্যতা সাধারণ বাংলাদেশী ভেড়ার তুলনায় কম।

৩৯. শংকর জাতের ভেড়ার উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো বা ধরে রাখার জন্য কি কি করতে হবে?

• এক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মাত্রায় কাঁচা ঘাস, খড়, সামান্য আমিষ-সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্য, নিয়মিত কৃমিনাশক এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন বাসস্হানের ব্যবস্হা করতে হবে।

৪০. শংকর জাতের ভেড়া পালনের মাত্রা বাড়ানোর জন্য কি কি করা দরকার?

• আর্থিক সীমাবদ্ধতার ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ক্ষুদ্র বা মাঝারি পর্যায়ে ঋণের ব্যবস্হা করে, ভালো গুণাবলীর ভেড়া সরবরাহ করে এবং আগ্রহী খামারীদের ভেড়া পালন-সংক্রান্ত আধুনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সাথে সাথে জাতীয় পর্যায় থেকে উৎসাহমূলক প্রচারের ব্যবস্হা করতে হবে।

৪১. আধা-নিবিড় বানিজ্যিক ব্যবস্হাপনায় কিভাবে ভেড়া পালন করা হয়?

• কিছুটা স্বচ্ছল খামারীগণ এ পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করেন। এ ধরণের খামারে সময়ভেদে ৫০-১৫০টি ভেড়া পালা হয় এবং আলাদা আধা-স্হায়ী বা গরুর গোয়ালে রাতের বেলায় ভেড়া রাখা হয়। ঘরের বাইরে বাঁশের ঘেরা এলাকায় সকালে ও বিকালে ভেড়াকে রাখা হয়।

৪২. আধা-নিবিড় বানিজ্যিক ব্যবস্হাপনায় বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় ভেড়া পালন করা হয়?

• রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পাবনা জেলায় ছেড়ে-রাখা পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়।

৪৩. কোন সময় এবং কোন সুবিধার্থে নিবিড় পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়?
• বৎসরের ডিসেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত সময়ে আমন ধান এবং রবি শস্য কাটার পর ভেড়াকে মাঠে চরানো হয়। এ সময়ে ভেড়াগুলো ঝরা ধান, ঝরা ছোলা, ঝরা খেসারী এবং গজানো নতুন ঘাস, ধানের খড় ও ভূষি খেয়ে থাকে যে কারণে রাতে কোন বাড়তি খাবার দেয়া হয় না।

৪৪. জুলাই-নভেম্বর মাসে ভেড়াকে কি ধরণের খাদ্য খাওয়ানো হয়?

• সকালে ও রাতে ১০০-১৫০ গ্রাম শুকনো খড়, ১৫০-২৫০ গ্রাম গমের ভূষি বা চালের কুঁড়া দেয়া হয়।

৪৫. বৃষ্টির সময়ে ভেড়াকে কি ধরণের খাবার খাওয়ানো হয়?

• গাছের পাতা যথা-বড়ই, কাঁঠাল, গামার, ইপিল-ইপিল ইত্যাদির পাতা কেটে খাওয়াতে হয়। কখনো কখনো খামারীর বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড়ে ভেড়াকে চরতে দেয়া হয়।

৪৬. নিবিড় বানিজ্যিক খামারে ভেড়ার বংশ বাড়াতে কী ধরণের প্রজনন করানো হয়?

• খামারীদের নিজেদের ভেড়ার মধ্যে প্রজনন করানো হয়। আবার কোন কোন সময়ে ভারতীয় ছোট নাগপুরী জাতের পাঁঠা-ভেড়ার সাথে দেশীয় ভেড়ার প্রজনন করানো হয়।

৪৭. শংকরায়িত ভেড়া থেকে কিভাবে বেশি লাভবান হওয়া যায়?

• দেশী ভেড়ার তুলনায় একই বয়সের (৬ মাস) শংকর জাতের ভেড়া থেকে প্রায় দ্বিগুণ মাংস পাওয়া যায়।

৪৮. দেশী বা নাগপুরী ধরণের ভেড়ার শংকরায়ণের ফলে কি অসুবিধা হতে পারে?

• শংকরায়িত ভেড়া বারবার গরম হয় এবং ভেড়ার গর্ভপাত হতে পারে।

৪৯. বাচ্চা প্রসবের পরবর্তীতে ভেড়াকে কত দিন পর প্রজনন করানো হয় এবং কত দিন পর বাচ্চা দেয়?

• ভেড়াকে ২-৩ মাস পরে বা কোন কোন ক্ষেত্রে ৬-৭ মাস পরে প্রজনন করানো হয়। প্রতি ৬ মাস পরপর ভেড়া বাচ্চা দেয়। সেক্ষেত্রে ভেড়ার প্রসব বিরতিকাল ৭-৮ মাস হতে পারে।

৫০. শংকরায়িত ভেড়ার কি কি রোগ হতে পারে?

• ব্রুসেলোসিস রোগ দেখা দিতে পারে যার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। কৃমির জন্য বছরে ২-৩ বার কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবে প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।

৫১. শংকরায়িত ভেড়ার পশম কতবার কাটা যায়?

• বছরে ৩-৪ বার ভেড়ার পশম কাটা হয়। প্রতিবারে ০.৫-০.৭৫ কেজি পশম পাওয়া যায় এবং পশম মোটা ও ফাঁপা হওয়ায় তা থেকে নিম্নমানের কম্বল তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে পশম উৎপাদন থেকে তেমন লাভবান হওয়া যায় না বরং পশম কাটার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়।

৫২. শংকরায়িত ভেড়ার আর কি কি সমস্যা হতে পারে?

• আন্তঃপ্রজননের ফলে যৌনব্যাধি, কৃমি ও নিওমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হতে পারে।

৫৩. বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কোন কোন স্থানে ভেড়া পালন করা হয়?

• মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলে পশ্চিমে তেঁতুলীয়া নদীর পূর্ব তীর, পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেল হয়ে ফেনী নদীর মোহনা এবং পটুয়াখালীর উপকূলে বেশি সংখ্যক ভেড়া পালন করা হয়।

৫৪. মধ্যাঞ্চলীয় উপকূল ভেড়া পালনের জন্য বেশি উপযোগী কেন?

• পর্যাপ্ত চারণভূমি থাকায় এ উপকূল ভেড়া পালনের জন্য বিশেষ উপযোগী।

৫৫. মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলে কি পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা হয়?

• ছোট আকারের খামারে ১০-৫০টি এবং বড় আকারের খামারে ২০০-৪০০০টি ভেড়া পালন করা হয়।

৫৬. কোন কোন জেলায় ছোট ছোট খামারে ভেড়া পালন করা হয়?

• চট্টগ্রাম, বরিশাল এবং পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ছোট আকারের খামারে ভেড়া পালন করা হয়।

৫৭. ছোট আকারের খামারে ভেড়ার খাদ্য জোগান দেয়া হয় কিভাবে?

• চরাঞ্চলে গজানো দুর্বা, উরিসহ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের লতাপাতা খেয়ে ভেড়া জীবন ধারণ করে।

৫৮. বর্তমানে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ এলাকায় ভেড়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে কেন?

• লবণ ও চিংড়ি চাষের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে বিধায় ভেড়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

৫৯. মধ্যাঞ্চলীয় উপকূলের লবণাক্ত চারণভূমিতে কিভাবে ভেড়া পালিত হয়ে থাকে?

• চারণভূমিতে অভ্যস্ত দুইশত থেকে এক হাজার পর্যন্ত ভেড়া পালিত হয়। মহিষ এবং গরুর সাথে এ সব ভেড়া পালন করা হয়।

৬০. এ সব ভেড়ার জন্য আলাদা কোন বাসস্থান তৈরি করা হয় কি?

• খামারীগণ রাত্রি যাপনের জন্য চরের উঁচু জায়গায় কেল্লা তৈরি করে এবং সেখানে ভেড়া ও মহিষ এক সাথে রাখে।

৬১. ভেড়াকে কখন খাবার দেয়া হয়?

• সাধারণত রাতের বেলায় ভেড়াকে কোন খাবার দেওয়া হয় না। সারাদিন ভেড়া কাঁদা-বালু-মাখা ঘাস চরে খায়। এ কারণে অনেক সময় ভেড়া অপুষ্টিতে ভোগে। জোয়ারের সময় ভেড়া নিকটবর্তী উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।

৬২. উপকূলীয় অঞ্চলের খামারীগণ ভেড়ার বংশ বিস্তার করেন কিভাবে?

• নিজস্ব পাঁঠা-ভেড়া দিয়ে প্রজনন করিয়ে খামারীগণ বংশ বিস্তার ঘটিয়ে থাকেন।

৬৩. নিজস্ব পাঁঠা-ভেড়া দ্বারা প্রজনন করালে কোন অসুবিধা হয় কি?

• অন্ত:প্রজননের ফলে বিশেষ সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ সব ভেড়ার “বরুলা জীন” আছে বলে প্রতিবারে ২-৩টি বাচ্চা দেয় এবং ১২-১৫ মাসে দু’বার বাচ্চা দেয়। কারো কারো মতে তাদের খামারের ভেড়া তের মাসে তিন-চারটা বাচ্চা দেয়।

৬৪. উপকূলীয় এলাকায় কোন সময় ভেড়া বিক্রি হয়ে থাকে?

• ঈদুল-আযহা, ঈদুল-ফিতর, কালীপূঁজা এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে আতিথেয়তার জন্য ভেড়া ক্রয়-বিক্রয় করা হয়।

৬৫. সমণ্বিত অবস্থায় খামারে কিভাবে ভেড়া পালন করা হয়?

• দেশের বরেন্দ্র এলাকায় গরুর সাথে রেখে ভেড়া পালন করা হয়। কোন কোন এলাকায় হাঁস-মুরগি-গরু-ফসলের মিশ্র খামারেও ভেড়া পালন করা হয়।

৬৬. সমণ্বিত খামারের ভেড়াকে কি ধরণের খাবার দেয়া হয়?

• খামারের মূল ফসলের উপজাত সামগ্রীকে ভেড়ার খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয় তবে পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাধারণ খাদ্য সামগ্রীও সরবরাহ করা হয়।

৬৭. নিবিড় ব্যবস্থায় কিভাবে ভেড়া পালন করা হয়ে থাকে?

• সম্পূর্ণ-আবদ্ধ অবস্থায় প্রাকৃতিক ঘাস, খড় এবং দানাদার খাদ্য সরবরাহ করে ভেড়া পালন করা হয়, বড় আকারের খামারের জন্য উচ্চফলনশীল ঘাসের চাষ করতে হয়।

৬৮. অন্যান্য ব্যবস্থার তুলনায় নিবিড় পদ্ধতিতে কি কি সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক?

• খামারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, প্রজনন ও যথাযথ আবাসন ব্যবস্থা, জৈব-নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।

৬৯. আর কোন পদ্ধতিতে ভেড়া পালন করা যায়?

• দেশের উপজেলা এবং জেলা সদরে সম্পূর্ণ ছাড়া-অবস্থায় ভেড়া পালন করা হয়ে থাকে। এ্ ধরণের ভেড়া পালনে কোন খাদ্য বা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয় না।

৭০. অনির্ধারিত ভেড়া পালনে ভেড়া কোথা থেকে কিভাবে খাবার খেতে পারে?

• বাজার, হোটেল ও রেস্টুরেন্টের উচ্ছিষ্ট খাবার ও আবর্জনা খেয়ে ভেড়া বেঁচে থাকে। ভেড়াগুলো সাধারণত রাতের বেলায় বাজারের খোলা ঘরে আশ্রয় নেয়। এ ধরণের ভেড়া পালনে অত্যন্ত ঝুঁকি রয়েছে, যে কোন সময় অজানা কারণে ভেড়া হারিয়ে যেতে পারে।

৭১. সার্বিক উপায়ে কিভাবে ভেড়ার জৈব নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?

• খামারের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিতে হবে, বহিরাগত মানুষ ও পশুর আনাগোনা রোধ করতে হবে।

৭২. কোন কোন রোগের প্রতিরোধের জন্য ভেড়াকে টিকা দিতে হবে?

• অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক ও সরবরাহকারীর পরামর্শমতে বয়স ভেদে ভেড়াকে একযাইমা, ক্ষুরা রোগ, পিপিআর ও এন্টেরোক্সিমিয়া প্রতিরোধের টিকা প্রদান করতে হবে।

৭৩. ভেড়ার খামার লাভজনক হওয়ার পূর্ব শর্ত কি?

• সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও উৎপাদনক্ষম ভেড়া খামারের জন্য লাভজনক কারণ ভেড়া অসুস্থ থাকলে তাদের দৈহিক বৃদ্ধি, বাচ্চা প্রদান ও দুধ উৎপাদন কমে যাবে।

৭৪. একটি সুস্থ ভেড়ার কি কি লক্ষণ দেখা যেতে পারে?

• দলের সাথে চলবে, অন্য ভেড়াকে অনুসরণ করবে, আনমনে খাদ্য গ্রহণ করবে, মাথা শরীরের সাথে সমানভাবে লেগে থাকবে, কাউকে বা কিছু দেখলে মাথা উঁচু করে তাকাবে, পরক্ষণেই খাবার খাবে এবং নাক চোখ পরিচ্ছন্ন থাকবে।

৭৫. সুস্থ ভেড়ার পায়খানা প্রস্রাব কেমন দেখা যাবে?

• সুস্থ ভেড়ার পায়খানা দানাদার হবে, পায়খানার রাস্তা পরিস্কার থাকবে এবং প্রস্রাব খড়ের রঙের মত দেখা যাবে।

৭৬. সুস্থ ভেড়ার নাড়ী স্পন্দন কত হতে পারে?

• ৭০-৯০ বার হতে পারে এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করবে।

৭৭. ভেড়াকে কোন পর্যায়ে রুগ্ন বলা যেতে পারে?

• অসুস্থতার যে কোন একটি লক্ষণ দেখতে পেলেই ঐ ভেড়াকে রুগ্ন বা রোগাক্রান্ত ভেড়া হিসাবে ধরে নিতে হবে।

৭৮. কি কি কারণে ভেড়া রোগাক্রান্ত হতে পারে?

• সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, মাইকোপ্লাজমা, পরজীবি, অপুষ্টি, বংশগত অস্বাভাবিকতা, বিপাকীয় সমস্যা এবং বিষাক্ত পদার্থের কারণে ভেড়া রোগাক্রান্ত হতে পারে।

৭৯. যে সমস্ত রোগে ভেড়া আক্রান্ত হয়ে থাকে তাদের নাম কি কি?

• স্ট্রাক, এন্টেরোটক্সিমিয়া বা পাল্পি, কিডনী ডিজিজ, ব্রাক্সি, ব্লাক ডিজিজ, ভেড়ার বাচ্চার আমাশয় ও ওলান পাকা বা ম্যাসটাইটিস, নিউমোনিয়া, ভিবরিওসিস, ব্রুসেলোসিস, ধনুষ্টংকার, ফুটরট, সালমোনেলোসিস, বর্ডার ডিজিজ, বসন্ত, প্লেগ বা পিপিআর, ক্ষুরা রোগ, একযাইমা, কক্সিডিওসিস, টক্সোপ্লাসমোসিস, কলিজা কৃমি, হিমোনকোসিস মেনুজ, উঁকুন, আঁঠালী, প্রেগনেন্সি টক্সিমিয়া, নিয়োনেটাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া ইত্যাদি রোগ ভেড়ার হতে পারে।

৮০. ভেড়ার রোগ প্রতিরোধের জন্য কি কি করণীয় থাকতে পারে?

• রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ভাল জাতের ভেড়া পালন, খামারসহ সকল পর্যায়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, টিকা প্রদান, সুষম ও নিয়মিতভাবে খাদ্য সরবরাহ, জৈব-নিরাপত্তাসহ সম্ভাব্য সকল বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, রোগ সম্পর্কে খামারীকে ধারণা নিতে হবে এবং সর্বোপরি অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে।

৮১. ভেড়ার সকল রোগের সাধারণ লক্ষণ কি হতে পারে?

• ভেড়ার খাদ্য গ্রহণ ও চলাফেরায় অনীহা দেখা দেবে এবং দল থেকে আলাদা থাকবে।

৮২. অর্ধ-আবদ্ধ অবস্থায় ৫০টি ভেড়া পালনে ৫ বছরে আনুমানিক কত টাকা লাভ হতে পারে?

• ২০১৩ সালের এক হিসাব মতে ৪,৯০,৩৬৯.০০ টাকা লাভ হতে পারে।

৮৩. সুস্থ সবল ভেড়ার বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম কি কি করণীয় থাকতে পারে?

• গর্ভবতী ভেড়াকে সার্বিক বিবেচনায় সুস্থ সবল রেখে প্রসবোত্তর বাচ্চার সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮৪. কিভাবে গর্ভবতী ভেড়ার যত্ন নিতে হবে?

• সুষম খাদ্য নিশ্চিত করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে, হঠাৎ খাদ্য পরিবর্তন করা যাবে না, প্রেগনেন্সি টক্সিমিয়া এড়ানোর মাধ্যমে গর্ভবতী ভেড়া ও গর্ভস্থ বাচ্চার মৃত্যু হার কমাতে হবে, ভাল মানের আঁশ-জাতীয় খাদ্য এবং খাদ্যে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম মিশাতে হবে।

৮৫. গর্ভবতী ভেড়াকে দানাদার খাদ্য কিভাবে খাওয়াতে হবে?

• দৈহিক ওজনের বিবেচনায় মোটা দানাদার খাদ্যকে দু’ভাগে ভাগ করে সকালে ও বিকালে দু’বার সরবরাহ করতে হবে।

৮৬. গর্ভবতী ভেড়াকে ভিটামিন সরবরাহ করার দরকার আছে কি?

• গর্ভধারণের চার সপ্তাহ পরেই ১-২ মি.লি. ভিটামিন এডি৩ই এবং গর্ভধারণের ১৯ সপ্তাহে ১-১.৫ মি.লি. ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ইনজেকশন দিয়ে গর্ভস্থ বাচ্চার ভিটামিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৮৭. গর্ভবতী ভেড়াকে কোন টিকা দেয়ার প্রয়োজন আছে কি?

• যেকোন উপায়ে ক্লোলস্ট্রিডিয়াল ভ্যাকসিন দিয়ে গর্ভবতী ভেড়ার জরায়ু প্রদাহ, বাচ্চার আমাশয় ও টিটেনাস ইত্যাদি রোধ করতে হবে।

৮৮. গর্ভকালের শেষ পর্যায়ে ভেড়ার কি কি যত্ন নিতে হবে?

• স্থানান্তর বা অন্য কোন ধরণের পীড়া দেয়া যাবে না, পাঁঠা থেকে আলাদা রাখতে হবে এবং গর্ভবতী ভেড়াকে অন্য ভেড়ার সঙ্গে রাখা যাবে না।

৮৯. সদ্যপ্রসূত ভেড়ার বাচ্চার কি ধরণের সমস্যা হতে পারে?

• সদ্যপ্রসূত বাচ্চার প্রধান সমস্যা হচেছ অপুষ্টি, শারিরীক তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।

৯০. সদ্যপ্রসূত ভেড়ার বাচ্চার পুষ্টিমাত্রা কি রকম হওয়া দরকার?

• বাচ্চার জন্মের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত শরীরে মজুদ শক্তি কমতে থাকে । তাই প্রসবের সাথে সাথেই খাদ্যের বিপাকীয় শক্তি, আমিষ এবং অন্যান্য পুষ্টির মাত্রা বাড়াতে হবে অন্যথায় বাচ্চাকে বাঁচানো বা দৈহিক বৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব হবে না।

৯১. প্রথম সপ্তাহে বাচ্চাকে কি ধরণের খাবার দিতে হবে?

• ওজনভেদে ২৫০-৪৫০মি.লি. দুধ দিতে হবে। বাচ্চার ওজন ১ কেজির কম হলে মায়ের দুধের পাশাপাশি ২০-৪০ গ্রাম পরিমাণ চিনির শিরা বা ডেক্সস্ট্রোজ স্টমাক-টিউব দিয়ে দিনে ৩-৪ বার খাওয়াতে হবে।

৯২. সদ্যপ্রসূত ভেড়ার বাচ্চার শারিরীক তাপমাত্রা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে?

• বয়স্ক ভেড়ার তুলনায় বাচ্চা ভেড়ার শরীরের পরিধি প্রায় দ্বিগুণ বেশি। ফলে বাচ্চা ভেড়া তার শরীর থেকে বয়স্ক ভেড়ার তুলনায় বেশি হারে তাপ হারায়। যদি বাচ্চা ভেড়ার শরীরের তাপ হারানোর পরিমাণ শরীরে উৎপাদিত তাপের চেয়ে বেশি হয় তবে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক (৩৮.৮ ডিগ্রি সে.) থেকে দ্রুত নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় সাথে সাথে বাচ্চাকে উষ্ণ স্থানে ৩০ ডিগ্রি সে. তাপে বা রোদে রাখতে হবে।

৯৩. হাইপোথারমিয়া বা শীতলতা কি?

• সদ্যজাত ভেড়ার বাচ্চার একটি শারীরিক অবস্থা যাতে শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৭ ডিগ্রি সে.-এর নিচে নেমে যায়। পরবর্তীতে তাপমাত্রা ৩৬.৬ ডিগ্রি সে. পৌছালে বাচ্চা নিস্তেজ হয়ে এক সময় মারা যায়। এ ধরণের মৃত্যুকে হাইপোথারমিয়া বা শীতলতাজনিত মৃত্যু বলে।

৯৪. হাইপোথারমিয়া বছরের কোন সময় দেখা দিতে পারে এবং এর ফলাফল কি হতে পারে?

• শীতকালে যখন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সে.-এর নিচে নামে তখন বাচ্চা কাঁপতে থাকে ও হাইপোথারমিয়া সমস্যা দেখা দেয় এবং খামারে ৩৫-৫৫% বাচ্চা মারা যেতে পারে । খড়কুটার আগুণ জ্বালিয়ে এবং কাপড় বা চট দ্বারা বাচ্চার শরীর গরম করার দরকার এবং অবস্থার প্রেক্ষাপটে ৩০ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় রোদে রাখা দরকার।

৯৫. ভেড়ার বাচ্চার হাইপোথারমিয়া রোধ করতে কি কি ব্যবস্থা নিতে হবে?

• গর্ভাবস্থায় ভেড়াকে পরিমিত মাত্রায় সুষম খাদ্য খাওয়ালে ক্ষীণ, দূর্বল ও কম ওজনের (১ কেজি বা তার কম) বাচ্চা জন্মাবে না । গর্ভবতী ভেড়ার ওজন কমপক্ষে ১৫ কেজি বা তার বেশি হতে হবে, জন্মের ৩০ মিনিট পরেই বাচ্চাকে প্রতি ঘন্টায় শাল দুধ খাওয়াতে হবে, শাল দুধ খেতে বাচ্চাকে সহায়তা করতে হবে, প্রসবের পরপর বাচ্চাকে আরামদায়ক পন্থায় রোদে বা গরম স্থানে মায়ের সাথে রাখতে হবে, ভেড়া ও বাচ্চাকে পরিমিত মাত্রায় খাবার সরবরাহ করতে হবে, শীতকালে প্রসব হলে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সে. রাখতে হবে।

৯৬. ভেড়ার খামারে বাচ্চার মৃত্যু কখন ও কি কারণে হয়ে থাকে?

• প্রসবের আগে ১০-২০%, প্রসবের সময় ১০-২০%, প্রতি শীতে হাইপোথারমিয়ায় ১৫-২৫%, জন্মের ৫ ঘন্টার পরে শাল দুধ না খাওয়ানোতে হাইপোথারমিয়ায় ২০-৩০%, সংক্রামক রোগে ১০-১৫%, জন্মগত ক্রটিতে প্রায় ৫% এবং আঘাত বা প্রিডেটরজনিত কারণে প্রায় ৫% খামারে ভেড়ার বাচ্চা মারা যায়।

৯৭. ভেড়ার খামারে সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ করার উপায় কি কি হতে পারে?

• জন্মের সাথে সাথে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। তাই মায়ের উৎপাদিত শাল দুধ বাচ্চাকে এন্টিবডির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। ভেড়ার বাচ্চার অন্ত্রে ১২ ঘন্টা পর থেকে শাল দুধে বিদ্যমান এন্টিবডি শোষণের হার কমতে থাকে। এ কারণে জন্মের পর ১২ ঘন্টা পর্যন্ত বাচ্চাকে শাল দুধ খাওয়াতেই হবে। মায়ের শাল দুধের প্রদত্ত রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। ভেড়ার বাচ্চার ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানার সাথে রক্তও আসতে পারে। এমতাবস্থায় বাচ্চাকে দিনে বারবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে এবং দূর্বল বাচ্চাকে বোতলের মাধ্যমে দুধ না খাইয়ে ফিডারে দুধ খাওয়াতে হবে।

৯৮. বিভিন্ন রোগের টিকা কোন কোন বয়সে প্রদান করা হয়?

• একযাইমা (১ম ডোজ-৩য় দিনে, ২য় ডোজ ১০-১৪ দিনে), ক্ষুরারোগ (১ম ডোজ-৩য় মাসে), পিপিআর (১ম ডোজ-৪র্থ মাসে) শীপপক্স (১ম ডোজ-৫ ম মাসে), এন্টেরোটক্সিমিয়া (১ম ডোজ-৬ মাসে)।

৯৯. ভেড়ার বাচ্চাকে খাসী করানো হয় কেন?

• দৈহিক ওজন বাড়ানোর জন্য, স্বভাব নরম করার জন্য এবং মারামারি বন্ধ করার জন্য, আবার কোন কোন সময় যৌনব্যাধির চিকিৎসার জন্য খাসী করানো হয়।

১০০. ভেড়ার প্রজননের খামারে ভেড়া ও ভেড়ীর অনুপাত কি হওয়া উচিত?

• ভেড়া: ভেড়ী = ১:১ হওয়া উচিত।

১০১. ভেড়াকে কোন ক্ষেত্রে খাসী করানো হয়?

• যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা যায় না তখন খাসী করানো হয়।

১০২. ভেড়াকে কোন কোন উপায়ে খাসী করানো যায়?

• রাবার রিং, বার্ডিজোস এবং অন্ডকোষ-কাটা পদ্ধতিতে।

১০৩. উল্লিখিত তিনটি পদ্ধতিতে কিভাবে খাসী করানো হয়?

• রাবার রিং পদ্ধতিতে এক মাস বয়সে অন্ডকোষের উপরের অংশে শক্ত রাবার রিং পরিয়ে দিলে কিছুদিন পর অন্ডকোষ খুলে পড়ে যায়। বার্ডিজোস ক্যাসট্রেটর পদ্ধতিতে ২-৩ মাস বয়সের বাচ্চার অন্ডকোষের উপরের অংশে অন্ডকোষের নালীকাকে বার্ডিজোস ক্যাসস্টেটরের সাহায্যে চাপ প্রয়োগ করে থেতলিয়ে দেওয়া হয়। দেশের উপজেলা পশু হাসপাতালের উপকেন্দ্রে এ পদ্ধতিতে খাসী করানো হয়। দুই-তিন সপ্তাহের বয়সী ভেড়ার বাচ্চাকে অন্ডকোষ-কাটার পদ্ধতিতে খাসী করানো হয়। ভেড়ার ছানার অন্ডকোষ থলিতে টিংচার আয়োডিন দ্বারা জীবাণুমুক্ত করে চেতনাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। ধারালো ব্লেড দ্বারা আন্ডকোষের থলের শেষের মাঝখানে কেটে অন্ডকোষ বের করা হয় এবং এক্ষেত্রে অন্ডকোষের নালী সুতা দ্বারা বেঁধে নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। অন্ডকোষ বের করার পর ক্ষত স্থানে সালফোনিলামাইড পাউডার প্রয়োগ করে যেকোন একটি ব্রডস্পেক্ট্রাম এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়।

১০৪. ভেড়ার শিং উঠা বন্ধ করার দরকার হয় কি?

• বাংলাদেশে কেবলমাত্র পুরুষ ভেড়ার শিং হয় এবং স্ত্রী ভেড়ার হয় না। খামার ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পুরুষ ভেড়ার শিং উঠা বন্ধ করা যেতে পারে। ৩-৪ সপ্তাহ বয়সের ভেড়ার শিঙের গোড়ার চারপাশে ছোট লোম কেটে তাতে গরম লোহা দিয়ে পুড়িয়ে দিলে শিং উঠা বন্ধ হয়ে যাবে।

১০৫. উৎপাদনশীলতাভেদে কি কি প্রয়োজনে ভেড়ার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা হয়?

• জীবন ধারণ, দৈহিক বৃদ্ধি, প্রজনন, দুধ ও পশম উৎপাদন এবং শারিরিক চলাফেরার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের প্রয়োজনে ভেড়ার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা হয় । ভেড়ার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা তার ওজন ও উৎপাদনের পার্থক্যের উপর নির্ভর করে নিরূপণ করা হয়।

১০৬. গর্ভবতী ভেড়ার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা কিসের উপর নির্ভরশীল?

• জীবন ধারণ, দৈহিক বৃদ্ধি, প্রজনন, উৎপাদন এবং চলাফেরার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের প্রয়োজনে খাদ্য সরবরাহ করা হয়।

১০৭. ভেড়ার খাদ্যাভ্যাস কি রকম?

• গরুর মত মাটিতে বিচরণ করে খাদ্য খায়, আবার ছাগলের মত লতা-গুল্ম-জাতীয় গাছের পাতাও খায়, খাদ্যের প্রতি বাছ-বিচার খুবই কম। অতি সামান্য সময়ে পরিবর্তিত খাদ্য সামগ্রী খেতে অভ্যস্ত হয়। ঘাস, লতা-পাতা, সাইলেজ, খড় ও দানাদার খাদ্য খেয়ে ভেড়া জীবন ধারণ করে। খাদ্যের অভাবে ভেড়া খড়, নাড়া ইত্যাদি খায়।

১০৮. শুধু খড় ও নাড়া খেলে ভেড়ার শরীরের কি পরিবর্তন হয়?

• পাকস্থলীর আয়তন ও পানি ভেড়ার খাদ্য পাচ্যতার সময় বাড়ায় এবং ফলে খাদ্যের পাচ্যতা প্রায় ১১% পর্যন্ত বাড়তে পারে।

১০৯. ভেড়াকে কি কি দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয়?

• শস্য বীজ (ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদি), ভূষি (গম, চালের কুঁড়া, মাস কলাই, খেসারী, মটর ইত্যাদির ভূষি), খৈল (সরিষা, তিল, সয়াবিন ইত্যাদির খৈল), প্রাণীজাত খাদ্য (মাছের গুঁড়া), ডাইক্যালসিয়াম ফসফেট, লবণ ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট অনুপাতে খাওয়াতে হয়।

১১০. পরিমিত পুষ্টি সরবরাহের স্বার্থে ভেড়ার খাদ্যে বিভিন্ন দানাদার খাদ্য মিশানোর শতকরা হার কত?

• ভেড়ার বয়স এবং উৎপাদনের উপর নির্ভর করে নিম্মোক্ত হারে হতে পারে: শক্তি ও আমিষের জন্য শস্যবীজ ০-৩০%, ভূষি-১৫-৫০%, আমিষের জন্য খৈল/সয়াবিন ১৫-২৫%, প্রাণীজাত খাদ্য ০-৫%, খনিজের জন্য খনিজ উপজাত ০-৩%, ভিটামিন ও খনিজ বা প্রাপ্ত ভিটামিনারেল প্রিমিক্স ০.০৫%।

১১১. বানিজ্যিক খামারে উচ্চফলনশীল কি কি ঘাসের আবাদ করা হয়?

• বড় আকারের খামারে নিবিড় কিংবা আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে ভেড়া পালনের জন্য উচ্চফলনশীল জাতের যে সকল ঘাসের চাষাবাদ করা হয় সেগুলো হল: নেপিয়ার, পারা, স্প্লেনডিডা, প্লিকাটুলুম, রোজা, এন্ড্রোপোগন, গিনি, সিগনাল ইত্যাদি ঘাসের চাষ করা হয়।

১১২. উচ্চফলনশীল এ ঘাসগুলো বৎসরে কতবার লাগাতে হয়?

• ঘাসগুলো বহুবর্ষজীবী বিধায় একবার লাগালে বেশ কয়েক বছর আর লাগাতে হয় না।

১১৩. শীতকালে কোন কোন ঘাস লাগানো যায়?

• ভূট্টা, ওটস, ট্রিটিক্যালা ইত্যাদি ঘাসের চাষ করা য়ায়।

১১৪. ডাল-জাতীয় ঘাস কি কি হতে পারে?

• মাসকলাই, খেসারী ও কাউপি ইত্যাদি।

১১৫. পাতা বা কচি বহুবর্ষী ঘাস কি কি?

• ইপিল-ইপিল, কাঁঠাল, গ্লিরিসিডিয়া, বাবলা, মান্দার ও জিয়লভাদি গাছের পাতা ভেড়াকে খাওয়ানো হয়।

১১৬. ইউএমএস (ইউরিয়া-মোলাসেস-স্ট্র) ভেড়াকে খাওয়ানো যায় কি?

• ইউরিয়া-মোলামেস-স্ট্র ভেড়াকে খাওয়ানো যাবে তবে ছাগলকে খাওয়ানোর যে পদ্ধতি তা অনুসরণ করতে হবে।

১১৭. ভেড়ার বাচ্চার খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে মা-ভেড়ার খাদ্য ব্যবস্থাপনার কোন সম্পর্ক আছে কি?

• গর্ভবতী ভেড়ার খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে গর্ভস্থ বাচ্চার খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন লক্ষ্য করে খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে।

১১৮. ভেড়ীর গর্ভধারণ কাল কতদিন?

• ভেড়ীর গর্ভধারণ কাল ১৪৫-১৪৮ দিন।

১১৯. ভেড়ার গর্ভাবস্থার কোন সময়ে গর্ভস্থ বাচ্চার পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য কি ধরণের খাবার দিতে হবে?

• গর্ভকালের শেষ দু’মাসে গর্ভস্থ বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য যথোপযুক্ত সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

১২০. ভেড়ার বাচ্চাকে কখন দুধ খাওয়াতে হবে?

• জন্মের পরপরই পরিষ্কার ও শুকনা অবস্থায় অতি শীঘ্রই মায়ের শাল দুধ খাওয়াতে হবে।

১২১. ভেড়ার বাচ্চাকে কেন শাল দুধ খাওয়ানো হয়?

• বাচ্চার প্রয়োজনীয় প্রায় সকল পুষ্টির চাহিদা শাল দুধ মেটাতে পারে যে কারণে বাচ্চার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

১২২. একাধিক বাচ্চা হলে কিভাবে শাল দুধ খাওয়াতে হবে?

• যথেষ্ট পরিমাণ শাল দুধ না থাকলে শাল দুধের পাশাপাশি বয়স ও ওজন মোতাবেক গাভীর দুধ এবং ভাতের মাড় ফিডার বোতলের সাহায্যে খাওয়াতে হবে।

১২৩. বয়স এবং দৈহিক ওজন অনুসারে ভেড়ার বাচ্চাকে মায়ের দুধ, দানাদার খাদ্য এবং কচি ঘাস কি কি অনুপাতে খাওয়াতে হবে?

• জন্ম থেকে ৬ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত প্রতি বাচ্চাকে গড়ে ৫৫ মিলি লিটার দুধ, দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দানাদার খাদ্য এবং কচি ঘাসের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সহজপ্রাপ্য পুস্তক বা নির্দেশিকার সহায়তা নিতে হবে।

১২৪. বাংলাদেশী ভেড়া গড়ে কয়টি বাচ্চা প্রসব করে এবং এসব বাচ্চার ওজন কত কেজি হতে পারে?

• বাংলাদেশী ভেড়া গড়ে প্রায় ২টি বাচ্চা প্রসব করে এবং বাচ্চার ওজন ১.০-১.৫ কেজি ওজনের হতে পারে।

১২৫. ভেড়ার বাচ্চার জন্মের পর প্রথম ঘন্টায় কি পরিমাণ শাল দুধ খাওয়াতে হবে?

• প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মি.লি. শাল দুধ খাওয়াতে হবে।

১২৬. এক মাস বয়সে বাচ্চার ওজন কত হয় এবং তখন প্রতিদিন কি পরিমাণ সাধারণ দুধ খাওয়াতে হবে?

• প্রায় ৩ কেজি এবং ৫০০ মি.লি.।

১২৭. ভেড়ার নিজের উৎপাদিত দুধ থেকে কি দুটি বাচ্চার চাহিদামত ১০ লিটার দুধ খাওয়ানো যাবে?

• পর্যাপ্ত সুষম খাদ্য খাওয়ালে সম্ভব হতে পারে।

১২৮. কোন বয়সে ভেড়ার বাচ্চাকে দানাদার খাবার এবং কচি ঘাস খাওয়ানো শুরু করতে হবে?

• দু’সপ্তাহ বয়সের ভেড়ার বাচ্চাকে দানাদার খাদ্য, কচি ঘাস ও লতাপাতা খাওয়াতে হবে।

১২৯. কোন বয়সে বাচ্চার দুধ খাওয়া কমাতে হবে?

• ৬-৮ সপ্তাহ বয়সে দুধের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।

১৩০. কোন বয়সের ভেড়াকে ইউএমএস (প্রক্রিয়াজাত খড়) এবং সাইলেজ (সংরক্ষিত ঘাস) খাওয়ানো যায়?

• যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচা ঘাস থাকে যেখানে ৭-৮ সপ্তাহ বয়সেই ভেড়ার বাচ্চাকে ইউএমএম এবং সাইলেজ খাওয়ানো যাবে।

১৩১. ভেড়ার দুধ উৎপাদন অপর্যাপ্ত হলে বাচ্চাকে অন্য কি খাওয়ানো যাবে?

• ফিডার বা নিপলের সাহায্যে দিনে অন্তত ৩-৪ বার বিকল্প দুধ খাওয়াতে হবে।

১৩২. ভেড়ার বাচ্চার বিকল্প দুধ বা মিল্ক রিপ্লেসার কিভাবে তৈরি করা যায়?

• গুঁড়া দুধ ৭০%, চাল/গম/ভূট্টার গুঁড়া ২০%, সয়াবিন তৈল ৭.০%, খাদ্য লবণ ১.০%, ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ১.৫% এবং ভিটা-মিনারেল প্রিমিক্স-০.৫% মিশিয়ে রিপ্লেসার তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে।

১৩৩. ভেড়ার বাচ্চাকে মিল্ক রিপ্লেসার কিভাবে খাওয়াতে হবে?

•মিল্ক রিপ্লেসার এবং পানির পরিমাণ ১:৯ অনুপাতে হবে, এ ক্ষেত্রে পানিকে ৫ মিনিট ফুটিয়ে আবার ৩৯-৪০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় ঠান্ডা করে নিতে হবে।

১৩৪. ভেড়ার দানাদার খাদ্য কি রকম হতে হবে?

• কম আঁশযুক্ত, অধিক বিপাকীয় শক্তি এবং আমিষ-সমৃদ্ধ হতে হবে।

১৩৫. ভেড়ার সম্ভাব্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ কী রকম হতে পারে?

• চাউল-ভাঙ্গা বা ক্ষুদ ২৫%, গম-ভাঙ্গা ৩০%, ভূট্টা-ভাঙ্গা ৩০%, মাসকলাই/খেসারী-ভাঙ্গা ২৫%, সিদ্ধ ধৈণ্চা ২০%, ভূষি/কুঁড়া ২৫%, সয়াবিন খৈল ২০%, বাজারে-প্রাপ্ত প্রোটিন কনসেন্ট্রেট ২.০%, মাছের গুঁড়া ২.০%, সয়াবিন তৈল ১.০%, চিটাগুড় ৫.০%, লবণ ১.০%, ভিটামিনারেল প্রিমিক্স ০.৫% এবং ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ০.৫%।

১৩৬. দানাদার খাদ্য মিশ্রণে সামগ্রীর পরিমাণ কমবেশি হতে পারে কি?

• সর্বোচ্চ মাত্রা না ছাড়িয়ে ভেড়ার বয়স, লিঙ্গ ও গর্ভাবস্থা বিবেচনায় রেখে সুষম খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে মিশানোর মাত্রা কমানো যেতে পারে।

১৩৭. অতি তাপমাত্রায় ভেড়া প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করে?

• ভেড়া প্রতিদিন প্রায় ২০০-৫০০ মি.লি. পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত পানি পান করে ।দুধ ছাড়ানোর পর ভেড়ার বাচ্চার প্রতিদিন ৫০০-৭০০ মি.লি. পানির প্রয়োজন হয়।

১৩৮. বাড়ন্ত ভেড়া বলতে কোন বয়সের ভেড়াকে বুঝায়?

• চার মাস বয়স থেকে প্রথম বাচ্চা প্রসবের আগের বয়স পর্যন্ত ভেড়াকে বুঝায়।

১৩৯. বাড়ন্ত বয়সের ভেড়ীকে কি কি খাদ্য সামগ্রী খাওয়ানো যেতে পারে?

• পরিমিত পরিমাণে কচি ঘাস, ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় এবং শুকনা ডাল-জাতীয় ঘাস (মাসকালাই, খেসারী, মসুরী, ঘাস ইত্যাদি) খাওয়ানো যেতে পারে।

১৪০. আবদ্ধ-অবস্থায় বাড়ন্ত ভেড়াকে কি খাদ্য মিশ্রণ খাওয়ানো যেতে পারে?

• ভূট্টা ভাঙ্গা ১৫%, গমের ভূষি-৪৫%, খেসারীর ভূষি ১৫%, সয়াবিন খৈল ২০%, মাছের গুঁড়া ১.০%, খাদ্য লবণ-১.০%, ভিটামিনারেল প্রিমিক্স ০.১৪%, বিপাকীয় শক্তি ১০-৯২ মেগা জুল/কেজি শুষ্ক পদার্থ এবং বিপাকীয় আমিষ ৬৭ গ্রাম/কেজি শুষ্ক পদার্থ।

১৪১. গর্ভকালের শেষ দুই মাসে কেন বাড়তি দানাদার খাদ্য দেয়া দরকার?

• গর্ভস্থ বাচ্চার পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য বাড়তি দানাদার খাদ্য দেয়া উচিৎ।

১৪২. কত মাস বয়সে কত কেজি ওজনের বাড়ন্ত ভেড়ীকে পাল দিতে হয়?

•৭-৮ মাস বয়সে প্রায় ১৩-১৪ কেজি ওজনের বাড়ন্ত ভেড়ীকে পাল দেয়া হয়।

১৪৩. সম্পূর্ন আবদ্ধ-অবস্থায় পাল দেয়ার পর ভেড়ীকে কোন ভিটামিন দেয়ার দরকার হয় কি?

• প্রায় ১.৫ মি.লি. ভিটামিন এডি৩ই মাংসে ইনজেকশনের মাধ্যমে দিতে হবে।

১৪৪. ভেড়াকে কোন বয়সে খাসী করানো হয় এবং খাসী করলে কি ভাল হতে পারে?

• তিন মাস বয়সে মায়ের দুধ ছাড়নোর পর ৪ মাস থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত দৈহিক ওজন বৃদ্ধির (প্রতিদিন গড়ে ৬০ গ্রাম হিসাবে) জন্য খাসী করানো হয়। ফলে এক বছরের ভেড়া ১৮-২২ কেজি ওজণে পৌছতে পারে।

১৪৫. আশানুরূপ হারে (প্রতিদিন ৬০ গ্রাম) দৈহিক ওজন বাড়ানোর জন্য অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যথা ঘাস/পাতা ও দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি কি পরিমাণ ইউএমএস খাওয়াতে হবে?

• পাঁচ সেন্টিমিটার করে কাটা খড় ১ কেজি, ইউরিয়া ৩০ গ্রাম, চিটাগুড়/ভাতের ঘণ মাড় ২২০-২৫০ গ্রাম এবং ৫০০-৬০০ মি.লি. পানি সরবরাহ করতে হবে।

১৪৬. ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক বলতে কোন ধরণের খাদ্যকে বুঝায়?

• সুনির্দিষ্ট অনুপাতের পানি, চিটাগুড় বা গুড়ের গাদ, ইউরিয়া এবং লবণ (১০০০:২০-৩০; ২:২-৩) দ্বারা ক্যাপসুলের অনুরূপ খাদ্যকে ব্লক খাবার বলে।

১৪৭. ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ভেড়াকে কখন খাওয়ানো হয়?

• উপকূলীয় চরাঞ্চলে বা নদীর অববাহিকায়, পাহাড়ে অথবা সমভূমির ফসল কাটার পর মাঠে ভেড়া চরানো হয়। এ অবস্থায় মাঠে যথেষ্ট ঘাস,পাতা ও খড় থাকলে কোন অতিরিক্ত ঘাস, খড় ও সাইলেজ খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে আমিষ বা খনিজ পদার্থের অভাব দেখা দিতে পারে বিধায় ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ভেড়াকে খাওয়ানো যেতে পারে।

১৪৮. ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক খাওয়ানোর নিয়ম কি কি হতে পারে?

• পাঁচ মাস বয়সের ভেড়াকে ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক খাওয়ানো যাবে; ডাল-জাতীয় ঘাস খাওয়ালে ব্লক খাওয়ানোর দরকার নেই, প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রতিদিন ৩ গ্রাম ব্লক খাওয়ানো যায়।

১৪৯. প্রতিদিন ৩ গ্রামের বেশি ব্লক খাওয়ালে ভেড়ার কি ক্ষতি হতে পারে?

• বিষক্রিয়া দেখা দেখার সম্ভাবনা থাকে।

] ১৫০. ব্লক খাওয়ালে ভেড়াকে পানি খাওয়াতে হবে কি?

• প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে।

১৫১. যখন ব্লক তৈরি করা সম্ভব হবে না তখন কি করতে হবে?

• সুনির্দিষ্ট অনুপাতের পানি, চিটাগুড় বা গুড়ের গাদ, ইউরিয়া এবং লবণ (১০০০:২০-৩০; ২:২-৩) দ্বারা ক্যাপসুলের অনুরূপ খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে।

১৫২. কোন সময়ে ইউরিয়া চিটাগুড় লবণ মিশ্রিত পানি ভেড়াকে খাওয়ানো যেতে পারে?

• মাঠ থেকে চরে আসার পরই অথবা চারণ-ভূমিতেই ফাগুণ-চৈত্র মাসে তৃষ্ণার্ত ভেড়াকে এ মিশ্রণ খাওয়ানো যাবে।

১৫৩. প্রজননে ব্যবহৃত ভেড়ার পাঁঠাকে প্রতিদিন কি পরিমাণে খাবার দিতে হবে?

• পাঁঠার ওজন ২৫-৩৫ কেজি হলে প্রতিদিন ৩৫০-৫০০ গ্রাম আমিষ-সমৃদ্ধ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া পাঁঠাকে প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রাম পরিমাণে গজানো অংকুরিত ছোলা খাওয়াতে হবে।

১৫৪. কাঁচা ঘাসের পরিমাণ কম হলে তখন কি ব্যবস্থা নিতে হবে?

• বছরে কমপক্ষে দুইবার ২-৩ মি.লি. পরিমাণ ভিটামিন এডি৩ই ইনজেকশন দিতে হবে। প্রজনন ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য পাঁঠাকে কখনই অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত হতে দেয়া যাবে না।

১৫৫. বাচ্চা প্রসবের কত দিন পরে ভেড়ী আবার গরম হয়?

• প্রায় একমাস পরেই আবার গরম হয়।

১৫৬. বাচ্চা প্রসবের পর কতদিন বাচ্চাকে ভেড়ী দুধ দিতে পারে?

• বাচ্চা প্রসব পরবর্তীতে ভেড়ী তিন মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে দুধ দিতে পারে। তাই দুধ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি সরবরাহ করতে হবে।

১৫৭. গর্ভধারণের কোন সময়ে বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধি বেশি হয়?

•গর্ভধারণের তৃতীয় মাস থেকে প্রসব পর্যন্ত গর্ভস্থ বাচ্চা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

১৫৮. প্রসব পরবর্তী তিন মাসে ভেড়ীর পুষ্টি চাহিদা কেমন থাকে?

•অপেক্ষাকৃত কম থাকে।

১৫৯. সারা বছর ভেড়ার পুষ্টি চাহিদা কেমন থাকে?

•জীবন ধারণ, দুধ উৎপাদন এবং বাচ্চা উৎপাদনের জন্য পুষ্টির বেশ চাহিদা থাকে।

১৬০. গর্ভধারনের প্রথম আট সপ্তাহে পুষ্টি সরবরাহ কম হলে কি ক্ষতি হতে পারে?

•ভেড়ীর স্বাস্থ্যহানী ঘটে এবং পরিবর্তীতে দুধ উৎপাদন ও প্রজননে প্রভাব ফেলে।

১৬১. গর্ভাবস্থায় কোন সময় ভেড়ীর পুষ্টি চাহিদা বিশেষভাবে বেড়ে যায়?

•গর্ভাবস্থায় শেষ নয় সপ্তাহে ভেড়ীর পুষ্টির চাহিদা অধিক মাত্রায় বেড়ে যায়।

১৬২. চারণ-ভূমিতে খাওয়ানো ভেড়ার পুষ্টির চাহিদা মেটানো যায় কি?

•চারণ-ভূমির ঘাসে রক্ষিত পুষ্টিমাত্রা কম থাকায় ভেড়ার পুষ্টি চাহিদা মেটে না।

১৬৩. সম্পূর্ণ আবদ্ধ অথবা আংশিক-ছেড়ে-পালা পদ্ধতিতে ভেড়ার পুষ্টির চাহিদা কি রকম হতে পারে?

•উচ্চফলনশীল ঘাস উৎপাদন করে তা সরাসরি কাঁচা অবস্থায় অথবা সাইলেজ বা হে তৈরি করে খাওয়ানো যাবে। ইউরিয়া-চিটাগুড় দ্বারা প্রক্রিয়াজাত খড় খাওয়ানো যেতে পারে।

১৬৪. আবদ্ধাবস্থায় ২-৩টি বাচ্চ-বিশিষ্ট গর্ভবতী ভেড়ীর শেষ নয় মাসের খাদ্য কেমন হতে পারে?

•ওজনভেদে আনুপাতিক হারে ভূট্টা/চালভাঙ্গাঁ, ভূট্টা/গমভাঙ্গাঁ, তাজা ঘাস এবং ডাল-জাতীয় শুকনা ঘাস, আমিষ-সমৃদ্ধ দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে।

১৬৫. দুগ্ধবতী ভেড়া প্রতিদিন কতটুকু পরিমাণ দুধ দিতে পারে?

•দেশীয় ভেড়ার দুধ উৎপাদন অপেক্ষাকৃত কম তবে ২-৩টি বাচ্চাবিশিষ্ট ভেড়া প্রতিদিন ১০০০-১৫০০ মি.লি. দুধ প্রদান করে বাচ্চাকে পালতে পারে।

১৬৬. দুগ্ধবতী ভেড়াকে কি ধরণের খাদ্য সরবরাহ করতে হবে?

•আমাদের দেশীয় লেখকের লেখা যেকোন সাধারণ পুস্তক/পুস্তিকায় উল্লিখিত নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

১৬৭. ভেড়া পালনের নির্দেশিকা-সমৃদ্ধ একটি বইয়ের নাম বলবেন কি?

•আইইউবিএটির কৃষি বিজ্ঞান কলেজের পশুপালন বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

১৬৮. পূর্ণ বয়স্ক (১৮-২০কেজি ওজনের) ভেড়া থেকে কি পরিমাণ মাংস পাওয়া যাবে?

•প্রায় নয়-দশ কেজি মাংস পাওয়া যাবে।

১৬৯. বাড়ন্ত দেশী ভেড়ার দৈনিক দৈহিক বৃদ্ধির হার কি রকম?

•প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৭০ গ্রাম।

১৭০. দেশী ভেড়া কত মাস বয়সে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয়?

•৫-৮ মাসে বয়:সন্ধিক্ষণ প্রাপ্ত হয়।

১৭১. দেশী ভেড়ার মৃত্যুর হার কত শতাংশ?

•বিদেশী ভেড়ার তুলনায় রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকাতে মৃত্যুর হার ৫%-এর নিচে।

১৭২. দেশী ভেড়াতে সাধারণত কি কি রোগ দেখা দেয়?

•একযাইমা এবং পিপিআর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

১৭৩. দেশী ভেড়ার উৎপাদন ক্ষমতা কি এক রকম?

•একই বা বিভিন্ন স্থানে ভেড়ার উৎপাদনশীলতায় বিশেষ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

১৭৪. দেশী ভেড়ার উৎপাদন মান কিভাবে বাড়ানো যাবে?

•বাছাই পদ্ধতিতে পরিকল্পিত প্রজননের মাধ্যমে মানোন্নয়ণ করা যেতে পারে।

১৭৫. ভেড়ার কৌলিগত জাত উন্নয়ণের কাজ কার দ্বারা সম্ভব হতে পারে?

•ব্যক্তি বা সমবায় পর্যায়ে এবং সরকারী বা বেসরকারী প্রজনন খামারের মাধ্যমে হতে পারে।

১৭৬. কোন ব্যবস্থাপনায় দেশী ভেড়ার জাত উন্নয়ণ করা যায়?

•দুটি ভাল ও ভিন্ন জাতের ভেড়ার মধ্যে শকরায়ণের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে প্রজননক্রমে দেশী জাতের ভেড়ার উন্নয়ণ করা যায়।

১৭৭. ভেড়ার খামার ব্যবস্থাপনায় কি কি ধরণের ঘর থাকা দরকার?

• প্রজননের ভেড়া-ভেড়ীর আলাদা আলাদা ঘর, গর্ভবতী প্রসূতি, দুগ্ধবতী, বাড়ন্ত ভেড়া এবং অসুস্থ ভেড়ার জন্য পৃথক পৃথক ঘর, তথ্য সংগ্রহের ঘর, দানাদার খাদ্যের গুদাম এবং খড় ও শুকনা খাদ্য সংরক্ষণের ঘর থাকতে হবে।

১৭৮. ভেড়ার বাসস্থানে অন্যান্য কি কি উপযোগ থাকা আবশ্যক?

•পানির পাত্র, খাবার পাত্র, ডিপিং, গোসলের চৌবাচ্চা, ওজন নেয়ার ব্যালেন্স, গোবর ও আবর্জনার পিট/উঠান, ব্যায়াম করানোর ইয়ার্ড, প্রাচীর বা বেড়া ইত্যাদি।

১৭৯. বয়স্ক একটি ভেড়ার জন্য কতটুকু জায়গার বাসস্থানের দরকার?

• ২-৩টি বাচ্চাসহ ২৫-৩০ কেজি ওজনের একটি ভেড়ার জন্য সম্পূর্ণ আবদ্ধ-অবস্থায় প্রায় ১০ বর্গফুট থাকার জায়গা এবং ব্যায়ামের জন্য ৩০ বর্গফুট এবং শুধু রাতের জন্য প্রায় ৭ বর্গফুট জায়গা লাগবে।

১৮০. ভেড়ার শরীরের উঁকুন, আঁঠালী এবং পশম পরিষ্কারের জন্য কি ব্যবস্থা নিতে হবে?

•০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণ বা সাবান/ডিটারজেন্টে গোসল করাতে হবে। এ জন্য চৌবাচ্চার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৮১. কিভাবে ভেড়ার জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা হয়?

•খাদ্য ও পানি সরবরাহের জন্য বিভিন্ন ধরণের পাত্র ব্যবহার করা হয়। ছোট খামারে মাটি অথবা টিনের পাত্র খাবার পানি সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া প্লাষ্টিকের বালতি পানির পাত্র হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

১৮২. বড় আকারের খামারে কি ধরণের খাবার ও পানির পাত্র ব্যবহার করা হয়?

•৮-৯ ইঞ্চি (২০-২৩ সে.মি.) প্রশস্থ জায়গাবিশিষ্ট কাঠের অথবা স্টেইনলেস স্টিল বা গ্যালভানাইজড লোহার খাবার প্রাত্র এবং ২-৩ লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানির পাত্র ব্যবহার করা হয়।

১৮৩. খামারের জন্য সদ্য সংগৃহীত সুস্থ্ ভেড়ার পরিচর্যা কিভাবে করতে হবে?

•পরিকল্পিত তেমন কোন ভেড়ার ব্রিডিং খামার না খাকায় স্থানীয় কিংবা দূরের যেকোন পশুর হাট থেকে ভেড়া ক্রয়পূর্বক সরবরাহ করা হয়্। ফলে ভেড়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় অসুস্থ ভেড়া থেকে সুস্থ ভেড়াতে রোগের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট জরুরী জৈব-নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ও সঠিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণপূর্বক ভেড়া ক্রয় করতে হবে।

১৮৪. সংগৃহীত নতুন ভেড়ার জৈব-নিরাপত্তামূলক কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে?

•সংগৃহীত ভেড়াকে অবশ্যই মূল খামার থেকে নিরাপত্তামূলক দূরত্বে প্রায় ১৪-১৫ দিন আলাদা রাখতে হবে। সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ দেখা গেলে সম্ভাব্য খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

১৮৫. ভেড়া সংগ্রহের সময় নিবিড় পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে?

•ভেড়ার চোখ, নাক, কান, মুখ, দাঁত ও মাড়ি, পশম, পা, ক্ষুর, অন্ডকোষ এবং ওলানসহ শরীরের অন্যান্য অংশ ভালভাবে দেখতে হবে।

১৮৬. ভেড়ার খামারের জনবলের কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?

•বাংলায় পড়ার মত ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমন বাংলায় পড়তে ও লিখতে পারা, ভেড়া পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা, যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের সদিচ্ছা, নিষ্ঠাবান এবং খামারের দৈনন্দিন কাজের ধারণাসম্পন্ন হতে হবে।

১৮৭. ভেড়া পালনকারীর প্রধান করণীয় কি কি কাজ থাকতে পারে?

• খাদ্য, ঔষধ, ঘাস উৎপাদন ও সংগ্রহের বিষয়ে প্রযোজ্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১৮৮. ভেড়ার খামারে তথ্য সংগ্রহের গুরুত্ব কি?

•বর্তমান এবং ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলো রক্ষা করা আবশ্যক।

১৮৯. ভেড়ার খামারে সাধারণত কি কি তথ্য সংগ্রহ ও রক্ষা করা হয়ে থাকে?

•খামার পরিকল্পনা, জাত ও প্রজননের ইতিহাস, খাদ্য, স্বাস্থ্য (রোগ-সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য, জন্ম-মৃত্যু, টিকা প্রদান, প্রতিদিনের আবহাওয়া (তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও কুঁয়াশা ইত্যাদি), ভেড়ার সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক ওজন, বাচ্চা প্রদান, শ্রমিক হাজিরা, ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি বিষয়ের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই পৃথক রেজিস্টার রাখতে হবে।

১৯০. ভেড়ার খামারের বার্ষিক পরিকল্পনায় কি কি বিষয় থাকতে হবে?

•ভেড়ার সংখ্যা, প্রজনন ব্যবস্থা, খাদ্য, পানি, বাসস্থান, স্বাস্থ্য-বিধি, সকল ক্রয়-বিক্রয়, লাভের হিসাব ইত্যাদি বিষয় বার্ষিক পরিকল্পনায় থাকতে হবে।

১৯১. পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের সঠিক ও সহায়ক কি কাজ করতে হবে?

• ভেড়ার খামারের বিভিন্ন কাজের বার্ষিক সম্ভাব্য সময়-সূচী (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) থাকতে হবে।

১৯২. ভেড়ার খামারের আকারভেদে কত পরিমাণ জমির দরকার হবে?

•প্রতি ভেড়ার আবাসন হিসাবে ১০ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে।

১৯৩. ভেড়ার খামারের জমি কি ধরণের হতে হবে?

• ভেড়ার ঠান্ডা ও কৃমির প্রাদুর্ভাব এড়ানোর জন্য জন বসতি থেকে দূরে উঁচু, খোলামেলা এবং শুকনা জমিতে ভেড়ার খামার করতে হবে। ভেড়ার খামারের জন্য ভালো যাতায়াৎ ব্যবস্থা, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়:নিষ্কাশন এবং পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সুবিধাজনক হাট-বাজারের কাছাকাছি হতে হবে।

১৯৪. কি কি কারণে ভেড়ার খামার লাভজনক হতে পারে?

•তুলনামূলকভাবে কম মূল্যের বাসস্থান/জমি, সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা, অধিক পরিমানে সুস্বাদু মাংসের উৎপাদন করতে পারলে ভেড়ার খামার লাভজনক হয়।

১৯৫. কোন কারণে ভেড়ার খামার লোকসানজনক হতে পারে?

•খাদ্যের মূল্য অধিক হলে এবং অতি মাত্রায় ভেড়া ও ভেড়ার বাচ্চার মৃত্যুর কারণে ভেড়ার খামার লোকসানজনক হয়।

১৯৬. ছাগল ও দুগ্ধ খামারের তুলনায় ভেড়ার খামারের সংখ্যা বাড়ছে না কেন?

• ভেড়ার তুলনায় ছাগলের মাংস, চামড়া ও গরুর দুধের গুণাগুণ অধিক মাত্রায় বানিজ্যিকভাবে প্রচারিত হওয়াতে খামারের প্রচার ও প্রসার ঘটছে। অপরদিকে, ভেড়ার মাংস ও চামড়ার বিক্রয় মূল্যের লাভের ব্যাপারটি সাধারণ মানুষ জানে না।

১৯৭. দেশী ভেড়ার আকার ক্রমাণ্বয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে কেন?

• জাত উন্নয়ণমূলক কাজে বাছাই পদ্ধতিতে প্রজনন ঘটানোর তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে একই খামার, এলাকা বা পরিবারের মধ্যে ভেড়ার অন্তঃপ্রজনন ঘটায় ভেড়ার আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে এবং রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।

১৯৮. গর্ভবতী এবং দুগ্ধবতী ভেড়ার খাদ্য গ্রহণে উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নেই তবে পানি সরবরাহে পার্থক্য থাকে কেন?

• গর্ভধারণের শেষ সময় এবং বাচ্চা প্রসবের পর দুগ্ধ প্রদানের সময় দৈহিক ওজনে তেমন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না তবে দুগ্ধ তৈরির প্রয়োজনে পানি গ্রহণের হার বেড়ে যাওয়াতে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে পানি সরবরাহ করতে হবে।

১৯৯. পৃথিবীতে কত জাতের ভেড়া আছে?

• পৃথিবীতে প্রায় ৯০০ জাতের ভেড়া আছে এবং জাতগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে যথা: পশম উৎপাদনকারী, মাংস এবং দুধ উৎপাদনকারী।

২০০. পৃথিবীর বিখ্যাত ভেড়ার জাতসমূহের নাম কি?

• অষ্ট্রেলিয়ান বরুলা মেরিনো, আওয়াসী, বালুচা, ব্লু-ডু-মেইন, চিভয়েট, ছোট-নাগপুরী, ভালা, ডরসেট, হ্যাম্পশায়ার, লিংকন, মেরিনো, নেলোর, নীলগীরি, সাফক, মাটন-মেরিনো, টিউনিস ও আফ্রিকান ডোয়ার্ফ ইত্যাদি।

২০১. কোন জাতের ভেড়া আকারে ও ওজনে বড়?

• ইংল্যান্ডের সাউথ ডাউন এবং নরফক জাতের ভেড়ার শকরায়ণে তৈরী সাফক জাতের ভেড়া সবচেয়ে বড় যার ওজন ১২৫-১৮০ কেজি।

তথ্য সূত্র:

Please follow and like us:

About admin

Check Also

টিকা ও ওষুধের ব্যবহার পদ্ধতি (এম এ ইসলাম)

টিকা ও ওষুধের ব্যবহার পদ্ধতি  টিকা ও ওষুধের সঠিক ব্যবহার রোগপ্রতিরোধ ও নিরাময় নিশ্চিত করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »