সঠিক চিকিৎসা করতে গেলে বাংলদেশে কি কি সমস্যা হয়
ডাক্তারের মেইন কাজ হল ডায়াগ্নোসিস করা।সুস্থ করার মত হলে মুরগি সুস্থ করা।ভাল না হলে কালিং এর কথা বলা।ভাল হতে সময় বেশি লাগলে কম দামী মেডিসিন দিতে হবে।
চিকিৎসা মানে মেডিসিন/এন্টিবায়োটিক দিতে হবে এমন ভাবা যাবে না।শুধু ব্যবস্থা দিয়েও চিকিৎসা করা যায়।মুরগি সুস্থ করে দেয়া ডাক্তারের কাজ নয় ডাক্তারের কাজ হল(ব্যবস্থাপনা,ডিজিজ ডায়াগ্নোসিস,চিকিৎসা,প্রগ্নোসিস দরকার হলে ফিড ফর্মুলেশন দেয়া)
১।মারেক্স রোগ হলে চিকিৎসা নাই।মারেক্স হলে ডাক্তার যদি বলে নরমাল সিডিউল মেনে চলেন আর কিছু লাগবে না।তখন খামারী মনে করবে ডাক্তার মনে হয় ভাল চিকিৎসা জানে না তাই চিকিৎসা দেয় নি।খামারী অন্য কাউকে দেখাবে এবং ১০০০ লেয়ারের জন্য ৪০০০০ টাকার মেডিসিন খাওয়াবে এবং ১-৩ মাস পর যখন মুরগি এমনিতে ভাল হয়ে যাবে মানে আর আক্রান্ত হবে না,তখন খামারী ভাবে এই চিকিৎসার জন্যই মুরগি ভাল হয়েছে যদিও ৪০হাজার টাকার মুরগি ভাল হয়নি।আসলে আক্রান্ত গুলো সব মারা গেছে।এক্টা নির্দিস্ট পার্সেন্টেজ পর্যন্ত মারা যায়।
ব্রংকাইটিস হলে তেমন চিকিৎসা নেই শুধু ভ্যাক্সিন দেয়া যায় ১-২ মাসের মধ্যে এমনি ৬০% কেসের ক্ষেত্রে মুরগির প্রোডাকশন ঠিক হয়ে যায় কিন্তু খামারী এই কথা শুনবে না,সে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা করবে,টাকা খরচ করবে।প্রতিটি রোগ ভাল হতে একটা নির্দিস্ট সময় লাগে।এর আগে ভাল হবে না।কিন্তু খামারী তা মানবে না।খামারীকে এই ব্যাপারে কিছু বিষয় জানাতে হবে যাতে তারা এই ধরণের ভুল না করে।না জানার কারণে তারা এই রকম করে। রোগ নির্ণয় ছাড়া বেশি বেশি মেডিসিন দিলে খামারিরা খুশি থাকে।এই ক্ষেত্রে সঠিক রোগ নির্ণয় কোন কাজে লাগে না।
২।খামারী বলবে স্যার ঠান্ডা লাগছে যদি বলেন ঠান্ডা বলতে কিছু নাই।তখন কিছু খামারী ডাক্তারকে পছন্দ করবে না।অথচ ঠান্ডা লাগা বলতে কোন রোগ পৃথিবীতে ছিল না বা ভবিষ্যতেও আসবে না।সঠিক রোগ নির্ণয় করলে রোগের নাম বলতে হবে।শ্বাসনালী তে যে কোন রোগের কারণেই গড় গড় শব্দ,হাঁচি কাশি হতে পারে যাকে খামারীরা ঠান্ডা লাগা বলে থাকে।
রানিক্ষেত,মাইকোপ্লজমা,আই বি,আই এল টি,নিউমোনিয়া,এ আই,সি আর ডি এই সব ক্ষেত্রে কাশি,হাচি,গড় গড় শব্দ হবে।তাই বলে এক নামে ঠান্ডা লাগা বলা যাবে না।নির্দিস্ট কোন রোগ হয়েছে তার নাম জানা লাগবে এবং বলতে হবে।অথচ রোগ নির্ণয় করে সঠিক রোগের নাম টা বললে খামারীর মন ভরেনা।ঠান্ডা লাগছে বললে খুশি হয়।।তাই ভুল বললেই খামারী খুশি।ওনেক সময় রানিক্ষেত বা আ আই হলে খামারীকে বলা হয় এ আই/রানিক্ষেত হয়েচে কিন্তু ফার্ম থেকে বের হবার আগে খামারী ঠিকই প্রশ্ন করে স্যার মুরগির কি ঠান্ডা লাগছে?
৩।সঠিক রোগ নির্ণয় করতে হবে টেস্ট করতে হবে কিন্তু খামারী তা করবে না,প্রয়োজনে ১০০০ লেয়ারে ১০হাজার টাকার মেডিসিন খাওয়াবে।যদিও টেস্টে খরচ ১০০০-২০০০টাকা।টেস্টের পরে হয়ত ৪০০০-৫০০০টাকার মেডিসিন লাগতো।তাছাড়া অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিকের কারণে মুরগির ক্ষতি হয়।টেস্টের পর প্রোগ্নোসিস করে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যায় অনর্থক মেডিসিন খরচ হয় না।
৪।যত জেনে শুনে খামারী এবং ডিলাদের সাথে কথা বা পরামর্শ দিবেন তত ভুল বুঝবে কারণ তারা ভুলের জগতে নিমজ্জিত।সব কিছু তাদের কাছে নতুন মনে হবে যা মেনে নিতে চায়না।
৫।ভ্যাক্সিন সিডিউল এর ক্ষেত্রেও ৮০% ভুল ভ্যাক্সিনেশন হচ্ছে অথচ যা সঠিক তা বললে শুনতে চাইবে না।আগের মতই দিবে।তাই এখানেও বিজ্ঞান ব্যর্থ ।দেশে যত ভ্যাক্সিন আছে সব গুলো দিতে হবে, যদিও ফার্মের জন্য দরকার নাই।ভ্যাক্সিন সব না দিলে যদি কোন সমস্যা হয় তখন বলবে স্যার আপনি এই ভ্যাক্সিন দেন নি তাই সমস্যা হয়েছে।
ভ্যাক্সিন অনেক গুলো (প্রায় ১৩টি)ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে যা ডাক্তারই বুঝতে পারে তবুও বিভিন্ন কারণে ভ্যাক্সিন ফেইলার হতে পা্রে বা যেখানে যে রোগ হবার কথা না সেখানে সেই রোগ হয়ে যেতে পারে তাই খামারীকে ডাক্তাররের কথা অনুযায়ী ভ্যাক্সিনদেয়া উচিত।ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিলেও ফেইলর হতে পারে,তখন কোন কোন খামারী ডাক্তার কে উলটা প্রশ্ন করে স্যার আপনার কথা অনুযায়ী ভ্যাক্সিন দিয়ে বিপদে পড়েছি।এসব খামারীকে পরামর্শ দেয়া যাবেনা ।এটা একটা কমন সমস্যা আমাদের দেশে এভাবেই অপ্রয়োজনীয় ভ্যাক্সিন দিয়ে নতুন ভাইরাসের নতুন রোগ নিয়ে আসা হচ্ছে।প্রতিমাসে রানিক্ষেতের ভ্যাক্সিন দিয়ে যাবে,ইচ্ছে হলে কিল্ড দিবে বেশি বেশি যাতে রানিক্ষেত না আসে।অনেকে আবার ২-৩ মাস পার হয়ে যায় ভ্যাক্সিন দেয় না।ফিল্ডে যত সমস্যা হয় তার ৪০% সমস্যা হয় আন্দাজে ভ্যাক্সিন দেয়ার কারণে।এমন এলাকা আছে যেখানে যে ভ্যাক্সিনের দরকার নাই সেখানে সে ভ্যাক্সিন দেয়া হচ্ছে।
৬।তাই বেশি জেনেও লাভ নাই,নতুন করে আর কি জানার দরকার আছে?যা জানার তাই তো এপ্লাই করার পরিবেশ নাই।হতাশ হবার দরকার নাই,নিজের মত করে খামারী বানিয়ে নিতে হবে,যারা বুঝে না তারা হারিয়ে গেছে,বাকি গুলো ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে,নতুন খামারী আসবে,যাদেরকে বুঝানো সহজ হবে কারণ তারা পরিবর্তনের ছোয়া পাবে।অতএব দেখা যাচ্ছে পোল্ট্রি টা টোটালি বিজ্ঞান সম্মত ব্যবস্থাপনা কিন্তু অধিকাংশ খামারীর ধারণা নাই বিশেষ করে পোল্ট্রিতে তাই খামারীকে শিক্ষিত হতে হবে এবং যারা বুঝে তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।খামারী ও ডিলারদের বুঝাতে হবে,ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।কে ট্রেনিং দিবে,হাজার হাজার খামারী- ডিলার।আমি ব্যক্তিগত ভাবে পোল্ট্রি খামারী ট্রেনিং গ্রুপে ট্রেনিং ও পরামর্শ দিচ্ছি।
৭।আমরা ডাক্তাররা সবাই চিকিৎসা করি কিন্তু সব কিছু চিকিৎসা হয় না।যেমন খামারী সেডটা এমন ভাবে (সেডের উচ্চতা ৭-৮ফুট) এমন জায়গায় করেছে (পোল্ট্রি মার্কেট এর কাছাকাছি বা মেইন রাস্তার পাশে),এত কাছাকাছি (প্রতি বাড়িতে ফার্ম)।মিশ্র ফার্ম মানে বাড়িতে দেশি মুরগি ,কবুতর,টার্কির সাথে,বিভিন্ন বয়সের মুরগি এক সাথে পালন করে,এক ব্যাচের পর মাঝে বিরতি দেয় না।ফলে জীবাণু ফার্মে থেকে যায়।তাই ফার্ম করার আগে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে কিন্তু তা কেউ করে না।সবাই ডিলারের সাথে যোগাযোগ করে তারপর করে।
৮।স্যার কি চিকিৎসা দিয়েছেন এখনো ভাল হয় নাই,ডাক্তার বলল আরো ৩দিন মারা যাবে,খামারী বলল স্যার এভাবে মারা গেলে ফার্ম ফাঁকা হয়ে যাবে।ফার্ম ফাকা হবার সাথে ডাক্তারের কোন সম্পর্ক নাই।ডাক্তারকে এসব বলে কোন লাভ নাই।এসব বলা উচিত না।৩-৭দিনে সব মুরগি মারা যেতে পারে এমন টা মাথায় রেখেই পোল্ট্রি ব্যবসা শুরু ক্রতে হবে।
৯।ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা দিয়ে অনেক খরচ কমানো যায় কিন্তু খামারী কি সেই লাভটা বুঝে না।সামনে ১০টাকা বাচাতে পারলেই খামারী অনেক কিছু মনে করে।কত টাকা বিনিয়োগ/খরচ করলাম সেটা বড় বিষয় না,বড় বিষয় হল কত টাকা বিনিয়োগ/খরচ করে কত টাকা লাভ হল সেটা।
১০।ডাক্তারকে ফি দেয় না,কোম্পানীর ফি ডাক্তার আছে,চাইলেই ২-৩টা ডাক্তার চলে আসে।এতে মূল্যায়ণ পাচ্ছেনা ডাক্তাররা।এক্টা নির্ধারিত ফি থাকা দরকার ছিল ডাক্তারদের।এতে সবার জন্য মংগল হত।প্রেস্ক্রিপশনের মূল্য থাকত।
১১।ফি হবার কারণে ডাক্তারের মূল্যায়ণ করেনা।
১২।প্রেস্ক্রিপশন ফলো করে না।
১৩।এক্টা সমস্যার ক্ষেত্রে কয়েক জন ডাক্তারকে দেখাবে আর নিজের মত চিকিৎসা দিবে।
১৪।সব ডাক্তারের একই পড়াশুনা কিন্তু অনেক খামারী মনে করে সরকারী ডাক্তার বেশি জানে।আসলে এটা ১০০% ভুল।হাসতালের আর কোম্পানীর ডাক্তার ছাড়াও প্রাইভেট ডাক্তা আছে এবং থাকতে পারে তা এখনো ভাবতে বা মেনে নিতে পারে না।তবে দিন দিন পরিবর্তন আসতেছে।
১৫।খামারীরা ব্যবস্থাপনার চেয়ে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী যা তাদেরকে ক্ষতি করছে।
কিছু সীমাবদ্ধতাঃ
ভ্যাক্সিনম্যান এবং ডিবেকাররা বিভিন্ন ফার্মে ঘুরে ফিরে ভ্যাক্সিন করে।নিজেদের লোক দিয়ে ভ্যাক্সিন করতে হবে কিন্তু ছোট খামারীরা পারবে না।ঘন বসতিঃবেশি তাই ইচ্ছে করলেও নির্দিস্ট দূরর্তে ফার্ম করা যাচ্ছে না।দেশি মুরগি,কবুতর,টার্কি নিজে পালন না করলে ও পাশের বাড়িতে পালন করে।খামারী ও ডিলাররা প্রশিক্ষিত না।