Breaking News

ব্রিডিং_খামারে_ভেড়ার_পুষ্টিমান_রক্ষা_করে_খাদ্য_খরচ_কমানোর_উপায়

ব্রিডিং_খামারে_ভেড়ার_পুষ্টিমান_রক্ষা_করে_খাদ্য_খরচ_কমানোর_উপায়

একজন ব্রিডিং খামারীর সবার আগে যেটা জানা অতীব জরুরী, তা হলো ভেড়ীর বাচ্চা প্রসবের চক্র, যা চার ধাপে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। ধাপগুলো হলো-গর্ভ ধারনকালীন ধাপ; গর্ভের প্রাককালীন ধাপ; গর্ভের শেষকালীন ধাপ; দুগ্ধের প্রাককালীন ধাপ।
উপরের চারটি ধাপে ভেড়ীর জন্য সবসময় একই পরিমান ও মানের খাবার লাগে না। যদি না বুঝে ইচ্ছামতো খাবার দেয়া হয়, তাহলে একদিকে যেমন প্রয়োজনহীন খাবার দেওয়ার কারনে খামারের খরচ বাড়বে, অপরদিকে তেমন প্রয়োজন মাফিক খাবার না দেওয়ার কারনে ভেড়ী তার উৎপাদন ক্ষমতা হারাবে। তার মানে সব সময় একই হারে খাবার দিলে হবে না। বরং ধাপ অনুসারে খাবার প্রদান করা একটা ব্রিডিং খামারের পূর্বশর্ত। এতে খামারের খরচ বাঁচবে, উৎপাদন বাড়বে-যা ব্যবসায়িক সফলতার মূলকথা। চলুন, ভেড়ীর জীবন চক্রের ধাপ অনুযায়ী পুষ্টি ও খাদ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক।

#গর্ভ_ধারনকালীন_ধাপঃ
বাঁচ্চা দুধ খাওয়া ছেড়ে দেয়ার পর হতে পুনরায় গর্ভধারণ করার পূর্ব পর্যন্ত। এই সময়কে ড্রাই পিরিয়ড ও বলে। এ সময় ভেড়ী তার দেহ রক্ষার কাজ করে থাকে। বাঁচ্চার দুধ ছাড়ার পরে একজন খামারীর প্রথম যে চিন্তা মাথায় আসে, তা হলো কবে ভেড়ী হিটে আসবে। সাধারণত বাঁচ্চা প্রসবের ৩ মাসের মধ্যে ভেড়ী হিটে এসে থাকে। একটা আদর্শ ব্রিডিং খামারের জন্য এটাই ভালো। এখন পুনরায় গর্ভধারণের জন্য ভেড়ীর শরীরে ভিটামিন ই এর যথাযথ সরবরাহ থাকতে হবে। ভিটামিন ই এর প্রধান উৎস হলো পুষ্টিকর সবুজ ঘাস। অনেকেই সারা বছর দানাদার, বা শুকনো খাবার দিয়ে থাকে। এদের খামারে ভিটামিন ই এর অভাব বেশি দেখা দেয়। কৃত্রিম ভাবে ভিটামিন ই ইনজেকশন দিয়ে ঘাটতি পূরন করা হয়। কিন্তু এভাবে বেশি দিন ভেড়ী ভালো থাকবে না। আসলে ভেড়ীর জন্য দরকার এই ধাপে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিকর সবুজ কাঁচা ঘাস। এই কাঁচা ঘাসের যোগান নিশ্চিত করলে দানাদার খাবারের উপর চাপ অনেক কম পড়বে। কারন এই ধাপে ভেড়ীর মোট হজমযোগ্য পুষ্টির পরিমান তুলনামূলকভাবে অন্যান্য ধাপ থেকে কম লাগে। তাই সঠিক পরিকল্পনা করতে পারলে ভেড়া ব্রিডিং খামারে খাদ্য খরচ যেমন কমবে, তেমনি উৎপাদন বাড়বে।

#গর্ভের_প্রাককালীন_ধাপঃ
এই ধাপ শুরু হয় গর্ভধারণের দিন থাকে ৯০ দিন পর্যন্ত। এই ধাপে ভেড়ীর মোট হজমযোগ্য পুষ্টির পরিমান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাসের যোগান দিতে পারলে দানাদার নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ভেড়ী তার যেটুকু পুষ্টি দরকার, তা সবুজ কাঁচা ঘাস থেকে গ্রহন করে নিবে। এখন যদি কেউ এই ধাপেই প্রচুর পরিমানে দানাদার দিতে শুরু করে, তা ব্যবসায়িকভাবে লাভজনক হবে না। কারন এসময় ওতো বেশি দানাদারের দরকার নেই। সঠিক পরিকল্পনা এবং খরচ কমানোর এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

#গর্ভের_শেষকালীন_ধাপঃ
একজন ব্রিডিং খামারীর সবচেয়ে বেশি চিন্তার ও সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার এই ধাপে। কারন গর্ভস্থ ভ্রণের দুই তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি ঘটে গর্ভ ধারণের শেষ ৪৫ দিনে। এ সময় ভেড়ীর খাবার ও আমিষের চাহিদা কয়েকগুনে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে সহজে হজমযোগ্য খাবারের প্রয়োজন হয়, কারন ভেড়ীর রুমেনের হজম ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই ভেড়ীর জন্য দরকার হয় অধিক পুষ্টিকর এবং সহজে হজমযোগ্য খাদ্য। এ সময় ভেড়ীকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মিনারেল নিয়মিত সরবারহ করতে হবে। তাই খামারীকে সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হবে এই ধাপে। কারন সুস্থ্য সবল ও বেশি ওজনের বাচ্চা পেতে খামারীকে এই ধাপে ভেড়ীকে যথেষ্ট পরিমানে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে অন্য সময়ে খাবার খরচ কমায়ে এই সময়ে ব্যয় করা যায়।

#দুগ্ধের_প্রাককালীন_ধাপঃ
বাচ্চা জন্মদানের ১মাস পর থেকে ভেড়ীর দুধের পরিমান কমতে থাকে এবং বেশিভাগ ক্ষেত্রে ২ মাসের মধ্যে দুগ্ধদান বন্ধ হয়ে যায়। ভেড়ী আবার হিটে আসার জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। প্রথম মাসে পর্যাপ্ত সবুজ ঘাস সহ দানাদার দিয়ে ২ মাস থেকে কমায়ে আনতে হবে এবং আবার চক্র অনুসারে পুষ্টিকর সবুজ ঘাস সরবরাহ করতে হবে যেন ৩ মাসের মধ্যে আবার গাভিন হয়। এভাবে পরিকল্পনা করলে ভেড়ীর খামারে খাদ্য খরচ কমবে, উৎপাদন বাড়বে।

#শেষ_কথাঃ
পরিশেষে ব্রিডিং খামারের এটাই মূলমন্ত্র যে, ভেড়ী গাভিন হওয়ার ৩মাস পর থেকে বাচ্চা দানের পরবর্তি ১ মাস সবুজ কাঁচা ঘাসের সাথে পরিপূরক খাদ্য সরবরাহ করলে খাদ্য খরচ যেমন কমবে, তেমনি খামারের উৎপাদন বাড়বে-নাজ ফার্মের বাস্তব অভিজ্ঞতা এটাই বলে।

Naz Farm

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ছাগলের নিউমোনিয়া

ছাগলের নিউমোনিয়া  সঠিক সময় চিকিৎসা না দিলে ছাগল টিকানো কঠিন হয়ে পরে। লক্ষণ গুলো নিম্ন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »