খামারের গবাদিপশু দ্রুত বর্ধনশীল সবুজ জার্মান কিম্বা নেপিয়ার ঘাস খেয়ে নাইট্রেট বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়, কেন ঘাসের মধ্যে নাইট্রেট বিষ তৈরি হয়,নাইট্রেট বিক্রিয়া থেকে কিভাবে গবাদি পশুকে রক্ষা করা যায়, ঘাস খেয়ে গবাদিপশুর হঠাৎ হঠাৎ অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরন করে,
সাবধানতা:ক্ষেত থেকে ঘাস কেটে আনার পর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে একটি মাঁচার উপরে রেখে দু’ঘণ্টা রোদে শুকালে নাইট্রেট বিষ নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
দ্বিতীয়তঃ ঘাসের খেতে সরাসরি গোয়াল ঘরের গরুর গোবর নালার মাধ্যমে ডাইরেক্ট ঘাসের সাথে মিশ্রিত না করে গোবরকে আলাদা কোন জায়গায় জমা করে ভালোভাবে কম্পোজড করে তারপর খেতে প্রয়োগ করলে উত্তম হবে।
ইউরিয়া সার প্রয়োগের পর সেই ঘাস পশুকে খাওয়ানোর পূর্বে বেশি সতর্ক হতে হবে। কারণ ইউরিয়া দ্রুত ঘাসের শিকড় দ্বারা শোষিত হয়ে নাইট্রেট আকারে ঘাসে জমা হয়। ইউরিয়া দিলে একদিকে ঘাস যেমন দ্রুত বেড়ে ওঠে তেমনি প্রচুর পরিমাণ নাইট্রেটও জমা হয়।
সদ্য জমি থেকে কেটে আনা কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে থেকে দুই তিন ঘন্টা রোদে শুকিয়ে তারপর পশুকে খাওয়াতে হবে। তাহলে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
“তথাকথিত খাদ্য নামক পানিতে ভাসা কচুড়িপানা নয় আসুন সবাই মিলে গবাদিপশুকে সঠিক পুষ্টি যুক্ত সবুজ ঘাস খাওয়াই।”
ঘাস ছাড়া গবাদি পশু পালন করা এবং মই দিয়ে চাঁদে উঠা একই কথা!
কোন অজুহাতেই খামারের গবাদিপশুকে সবুজ ঘাসের বিকল্প হিসাবে কচুড়িপানা খাওয়ানো যাবে না!
প্রকারান্তে ইহা দ্বারা জেনে,শুনে ঠান্ডা মাথায় নিজ হাতে নিজেই নিজের খামারকে ধ্বংস করার শামিল।
ডাঃ নূরুল আমীন
বিষাক্ত গাছ
#ওলিয়েন্ডার/করবী(
চিকিৎসা হিসেবে Atropine Sulphate @০.২৫ মিলিগ্রাম /কেজি দৈহিক ওজনের জন্য মাংসে দিতে হবে।
#থেভাসিয়া/হলুদ করবী /কুলফি ফুল(Thevatia puruviana/T. neriofolia)
এই গাছ সারা বাংলাদেশেই দেখা যায়। গাছের সব অংশই হ্মতিকর তবে আঠা এবং বীজ বেশি হ্মতিকর।এতে Thevatin নামক গ্লাইকোসাইড থাকে।অনেক সময় এই Thevatin, hydrolysis হয়ে Thevarnin তৈরি করে।উভই পদার্থই বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
চিকিৎসাই Atropine sulphate @ ০.২৪ মিলিগ্রাম /কেজি ওজনের জন্য।
#রতি/লালকুচ
প্রাকৃতিক নিয়মে রতি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে না।তবে ছাল সমেত/ছাল ছাড়া খেলে লহ্মণ দেখা দেয়।
রতির বাইরের আবরণ ফেলে দিয়ে ভেতরের আশ পানিতে ভিজিয়ে পিষে পেস্ট করা হয়।এই পেস্ট তীর বা সূচের সাথে লাগিয়ে শুকানো হয়।এই সূচ/তীর দিয়ে পশুর মাংসে আঘাত করলে মারাত্মক প্রদাহ হয় এবং বিষক্রিয়া হয়ে আক্রান্ত প্রাণী ২-৪ দিনের মধ্যে মারা যায়।রতি পিষে পানিতে গুলে চামড়ার নিচে ইঞ্জেকশন দিলেও বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়।অনেকে একে HS/BQ ভেবে ভুল করে।গরুর প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৬-১.০০ মিলিগ্রাম রতির আশ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
রতির মধ্যে abrin নামক একপ্রকার Toxa albumin থাকে যা বিষক্রিয়া করে।এই abrin, RBC কে জমিয়ে দেয় এবং এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করা যায়।
চিকিৎসা মূলত সিম্পটোমেটিক। তবে হাইপার ইমিউন সিরাম ব্যাবহার করা যায়।
#Braken firn/ব্র্যাকেন ফার্ণ
গরু প্রায় ২-৮ সপ্তাহ ব্র্যাকেন ফার্ন খেলে বিষক্রিয়ার আক্রান্ত হয়।এর ফলে bone marrow এর কার্যকরিতা কমে যায়।
চিকিৎসা হিসেবে প্রতিদিন DL-batyl-alcohol @ ১গ্রাম করে চামড়ার নিচে ৪-৫দিন ইঞ্জেকশন দিতে হবে।সাথে এন্টিবায়োটিক এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশন করতে হবে।
#বাবলাজাতীয় গাছ/একাশিয়া
চিকিৎসা নেই।
#ইপিলইপিল(Ipil ipil)
এতে mimosine থাকে এর প্রভাবে প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন স্থানের লোম পড়ে যায় অনেক সময় গলগণ্ড এবং ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। ইপিল ইপিল খাওয়ানো বন্ধ করলে ধীরেধীরে আরোগ্য লাভ করে।
এ গাছে Calotropin নামক গ্লাইকোসাইড থাকে। গরু এর পাতা খায় না তবে শত্রুতা করে পাতা খাওয়ালে অথবা ত্বকে হ্মত সৃষ্টি করে আঠা লাগিয়ে দিলে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।
লালাপড়া,নিস্তেজতা,খিচুনি,অর্ধশয়নতা শ্বাসকষ্ট, চেতনাহীনতা এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।
চিকিৎসা নেই।
#কেনারী (ঘাসে Tryotamine নামক এলকালয়েড থাকে যা serotonin এর কাজে বাধা দেয় ফলে স্নায়বিক লহ্মণ দেখা দেয়।
#লুপিন(Lupins) ঘাসে anagyrine নামক এলকালয়েড থাকে যা গর্ভস্থ শাবকের বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি করে একে crooked calf syndrome বলে।
#ল্যানট্যানা এই আগাছাতে Lantadene-A নামক এলকালয়েড থাকে যা পিত্তরস নিঃসরণ বন্ধ করে দেয় ফলে পিত্ত লিভারে সঞ্চিত হয়ে জণ্ডিস এবং photosensitization সৃষ্টি করে।
#ব্রাসিকা তে S-methyl-cysteine-sulfoxide থাকে যা রুমেন মাইক্রোফ্লোরার সাথে ক্রিয়া করে dimethyl disulphide তৈরি করে হিমোগ্লোবিন তলানি ঘটিয়ে Heinz-Ehrlich বডি সৃষ্টি করে।
#সরগম,জনসন,সুদান ঘাস নাইট্রেট ও সায়ানাইড পয়জনিং করে।
#হাতি শুড়া তে Lasiocarpine এবং Heleotrine নামক এলকালয়েড থাকে।
#ঝুনঝুনি/শনপাট(এর বীজে monocrotain,fulvin,crispatrine নামক এলকালয়েড থাকে যা মারাত্মক বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
এছাড়া অন্যান্য গাছের মধ্যে কলমী, কাকমাছি, জংলী বেগুন, কচু,ঘাঘড়া ইত্যাদি গাছও বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী……..!