তিতির এর ইংরেজি নাম Guinea Fowl ।
এরা মূলত আফ্রিকার অধিবাসী।পরতুগীজরা এদের কে ইউরোপ,আমেরিকা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিয়ে আসে।ফ্রান্স,ইটালি এবং হাংগেরীতে এদের বেশি পালন করা হয়।
এ পাখী জাতভেদে ওজন ৭০০-২২০০ গ্রাম এবং( ১৬-২৮ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে . বর্তমানে সৌখীন ভাবে এর পালন হয়ে থাকলেও বানিজ্যিকভাবে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতঃ— পালকের রং এর ভিত্তিতে এই পাখিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন—–
১) পার্ল ভ্যারাইটি–এদের সাধারনত ধুসর পালক থাকে। পালকে ফোটা ফোটা সাদা দাগ থাকে। দেখতে খুব আকর্ষণীয়।
২) লেভেনডার ভ্যারাইটি– পালকের বৈশিষ্টের দিক থেকে পার্ল ভ্যারাইটির সঙ্গে মিল রয়েছে। ভিন্নতা শুধু পালকের রং হালকা ধূসর।
৩) সাদা ভ্যারাইটি– এটির পালক সাদা এবং এর পালকে কোন দাগ নেই।
উৎপাদন বৈশিষ্ট্যঃ
ডিম উৎপাদন নির্ভর করে ব্রীডিং,ব্যবস্থাপনা এবং পুস্টিমানের উপর।যৌবন প্রাপ্ত হতে সময় ৬-৭ মাস,সিজনাল ব্রিডিং,ফেব্রুয়ারি -অগাস্ট মাসে এরা ডিম পাড়ে।হেন কে ২-৩ বছর রাখা হয়,কমারশিয়ালি ১ লেয়িং সাইকল রাখা হয়।
পূর্ণ বয়স্ক মেলের ওজন ১কেজি আর ফিমেলের ওজন ২কেজি ২০০ গ্রাম।
৭-৮ মাসে ডিম পাড়া শুরু করে।
গরমকালে ডিম ১৭-১৮ দিন ভাল থাকে যেখানে মুরগির ডিম ৭ দিন থাকে।ডিম পাড়ার পর এরা ব্রুডি হয়ে যায়।
এডাল্ট তিতির দিনে ১১৮-১২১ গ্রাম খাবার খায়
স্টাটার,গ্রোয়ার এবং লেয়ার খাবারে প্রোটিন থাকবে ১৯,১৬ এবং ১৮% আর এনার্জি ২৯০০,২৭০০,২৯০০ কিলোক্যালরি
তথ্যঃ১ জোড়া বয়স্ক তিতিরের দাম ৩৫০০ টাকা ডিম পাড়া ১ জোড়ার দাম ৪০০০-৪৫০০টাকা
১ মাসের বাচ্চার দাম ৬০০টাকা
আর ১টা ডিমের দাম ১০০ টাকা
তিতিরের কিছু সমস্যাঃ
যদি লিটারে পালন করা হয় তাহলে এরা লিটার খায় ফলে পেঠে সমস্যা হয়
তিতির খাচায় পালন করলে এগ্রেসিভ হয়ে যায় এবং ঠোকরা ঠুকরি করে।
বাচ্চা অবস্তায় বেশি লাইসিন এবং মেথিওনিন লাগে
হেনের ব্রুডি হওয়ার প্রবনতা বেশি ফলে সব বাচ্চা ফোটা আগেই এরা চলে যায়।
মা বাচ্চার যত্ন নেয় না
ছাড়া পালন করলে বনে ডিম পাড়ে বা ডিম লুকিয়ে রাখে
বাচ্চা অবস্তায় বেশী মারা যায়
সমাধানঃ
বাচ্চাকে লিটারের পরিবরতে ওয়ারনেট বা জুটের উপর পালন করা উচিত
প্রোটিন জাতীয় খাবার দিতে হবে এবং ভিটামিন ও মিনারেলস দিতে হবে
খাচায় না পালন করে ফ্লোরে পালন করতে হবে
দেশি মুরগি দিয়ে বাচ্চা ফোটারতে হবে এবং ব্রুডিংও পালন করতে হবে।
উৎপাদনঃ
বছরে ডিম উৎপাদন ১০০-১২০ টি। ডিমের ওজন ৩৫-৪৫ গ্রাম।
ডিমের উর্বরতা ৭৫-৮০%। হ্যাচিবিলিটি মোট ডিমের ৭০-৭৫%।
দৈহিক গড় ওজন ১৬০০ গ্রাম- ১৭০০ গ্রাম ( পূর্ণ বয়স্ক )। প্রাপ্ত বয়স হতে সময় লাগে ১৮০-২১০ দিন।
ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার সময়কাল-২৬-২৮ দিন।
ডিমের খোসা মুরগির ডিমের থেকে বেশি শক্ত।এক সাথে ২৫-৩০ টি ডিম পাড়ে।অতিরিক্ত বড় বা ছোট ডিম বাতিল করা হয়।
হেন নিজে বা মুরগি দিয়ে ১২-১৫ টি ডিম এক সাথে ফোটানোর জন্য দেয়া হয়।
ইনকোবেটরের তাপমাত্রা ৯৯.৫-১০০ ডিগ্রি ফা্রেনহাইট আর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৫৭-৫৮ %।১ম ২ সপ্তাহে ৩৭ পরের সপ্তাহে ৩৬ সেন্টিগ্রেট।
একদিনের বাচ্চার গড় ওজন ২১-২৭ গ্রাম।
মাংস ও ডিমের বৈশিষ্ট —
তিতিরের মাংস কিছুটা শুষ্ক প্রকৃতির. এর মাংসে কম প্রোটিন, কম চর্বি ( মুরগীর তুলনায় অর্ধেক ) এবং কম ক্যালোরিযুক্ত. তবে এর ডিম মুরগীর ডিমের তুলনায় বেশী সমৃদ্ধ.
পালন পদ্ধতিঃ
বাচ্চাকে কিট বলা হয় ।
১) ব্রুডিং– মুরগীর বাচ্চার তুলনায় তিতিরের বাচ্চা ঠাণ্ডায় অধিক সংবেদনশীল। সেজন্য প্রথম সপ্তাহে উচ্চ ব্রুডিং তাপমাত্রা প্রয়োজন। ১ম থেকে ৩য় সপ্তাহ পর্যন্ত ৩৭ ডিগ্রি সেঃ এবং ৪র্থ থেকে ৫ম সপ্তাহ ৩৬ ডিগ্রি সেঃ এ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
২) বাসস্থান– মুক্ত, আধা মুক্ত বা বদ্ধ এই ৩ অবস্থায় এদের পালন করা যায়। বয়স ভেদে বদ্ধ অবস্থায় জায়গার পরিমান নিন্মরুপঃ
০-৪ সপ্তাহ–০.৫ বর্গফুট, ৫-৮ সপ্তাহ– ০.৭৫ বর্গফুট, ৯-১৩ সপ্তাহ–১.০ বর্গফুট, পূর্ণ বয়স২-২.৫বর্গফুট।
৩) খাদ্য ও পানি– বাড়ন্ত তিতিরের সাপ্তাহিক খাদ্য ও পানি গ্রহনের পরিমান নিন্মরুপঃ
সপ্তাহ——-খাদ্য ( গ্রাম ) ——- পানি ( মিলি )
১ম———–৫৫ গ্রাম————-৭৫ মিলি
২য়———–১৩০—————–১৮০
৩থ———–২১০—————–২৯০
৪র্থ———–২৭৫—————–৩৮০
৫ম———–৩৪০—————–৪৬০
৬ষ্ঠ———–৩৯৫—————–৫৩০
৭ম———–৪৬০—————–৬২০
৮ম———–৪৯৫—————–৬৭০
৯ম———–৫৪০—————–৭৩০
১০ম———৫৮৫——————৭৮০
১১তম——–৬১০—————–৮১০
১২তম——–৬৩০—————-৮৩৫
১৩তম——–৬৩৫—————-৮৪৫
১৪তম——–৬৪০—————-৮৫০
সুষম খাদ্য প্রস্তুত প্রণালী
খাদ্য উপাদান—-স্টাটার(০-৪সপ্তাহ)—-গ্রোয়ার(৫-২০)—২১সপ্তাহ থেকে
গম চূর্ণ———–২৮% —————–৩০%—————২৮%
ভুট্টাচূর্ণ———–১৮%——————২৪%—————১৮%
ধানের কুড়া——১৪%——————-১৯%—————১৫%
তিলের খৈল——০৯%——————-০৭%————–০৮%
নারিকেলের খৈল-১১%——————-০৮%————–১১%
ফিস মিল———১৮%——————-১০%—————১৫%
ঝিনুক চূর্ণ——–০১%——————-০১%—————০৪%
লবন————–০.৬০%—————-০.৬০%————০.৬০%
ভিটামিন-মিনের্যালস-০.৪০%———–০.৪০%————০.৪০%
_______________________________________________
মোট= ১০০%( ৩০০০ কিলোক্যালরি)
ব্রয়লার থেকে তিতিরের মেথিওনিন এবং লাইসিস এক টু বেশি লাগে
মেল তিতির কে কম এনার্জি মানে ২৭০০-২৯০০ কিলোক্যালরি দেয়া হয় আর ফিমেলের ওজন ২০% বেশী হয়।
স্টাটার খাবারে নিয়াসিন এবং ভিটামিন বেশি করে দিতে হবে তা নাহলে পেরোসিস মানে প্যারালাইসিস হয়।
৮-১০টি তিতির ছাড়া অবস্তায় পালন করা যায়,বাহিরের ঘাস,লতাপাতা শাক সব্জি এবং বাড়ির অবশিষ্ট খাবার দিয়ে।
ব্রিডার তিতিরঃ
গ্রোয়িং খাবারে এনার্জি এবং প্রোটিন বেশী দিলে ফিমেলে ফ্যাট হয়ে যায় ফলে ভাল ডিম পাড়েনা এবং ডিম পাড়ার সময় মারা যায়।
ব্রিডার তিতিরের খাদ্যে এনাজি এবং প্রোটিন নিম্নরুপঃ
নিউট্রিয়েন্ট ০-৪ সপ্তাহ ৫-৮ ৯-১২ সপ্তাহ
সপ্তাহ ১ ২ ৩ ৪ ১ ২ ৩ ৪ ১ ২ ৩ ৪
এনার্জি ২৯০০,৩০০০,৩১০০,৩২০০ ২৮০০,২৯০০,৩০০০,৩১০০ ২৮০০,২৯০০,৩০০০,৩১০০
প্রোটিন ১.২৬ ১.৩ ১.৩৪ ১.৩৮ .৮৯ .৯২ .৯৫ .৯৮ .৬০ .৬২ .৬৪ .৬৬
রিয়ারিং পিরিয়ডে খাবার নিম্নরুপঃ
সপ্তাহ ০-৪ ৫-১২ ১৩-১৫ ১৬-১৭ ১৮-২২ ২৩ ২৪-২৫ ২৫ আপ
খাবার স্টাটার গ্রোয়ার রিয়ারার
গ্রাম/পাখি/দিন যা খায় যা খায় ৫৫ ৬৩ ৭২ ৮০ ৮৫ যা খায়
এনার্জি ২৮০০ কিলোক্যালরি
দেশে যে তিতির পাওয়া যায় সেটি পার্ল ভ্যারাইটি। এরা ধূসর বর্ণের এবং পালকে ফোটা ফোটা সাদা দাগ বিদ্যমান। এদের ডিমের রং হালকা বাদামী। ডিমের গায়ে ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। ডিম লাটিমের আকৃতির হয়ে থাকে। পুরুষ পাখির মাথার মুকুট একটু বেশী উঁচু হয়ে থাকে স্ত্রী পাখির তুলনায়।
এদের পায়ের রং কালচে। একটি পূর্ণ বয়সের পুরুষ পাখির ওজন ১৬০০-১৭০০ গ্রাম এবং স্ত্রী পাখির ওজন ১৩০০-১৫০০ গ্রাম। এ পাখির ডিম প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম উপায়ে ফোটানো যায়।
রোগ ঃ
# গোল কৃমি—লক্ষণ সমুহ– ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়,পাতলা পায়খানা করে, খাবারে অনীহা দেখা দেয়।
চিকিৎসাঃ পলনেক্স বা এসকারেক্স ( ascarex ) ব্যাবহার করা যেতে পারে।
# রক্ত আমাশয় ( coccidiosis )—- ওজন হ্রাস পায়, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা করে, পালক অনুজ্জ্বল হয়
চিকিৎসাঃ ই এস বি৩ বা এমপ্রোলিয়াম (amprulium) নির্দেশিত মাত্রায় ব্যাবহার করা যেতে পারে।
# ট্রাইকোমোনিয়াসিস—-ওজন হ্রাস পায়, ঝুঁটি কালো হয়, মুখ থেকে লালা ঝরে
চিকিৎসাঃ এমিডিওস্টাট(amidiostat) নির্দেশিত মাত্রায় ব্যাবহার করা যেতে পারে।