Breaking News
শীতকালে ছাগল/ভেড়াকে নিরাপদ রাখার উপায়
শীতকালে ছাগল/ভেড়াকে নিরাপদ রাখার উপায়

প্রচন্ড শীত থেকে ছাগল , ভেড়া, গাড়ল কে নিরাপদে রাখার উপায়

প্রচন্ড শীত থেকে ছাগল , ভেড়া, গাড়ল কে নিরাপদে রাখার উপায়

বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে যে শীত পরেছে গত কয়েক দশকেও নাকি এমন শীত পরেনি শীতের কারনে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখি গুলো বিভিন্ন ঠান্ডা জনিত অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে । যাদের শীতে পশু পালনের অভিজ্ঞতা আছে তারা কোন রকমে শীত থেকে পশু গুলোকে রক্ষা করতে পারলেও নতুন যা তারা বিভিন্ন সমস্যা পরছেন ।  তীব্র শীত থেকে এবং শীত জনিত রোগ থেকে পশুগুলোকে রক্ষা করার জন্য ৪ বছরের মধ্যে সবচাইতে সফল হয়েছি যে নিয়মে এটি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম নিছে আশা করছি যদি ঐ নিয়ম গুলো ফলো করেন তবে আপনাদের পশুগুলো নিরাপদে থাকবে :-

১। মাচা :- ছাগল ,ভেড়া, গাড়ল পালন করতে হলে শীত বা গরমে কোন অবস্থায় পাকা ফ্লোর বা মাটিতে সরাসরি পশু গুলোকে রাখা যাবে না । যাদের পক্ষে আধুনিক সেড করা সম্ভব হবে না বা কম পশু পালন করেন তারা কাঠের তৈরি পাটাতন ব্যবহার করতে পারেন  । অথবা বিশেষ প্রয়োজনে রাজমিস্ত্রির কাজে যে বাঁশের মাচা ব্যবহার করা হয় ঐ গুলো রেডিমেড যে কোন বাজারে পাওয়া যাবে দাম ১৫০-২৫০ টাকা করে এমন ২ টি মাচা একসাথে রাখলে ৪-৫ বড় ছাগল খুব ভাল করে মাটির স্পর্শ থেকে রক্ষা করতে পারবেন । অনেকে পাটের বস্তা বা খড় মাটিতে দিয়ে রাখেন এটি করলে খরচ বেশি এবং ঐ গুলো ভিজে আরো ঠান্ডা লাগবে সুতরাং শীতে প্রথমে ছাগল গুলোকে যেন রাতের বেলাতে মাটি বা ফ্লোরে না থাকে এই ব্যবস্থা করতে হবে ।

২ । খাবার:- শীতে পশুর খাবার কাঁচা ঘাস আগে যেমন দেওয়া হত তেমন দিতে পারেন । অনেকেই শীতের দিনে পানি খাওয়ানো একদম বন্ধ করে দেন এটি ঠিক না শীতে পানি দিতে হবে এবং অবশ্যই হাল্কা কুসুম গরম পানি দিবেন আর পানি বেশি সময় দিয়ে রাখবেন না এতে ঠান্ডা হবে পানি আর ঠান্ডা পানি পান করলে আরো ঠান্ডা লাগবে । পানির সাথে ৩-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে সরিষার খৈল অল্প অল্প শুরু অভ্যাস করান শরিষার খৈলে অধিক প্রোটিনের কারনে শরীর গরম থাকবে । সাথে গমের ভূষি এবং সাদা মটরের ভূষি মিক্স করে দিতে পারেন খাবারে আগ্রহ হবে এবং চিটাগুড় মিশিয়ে পানি দিবে এতে হজম শক্তি বাড়বে । যদি কারো ছাগল পানি পান করতে না চায় তবে আস্তে আস্তে উপরে ৩ টি জিনিস মিশিয়ে অভ্যস্ত করাতে পারেন অথবা পানি ছাড়া হাল্কা ভেজা ভেজা মিশিয়ে দিতে পারেন তবে খৈল কোন অবস্তায় শুকনা দেওয়া যাবে না অবশ্যই ৩-৪ ঘন্টা ভিজিয়ে দিতে হবে

৩ । ভিটামিন :- তীব্র শীতে পশু গুলোর শরীর গরম রাখার জন্য এবং দকল কাটিয়ে উঠতে ২-৩ মাস একটু নিয়মিত ভিটামিন, ক্যালিসিয়াম, মিনারেলস, ইত্যাদির যোগান সঠিক ভাবে দিতে হবে ।প্রতি ১০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য হিসেব করে প্রতিটি পশুকে ১ এমএল করে ভিটামিন এডিই৩ সিরাপ একটানা ৫ দিন উপরের খাবারে নিয়ম দেওয়া আছে তার সাথে দিতে হবে এবং কোন অবস্থায় যেন মাত্রা বেশি না হয় এর বেশি হলে পাতলাখানা হবে । এডিই দিলে উক্ত ভিটামিনের চাহিদা পুরণ করবে এবং শরীর গরম রাখবে । এর পর ৫ দিন গ্যাপ দিয়ে দিয়ে জিংক, ভিটামিন বি+সি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি দিবেন । তবে অবশ্যই এডিই৩ এই শীতের ৩ মাস নভেম্বর মাঝামাঝি থেকে, ডিসেম্বর, জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত মাসে যেন ৩০ দিনের মধ্যে ২ বার ৫ দিন ৫ দিন ১০ দিন পরে

৪ । তাপের ব্যবস্থা:- আমাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে খামারে তাপের ব্যবস্থা করেন । কেউ হিটার, কেউ ক্লিয়ার বাল্ব ১০০-২০০-৫০০ ওয়াটের ব্যবহার করে থাকেন । সরাসরি বেশি ওয়াটের হিটার ব্যবহার করলে অনেক বিদুৎ খরচ লাগে এবং খামারের সকল জায়গাতে একসাথে তাপ পৌছাতে পারে না । আবার অনেকে সরাসরি ক্লিয়ার বাল্ব ব্যবহার করার কারনে খামারে রাতের বেলাতে প্রচুর আলো হয় যার কারনে কিছু কিছু পশু দৌড়াদৌড়ি , চলাফেরা করে এবং যে যে পশু বিশ্রাম নেয় তাদের বিরক্ত করে এতে পশুগুলো সঠিক ভাবে বিশ্রাম নিতে এবং ঘুমাতে পারে না এর প্রভাব খুব মারাত্বক হয় । ভাত যে রান্না করে এমন ছোট সাইজের ডেস্কি কান্দা ওয়ালা কলসির মত যেটিতে ২০০ ওয়াটের লাইট ঢুকবে । যে কোন হাড়ি পাতিল বিকেরেতার দোকানে পাবেন দাম ৫০-৬০ টাকা ১ টির । স্টীল হলে তাপ বেশি পাবেন আর সিলভারের হলেও কোন সমস্যা নাই তবে একটু কম তাপ পাবেন । বাল্ব ভর্তি ডেস্কিটি একটি তারের মাধ্যমে বাঁধবেন মধ্যমে এনে বাল্বের তারের সাথে ঝুলিয়ে দিবেন । তার ছাড়া দরি বা প্লাস্টিকের কিছু দিয়ে বাঁধলেন পুড়ে যাবে ।
প্রতি ১০০ স্কয়ারফিট ঘড়ের জন্য ১ টি ২০০ ওয়াটের ক্লিয়ার বাল্ব হিসেবে দিবেন । বাল্ব গুলো মধ্যে বরাবর রাখবেন তাহলে তাপ চতুর্থ পার্শ্বে যাবে । স্কয়ারফিট হিসেব বের করবেন গড় যদি ১০ ফুট বাই ২০ ফুট হয় তখন দৈর্ঘ পূরণ প্রস্ত ১০ পূরণ ২০ অর্থাৎ ২০০ স্কয়ার ফিট ।ক্লিয়ার বিদুৎ বাল্ব খুব ঘন ঘন নষ্ট হয় তাই কয়েকটি বাল্ব অতিরিক্ত কিনে রাখবেন আর পরিচিত দোকান থেকে কিনলে নষ্ট বাল্ব পরিবর্তন করার সুযোগ পাবেন ।
আর বিদুৎ খরচের হিসেব হল ১০০০ ওয়াট বিদুৎ ১ ঘন্টা চললে ১ ইউনিট বিদুৎ বিল আসবে সেই হিসেবে হিসেব করবেন আপনি বাণিজ্যিক, আবাসিক, ইরিগ্রেসন, নাকি পল্লী বিদুতের গ্রাহক এখানে ৪ গ্রাহকের ইউনিট প্রতি ৪ রকম দাম। এই সিস্টেমসে বেশি বিদুৎ বিল আসবে না ।
যাদের এলাকাতে বিদুৎ নাই তার আপনাদের এলাকাতে কোন পোল্টি ফার্ম পরিদর্শন করেন এবং দেখেন তারা কিভাবে হারিকেন বা চুলা দিয়ে ব্রুডিং করে তাপ দেয় ঐ নিয়মে আপনার ছাগলের খামারে তাপের ব্যবস্থা করতে পারবেন । ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও গভীর রাতে খেয়াল করবেন অনেক ঠান্ডা থাকে ঐ বিষয় গুলো খেয়াল করে তাপ কমিয়ে আনবেন অথবা আলাদা তাপ দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন ।




সতর্কতা:- বিদুতের কাজ অবশ্যই পেশাদার লোক দিয়ে করাবেন খামারে যে তার দিয়ে ওয়ারিং করা হয় ঐ হোল্ডারে ৪০০-৫০০ ওয়াটের বেশি লোড দেওয়া বিপদজনক তাই তারের কোয়ালিটি দেখতে পেশাদারের পরামর্শ নিতে হবে বেশি ওয়াটের লোড দিলে আলাদা মজবুত তার দিয়ে লাইন করে নিতে হবে ।
আর বিদুতের তার বাল্ব বা অন্য কিছু যেন ছাগল , ভেড়া নাগাল না পায় এমন করে রাখতে হবে । খামারে অবশ্যই ভাল যেমন, সুপারস্টার, আরএফএল, বিআরবি ইত্যাদি কোম্পানির সার্কিটব্রেকার এ্যাম্পেয়ার অনুযায়ী লাগাবেন এতে সঠির সময়ে যদি কোন প্রকার বিদুতের সমস্যা হয় তবে সাথে সাথে অটোমেটিক লাইন বন্ধ হয়ে যাবে এতে আল্লাহর রহমতে আপনার খামারে জান মাল নিরাপদ থাকবে ।

৬। পশু বাহিরে চড়ানো এবং সেড পরিস্কার :- যতক্ষন পর্যন্ত কুয়াশা না কমে ততক্ষন সেডের পর্দা তোলা যাবে না ঘর পরিস্কার করতে হবে প্রর্তিদিন । রৌদ্রে আলোতে কুয়াশা কমলে পশুগুলেকে ছাড়তে হবে এবং বিকালে রৌদ্রের আলো কমার সাথে সাথে সেডের ভিতরে আনতে হবে এরং পর্দা লাগিয়ে আলো আর হিটের ব্যবস্হা করতে হবে ।

কৃমি মুক্ত :- আমাদের মাধ্যে অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে কৃমির কারনে ঠান্ডার কি সম্পর্ক…? হ্যা প্রচন্ড বেশি ফুসফুস কৃমিতে আক্রান্ত ফুসফুসে এ্যাসকারিস কৃমির লার্ভা মাইগ্রেশনের কারনে কাশী, ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেয় এরং দেখা যায় নাক দিয়ে পাতলা এবং ঘন সর্দি লেগে থাকে যা কৃমির চিকিৎসা ছাড়া ভাল করা সম্ভব না । উপরে যে সরিষার খৈল বা দানাদার খাবারের কথা বলেছি যদি কৃমি থাকে পেঠে তবে পাতলা পায়খানা হতে পারে তাই নিয়মিত কৃমি মুক্ত রাখবেন ।

লেখক:- Md Zahir(একের ভিতর সব নামক গ্রুপ থেকে নেয়া)

Please follow and like us:

About admin

Check Also

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় : স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »