১।থায়ামিন (বি১)
মুরগির জন্য উৎস ঃবেশির ভাগ খাদ্য শস্যে পাওয়া যায় তবে সয়াবিন ,তুলাবীজ এবং তাদের মিলে বেশি পাওয়া যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে থায়ামিন হাইড্রোক্লোরাইড আকারে পাওয়া যায়।থায়ামিন শরীরে জমা থাকে না।অতিরিক্ত হলে শরীর থেকে বের হয়ে হয়ে যায়।
কিভাবে খাদ্য থেকে থায়ামিন নস্ট হয়
মিশ্রিত খাদ্য বেশিক্ষণ রাখলে
খাদ্যে জলীয় অংশ বেশি থাকলে
পি এইচ বেশি হলে।
কপারে নস্ট হয়।
খাদ্যে ফিশমিল দিলে এবং ব্যাক্টেরিয়া ও মোল্ড জন্মালে।
থায়ামিনের ঘাটতি কেন হয়
বেশি শর্করা যুক্ত খাদ্যে থায়ামিন কম থাকলে
বংশগত কারণে কিছু জাতের থায়ামিনের চাহিদা বেশি থাকলে
অন্ত্রনালীর সমস্যা জনিত রোগ এবং উপকারী জীবানূ কম থাকলে
এম্প্রোলিয়াম জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে
পরিবেশগত ধকলে
মুরগিতে বি১ এর কাজ
কার্বোক্সিলেজ কো এনজাইম হিসাবে কাজ করে কোষীয় বিপাক ক্রিয়ার দ্বারা শর্করা,আমিষ এবং চর্বি থেকে শক্তি উৎপন্ন করে।
এসিটাইল কোলিন উৎপন্নে সয়াহতা করে যা স্নায়ু তন্ত্রকে কার্যকরী করে।
স্নায়ুতন্ত্রের স ংর ক্ষণকারী মাইলিনসিথ সংরক্ষণে প্রয়োজন
বিপাকীয় শক্তি উৎপন্নের দ্বারা হৃদপিন্ডের মাংস পেশিকে সবল রাখে ফলে রক্ত সঞ্চালন সুন্দরভাবে হয়।
খাবার চাহিদা স্বাভাবিক রাখে।
বি১ এর ঘটতিতে মুরগির কি কি সমস্যা হয়
শর্করার অসম্পূর্ণ বিপাক ক্রিয়ার ফলে শক্তির ঘটতি হয়
এসিটাইল কোলিন সংশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হয়।এর ফলে স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয় এতে শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি কমে যায়।
বিপাক ক্রিয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন গ্লাইকোলাইসি,সাইট্রিক এসিড সাইকেল,পেনটোজ পাথওয়ে ,ডি কার্বোক্সিলেশন,ল্যাক্টেট ডি হাইড্রোজিনেজ বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রিডারে ঘাটতি থাকলে ১ম সপ্তাহে অনেক বাচ্চা মারা যায়।
ডিম ফুটার হার কমে যায় এবং ভ্রূণ মারা যায়।
বৃদ্ধি কমে যায়।
চিকিৎসা ঃ
প্রতি বাচ্চাতে ৫-১০ এম জি/দিন বড় মুরগিতে ১০-৫০ এম জি/দিন
২।রিবোফ্লাভিন(বি২)
উৎস ঃশস্যদানায় খুব কম পাওয়া যায়।উপকারী জীবাণূ বি২ তৈরি করে।
এটি শরীরে জমা হয় না।তবে কলিজা ,কিডনি ও হৃদপিন্ডে কিছুটা জমা হয়।
বি২ এর স্থায়িত্ব ঃতাপ ও এসিড দ্রবণে সহজে নস্ট হয় না।
ক্ষারীয় দ্রবণ ও আল্টাভায়লেট আলোক রশ্মিতে নস্ট হয়।
বি২ এর ঘাটতি কেন হয়
মিশ্রিত খাদ্যে পর্যাপ্ত না থাকলে
রিবোফ্লাভিনের মাত্রা পর্যাপ্ত না দিয়ে আমিষ ও চর্বি বাড়ালে
খাদ্য পিলেটিং করলে
শস্য সঠিক ভাবে সংরক্ষণ না করলে
খাদ্য ঠিকভাবে মিশানো না হলে
রিবোফ্লেভিনের কাজ কি
কো এনজাইম হিসেবে কাজ করে শ্বাস প্রশ্বাসে সয়াহতা করে।
কো এনজাইম হিসেবে শর্করা,এমাইনো এসিড এবং ফ্যাটি এসিড বিপাক ক্রিয়ায় এবং সংশ্লেষণে সয়াহতা করে।
মাইলিন সিথকে সংরক্ষণ করে স্নায়ু তন্ত্রের কার্যক্রমকে ঠিক রাখে।
পুস্টিকে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন ঠিক রাখে।
ডিমের ফুটন্ততার হার ও উর্বরতা ভাল রাখে
বাইন্ডিং প্রোটিন স ংশ্লেষণে সয়াহতা করার ফলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুস্টি পরিবাহিত হয়।
বি২ এর ঘাটতিতে মুরগির কি কি ক্ষতি হয়
বৃদ্ধি ব্যহত হয় বিশেষ করে ব্রয়লারের।
এফ সি আর বেড়ে যায়
ডিম উৎপাদন এবং ফুটার হার কমে যায়।
ডিমের উর্বরতা কমে যায়।
১ম সপ্তাহে বাচ্চা অসুস্থ হওয়া এবং মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
তাপজনিত ধকল বেশি অনুভূত হয়।
বি২ এর ঘাটতি দীর্ঘায়িত হলে অন্ত্রনালী প্রদাহ এবং পাতলা পায়খানা হয় এতে লিটার ভিজে যায়।
কার্ল টো প্যারালাইসিস বিশেষ করে বাচ্চাতে।
চামড়া পাতলা হয় এবং চর্ম প্রদাহ হয়।
ভ্রূণ মারা যায়।
চিকিৎসা ঃ
পানির মাধ্যমে রিবোফ্লেভিন দিতে হবে।দীর্ঘমেয়াদী ঘাটতি হলে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।
৩।পাইরিডক্সিন(বি৬)
উৎস ঃপাতাযুক্ত শাক সবজি ,খাদ্য শিস্য এবং শস্যের ভূষিতে পাওয়া যায়।
পাইরিডক্সিনের স্থায়িত্ব ঃ
আলো,স্বাভাবিক পি এইচ এবং ক্ষারে নস্ট হয়।
বি৬ এর ঘাটতি কেন হয়
বেশি লিপিড ও আমিষযুক্ত খাদ্যে পাইরিডক্সিন পর্যাপ্ত না থাকলে।পাইরিডক্সিন আমিষের বিপাক ক্রিয়ার ফলে এর ঘাটতি পড়ে।
অন্ত্রনালীর যে কোন রোগের কারণে পাইরিডক্সিন কম শোষিত হলে ঘাটতি পড়ে।
দীর্ঘ মেয়াদী ও মাঝারী তীব্র রোগে খাদ্য গ্রহণ কম করাতে ঘাটতি পড়ে যদিও এই সময় বেশি প্রয়োজন।
দীর্ঘমেয়াদী এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে উপকারী জীবাণূ ধবংসের ফলে পাইরিডক্সিন কম শোষিত হয় ফলে ঘাটতি হয়।
খাদ্যে এন্টাগ্নিস্ট ব্যবহার করলে
খাদ্য বা প্রিমিক্স সংরক্ষণ ভাল না হলে।
মুরগির শরীরে পাইরিডক্সিনের কাজ কি
এটি এমানো এসিড ,ফ্যাটি এসিড এবং শর্করা থেকে টি সি এ চক্রের দ্বারা শক্তি উৎপন্নে ভুমিকা পালন করে।
বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য কো এনজাইম হিসেবে কাজ করে,
এটি আমিষ,শর্করা, চর্বি,সালফারযুক্ত এমানো এসিড,ট্রিপটোফেন এবং কিছু মিনারেলের বিপাক ক্রিয়ায় প্রয়োজন।
এমাইনো এসিড কে কোষ প্রাচীরের ভিতরে যেতে সহয়াত করে।
আয়রণ থেকে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে।
ট্রিপটোফিন থেকে নায়াসিন উৎপন্নে প্রয়োজন।
বি৬ এর ঘাটতিতে মুরগির কি কি ক্ষতি হয়
আমিষের বিপাক ক্রিয়া ভাল না হওয়ায় আমিষের ঘাটতি পড়ে ফলে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় বিশেষ করে ব্রয়লারের পরবর্তিতে ক্ষুধামন্দা এবং খাবার কম খায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ধকল বেশি অনূভুত হয়।
গরম এবং ঠান্ডা জনিত ধকল স হ্য করতে পারেনা।
ডিম উৎপাদন কমে যায়
ভ্রূণ মারা যাওয়ায় ডিম ফুটন্ততার হার কমে যায়
পায়ের গঠন ঠিক মত না হওয়ায় পা দূর্বল হয়ে বসে পড়ে।
দীর্ঘমেয়াদী ঘাটতিতে মুরগির স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফলে শরীরে কম্পন ,স্থিরচলন(stifgait)পায়ে পায়ে আঘাত লাগা(ataxia) অস্বাভাবিক উত্তেজনা এবং শেষ পর্যায়ে প্রবল খিচুনী হয়
গিজার্ড ক্ষয়ে যায়
চিকিৎসা ঃপানির মাধ্যমে সরবরাহ করতে হবে
৪।ভিটামিন বি১২(সায়ানোকোবালামিন)
উৎস ঃপ্রোটিন কন সেনট্রেট ,ফিশ মিল ও মিট মিল।
বি১২ এর স্থায়িত্ব ঃ
জারিত হয়ে নস্ট হয়
দীর্ঘ সময় সূর্যের আলোতে নস্ট হয়
তাপ ও জলীয় বাষ্পে নস্ট হয়
পিলেট ফিডে এটি ঠিক থাকে এবং মিনারেল প্রিমিক্সে মান ঠিক থাকে।
বি১২ এর কাজ কি
এমাইনো এসিড সংশ্লেষ্ণণে কোএনজাইম হিসেবে কাজ করে
এমাইনো এসিড থাকে প্রোটিন সংশ্লেষণে সয়াহতা করে,
ডি এন এ গঠনে ভূমিকা রাখে
মাইলিন সিথ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে
লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সয়াহতা করে।
ফলিক আসিড থেকে টেট্রা হাইড্রোফোলেট সংশ্লেষণ করে
ফ্যাটি এসিডের বিপাক ক্রিয়া সম্পাদন করে।
প্রোপাইনয়িক এসিড বিপাক ক্রিয়া কো এনজাইম হিসেবে কাজ করে।
বি১২ এর ঘাটতি কেন হয়
অন্ত্রনালী যদি ঠিক মত শোষ্ণ ণের কাজ করতে না পারে।
বেশি আমিষ ও চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্যে পর্যাপ্ত বি১২ না থাকলে
প্রাণীজ খাদ্যে বি১২ বেশি না থাকলে
খাদ্যে মিথিওনিন, কোলিন ও ফোলাসিন কম থাকলে
ব্রিডারের খাদ্যে পর্যাপ্ত বি১২ না থাকলে বাচ্চাতে ১ম সপ্তাহে ঘাটতি দেখা দেয়।
কোবাল্টের ঘাটতি থাকলে
মিশ্রিত খাদ্যে বি১২ কম থাকলে
বি১২ এর ঘটতি হলে মুরগির কি কি ক্ষতি হয়
এফ সি আর বেড়ে যায় এবং বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
বিপাক ক্রিয়া কমে যাওয়ায় ডিমের আকার ছোট হত এবং ডিম উতপাদান ও ফুটার হার কমে যায়।
দীর্ঘমেয়াদী ঘাটতির ফলে ক্ষুধামন্দা এবং খবার কমে যায়।
এনিমিয়া হয়
গিজার্ড ক্ষয়ে যায়
ব্রিডারে ঘাটতি হলে বাচ্চা ছোট হয় এবং মারা যায়।
এনিমিয়া হবার কারনে যে কোন রোগ হবার সম্বাবনা থাকে
স্টেস বেশি অনুভুত হয়
ভ্রূণ মারা যায়
পালক গঠন ঠিক মত হয় না।
পা দূর্বল হয়।
চিকিৎসা >পানির মাধ্যমে দিতে হবে।
৫।বায়োটিন(ভিটামিন এইচ)
মুরগির জন্য উৎস ঃসয়াবিন মিল
বায়োটিনের স্থায়িত্ব ঃ
স্বাভাবিক পরিবেশে ভাল থাকে
গাঢ় অম্ল মাধ্যমে ও জারিত হয়ে নস্ট হয়।
আল্টাবায়োলেট আলোতে নস্ট হয়
মোল্ড এবং টক্সিন বায়োটিনের বিপাক ক্রিয়ায় বাধা দেয় ফলে ঘাটতি পড়ে।
কিছু ব্যাক্টেরিয়া বায়োটিন নস্ট করে,
বায়োটিনের ঘাটতি কেন পড়ে
মুরগির খাদ্য উপাদানে বায়োটিন তেমন থাকে না তাই ঘাটতি পড়ে।
মিশ্রিত খাদ্যে প্রিমিক্স কম থাকলে
খাদ্যে অ সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যোগ করাতে ফ্যাটি এসিডের বিপাক ক্রিয়ার জন্য বায়োটিনের প্রয়োজন হয় ফলে ঘাটতি পড়ে।
খাদ্যের চর্বি জারণের ফলে বায়োটিনের কার্যকারিতা নস্ট হয়।
খাদ্যের লিনোলিক এসিড বায়োটিন কে নস্ট করে ফলে ঘাটতি হয়।
মোল্ডযুক্ত খাদ্য
অন্ত্রনালীর যে কোন রোগে পাতলা পায়খানার কারণে বায়োটিন কম শোষিত হয় ফলে ঘাটতি পড়ে।
অস ম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড,এমানো এসিড ও বি গ্রোপের ভিটামিনের মধ্যে এন্টার একশনের ফলে চাহিদা বাড়ে ফলে ঘাটতি পড়ে।
উচ্চ জাতের মুরগিতে উৎপাদন ঠিক রাখতে বায়োটিন বেশি প্রয়োজন ফলে ঘাটতি হয়।
বায়োটিনের কাজ কি
বায়োতিন এক ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায় যাকে বলে কার্বোক্সিলেশন।এখানে এক অণূ থেকে অন্য অণুতে কার্বন ডাই অক্সাইড প্রতিস্থাপিত হয়।এই কার্বোক্সিলেশন বিক্রিয়া চর্বি,আমিষ ও শর্করা বিপাক ক্রিয়ার সাথে জড়িত।
ফ্যাটি এসিড বিপাক ক্রিয়ায় ও প্রয়োজন।
চর্বি,আমিষ ও শর্করা বিপাক ক্রিয়ায় কো এন জাইম হিসেবে কাজ করে,
বায়োটিন আমিষ থেকে শর্করা এবং শর্করা থেকে আমিষ আবার আমিষ ও শর্করা থেকে চর্বি রুপান্ত্রিত করে।
যখন খাদ্যে শর্করা কম থাকে তখন আমিষ ও চর্বি থেকে বিপাক ক্রিয়ার দ্বারা গ্লোকোজ উৎপন্ন করে রক্তের গ্লোকোজ মাত্রা ঠিক রাখে।
আমিষ সংশ্লেষণে ,এমাইনো এসিডের ডি এমাইলেশন পিউরিন সংশ্লেষ ণ,নিউক্লিইক এসিড বিপাক ক্রিয়ায় জড়িত থাকে।
বায়োটিন থাইরয়েড গ্রন্থি,এড্রিনাল গ্রন্থি,জনন ত ন্ত্র,স্নায়ুত ন্ত্র এবং চর্ম তন্ত্রে স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক রাখে।
বায়োটনের ঘাটতিতে কি কি ক্ষতি হয়
বৃদ্ধি ব্যহত হয়,েফ সি আর বেড়ে যায়,পালক ভংগুর হয়,চর্ম প্রদাহ হয়,পা ও ঠোঁট বিকৃত এবং অবশ হয়।
ডিমের উৎপাদন ও ফুটার হার কমে যায়।
ব্রিডারে ঘাটতি থাকলে বাচ্চার হাড় অসম হয় অংশীয় অবশ(perosis),ভুণের গড়ন ছোট হয়।
ফ্যাটি লিভার ও কিডনি রোগে ব্রয়লারে মৃত্য হার বেড়ে যায়।
১ম অবস্থায় বাচ্চার মৃত্য হার বেড়ে যায়
পুরুষ ব্রিডারে পায়ের চামড়া নস্ট হয়ে যায় ফলে চলাফেরা কমে যায় এতে অনুর্বর ডিম হয়।
চিকিৎসা ঃ
পানিতে বায়োটিন দিলে ফ্যাটিলিভার ও কিডনি রোগের মৃত্যহার ২৪-৪৮ ঘন্টায় বন্ধ হয়ে যায়