Breaking News

মোরগ মুরগির প্রয়োজনীয় ভিটামিন সমূহ(চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন)

ভিটামিন কি?

ভিটামিন হচ্ছে জটিল রাসায়নিক যৌগ যা শরীরে তৈরি হয় না,(ভিটামিন সি ব্যতীত),খাদ্য দ্রব্যে খুব কম পাওয়া যায় যা শরীরের বৃদ্ধি,উতপাদন এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় খুব ই প্রয়োজন যার অভাবে বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং সমস্যা দেখা দেয় তাকে ভিটামিন বলে।

মুরগির শরীরে সমস্ত ভিটামিন তৈরি হয় না তাই সবচেয়ে  ভাল উৎপাদন ঠিক রাখার জন্য সর্ব্বোচ্চ পুস্টি চাহিদা মিটাতে বিশেষ করে অতি উৎপাদনশীল জাতে খাবার ও পানির মাধ্যমে তৈরি ভিটামিন প্রয়োগ করতে হয়।

সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি ভিটামিন( কোটেড) আবরণ দ্বারা যুক্ত থাকে তাই নস্ট হয় না।

একই প্রকারের খাদ্য শস্যে ভিটামিন গুলোর পরিমাণ কম বা বেশি থাকার কারণ হচ্ছেঃ

শস্যের উৎপাদন স্থলের  পার্থক্য

শস্যে সার ব্যবহারের ধরণ

আহাওয়ার পার্থক্য

পর্যায় ক্রমিক কোন কোন ধরণের শস্য উৎপাদন হচ্ছে।

শস্য সংগ্রহ করিবার সময় এবং অবস্থার পার্থক্য।

শস্য সংরক্ষণের পার্থক্য

নিম্নলিখিত কারণে মোরগ মুরগিতে ভিটামিনের চাহিদার তারতম্য ঘটে

বংশগত গুণ এবং প্রডাকশন হার

শারীরবৃত্তীয় চাহিদা

মোরগ মুরগির বয়স

মুরগির সেড এবং পালন পদ্ধতি

টিকা প্রদান কর্মসূচী এবং পদ্ধতি

রোগের প্রার্দুভাব

মেডিসিন প্রয়োগ এবং রোগ প্রতিরোধ

ভিটামিন গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়

ক চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন

এ, ডি,ই , কে

খ।পানিতে দ্রবণীয়

বি১ বি২ বি৬,বি১২,নায়াসিন,বায়োটিন,প্যান্টোথেনিক এসিড,ফলিক এসিড,কোলিন এবং ভইটামিন সি।

ক চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন সমূহ

১।ভিটামিন এ

মুরগির জন্য উৎস ঃমাছের তেল,মিট মিল,ফিশ মিল।তবে (precursor) হিসেবে বিটা ক্যারোটিন হিসেবে সবুজ পাতা এবং হলুদ বর্ণের শস্যে পাওয়া যায়।

কিভাবে খাদ্য থেকে নস্ট হয়

কপার ভিটামিন কে নস্ট করে দেয়।

অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতায়

খাদ্যে জলীয় অংশ বেশি থাকলে

খাদ্য পিলেটিং করার সময়

খাদ্যের চর্বি জারিত হবার সময়(Oxidation)

খাদ্যে মোল্ড জন্মালে

মুরগিতে ভিটামিন এ  এর কাজ কি

চোখের দৃস্টি শক্তি বাড়ায়।

এপিথেলিয়াল কোষ উৎপন্ন করে।

এনজাইম সংরক্ষণের আধার তৈরি করে।

শরীরের কোষ এবং কলা তৈরি করে।

মুরগিতে ভিটামিন এ এর অভাব কেন হয়

খাদ্যে এমাইনো  এসিডের ঘাটতি হলে রেটিনাল বাইন্ডিং প্রোটিন সংশ্লেষিত না হলে

অন্ত্রনালী আক্রান্ত হয় এমন রোগ হলে

খাদ্যে মাইকোটক্সিন হলে

দীর্ঘমেয়াদী এবং অবসাদ গ্রস্থ রোগ হলে

চর্বিজাতীয় খাদ্য জারিত হলে বা কম   থাকলে

খাদ্য মিশানোতে ত্রুটি থাকলে

ভিটামিন এ এর ঘটতিতে মুরগির কি কি ক্ষতি হয়ঃ

রোগ প্রতিরোধ  ক্ষমতা কমে যায়।

বৃদ্ধি কমে যায় এবং প্রডাকশন কমে যায়।

অনুর্বর ডিম পাড়ে

বিপাকীয় শক্তি কমে যায়।

দৃস্টি শক্তি কমে যায়

ত্রুটিযুক্ত হাড় গঠিত হয়।

ডিমের ভ্রূণ মারা যায়।

রুচি কমে যায়।

এফ সি আর বেড়ে যায়

চিকিৎসা ঃ    স্বাভাবিকের   চেয়ে ৩-৫গুণ বেশি দিতে হবে।

২।ভিটামিন ডি৩(কোলেকেলসিফেরল)

মুরগির জন্য উৎস ঃফিশমিল ।মাছের তেল(সব চেয়ে বেশি থাকে), লিভাবে ডি৩ জমা  হয়

ডি৩ এর স্থায়িত্ব ঃ

যেহেতু চর্বিতে দ্রবণীয় তাই খাদ্যে চর্বির উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে এর স্থায়িত্ব নির্ভর করে।

কি কি কারণে ডি৩ নস্ট হয়ে যায়ঃ

পচা চর্বি বা জারিত চর্বি(oxidised)  ডি৩ কে নস্ট করে দেয়।

খাদ্য বা প্রিমিক্সে অতি আর্দ্র বা তাপমাত্রা বেশি হলে

ফেরাস সালফেট , ম্যাংগানিজ অক্সাইড জাতীয় ট্রেস মিনারেলের এর সংস্পশে  খাদ্য থাকলে ডি৩ নস্ট হয়।

মুরগিতে ডি৩ এর ঘাটতি কেন হয়

খাদ্যে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের আনুপাতিক হার ঠি না হলে,

পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীতে কোন রোগ হলে

ভাইরাস জনিত রোগে খাদ্য শোষণ ঠিক মত হয় না ফলে চর্বি হজম হয় না,এতে ডি৩ ও কম শোষিত হয়। এতে  ডি৩ এর ঘাটতি হয়

খাদ্যে মাইকোটক্সিনের উপস্থিতিতে চর্বি হজম ঠিক মত হয় না কারণ পিত্ত কম তৈরি হয়,এতে চর্বি ও ডি৩ কম পাওয়া যায়।

মাইকোটক্সিন কিডনি ও লিভারকে নস্ট করে ফলে ডি৩ পর্যাপ্ত রূপান্তরিত হয় না।

১ম কয়েক সপ্তাহে বয়সে ভিটামিন সি কম তৈরি হওয়ায় ডি৩ এর পূর্ব অবস্থা ক্যালসিট্রল(calcitrol) কম সংশ্লেষিত হয়।

খাবার ভালভাবে মিক্সার না হলে খাদ্য উপাদাঙ্গুলি স মান ভাবে মিশে না ফলে ডি৩ এর ঘাটতি হয়।

মুরগির শরীরে ডি৩ এর কাজ কি

অন্ত্রনালী ও কিডনি থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ করা

অন্ত্রনালী থেকে ফসফরাস শোষণ করা

বেশি প্রয়োজনে হাড় থেকে ক্যালসয়াম আনার ব্যবস্থা করা

কলিজাতে ক্যালসিয়াম বন্ধনযুক্ত আমিষ  স ংশ্লেষণ করে(synthesis)

ডিমের খোসা ও হাড় গঠনে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ সৃস্টকারী কোষকে পরিচালনা করে।

ডি৩ এর ঘাটিতে কি কি ক্ষতি হয়ঃ

বৃদ্ধি কমে যায় এবং এফ সি আর বেড়ে যায়।

ধীরে ধীরে ডিম কমে যায়,খোসা পাতলা হয় বা খোসাহীন ডিম পাড়ে,ডিমের আকার ছোট হয়।

বাচ্চা ফুটানোর কমে যায়।

হাড় দূর্ব ল,নরম ও ভঙ্গুর হয়।

বুকে ফোস্কা পড়ে এবং হক জয়েন্ট নষ্ট হয়(Hocks burns)

পা দূর্বল হয়ে মুরগি বসে পড়ে।

ডিমের ফার্টিলিটি কমে যায় কারণ পুরুষ ব্রিডার মেটিং এ যায় না।

ভ্রূণ মারা যায়।

চিকিৎসা ঃখাদ্যে সম্পূরক হিসেবে ভিটামিন দিতে হবে,পানিতে ডি৩ দিতে হবে।

৩ ভিটামিন এ (আলফা টকফেরল)

উৎস ঃমুরগির খাদ্যে পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না তবে শস্য বীজ তেল্বীজে কিছু পাওয়া যায় তাই বাহির থেকে দিতে হয়।

কিভাবে ই নস্ট হয়

খাদ্য শস্য সংগ্রহ এবং স ংরক্ষণ করার সময় ই নস্ট হয়।

ভিটামিন ই এর ঘাটতি কেন হয়

শক্তিযোগানের জন্য জমাকৃত চর্বিকে অম্লজারণ থেকে রক্ষার জন্য ই ব্যব হৃত হয় ফলে ঘাটতি হয়।

খাদ্য ও খাদ্য উপকরণ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলে

খাবারে ই এর ঘাটতি থাকলে

খাদ্য শোষণ কম হলে চর্বি এবং ই  কম শোষিত হয় ফলে ঘাটতি হয়।

ভ্যক্সিনের  দ্বারা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থয় ই এর প্রয়োজন হয় ফলে ঘাটতি হয়।

ভিটামিন ই এর কাজ কিঃ

খাদ্যের পুস্ট তথা ভিটামিন গুলোকে অম্লজারণের হাত থেকে রক্ষা করে (oxidation)

নিওক্লিয়াস ও মাইটোকন্ডিয়াকে রক্ষাকারী  পর্দাকে রক্ষা করে।

রক্ত পরিবহন তন্ত্র ,মাংস্পেশী  এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সচল কারী কোষকে শক্তি যোগায়।

ডিমের উর্বরতা  আনয়ন করে।

ম্যাক্রোফেজকে সজীব রাখে এবং এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে।

মাইকোটক্সিনের ফলে ইমোনিটি কমে যাবার হার কমায়।

সি সংশ্লেষণ ,সালফার যুক্ত এমানো এসিড ,বি১ এর বিপাক ক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন ই এর ঘটতি হলে কি কি সমস্যা হয়

বৃদ্ধি কমে যায়

এফ সি আর বেড়ে যায়

পুরুষ ব্রিডার অক্ষম হয়

ডিম ফুটার হার কমে যায়।

বুক ও রানের মাংস নস্ট হয়ে  শুকিয়ে যায়

রক্তজালিকা(capillary) নস্ট হয়ে রক্ত ক্ষরণ ঘটে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষম তা    কমে যায়

মাংস থেতলিয়ে(bruising) যায়

মাংস্পেশীর মধ্যস্থিত চর্বি পচে হয়ে যায়।

ডিম কমে যায়

বাচ্চার ম্রত্য হার বেড়ে যায়

ভ্রূণ মারা যায়

রক্তকণিকা নস্ট হয়ে যায় বিশেষ করে ইরাইথ্রোসাইট

চিকিৎসা ঃ

২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত পানির মাধ্যমে ই দিতে হবে

৪।ভিটামিন কে ৩(মেনাডিওন)

উৎস ঃমিট ও ফিশ মিল,সব সময় খাবারে দিতে হয় তানাহলে অভাব জনিত লক্ষণ দেখা দিবে

কে৩ এর স্থায়িত্ব ঃতাপ।জলীয় বাষ্প,কোলিন ক্লোরাইড এবং ট্রেস মিনারেলস যদি খাদ্যে থাকে তাহলে খাদ্যের কে৩ কে নস্ট করে দেয়।

কে৩ এর ঘাটতি কেন হয়

সব সময় খাদ্যে সরবরাহ  না করলে

ব্রিডার থেকে বাচ্চাতে কুসুমের মাধ্যমে না আসলে

রোগের কারণে অন্ত্রনালীতে সংশ্লেষিত না হলে বা এন্টিবা্যোটিকের  ব্যবহারের কারণে উপকারী জীবাণূ ধ্বংসের ফলে কে৩ সংশ্লেষিত না হলে।

মাইকোটক্সিনের কারণে পর্যাপ্ত কে৩ শোষিত না হলে

বেশি পরিমাণে এন্টিবায়োটিক বা সালফার জাতীয় ঔষধ  ব্যবহারে।

কে৩ এর কাজ কি

রক্তজমাট বাধা,খোসা এবং হাড় উৎপাদনের জন্য কিছু বস্তু তৈরির কো ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।

রক্ত জমাট বাঁধার জন্য প্রোথ্রমবিন উৎপন্ন করে।

কে৩ এর অভাবে মুরগির কি কি ক্ষতি হয়

রক্তজমাট বাঁধে নাফলে রক্তপাত বেশি হয় ,বাচ্চা এবং দ্রুত বর্ধনশীল মুরগিতে বেশি ক্ষতি হয়।

গিজার্ড ক্ষয়ে যায়(erosion)

ডিমের কুসুমের মধ্যে রক্তের দাগ দেখা যায় ফলে ডিমের দাম কমে যায়।

ব্রিডারের ডিমের ফুটার হার কমে যায়,ভ্রূনে রক্তক্ষরণ হয় এবং মারা যায়।

ডিমের খোসা পাতলা হয় এবং পা দূর্বল হয়।

মাংস এবং চামড়ার গুণ গত মান নষ্ট হয়ে যায়।

রক্ত ক্ষরণে ঠোকরাঠুকরি বেড়ে যায় এবং মারা যায়।

রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

প্রডাকশন কমে যায়।

চিকিৎসা ঃকে৩ কে পানিতে দিতে হবে।

 

 

 

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

খনিজ পদার্থ

পোল্ট্রির খনিজ পদার্থ(মিনারেলস)

পোল্ট্রির খনিজ পদার্থ(মিনারেলস) খনিজ পদার্থঃ দেহে খনিজ পদার্থের বহুবিদ কাজ রয়েছে।যেমন হাড় ও ডিমের গঠন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »