পাঠ ১।
পা পঁচা রোগ
Foot-rot
গরুর পায়ের ক্ষুরের চারিদিকে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যু প্রদাহজনিত একটি জীবানু ঘটিত সংক্রামক রোগ।
আঘাত জনিত ক্ষত অবস্থায় ভিজা, স্যাঁতসেঁতে, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরুকে রাখলে পা পঁচা (Foot-rot) রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
সময়মত সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা না করলে গরুর পায়ের ক্ষুর খসে পড়ে ও স্থায়ী ভাবে খোড়া হয়ে যায়।
কারন
Fusobacterium necrophorum নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য অন্যতম দায়ী।
পায়ে ক্ষত অবস্থায় ভিজা স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশে গরু লালন-পালন করলে।
লক্ষন
গরুর পায়ের গিরা ফুলে যাবে ও খুড়িয়ে হাটবে।
অস্হি সন্ধিসহ বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠতে দেখা যাবে।
ক্ষুরের মধ্যভাগে ও চারিদিকে ক্ষত দেখা যাবে।
ক্ষত স্থান হতে পুঁজ বের হবে এবং দুর্গন্ধ করবে।
দেহের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রী ফাঃ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দাড়িয়ে থাকতে না পেরে অবশেষে বেশির ভাগ সময়ই শুয়ে থাকবে।
চিকিৎসা দিতে বিলম্ব হলে ক্ষুর খসে পড়ে এবং গরু স্থায়ী ভাবে খোড়া হয়ে যায়।
চিকিৎসা
® Pheniramine Maleate BP গ্রুপের যেমন inj: ASTAVET -10 or 100ml (Acme) 100kg/5cc b. wt হিসাবে মাংশে দিন।
® অক্সিট্রেট্রাসাইক্লিন গ্রুপের ইন্জেকশন Renamycin-100 (Renata) 100kg/10ml b.wt হিসাবে মাংশে ৫/৬ দিন দিতে হবে।
® liq: Povin দিয়ে দিনে ২ বার পরিষ্কার করে
Sulphanilamide pow: Sumid vet (Square) ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত ঘা শুকিয়ে যাবে।
® ক্ষত স্থানে যাতে মাছি না পরে এ জন্য ঘায়ের চারিদিকে তারপিন তেল লাগিয়ে রাখুন।
প্রতিরোধ
গরুর ক্ষুরে যেন আঘাত জনিত ক্ষত না হয় এ জন্য সতর্ক থাকুন।
ক্ষুরে আঘাত প্রাপ্ত গরুকে সর্বদা শুকনো, পরিষ্কার ও জীবানু মুক্ত স্থানে রাখুন।
পাঠ ২।
গবাদিপশুর ফুট রট রোগ
কারণ
ফুট রট গবাদিপশুর পায়ের ক্ষুরের চারপাশে ও ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যুরপ্রদাহজনিত একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রামক রোগ।
সকল শ্রেণীর সব বয়সের পশুই (গাভী, বলদ, ষাঁড়, বকনা ইত্যাদি) এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এ রোগকে ইন্টারডিজিটাল নেক্রোব্যাসিলোসিস, ফুট রট বা ইন্টার ডিজিটাল ফ্লেগমন হিসাবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
রোগবিস্তার
সাধারণত আক্রান্ত গরু থেকে রোগের বিস্তার ঘটে।
আক্রান্ত প্রাণীর ক্ষুরের ক্ষত স্থান থেকে নিঃসৃত রস প্রচুর জীবাণু বহন করে যা থেকে সুস্থ প্রাণী আক্রান্ত হয়ে থাকে।
গবাদিপ্রাণির পায়ের ক্ষুরের করোনেট বা দুই ক্ষুরের মধ্যবর্তী স্থানের টিস্যু কোনো কিছু দ্বারা আঘাতের ফলে ক্ষত হলে ও সর্বদা কাদা-পানি বা গোবরের মাঝে পা রাখলে ক্ষতস্থান দিয়ে রোগজীবাণু সহজেই দেহে প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
শক্ত স্থান, ধারালো পাথরের নুড়ি অথবা চারণক্ষেত্রের শক্ত ধান বা গমের মুড়া থেকে ক্ষুরের নরম টিস্যু আঘাতপ্রাপ্ত হলে সেখান থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
পা যদি সব সময় ভেজা থাকে তাহলে ক্ষুরের মাঝে ক্ষত হবার সম্ভাবনা বেশি দেখা দেয়।
অস্বাস্থ্যকর গোয়াল ঘর হলে রোগের সংক্রমণ বেশি হতে পারে।
রোগলক্ষণ
আক্রান্ত প্রাণীকে আকষ্মিকভাবে খোঁড়াতে দেখা যায়।
সাধারণত এক পায়ে ব্যথা হলেও তা প্রায়শ মারাত্নক হয়ে থাকে।
দেহের তাপমাত্রা ১০৩-১০৪ ডি. ফা লক্ষ্য করা যায়।
ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয় ও গাভীর দৈহিক ওজন ও দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।
আক্রান্ত ষাঁড় সাময়িকভাবে অনুর্বর (infertile) হয়ে যেতে পারে।
পায়ের ক্ষতে পুঁজ হয় ও নেক্রসিস হয়ে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুর্গন্ধ বের হতে থাকে।
রোগজীবাণুর সংক্রমণের ফলে অস্থিসন্ধি, সাইনোভিয়া ও টেন্ডনের প্রদাহ দেখা দেয়।
আক্রান্ত গরু মাটিতে শুয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
ক্ষুর খসে যেতে পারে ও গরু স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যায়।
গরু যদি কয়েক সপ্তাহ যাবৎ খোঁড়াতে থাকে তাহলে দুধ উৎপাদন দারুণভাবে কমে যায় এবং দৈহিক ওজনও হ্রাস পায়।
রোগনির্ণয়
রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রোগলক্ষণ দেখে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।
এছাড়া পায়ের করোনেটের ক্ষত ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে এ রোগ সনাক্ত করা যেতে পারে।
রোগ সনাক্তকরণে পার্থক্য
রোগের লিশানের স্থান, রোগের প্রকৃতি, লিশানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দুর্গন্ধ রোগের ধরন।
ঋতু ও আবহাওয়া পর্যালোচনা করে ফুট রটে আক্রান্ত গরুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
ইন্টারডিজিটাল ডার্মাটাইটিস/স্টেবল ফুট রট
গবাদিপশুকে আবদ্ধ অবস্থায় দীর্ঘ দিন প্রতিপালন করলে সাধারণত এ রোগ দেখা দিয়ে থাকে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পালন করা হলে প্রায়শ এ রোগ দেখা দেয়। আবার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পালিত গরুতেও এ রোগ দেখা দিতে পারে।
এ রোগের কারণ ঠিক জানা না গেলেও আক্রান্ত পশু থেকে Bacteroides সনাক্ত করা গেছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষুরের bulb এলাকা থেকে দুর্গন্ধযুক্ত আঠালো রস নিঃসরণ হতে থাকে।
লিশান বেদনাদায়ক হয় কিন্তু অন্য কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। একাধিক ক্ষুর আক্রান্ত হতে পারে।
দীর্ঘ দিন ভুগতে থাকলে ক্ষত মারাত্মক হয় ও সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে।
স্টেবল ফুটরটে ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসায় তেমন উপকার হয় না তবে ক্ষতস্থানে পরিচর্যা করে সেখানে ব্যাকটেরিয়ানাশক ঔষধ ব্যবহার করলে ফল পাওয়া যায়।
আঘাতজনিত ক্ষত
পায়ের ক্ষুরে কোনো ধারালো বস্তু দ্বারা ক্ষত হলে কিংবা ক্ষুর বেড়ে গেলে তা ভালোভাবে পরীক্ষা করলেই বোঝা যাবে।
ল্যামিনাইটিস (Laminitis) হলে গরু প্রায়শ খোঁড়া হয়ে যায় কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কোনো লিশান পরিলক্ষিত হয় না।
চিকিৎসা
ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-
আক্রান্ত পশুদেরকে শুকনো পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে।
এ্যান্টিবায়োটিকস বা সালফোনামাইডস প্রয়োগ করতে হবে এবং ক্ষত স্থান জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
চিকিৎসার জন্য প্রোকেইন পেনিসিলিন-জি প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২২,০০০ ইউনিট হিসাবে দিনে দুইবার মাংসপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১০ মিগ্রা হিসাবে দৈনিক শিরা বা মাংশপেশীতে ইনজেকশন দিতে হবে।
ভেড়া ও ছাগলের জন্য প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ৭৫ মিগ্রা স্ট্রেপটোমাইসিন এবং ৭০০০ ইউনিট প্রোকেইন পেনিসিলিন মাংসপেশীতে দিলে উপকার হয়।
সোডিয়াম সালফাডিমিডিন প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫০-২০০ মিলিগ্রাম হিসাবে শিরা বা পেরিটোনিয়ামের মধ্যে ইনজেকশন দিলেও কাজ হয়।
ক্ষতস্থান ভালোভাবে জীবাণুনাশক সলিউশন দ্বারা পরিষ্কার করে এন্টিসেপ্টিক ও এসট্রিনজেন্ট ঔষধ প্রয়োগ করে ব্যান্ডেজ করে দেয়া যেতে পারে।
এছাড়াও ৫% কপার সালফেট বা ৫% ফরমালিন দ্বারা ক্ষত স্থান পরিষ্কার করে ১০% জিংক সালফেট ব্রাশের মাধ্যমে প্রয়োগ করলেও উপকার হয়।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গরুর ক্ষুরে যেন ক্ষত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রতিরোধক ব্যবস্থা নিতে হবে।
গোয়াল ঘর বা খামারের প্রবেশ পথে ৫% কপার সালফেট সলিউশন ফুট বাথ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে। এই সলিউশন দিনে দুইবার নূতন করে প্রস্তুত করে ফুট বাথ হিসাবে প্রয়োগ করতে হবে।
নিয়মিত এই ফুটবাথে গরু পা ডুবালে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বহুলাংশে রোধ করা যাবে।
কেমোপ্রোফাইল্যাক্সিসঃ রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় প্রতিটি গরুকে দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম হিসাবে ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন ২৮ দিন এবং পরে প্রত্যহ ৭৫ মিলিগ্রাম হিসাবে সেবন করানো হলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করা যায়।
গবাদিপশুর খাদ্যে দৈনিক ২০০-৪০০ মিলিগ্রাম অর্গানিক আয়োডাইড (ethylene diamine dihydriodide) খাওয়ানো হলে এ রোগের প্রতিরোধ হয়।
ভ্যাকসিন প্রয়োগঃ মিনারেল অয়েল এডজুভ্যান্ট ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
গবাদিপশুকে কাদা বা ভেজা স্থানে রাখা বা যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।
গোয়াল ঘর সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে।
sheikh Rashel(PDF)