পানি ব্যবস্থাপনা
পানি ছাড়া কোন প্রাণীরই বেঁচে থাকা সম্ভব না।
তাই এই বিষয়ে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটি গরুকে কি পরিমান পানি পান করানো উচিত তা জানা খুবই জরুরী।
গরুর পানি পানের বিষয়টা অনেকটাই নির্ভর করে গরুর জাত, খাদ্যের ধরন, খাদ্যের পরিমান, দুধ উৎপাদনের পরিমান, পরিবেশ, তাপমাত্রা, এবং জলীয় বাষ্পের উপর।
শীতকালের তুলনায় গরমকালে গরুর পানি পানের মাত্রা তিন গুন বেড়ে যায়।
দুধ উৎপাদনশীল গাভীর যখনই পানির প্রয়োজন, তখনই যেন পানি পান করতে পারে সেই বিষয়ে বিবেচনা করে গাভীর কাছে সব সময় পরিষ্কার সাদা পানি রাখতে হবে।
গাভীকে ইচ্ছামত পানি পানের সুযোগ দিলে ৩.৫% দুধের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং দুধে ১০.৫% চর্বি বেশি হয়। অন্যান্য যে কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাতটির চেয়ে পানির অপ্রাপ্যতার কারনে খুব দ্রুত একটি গাভী কষ্ট ভোগ করে।
পর্যাপ্ত পরিমানে পানি গ্রহনের অভাব হলে গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায় এবং খাদ্য গ্রহনের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
পানির কার্যাবলী
গাভীর স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় কার্যাবলী সম্পুর্ন করা জন্য শরীরে ৮০% পানি এবং দুধে ৮৫-৮৭% পানি দ্বারা গঠিত।
খাদ্য চিবানো বা জাবর কাটা, লালা উৎপাদন, হজমে সহায়তা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশনেরর জন্য পানি অপরিহার্য।
পানি সংকট
মুলত একটি গরু বা গাভীর শরীরে দুটি কারনে পানি সংকট দেখা দেয়।
১. পানির সরবরাহ না থাকায় পানি পানে ব্যর্থ হলে।
২. শরীর থেকে অতিরিক্ত পরিমান পানি বেড়িয়ে গেলে।
পানি পিপাসার লক্ষন
যখন একটি গরু পানির পিপাসায় কষ্ট ভোগ করে তখন গরুর আচরনগত কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। যেমন..
পানির পাত্র (চাড়ী) চাটা-চাটি করতে দেখা যাবে।
মেঝের গর্তে জমে থাকা প্রসাব খেয়ে ফেলবে।
গরু নিজের নাক-মুখ, শরীর, জিহ্বা দ্বারা চাটা-চাটি করবে।
দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে।
পানি পান না করার কারন
রসালো কাঁচা ঘাস (Succulent feeds) গ্রহন করলে স্বাভাবিক ভাবে গরু পানি কম পান করবে।
শীতকালে আবহাওয়ার কারনে পানি কম পান করে থাকে।
সব সময় (Free of choice) হিসাবে বিশুদ্ধ পানি পানের অভ্যাস না থাকলে এবং বাচ্চা গরুকে ছোট থেকেই অভ্যাস না করলে।
অভ্যাস
গরু সাদা পানি পান করার অভ্যাসটা নির্ভর করে খামার ব্যবস্থাপনার উপর।
বাচ্চা গরুর সামনে সব সময় বিশুদ্ধ পানি দিয়ে রাখলে আপনা-আপনি পানি পানের অভ্যাস হয়ে যায়।
দানাদার খাবার বেশি পানিতে না খাইয়ে শুকনা অথবা সামান্য পানি যেমন ৫-৭ লিঃ তে খাওয়ানো উচিত এবং পাশে পরিষ্কার পানি রাখলে ধীরে ধীরে পানি পানে অভ্যাস হয়ে যাবে।
এছাড়াও গরুকে বিট লবন ১০-১২ গ্রাম করে দিনে ২ বার জিহ্বায় ৫-৭ দিন ঘষে দিলে সাদা পানি পানের অভ্যাস হয়ে যাবে।
সাবধানতা
কোন তৃষ্ণার্ত গরুকে হঠাৎ একেবারে অতিরিক্ত পরিমানে পানি পান করানোর ফলে পানি বিষক্রিয়া (Intoxication) সৃষ্টি হতে পারে।
আর পানি বিষক্রিয়া সৃষ্টি হলে গরুর বেশ কিছু লক্ষন পরিলক্ষিত হয়। যেমন…
গরুর শরীর থেকে প্রচুর পরিমান লবন বেড়িয়ে যাবে, যার ফলে Cerebral edema তে আক্রান্ত হয়ে গরুর দূর্বলতা, কাঁপুনি, অস্থিরতা, পিঠ মোচড়া-মুচড়ি ইত্যাদি।
লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙ্গে যাবে।
শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং মুখ দিয়ে লালা ঝড়বে।
পানি বিষক্রিয়া প্রতিরোধ করতে প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত গরুকে প্রথমে সীমিত পরিমানে পানি পান করাতে হবে এবং পরবর্তিতে বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে পানি পান করালে এই পানি বিষক্রিয়া থেকে বাঁচা যায়।
গরুর জন্য পানীয় জলের প্রয়োজনীয়তাঃ
—————————————–———————
অনেক সময় গো-মাংস বা দুধ উৎপাদনের গবাদি পশুদের জন্য পানির গুরুত্বকে উপেক্ষা করা হয়।কার্বোহাইড্রেট (শক্তি), প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজগুলির জন্য ডায়েট গুলি সুষম হয় যাতে গবাদি পশুগুলি কাঙ্ক্ষিত কর্মক্ষমতা অর্জন করতে পারে; তবে গবাদি পশুদেরও পানীয় জলের প্রয়োজন রয়েছে। পানির গ্রহণের ফলে পশুর কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে। আসলে, এই পুষ্টিগুলির মধ্যে, পানি বা জল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
গরুর শরীরের বৃদ্ধি এবং ভ্রূণের বৃদ্ধি বা স্তন্যদানের জন্য এবং ফুসফুস বা ত্বক থেকে বাষ্পীভবনের দ্বারা মূত্র, মল বা ঘামের মধ্যে মলমূত্র দ্বারা নষ্ট হওয়া পানি বা জল প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানির দরকার। পানির এই চাহিদা কিন্তু গরুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি গুলিকে প্রভাবিত করে। তাই প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি গ্রহন গরুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
সীমিত পানি বা জল গ্রহন করলে গরু প্রস্রাব কম করবে ফলে তার শরীর থেকে দুষিত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে এমোনিয়ার সাথে কম বেরুবে। ফল স্বরুপ গরু ভবিষ্যতে কোনো রোগে আক্রান্ত হবে,তার বৃদ্ধিও কমে যাবে এতে!
ত্বক বা ফুসফুস থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে নষ্ট হওয়া পানির পরিমাণটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবে যা হারিয়ে গেছে তার চেয়েও বেশি হতে পারে। যদি পরিবেশের তাপমাত্রা এবং / অথবা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি পায়, বাষ্পীভবন এবং ঘামের মাধ্যমে পানির ক্ষয় বৃদ্ধি পায়। তাই গরুর জন্য পানীয়জল প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রহন করাটা খুব জরুরী!
বেশ কয়েকটি উপাদান জলের প্রয়োজনীয়তাগুলি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে এবং যার জন্য বিষয়টি মূল্যায়ণ করা প্রয়োজন। যেহেতু গরুর খাদ্য হিসাবে গ্রহন করা ফিডগুলির মধ্যে কিছু জল বা পানি থাকে এবং ফিডগুলিতে কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টির জারণ জল উৎপাদন করে, তাই গরুকে পানীয় জলের সরবরাহ হিসাব করেই করা উচিৎ। সাইলেজ, গ্রিন ফডার বা চারণভূমির ঘাস গুলিতে সাধারণত আর্দ্রতা বেশি থাকে, তবে শস্য ও খড়ে কম থাকে। গবাদি পশুরা যখন সাইলেজ, গ্রিন ফডার বা চারণভূমির ঘাস বেশী খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে তখন স্বাভাবিক ভাবেই তারা তুলণামূলক ভাবে কম পানি পান করে।
আবার যেসব গরু দুধ দেয় তাদের পানীয় জলের চাহিদা বেশী থাকে দুধ উৎপাদন এবং তার বাছুরকে দুধ খাওয়ানোর জন্য।
বয়স, শরীরের আকার (ওজন), উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে এবং পরিবেশের (প্রধানত বাতাসের তাপমাত্রার) উপর নির্ভর করে একটি গরুর প্রতিদিন পানি গ্রহনের পরিমাণ প্রতিদিন ৩ থেকে ৩০ গ্যালন থেকে পৃথক হতে পারে।
থাম্বের নিয়ম হিসাবে, শীতের আবহাওয়ার সময় একটি গরুর শরীরের ওজন প্রতি ১০০ পাউন্ডে ১ গ্যালন পানীয় জলের প্রয়োজন এবং গরম আবহাওয়ার সময় সেটা প্রায় ২ গ্যালন!
ড্রাই গরুর তুলনায় ল্যাক্টেটিং গরুদের প্রায় দ্বিগুণ জল প্রয়োজন।
গরুর জন্য পানীয় জল হতে হবে সুপেয় এবং আবর্জনা মুক্ত!
* ১ গ্যালন= ৩.৭৮ লিটার।
* ১ পাউন্ড= ০.৪৫ কেজি।
ফেসবুক থেকে নেয়া