Breaking News
নাইট্রোজেন ট্যাংক কাহিনী
নাইট্রোজেন ট্যাংক কাহিনী

নাইট্রোজেন ক্যান বা সিমেন ট্যাংক কাহিনী:

নাইট্রোজেন ক্যান বা সিমেন ট্যাংক কাহিনী:

নাইট্রোজেন ক্যান ডেইরী শিল্পে একটি অতীব প্রয়োজনীয় উপকরণ।

নাইট্রোজেন ক্যান কি?

সিমেন (ও ফ্রোজেন ভ্রুণ) দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য দরকার হয় অতি নিম্ন তাপমাত্রা।

তরল নাইট্রোজেনের তাপমাত্রা মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

তাই তরল নাইট্রোজেনে সিমেন ভিজিয়ে রাখলে তা অতি নিম্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষিত থাকে।

তাত্ত্বিকভাবে অনন্তকাল (Indefinitely) সংরক্ষিত থাকার কথা। সবচেয়ে পুরোনো যে সিমেন সংরক্ষিত আছে তা হল ১৯৫২ সালের নভেম্বর মাসের- Cottonade Emmet নামক বুলের।

তো এই তরল নাইট্রোজেন সাধারণ পাত্রে রাখলে খুব দ্রুত উড়ে যায়।

তাই দরকার এমন এক ভ্যাকুয়াম ফ্লাস্ক যার মুখটা খুব ছোট আর শরীরটা খুব ভালোভাবে তাপের অপরিবাহী। এটাই হল নাইট্রোজেন ক্যান।

নাইট্রোজেন ক্যান থেকেও নাইট্রোজেন উড়ে যায়।

তবে সাইজ অনুযায়ী কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস লাগে।

আর নাইট্রোজেন কমে গেলে রিফিল করে নিতে হয়।

সাইজ বা লিটার অনুযায়ী নাইট্রোজেন ক্যান অনেক প্রকার আছে।

যেমন, ১,২,৩,৬,১০,১৩,১৫,২০,৩০,৩৫,৫০,৮০ লিটার ইত্যাদি।

ছোট ক্যানে তাড়াতাড়ি নাইট্রোজেন শেষ হয়ে যায়, কিন্তু তা বহন করা সহজ। বড় ক্যানে অনেকদিন থাকে, কিন্তু বহনে অসুবিধা।

এ.আই. কর্মীরা সাধারণত দুইটি নাইট্রোজেন ক্যান ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১০/১৩ লিটারের ট্যাংকে তারা তাদের সংগ্রহ বাসায় জমা রাখেন আর ১/২ লিটারের ট্যাংক মোটরসাইকেল বা হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।

স্ট্যাটিক হোল্ডিং টাইম:

ক্যান নাইট্রোজেনে ভরে একবারও মুখ না খুলে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত জায়গায় স্থিরভাবে রেখে দিলে পুরো নাইট্রোজেন উড়ে যেতে যে কয়দিন সময় লাগবে তাই হল স্ট্যাটিক হোল্ডিং টাইম বা নাইট্রোজেনের সর্বোচ্চ আয়ু।

কিন্তু আপনাকে সিমেনের জন্য বারবার খুলতে হবে- নাড়াচাড়া করতে হবে- তাই আপনি আয়ু আরো কমদিন পাবেন।

আর নাইট্রোজেন ফুরিয়ে যাবার আগেই রিফিল করতে হবে। তা নাহলে সিমেন নষ্ট হয়ে যাবে।

সাধারণত এ.আই. কর্মীরা তাদের ১০/১৩ লিটারের ক্যানটি সিমেন কেনার স্থান হতে তরল নাইট্রোজেন পূর্ণ করে নিয়ে তাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিমেন কিনে বাসায় এনে রাখেন।

তারপর তাদের ১ বা ২ লিটারের ক্যানে নাইট্রোজেন ঢেলে তাতে কয়েকটি সিমেন নিয়ে চলে যান খামারে।

সাথে নেন গ্লাভস, এ.আই. গান আর সীথ।

১. গ্লাভস হল লম্বা পলিথিনের হাতমোজা।

২. এ.আই. গান হল লম্বা স্টেইনলেস স্টীলের সিরিঞ্জ যার মাথায় সিমেন স্ট্র টি বসানো হয়।

৩. সীথ হল একটি প্লাস্টিকের নল যা স্ট্র’কে গানের মাথায় আটকে থাকতে সাহায্য করে ও এ.আই. গানটিকে ঢেকে রাখে।

আর তা গাভীর যোনীপথ ও জরায়ুমুখকে স্টেইনলেস স্টীলের খোঁচা থেকেও রক্ষা করে।

এ.আই. কর্মীরা যেহেতু বার বার ক্যানগুলোর ঢাকনা খুলে সিমেন বের করে আর বড় ক্যান থেকে ছোট ক্যানে তরল ঢালে– তাই তাদের তরল নাইট্রোজেনের আয়ু কম পায়।

সবচেয়ে ব্যস্ত এ.আই. কর্মীর ১০/১৩ লিটার ক্যান ১৫ দিনে, মাঝারি ব্যস্ত হলে ২০/২২ দিনে আর কম ব্যস্ত হলে ২৫/৩০ দিনে রিফিল করতে হয়।

কিন্তু খামারী যদি ক্যান কেনেন তবে এককভাবে ব্যবহার করলে তিনি ১০/১৩ লিটারের ক্যানে গরমকালে ৪০-৫০ দিন আর শীতকালে ৫০-৬০ দিন অনায়াসে আয়ু পাবেন।

১/২ লিটারের ট্যাংকে ৬০-৯০ টি আর ১০/১৩ লিটারের ট্যাংকে ৬০০ টির মত সিমেন স্ট্র আটে।

নাইট্রোজেন ক্যান কারা কিনবেন?

ভাই, যাদের এলাকায় এ.আই. কর্মীদের কাছে ভাল সিমেন পাওয়া যায় না তারা ক্যান কিনবেন।

ভাল সিমেন পাওয়া গেলে শুধু শুধু কেন পয়সা ফেলবেন আর ঝামেলা বাড়াবেন। আর ভাল সিমেন যেখান থেকে পারেন সংগ্রহ করতে হবে ( সম্ভব হলে দেশের বাইরে থেকে হলেও।) ভাল সিমেন আমার এলাকায় নেই, যা পাই তাই দেই— এ অজুহাত দেখালে কিন্তু পরীক্ষায় ফেল!!!

(আর ভাই, ভাল সিমেন বলতে আপনি যদি শুধু ১০০% সিমেন বুঝে থাকেন তাহলে আমার সকল লেখাই বৃথা।

ক্যান একা কিনতে পারেন, কয়েকজন মিলেও কিনতে পারেন- যেভাবে আপনার সুবিধা।

নাইট্রোজেন ক্যানের দাম:

আধা/১/২ লিটারের ক্যান ৮ হাজার থেকে শুরু করে ২০-২২ হাজার পর্যন্ত আছে।

১০/১৩ লিটারের ক্যান ২৭-৩৪ হাজারের মত। ভাই এগুলো রেয়ার আইটেম- ফিক্সড প্রাইজ হয়না। দাম কমে বাড়ে।

কেনার আগে দামাদামি করে নেবেন।

আর ব্যবসায়ী ভাইদের বলব, আপনারা ন্যায্য দামে খামারীদের ক্যান সরবরাহ করুন (কম দামের কথা কিন্তু বলছি না)।

ব্যবসা কিন্তু একদিনের জন্য না। আজকে যিনি ১৩ লিটারের ক্যান আপনার কাছ থেকে নিবেন- তিনিই দুদিন পরে বারবার রিফিলের ঝামেলা এড়াতে আরও বড় ক্যান নিতে আপনার কাছেই আসবেন।

তরল নাইট্রোজেন কোথায় পাবেন?

এখানেই সমস্যা। এই জিনিস সহজলভ্য নয়। তবে এ. আই. কর্মী ভাইয়েরা যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়ান, তবে ব্যপারটি একটু সহজ হয়।

সরকারী প্রতিষ্ঠান সহ বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র এ. আই কর্মীর নিকট নাইট্রোজেন গ্যাস ও সিমেন বিক্রী করে।

খামারী গেলে হয়তো দিতে চাইবে না। তাই “ব্যবস্থা” করে নিতে হবে। বড়কর্তার সাথে দেখা করে অনুমতি আদায় করতে হবে!!

তবে দেশের সকল তরল নাইট্রোজেনের উৎস কিন্তু B.O.C.- British Oxygen Company যা বর্তমানে ‘Linde Bangladesh’ নামে পরিচালিত হচ্ছে। তারাই এটি তৈরি করে বিপনন করে।

তাদের কারখানা আছে ২৮৫ তেজঁগাও বা /এ, ঢাকা, শীতলপুর (সীতাকুন্ড, চট্টগ্রাম) ও ধুপতারা (রুপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ)–এই তিনটি স্থানে।

এখান থেকেও সংগ্রহ করা যায়। তবে অবশ্যই ক্যান কেনার আগে তরল নাইট্রোজেন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। লিনডে বাংলাদেশে এটির দাম প্রতি লিটার ৪২ টাকা + সার্ভিস চার্জ ৫৮১ টাকা(ক্যানের সাইজ যা ই হোক না কেন)।

বিভিন্ন জায়গায় এটি বাড়তে বাড়তে ১০০-২০০ টাকাও হয়।

আরও কিছু তথ্য:

১. কেউ যদি ১০/১৩ লিটারের চেয়েও বড় ক্যান কিনতে চান তবে বর্ণনায়/ক্যাটালগে দেয়া স্ট্যাটিক হোল্ডিং টাইম যে কয়দিন দেয়া থাকবে তরলের আয়ু তার এক তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক ধরে নেবেন।

২. লিকুইড নাইট্রোজেন অতি ঠান্ডা হলেও একটু আধটু হাতে পায়ে পড়লে ফ্রস্টবাইট জাতীয় কিছু হয় না।

এর কারন- হাতে লাগার সাথে সাথে তরল নাইট্রোজেন ও হাতের চামড়ার মাঝে নাইট্রোজেন গ্যাসের স্তর তৈরি হয়ে ঠান্ডা থেকে হাতকে রক্ষা করে (Leindenfrost Effect). তারপরেও সাবধান থাকাই শ্রেয়।

৩. সিমেন ক্যান থেকে বের করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বাকীগুলো ক্যানের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবেন।

কাংখিত সিমেনটি ৫-১০ সেকেন্ডের মাঝে খুজে না পেলে খোজ বাদ দিয়ে ক্যানিস্টারটি তরলে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে আবার খুজুন। ১৫ সেকেন্ডের বেশি সিমেন বাইরে রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। (অনেক এ.আই. কর্মী এই ব্যাপারে উদাসীন।)

৪. ক্যান কেনার সময় ১/২ লিটারের ক্ষেত্রে ৩০/৩৫ মিলিমিটার ও বড় ক্যানের ক্ষেত্রে ৫০ মিলিমিটার এর বড় মুখের ক্যান কিনবেন না। তাহলে আয়ু বেশি পাবেন।

৫. আপনার এলাকার কোন এ.আই. কর্মী ভাই (যার হাত ভাল) এর বড় ক্যানে যদি আপনার সংগ্রহ করা সিমেন গচ্ছিত রাখার চুক্তি করতে পারেন- তবে আপনাকে শুধু ছোট ক্যান কিনলেই চলবে।

ছোট ক্যানে সিমেন কিনে তা উনার বড় ক্যানে রেখে দিবেন। তবে মনে রাখবেন ছোট ক্যান কেবল ২/৪ দিনের পরিবহনের জন্য- দীর্ঘদিনের সংরক্ষনের জন্য নয়।

৬. কিভাবে বুঝবেন আপনার ক্যানে তরল নাইট্রোজেন কতটুকু কমল?

তো, এটি দুইভাবে বোঝা যায়:-

এক:

গাড়ীর মবিল চেক করার মত। একটি কাঠ বা বাঁশের চিকন কাঠি খাড়াভাবে ক্যানের তলা পর্যন্ত ঢোকাবেন- বের করে আনলে দেখবেন ভেজা অংশটি সাদা হয়ে গেছে।

এটি তরলের উচ্চতা। তিন ইঞ্চির নিচে যাওয়ার আগেই রিফিল জরুরী। তাত্বিকভাবে, এক ফোটা তরল বাকি থাকা পর্যন্তও ক্যানের ভেতরে অতি নিম্ন তাপমাত্রা বজায় থাকে।

কিন্তু ভাই ঝুঁকি নেয়ার দরকার কি?

দুই:

ক্যান তরলে পূর্ণ অবস্থায় RFL বা Mega স্কেলে ওজন নিন। মাঝে মাঝে ওজন মাপুন।

১ লিটার তরল কমে গেলে ৮০৮ গ্রাম ওজন কমবে। এভাবে তিন চার লিটার তরল থাকতেই রিফিল করুন।

৭. নিজে সিমেন কিনলে নিজেই এ.আই. করতে হবে এমনতো কোন কথা নেই।

আপনার সিমেন আপনার কাছে থাকবে। গাভী হীটে আসলে এ.আই. কর্মী এসে আপনার পছন্দ করা সিমেন দিয়ে যাবে।

ওনাদের কাজ এ.আই. করা। এখন ক্রসব্রীডিং এর নিয়ম মেনে, ইনব্রীডিং বাঁচিয়ে সিমেন নির্ধারণ করার দায়িত্ত্ব আপনার। আপনার খামারের রেকর্ড তো ওনাদের কাছে নেই।

আর এ. আই. কর্মীর ক্যানে কি কি সিমেন আছে তার পারসেন্টেজ হয়তো তিনি জানেন, নাম- নাম্বার তো আর মুখস্থ করে রাখেন না বা আপনার জানার সুযোগ নেই।

তাই যদি অন্ধের মত বলেন, ‘অমুক পার্সেন্ট সিমেন দাও’ – তবে আপনার গাভীতে ইনব্রীডিং ঠেকাবেন কোন দৈববলে?

ভাই অনেক নতুন খামারীই অভিযোগ করেন— “ফেসবুকে অত লেখালেখি করে কি লাভ, সফল খামারীরা তো তাদের সফলতার গোপন রহস্য ফাঁস করেন না।”—- যদিও আভিযোগটি সত্য নয়, তারপরেও ভাই দিলাম আজকে একটি সফলতার বড় রহস্য ফাঁস করে!!!

অতএব ভাই, গভীর ধ্যানে চিন্তা করুন তো –আপনার গাভীর জন্য ক্রসব্রীডিং এর নিয়ম মেনে, ইনব্রীডিং বাঁচিয়ে সিমেন নির্ধারনের দায়িত্ব কি এ. আই. কর্মীর না আপনার???

তো, আপনি সঠিক পথে আছেন তো?????

লেখকঃKhalid sk Robin

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট

#ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট দেশে ডেইরি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডেইরি ব্রীড টেস্টিং রিসার্চ প্রজেক্টের মাঠ পর্যায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »