নাইট্রেট বিষক্রিয়া
বর্তমান সময়ে গবাদিপশুতে নাইট্রেট বিষক্রিয়া ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রায়শ শোনা যাচ্ছে বাজারে কেনা নেপিয়ার, পাকচুং ঘাস খেয়ে অনেক গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। নাইট্রেট বিষক্রিয়া এত দ্রুত হয় যে চিকিৎসা শুরুর আগেই অনেক পশু মারা যায়। গরুর শরীরে নিদির্ষ্ট পরিমান নাইট্রেট, নাইট্রাইটে পরিবর্তিত হয় এবং পর্যাক্রমে তা অ্যামোনিয়ার রুপান্তরিত হয় যা পশুর পরিপাকের স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ঘাসে নির্দিষ্ট পরিমানের বেশী নাইট্রেট থাকলে তা গবাদিপশুর শরীরে গিয়ে স্বাভাবিক প্রকিয়াকে ব্যাহত করে বিষক্রিয়া ঘটায় ।
বর্তমানে দেশে উন্নতজাতের ঘাস চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। অনেক চাষী নেপিয়ার,পাকচুং ঘাস বানিজ্যিকভাবে করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। গ্রামের অনেক বাজারে ঐসব ঘাস কিনতে পাওয়া যায় । দামে সস্তা হওয়ায় অনেক খামারী ঐসব ঘাসে কিনে তাদের গবাদী পশুকে খাওয়ান। ইনট্রেন্সিভ কালটিভেশনের কারনে এই সব চাষকৃত ঘাসে নাইট্রেটের পরিমান বেড়ে যেতে পারে।
#কেন হয় :
ঘাসের জমিতে নাইট্রেট থাকে এমন রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে ঘাসে অধিক পরিমানে নাইট্রেট যোগ হতে পারে। সাধারতন কিছুদিন প্রচন্ড খরা থাকার পর বৃষ্টি হলে যে নতুন ঘাস জন্মায় ঐসকল ঘাসে নাইট্রেটের পরিমান বেশী থাকে। এছাড়া অধিক তেজযুক্ত(কালচে সবুজ) নতুন ঘাসেও নাইট্রেট থাকতে পারে। এছাড়া বায়ুমন্ডল, উদ্ভিদের নিজস্ব পরিপাকের বিভিন্ন ঘটনার কারনেও ঘাসে নাইট্রেটের পরিমান বেশী থাকতে পারে।
#রোগের লক্ষন : গবাদিপশুতে নাইট্রেট বিষক্রিয়া হলে নিম্নলিখিত লক্ষনগুলো প্রকাশ পেতে পারে-
1.শ্বাস কষ্ট এবং বার বার হাপিয়ে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা।
2.খুব দ্রুত শ্বাস প্রাশ্বাস নেয়াও।
3.লালা ঝরে।
4.পাতলা পায়খানা।
5.নীল রঙের মিউকাস মেমব্রেন দেখা যায়।
6.খাওয়া বন্ধ করে দেয়, খোড়াতে থাকে এবং মাত্রা বেশি হলে ২- ২৪ ঘন্ঠার মধ্যে মারা যেতে পারে প্রভৃতি ।
#চিকিৎসা :বিষক্রিয়ার ঘঠনাগুলো সাধারনত অতি দ্রুত ঘটে তাই চিকিৎসা তৎক্ষণাৎ শুরু না করলে পশু মারা যেতে পারে। তাই অতিদ্রুত অভিজ্ঞ রেজিস্টার্ড ভেটেরিনারি ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নিতে হবে।
#প্রতিরোধের উপায়:
১. অধিক তেজযুক্ত, খরার পর বৃষ্টি হলে-এর পর জন্মানো ঘাস পশুকে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. ঘাসের মূল ও কান্ডে নাইট্রেটের পরিমান পাতার চাইতে বেশী থাকায় পশুকে যতসম্ভব কান্ড ও মূল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. ঘাসকে শুকিয়ে কিংবা সাইলেজ বানিয়ে পশুকে খাওয়ালে নাইট্রেট বিষক্রিয়ার ঝুকি কম থাকে।
৪. সকাল বেলা খালি পেটে এ জাতীয় ঘাস না খাইয়ে অন্য সময় খাওয়ালে ও একসাথে অধিক পরিমানে না খাওয়ালে নাইট্রেট বিষক্রিয়া ঝুকি কমে যায়।
৫. কোন এলাকায় নাইট্রেট বিষক্রিয়া দেখা দিলে ঐ এলাকার সুস্থ পশুকে “খড় ও দানাদার খাদ্য” বেশী দিয়ে যতসম্ভব ঘাস এড়িয়ে চলতে হবে।
লেখা
ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মুবিন
ডিভিএম(বাকৃবি),এমএস