Breaking News

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

নবজাতক বাছুরের যত্ন ও করণীয় :

স্তন্যপায়ী প্রায় সকল প্রাণীর জন্মপ্রক্রিয়া প্রায় একই হলেও কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে জন্ম পরবর্তী নিবিড় যত্ন দরকার হয়। অদূর অতীতে আমাদের দেশে ঘাস আর খড়ের উপর নির্ভর করে পালন করা দেশি গরুতে বাছুরের জন্ম পরবর্তী জটিলতা হতোনা বললেই চলে কারণ একদিকে গাভ অবস্থায় গরু যেমন পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টিকর ঘাস পেতো আবার অন্যদিকে গরুও ছিলো শক্ত জাতের। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশী ক্রস জাতের গাভী এবং বাছুরের জন্য জন্ম পরবর্তী নিবিড় পরিচর্যা দরকার হয়। যেকোনো প্রাণীই ভুমিষ্ট হওয়ার পরে খুব অসহায় অবস্থায় থাকে এবং যত্ন ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে তাকে সুস্থ সবল করে তুলতে হয়।

জন্ম পরবর্তী পরিচর্যার উপরেই একটা বাছুরের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে নির্ভরশীল। ভুমিষ্ট হওয়ার পরে একটা বাছুরের যত্নে প্রধান করণীয় পর্যায়ক্রমিক কাজ গুলো হচ্ছে :

১) যেহেতু শেষ ২ মাসে গর্ভস্থ বাচ্চা সবচেয়ে বেশী শারীরিক পরিপূর্ণতা পায়, তাই বাচ্চা সুমিষ্ট হওয়ার আগের ২ মাস গাভীকে ভিটামিন মিনারেল সহ পর্যাপ্ত ঘাস সহ অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। দুধের গাভী হলে অবশ্যই শেষ ২ মাস দুধ বন্ধ রাখতে হবে। এই সময়ের সুস্থ গরুতে প্রসবকালীন জটিলতা হয়না বললেই চলে।

২) যেহেতু বাচ্চা ভূমিষ্ট নির্দিষ্ট কোন সময় নাই, তাই ভূমিষ্ট হওয়ার আগের ১ সপ্তাহ আগে থেকে গাভীর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

৩) ভুমিস্টের স্থানে অবশ্যই খড় এবং পরিষ্কার পাটের বস্তা বিছিয়ে রাখুন।

৪) বাছুর ভুমিষ্টের সময় নিশ্চিত করুন যেন বাছুরের চোখ বা শরীরের অন্য কোথাও আঘাত না পায়। অভিজ্ঞ মানুষ অথবা ডাক্তারের সহোযগিতা নিন। অনভিজ্ঞ হাতে বাছুর ভুমিষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।

৫) জন্মের সাথে সাথে প্রথম এবং সবচে জরুরি কাজ হলো বাছুরের নাক এবং মুখের ময়লা এবং লালা পরিষ্কার করে দেয়া। এতে নবজাতক বাছুরের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়, অন্যথায় বাছুর নিশ্বাস আটকে মারাও যেতে পারে। বাছুরের নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে মুখ দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করুন।

৬) জন্মের পর মা কতৃক বাছুরের শরীর চাটতে দিন, এতে বাছুরের শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং বাছুরকে দ্রুত দাঁড়াতে এবং হাটতে সাহায্য করে।

৭) পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত এবং ধারালো ছুড়ি বা ব্লেড জাতীয় কিছু দিয়ে নাভীর নাড়ি কাটতে হবে যেন কোনো সংক্রমণের সম্ভাবনা না থাকে এবং নাভির নাড়ি শক্ত ক্লিপ দিয়ে এমনভাবে আটকে রাখতে হবে যেন মাটিতে ঘষা না লাগে।

৮) নাভি কাটার পর কমপক্ষে ৭% শক্তিশালী টিংচার আয়োডিনের মধ্যে চুবাতে হবে এবং ১২ ঘন্টা পর পর ৩ দিন পুনরায় একই কাজ করতে হবে। দুর্বল জ্ঞিবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

৯) ২ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ২ কেজি শালদুধ পান করাতে হবে। একই ভাবে প্রতি ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে ২ কেজি করে শালদুধ পান করাতে হবে। এই শালদুধ থেকেই বাছুর প্রযনজনীয় পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধের উপাদান পেয়ে থাকে। এই কারণে শাল দুধকে বলা ‘পাসপোর্ট অফ লাইফ’।

১০) শীতকাল হলে অবশ্যই দ্রুত গরম কোন কাপড় দিয়ে বাছুরকে পেচিয়ে দিতে হবে যেন বছুর ঠান্ডা অনুভব না করে। বাছুরের জন্মের পরে প্রথম ৭২ ঘন্টা ঝুকিপূর্ন সময় অতিবাহিত করে।

১১) প্রথম ৩ মাস পর্যাপ্ত (কমপক্ষে বাছুরের ওজনের ১০%) দুধ পান করতে দিন, নাহলে বাছুর পরবতী জীবনে অপুষ্টিতে ভুগবে এবং বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ হবে।

১২) ৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে কৃমি মুক্তকরণের ওষুধ খাওয়াতে হবে। ১ মাসের মধ্যে অবশ্যই খাওয়াতে হবে। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।

১৩) হাতে ফিডিং বোতলে খাওয়ানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে কি পরিমান দুধ বাছুর খেতে পাচ্ছে সেটার সঠিক হিসাব রাখা সহজ হয়, তবে হাতে খাওয়ালে মা এবং সন্তানের স্বাভাবিক সম্পর্ক বাধাগ্রস্থ হয়।

১৪) ৩ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার পরে ডাক্তারের সাথে পরামর্শক্রমে সকল প্রকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।

১৫) ৩ মাস বয়সের পর থেকে কচি ঘাস কুচি করে দিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। একই সাথে অবশ্যই মায়ের জন্য তৈরী সুষম দানাদার খাবার বাছুরকেও খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

এভাবেই সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠবে নবজাতক বাছুর, সাথে সামনে এগিয়ে যাবে আপনার খামারের বেড়ে ওঠার স্বপ্ন।

ধন্যবাদ সবাইকে।

লিখেছেনঃ জাহিদুল ইসলাম

Please follow and like us:

About admin

Check Also

গবাদিপশুর খামারের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকা:

গবাদিপশুর খামারের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকা: গবাদিপশুর খামারের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের তালিকা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »