#জাত উন্নয়ন বনাম নিরাপদ উৎপাদন:
জাতের মধ্যে ক্রসের ফলে কিভাবে জাতের আপগ্রেড হয় বা উৎপাদন বৃদ্ধি পায় সহজ একটি উদাহরনের মাধ্যমে তা বুঝানোর চেষ্টা করবো।
#প্রতিটি প্রাণির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য অসংখ্য জীন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়( এই জীন সে জীন নয় যা মানুষকে ভর করে)। গবাদিপশুর এসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে দৈহিক আকার-আকৃতি, গায়ের রং, দুধ-মাংস উৎপাদন ইত্যাদি। এদের মধ্যে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আমাদের জন্য কাংক্ষিত আবার কিছু অনাকাংক্ষিত। আমাদদের দেশী গরুতে কিছু ভাল গুন আবার কিছু খারাপ গুন আছে। দেশী গরুর ভাল গুনের মধ্যে রয়েছে এর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, আমাদের আবহাওয়া খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা, সহজ ব্যবস্থাপনা ও দুধের গুনগত মান( দুধে চর্বির পরিমান বেশি থাকে) ইত্যাদি। দেশী গরুর খারাপ গুনের মধ্যে রয়েছে এটা দেখতে ছোট, দুধ মাংসের উৎপাদন কম।
তদ্রুপভাবে বিদেশী জাতের গরুতেও কিছু ভাল গুন ও খারাপ গুন আছে। ভাল গুনের মধ্যে বড় আকারের দৈহিক গঠন,, অধিক দুধ ম্ংস উৎপাদন ইত্যাদি। আমাদের দেশের প্রক্ষিতে এর খারাপ গুন হলো এটা এদেশের পরিবেশের সাথে সহজে খাপ খাওয়াতে পারেনা,, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম,, উন্নত ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয়,, দুধে চর্বির পরিমান কম বলে বিক্রি করতে অসুবিধা। আমাদের লক্ষ্য শুধু দুধ উৎপাদন বাড়ানো নয,,, গুনগত মানসম্পন্ন দুধ উৎপাদন।
#আমরা জানি মাতার অর্ধেক বৈশিষ্ট্য এবং পিতার অর্ধেক বৈশিষ্ট্য এদের সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়। অর্থাৎ ভাল গুনের অর্ধেক এবং খারাপ গুনের অর্ধেক মিলে একটি মধ্যম গুণের সন্তানের জন্ম হয়। পিতামাতার মধ্যে এই গুনগত পার্থক্য অর্থাৎ Genetic Variation যত বেশী হবে উক্ত বৈশিষ্ট্যের উন্নতি বা Genetic gain তত বেশী হবে।
#ছবিতে শুধুমাত্র দুধ উৎপাদনের বৈশিষবটকে বিবেচনায় নিয়ে দেশী জাতের গাভীর সাথে বিদেশী জাতের ষাঁড়ের ক্রসের ফলে কিভাবে পরবর্তী জেনারেশন উন্নত হয তা বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
#প্রথম ক্রসে ৪ লিটার দুধের কৌলিকগুন বিশিষ্ট বড় আকারের দেশী বকনার সাথে ৩০ লিটার দুধের কৌলিকগুন বিশিষ্ট ১০০% ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের ক্রস দেখানো হলো। এ দুটি জাতের কৌলিক উৎপাদনগত পার্থক্য হলো ৩০-৪=২৬ লিটার। এদের মধ্যে ক্রস করানোর ফলে দেশী বকনার অর্ধেক দুধ উৎপাদন বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ ৪ এর অর্ধেক ২ লিটার এবং বিদেশী ষাঁড়ের দুধ উৎপাদন বৈশিষ্টের অর্ধেক অর্থাৎ ৩০ এর অর্ধেক ১৫ লিটার মিলে মোট ২+১৫=১৭ লিটার দুধ উৎপাদনের কৌলিক বৈশিষ্ট্য F1 জেনারেশনে বা সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হবে। এক্ষত্রে দেশী গরুর কৌলিক বৃদ্ধি বা Genetic gain হলো ১৭-৪= ১৩ লিটার। সন্তানে ফ্রিজিয়ান ব্লাড সন্নিবেশিত হলো ৫০%।
#একইভাবে দ্বিতীয় ক্রসে F1 জেনারেশনের গাভীর সাথে ১০০% ফ্রিজিয়ান ষাঁড়ের দুধ উৎপাদনের কৌলিক পার্থক্য হলো ৩০-১৭=১৩ লিটার এবং এদের ক্রসে উৎপন্ন F2 জেনারেশনে কৌলিকগুন হলো ২৩.৫ লিটার এবং কৌলিক বৃদ্ধি হলো ২৩.৫-১৭=৬.৫ লিটার। সন্তানে ফ্রিজিয়ান ব্লাড স্থানান্তরিত হলো ৭৫%।
#অনুরুপভাবে, তৃতীয় ক্রসে F2 জেনারেশনের গাভীর সাথে ১০০% ফ্রিজিয়ান গাভীর Genetic variation হলো ৩০-২৩.৫=৬.৫ লিটার এবং এদের ক্রসের ফলে উৎপন্ন F3 জেনারেশনে দুধ উৎপন্নের কৌলিক গুন হবে ২৬.৭৫ লিটার এবং কৌলিক বৃদ্ধি ২৬.৭৫-২৩.৫০=৩.২৫ লিটার। সন্তানে ফ্রিজিয়ান ব্লাড স্থানান্তরিত হলো ৮৭.৫ লিটার।
#উপরোক্ত আলোচনায় দেখা যায় ১ম ক্রসে জেনেটিক পার্থক্য ছিল ২৬ লিটার এবং জেনেটিক গেইন ছিল ১৩ লিটার,,, দ্বিতীয় ক্রসে জেনেটিক পার্থক্য ছিল ১৩ লিটার এবং জেনেটিক গেইন হলো ৬.৫ লিটার। সবশেষে তৃতীয় ক্রসে জেনেটিক পার্থক্য ছিল ৬.৫ লিটার এবং জেনেটিক গেইন মাত্র ৩.২৫ লিটার। সুতরাং এটা প্রমানিত যে জেনেটিক পার্থক্য বেশী হলে জেনেটিক গেইন বেশী হবে। প্রথম ক্রসে জেনেটিক গেইন ১৩ লিটার হলেও মাত্র তয় ক্রসে তা ৩.২৫ এ নেমে এসেছে।
প্রথম ক্রসে যেহেতু দেশী জাতের ভাল গুন ৫০% সন্নিবেমিত হযেছে তাই এর ব্যবস্থাপনা সহজ হবে এবং দুধের গুনাগুন ভাল হবে অন্য ক্রসের তুলনায। ফ্রিজিয়ান ব্লাড যত বেশী হবে এর ব্যবস্থাপনা তত নিবিড়ভাবে করতে হবে বা জটিলতা তত বেশি হবে তাই সিদ্ধান্ত আপনা,,, আপনি কি ব্রিডার হবেন নাকি সহজ ব্যবস্থাপনায় খামারের উৎপাদন বৃদ্ধি করবেন।
#আরেকটি বিষয়,, কোন প্রাণির কৌলিকগুন পুরোপুরি প্রক্শের জন্য পরিবেশগত ফ্যাক্টর বহুলাংশে দায়ী। গাভীর মধ্যে উন্নত কৌলিকগুন থাকলেও যদি এর উপযোগী পরিবেশ দেওয়া না হয় বা পুস্টির চাহিদা যথাযথভাবে পূরন করা না হয় তাহলে কৌলিকগুন থাকা সত্বেও ভাল উৎপাদন আশ্ করা যায়না।
#আমাদের দেশে ফ্রিজিয়ান গাভী থেকে কাংক্ষিত উৎপাদন না পাওয়ার অন্যতম কারন হলো পরিবেশগত প্রতিকূলতা। আমাদের দেশে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশী যা ফ্রিজিয়ানের জন্য আরামদায়ক নয়। ফ্রিজিয়ানের ক্ষেত্রে কাংক্ষিত Thermal Humidity Index বা THI হলো ৬৮-৭২। আমাদের দেশে উক্ত ইনডেক্স ৮০ এর বেশি। THI দুধ উৎপাদনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।
লেখক: মজিবুর রহমান, ULO, নরসিংদী, প্রানীসম্পদ অফিস