গাভী কে খাবার দেয়ার সরল হিসাব
——————————————–
কোন গাভীকে কতটুকু কাঁচা ঘাস দিবেন কতটূকু শূকনো ঘাস দিবেন, আর কতটুকু দানার খাদ্য দিবেন?
এই প্রশ্নগুলো প্রতিনিয়ত খামারিরা করে থাকেন আর নতুন খামারি হলে তো কথাই নেই। আর এর উপর নির্ভর করছে আপনার খামারের লাভ- লস। অনেকে অনুমানের উপর গরুকে খাবার দিয়ে থাকে কিন্তু লাভবান হতে হলে খাবার দিতে হবে হিসাব করে।
এবার আসুন কোন খাদ্য কতটুকু দিবেন সেটা নিয়ে বলা যাক।যেহেতু আমাদের দেশে অনেক খামারীই পশুকে খড় খাওয়াই তাই আলোচনা করা যাক।
খড়ের হিসাব:
খড় পশূর জন্য একটি শুষ্ক খাদ্য এবং পুষ্টি মানও কম।তবে পশুর পাকস্থলীর সঠিক কার্যক্রমের জন্য খড় দরকার।যদি আমি ধরে নেই আপনার গাভীর ওজন ১০০ কেজি তাহলে কতটুকু খড় দিবেন।সেক্ষেত্র আপনাকে দৈনিক কমপক্ষে ২-৩ কেজি দিতে হবে ।
তাহলে ৩০০ কেজি সংকর একটি গাভীর জন্য কমপক্ষে ৬-৯ কেজি খড় দৈনিক দিতে হবে।
কাঁচা ঘাসের হিসাব:
এবার আসুন গাভীর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচা ঘাসের পরিমান হিসাব করি।১০০ কেজি ওজনের একটি গাভীর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ কেজি কাঁচা ঘাস প্রয়োজন।আর যদি গাভীটি হয় সংকর জাতের গাভী তাহলে ১৫-২০ কেজি কাঁচা ঘাস দিতেই হবে।আর যদি সেটি দুগ্ধবতী গাভী হয় তাহলে যুক্ত করতে হবে আরো ৫- ৭ কেজি সবুজ কাঁচা ঘাস।
এই কাচাঁ ঘাস আবার দুই ধরনের।একটি হল লিগিউম অন্যটি হল নন-লিগিউম।গাভীর খাবারে দুই ধরনের ঘাসই পরিমান মত থাকা চাই।
দানাদার খাদ্যের হিসাব:
গাভীর পুষ্টির অনেক উপাদানই আসে দানাদার খাদ্য থেকে।তাই খড় ও কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি অবশ্যই পশুকে দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।কিন্তু তা কতটুকু?
সাধারন গাভীর জন্যঃ
ধরেন আপনার দেশি গাভীটির ওজন ১০০ কেজি তাহলে তাকে কমপক্ষে ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দৈনিক দিতে হবে।আর গাভী যদি হয় সংকর জাতের যার ওজন ৩০০ কেজি তাহলে তার জন্য ৪ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
দুগ্ধবতী গাভীর জন্যঃ
যদি ১০০ কেজি ওজনের গাভীটি ২-৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয় তাহলে ঐ ২ কেজি দানাদার খাদ্যেই তার জন্য যতেষ্ঠ।তবে দুধের পরিমান যদি বাড়ে তাহলে দানাদার খাদ্যের পরিমানও বাড়াতে হবে।
দানাদার খাদ্য বাড়ানো হিসাবটি হল,প্রথম ৩ লিটারের পর প্রতি ২.৫ লিটার দুধ বৃদ্ধির জন্য 1 কেজি দানাদার খাদ্য যোগ করতে হবে।
প্রশ্নঃ
২৫০ কেজি ওজনের একটি সংকর গাভী দৈনিক ১৫ লিটার দুধ দেয় তাহলে তাকে দৈনিক কত কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে?
উত্তর:
১০০ কেজি গাভীর জন্য দানাদার খাদ্য ১.৫ কেজি
তাহলে,২৫০ কেজি গাভীর জন্য দানাদার খাদ্য প্রয়োজন ১.৫ x ২.৫ = ৩.৭৫ কেজি
যদি গাভীটি ২- ৩ লিটার দুধ দিত তাহলে আর অতিরিক্ত দানাদার খাদ্যের প্রয়োজন হত না।কিন্তু গাভীটি দুধ দিচ্ছে ১৫ লিটার।
তাহলে বারতি ১৩-৩ লিটার= ১২ লিটার এর জন্য আরো দানাদার খাদ্য প্রয়োজন।
এই ক্ষেত্রে হিসাবটি হল
বাড়তি ২.৫ লিটার দুধের জন্য অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে ১ কেজি।
তাহলে বাড়তি ১২ লিটারের জন্য অতিরিক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে প্রায় ৫ কেজি।
সব মিলে দাড়াল,
২৫০ কেজি ওজনের যে গাভী প্রতিদিন ১৫ লিটার দুধ দেয় তাকে দৈনিক ৩.৭৫ + ৫ = ৮.৭৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।এইটা আপনি ৭-৮.৫ কেজির মধ্যে রাখতে পারেন।
গর্ভবতী গাভীর দানাদার খাদ্যঃ
গর্ভবতী গাভী, গর্ভের প্রথম পাঁচ মাস,
প্রতি ১oo কেজি ওজনের জন্য ১.৫ – ২ কেজি করে পাবে।সাথে যদি দুগ্ধবতী হয় তাহলে উপরের নিয়ম অনুসারে দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
গর্ভবতী গাভী, গর্ভের ৬ মাস থেকে বাচ্চা দেওয়া পর্যন্ত,
এই সময় গাভী স্বাভাবিক নিয়মের সাথে বাচ্চার জন্য আলাদা ভাবে ১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
তাহলে কি দাড়াঁল
ছয় মাসের গর্ভবতী গাভীর দানাদার খাদ্যের পরিমান= (১। সাধারন ওজনের জন্য+২। দুধের জন্য + গর্ভস্থ বাচুরের জন্য) দানাদার খাবার
এবার বলুন তো
প্রশ্নঃ
২৫০ কেজি ওজনের সেই ১৫ লিটার দুধের সংকর গাভীটি ৬ মাসের গর্ভবতী হলে দৈনিক কতটুকু দানাদার খাদ্য পাবে?
উত্তর:
৮.৫ কেজি।অর্থাৎ গর্ভবতী অবস্থার জন্য আরও দেড় কেজি খাবার যোগ করা হল।
ডা মোঃ শাহিন মিয়া
ভি এস
কুমিল্লা