গরু মোটাতাজাকরণ খামারে যে সব বিষয় গুলি গুরুত্বপূর্ণঃ
————————————————————–
বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য কতগুলো আবশ্যকীয় বিষয়ের ওপর নজর দিতে হয়। তা হলো
১. প্রকল্প চালুর উপযুক্ত সময় নির্বাচন।
২. পশু নির্বাচন ও ক্রয়।
৩. গরুর স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থান নির্ধারণ।
৪. নির্বাচিত পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদান।
৫. সুষম ও পরিমাণ মতো খাদ্য সরবরাহ।
৬. সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক প্রদান।
৭. প্রতি ১৫ দিন অন্তর গরুর দৈহিক ওজন নির্ণয়।
৮. গরুর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।
৯. এঁড়ে গরুকে খোজাকরণ।( এটা আপনার ইচ্ছার উপর অনেকটা নির্ভর করে)
১০. মোটাতাজাকরণের মেয়াদকাল নির্ধারণ।
১১. গরু বাজারজাতকরণ।
১২. গরু মোটাতাজাকরণের বিনিয়োগ ও মুনাফার তথ্য রেকর্ডকরণ।
মোটাতাজাকরণের জন্য গরু নির্বাচনঃ
১) মাথা ও গলা খাট এবং চওড়া। ২) প্রশস্থ কপাল ৩) হাড়ের জোড়া মোটা হবে। ৩) কাধ খুব পুরো ও মসৃন। ৪) পিঠ চেপ্টা ও সমতল হবে। ৫) সামনের পা দুটো খাটো ও শক্ত সামর্থ্য হবে। ৬) পাজরের হাড় মোটা। ৭) চামড়া ঢিলাঢালা । ৮) খাদ্যের অভাবে দুর্বল ও শুকনা গরু ক্রয় করা যেতে পারে। ৯) শিং খাটো ও মোটা হওয়া ভাল। ১০) অল্প বয়সের (১৪ বা ১৮ মাস) ষাড় বা অল্প বয়স্ক বলদ মোটাতাজাকরণের জন্য ভাল।
খামারের জন্য গরু বাছাইয়ে কিছু দিক নির্দেশনা :
—————————————————–
আমরা আমাদের খামারের জন্য যখন ষাঁড়, গাভী বা বক্না বাছাই করবো তখন সেগুলির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা প্রয়োজন। যদি আমরা এইসব বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন গরু আমাদের খামারের জন্য বাছাই করি তাহলে সেগুলির লালন পালনে তেমন বেগ বা কষ্ট পেতে হবে না! এদের বৃদ্ধি, উৎপাদন,রোগ সহনশীলতা সব কিছুই ভালো হবে। আর এভাবেই আপনি দ্রুত একজন দক্ষ ও সফল খামারী হয়ে উঠবেন। নীচে আমি গরু বাছাইয়ে কিছু সাধারণ দিক নির্দেশনা দিলাম।
১। যে গরুটি খামারের জন্য বাছাই বা সংগ্রহ করবেন তার রোগ-ব্যাধি এবং খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস জানার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ, গরুটির আগে কোন রোগ বার বার হত কিনা,গরুটির খাদ্য গ্রহনের অভ্যাস এবং প্রবণতা কেমন ইত্যাদি।
২। গরুটির মুখের আকৃতি কেমন? সবসময় মনে রাখবেন বেঁটে মুখ বা শর্ট ফেস গরু খাদ্য গ্রহনে পটু বা ভালো। আবার,লম্বাটে মুখের গরু অপেক্ষাকৃত কম খায় বা খাদ্য গ্রহনের দিক দিয়ে ততটা ভালো নয় এবং কম খাদ্য গ্রহনের ফলে গাভীর দুধ উৎপাদন বা ষাঁড়ের দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই কম হবে। তাই মুখের আকৃতি লক্ষ্য করা জরুরী।
৩। গরুর রোগ-ব্যাধির ইতিহাস জানাটা জরুরী। কিছু কিছু গরুর একাধিক বার কিটোসিস,ম্যাসটাইটিস ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।আবার কিছু গরুর ক্রনিক ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানা লেগে থাকে। এসব গরু খামারে না আনাই ভালো। এগুলি খামারীদের লোকসানের ভাগীদার করবে।
৪। গরু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চামড়ার বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ্য রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় লক্ষ্য রাখবেন গরুর চামড়া যাতে পাতলা হয় এবং লোমগুলি মসৃণ। এর উপরেও কিন্তু উৎপাদন অনেকাংশে নির্ভর করে!
৫। গরু বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শিং এর বৈশিষ্ট্য একটি বড় ব্যাপার। গাভী বা বক্নার ক্ষেত্রে চিকন শিং বা চ্যাপ্টা পাতার মত শিং এবং ষাঁড়ের ক্ষেত্রে শিংয়ের গোঁড়া যাতে মোটা হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৬। খামারের জন্য বাছাই করা গরুটির চোখ যাতে উজ্জ্বল এবং সেটা যাতে স্বতঃস্ফূর্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
৭। গরুর অস্থি সন্ধি গুলি যাতে অপেক্ষাকৃত মোটা হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এটা হাঁড়ের গঠন যে ভালো সেটা প্রকাশ করে। এছাড়া ক্ষুর গুলিও যাতে সুন্দর আকৃতির হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন।
৮। আরেকটা জিনিষ খেয়াল করবেন যে,গরুর গায়ের বিভিন্ন শিরাগুলি যাতে দৃশ্যমান হয়। গাভীর ক্ষেত্রে দুগ্ধ শিরাগুলি স্পষ্ট, স্ফীত এবং আঁকাবাঁকা যাতে হয় এবং ষাঁড়ের ক্ষেত্রে রক্ত শিরাগুলি যাতে স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়।
৯। গরু বাছাই করার সময় লক্ষ্য করবেন, গরুর পাঁজড়ের হাঁড় যাতে অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। গরুর লেজ সরু, ছোট এবং কপাল প্রশস্ত ভালো গরুর আরেকটা লক্ষণ।
১০। গাভীর ক্ষেত্রে গলকম্বল ছোট,কান ছোট এবং গোলাকৃতি, কুঁজ ছোট বা কুঁজবিহীন হতে হবে। ষাঁড়ের ক্ষেত্রে কুঁজ অপেক্ষাকৃত বড়,গলকম্বল বড় এবং ঝোলানো হতে হবে।
জাহিদুল ইসলাম(পি ডি এফ)
কেমন গরু কেনা উচিত
১. গরু অবশ্যই ২ দাতের মধ্যে হতে হবে অর্থ্যাত যেসব গরুর বৃদ্ধির সময় আছে।
২ অবশ্যই ফ্রেম বড় হতে হবে। অর্থ্যাত পা লম্বা, বডি বড় এই ধরনের।
৩. অবশ্যই হাড্ডিসার হতে হবে যেন শরীরে উন্নতির যায়গা থাকে। মোটা ভালো স্বাস্থ্যের গরু কিনে মোটা করার তো আর সুযোগ থাকেনা। বরং ফিড খাওয়া গরু হলে আরো শুকায় যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪. গরুর চেহারা এবং রঙ আকর্ষনীয় হতে হবে যেন ক্রেতা আকর্ষন করতে পারে।
৫. শরীরের কোথাও কোন স্থায়ী ক্ষুত বা সমস্যা না থাকে।
৬. ভালো জাতের হতে হবে। জাত ভালো না হলে যত পরিচর্যা করা হোক আশানুরুপ বৃদ্ধি হবেনা।
৭. হুজুগে পড়ে গরু কেনা যাবেনা। মার্কেট যাচাই করে গরু কিনতে হবে। বিক্রির সময় সম্ভাব্য দাম কেমন হতে পারে, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
৮. লাইভ ওয়েট মেপে দাম বলতে হবে। ধারনা সবার সব সময় সঠিক নাও হতে পারে।
৯. সর্বোপরি যে গরুর স্বাস্থ্য দেখে কেউ পছন্দ করবেনা সেটাই হতে হবে আপনার পছন্দ।
অভিজ্ঞদের মতামতের মূল্য দিয়ে, বুঝে, মেধা জ্ঞ্যান ব্যবহার করে গরু কিনলে লস হবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়, যদিও লস ও ব্যবসার একটা অংশ। সব সময় মনে রাখতে হবে কিনে লাভ না হলে বেচে লাভ করা কঠিন কাজ।
ফেসবুক থেকে নেয়া
মোটাতাজাকরণ”
===============================
মোটাতাজাকরণ প্রকল্প আপনি কেন হাতে নিবেন?
গরু মোটাতাজা করণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগে কিছু
বিষয়ের উপর নজর থাকতে হবে??
২টি ঈদ কে সামনে রেখে প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার আগে জেনে নিন।
মোটাতাজাকরণ হাতে নেওয়ার কারণঃ
১।সঠিক ব্যবস্থাপনাই অল্প সময়ে মোটাতাজা করে লাভমান হওয়া সম্ভব।
২।অল্প সময়ে আপনার লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া যায়।
৩।এলাকা/বিভিন্ন বাজার ঘুরে ঘুরে কম দামে ভালো মানের মোটাতাজার জন্য উপযোগী এমন পশু সংগ্রহ করা সম্ভব যা পরর্বতীতে অধিক মূল্যে বিক্রি করা যায়।
৪।সঠিক ব্যবস্থাপনাই প্রকল্পটি হাতে নিলে প্রকল্পটি সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব ও ঝুঁকি কম।
৫।এই ধরণের উদ্যোগ নিয়ে দেশের প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
৬।এই ধরণের প্রকল্প ব্যাপক ভাবে হাতে নিয়ে দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
যে বিষয়গুলোর উপর নজর রাখতে হবেঃ____,,,
১।সময় নিধা’রন করতে হবে,প্রকল্পটি ৬মাস মেয়াদী না ১২ মাস মেয়াদী।
২।সঠিক জাতের ভালো মানের গরু খুঁজে বের করতে হবে ও কিনতে হবে।
৩।কৃমিমুক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
৪।সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
এই প্রতিটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করলে অধিক সময় বা লম্বা পোস্ট লিখতে হবে।তাই সঠিক জাতের ও ভালো মানের গরু ও কিছু লক্ষণ দেখে কিনা উচিত এই বিষয়ে অল্প আলোচনা করা হলো।
লক্ষণ গুলো হলোঃ______,,,
১।সাধারণত দেড় থেকে দুই বছরের ষাঁড় বাচুর কিনা উচিত।
২।ঘাড় খাট আকৃতির হয়।
৩।হাড়ের জোড়াগুলো মোটা আকৃতি সম্পন্ন হবে।
৪।পশুর শারীরিক ত্রুটিমুক্ত ও নিখুঁত হতে হবে।
৫।গায়ের চামড়া ঢিলে ঢালা হবে।
৬।সামনের পা দুটো খাটো হবে।
৭।পশু লম্বা হতে হবো খাটো নয়।
৮।কাঁধ খুব পুরু ও মসৃণ হবে।
৯।বুক প্রশস্ত ও বিস্তৃত হবে।
আরো অনেক লক্ষণ থাকতে পারে তবে এগুলো দেখে কিনলেই চলে।
তবে মনে রাখবেন পশুকে খুঁদ/ভাতের জাউ দিবেন না