গরু মোটাতাজাকরণে ‘ফারমেন্টেড কর্ন’ তৈরীর প্রণালী
খামারি ভাইয়েরা বলে,
“খড় তো নয় যেন সোনা খাওয়াচ্ছি গরুকে, আর ভূষিতো নয় যেন হীরা খাওয়াচ্ছি গরুকে।”
দানাদার খাবার খাওয়াবেন? শুধুমাত্র দানাদারের উপর নির্ভরশীল হওয়া মানে পয়সা খরচ করে ব্যাপারী আর কসাইদের পকেট ভারী করা।
রেডী ফিড খাওয়াবেন? সেটা মানেতো লাভের গুড় ফিড কোম্পানিরে খাওয়ানো।
তাহলে কম খরচে গরু মোটাতাজা করার উপায় কি?
✓উপায় হচ্ছে ফার্মেন্টেড কর্ন।
এতে করে দুটি লাভ হবে:
১। কম পুষ্টিমান সমবৃদ্ধ খড়ে পুষ্টিমান বাড়বে।
২। দানাদারের খাদ্যের খরচ কমবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামের একজন ফ্যাটেনিং খামারি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এই পদ্ধতি অবলম্বন করে তার খাদ্যের খরচ অনেকাংশে কমিয়েছেন। এবং যাকে অনুসরণ করে অনেক খামারি উপকৃত হচ্ছেন।
কি কি উপাদান লাগবেঃ
১। ভুট্টার পাউডার বা বেসন ৬০ কেজি।
২। খড় ৪০ কেজি (৩০ কেজিও দেয়া যায়)
৩। মোলাসেস বা চিটা গুড় ১০ কেজি
৪। ইউরিয়া ৩/৪ কেজি
৫। পানি ১০০ লিটার
৬। সাইলো পিট্ অথবা বায়ুরোধী প্লাস্টিকের ড্রাম।
৭। পানি ছিটানোর ঝর্ণা।
৮। ত্রিপল অথবা প্লাস্টিকের পলিথিন।
কিভাবে বানাবেনঃ
১। প্রথমে পানির পাত্রে ১০০ লিটার পানি নিয়ে তার সাথে চিটা গুড় ও ইউরিয়া মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করুন। লক্ষ করবেন ইউরিয়া যাতে ভালভাবে গলে যায়।
২। পরিষ্কার সমান জায়গায় ত্রিপল বিছিয়ে নিন এবং এর উপর ভুট্টার গুঁড়া ভালভাবে বিছিয়ে দিন।
৩। বিছানো ভুট্টার গুঁড়ার উপর আপনার ব্যবহৃত খড়ের অর্ধেকটা ভালভাবে ছিটিয়ে দিন।
৪। এরপর আপনার তৈরিকৃত মিশ্রনের অর্ধেকটা ঝর্ণার সাহায্যে খড়ের উপর এমনভাবে ছিটিয়ে দিন যাতে সবজায়গায় সমভাবে বন্টন হয়।
৫। ছিটানো হয়ে গেলে খড় ও ভুট্টার গুঁড়াটা ভালভাবে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে। এরপর বাকি অর্ধেক খড় প্রথমবারে মিশ্রিত খড় ও ভুট্টার উপর বিছিয়ে দিতে হবে।
৬। এবার বাকি অর্ধেক মিশ্রণ খড়ের উপর ছিটিয়ে দিতে হবে। ছিটানো হয়ে গেলে আগের বারের মত পুরো মিশ্রণটা আবার ভালভাবে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দিতে হবে।
৭। মেশানো হয়ে গেলে এবার তা সাইলো পিট বা ড্রামে ঢেলে ভালভাবে এয়ার টাইট করে দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে না পারে।
৮। ২১ দিন এভাবে রেখে দিতে হবে এবং ২১ দিন পর থেকে প্রস্তুতকৃত ফার্মেন্টেড কর্ন গরুকে খাওয়ানো যাবে।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্যঃ
১. ভুট্টার গুড়া বা বেশন যেটা করা হয় পাটা লাগানো মেশিনে আর
২. ভুট্টা ভাংগা যেটা করা হয় ব্লেড লাগানো মেশিনে যা মুরগীর খাবারে ব্যবহৃত হয়।
৩. সাগু দানার মতো করে ভুট্টা ভেংগে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পাটা মেশিন দিয়ে না ভেংগে জালি মেশিন দিয়ে ভাংগানো ভালো। এই ক্র্যাকট কর্ন পরিমানমতো পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখে হাই ময়েশ্চারে (৩০%) নিয়ে আসতে হবে।
দু টি দিয়েই ফার্মেন্টড কর্ন তৈরি করা যায় তবে দ্বিতীয় টি দিয়ে আগের রাতে ভিজিয়ে সকালে ছেঁকে তা দিয়ে করলে এর নিউট্রেশন ভ্যালু বেশি হয়।
প্রোটিন সাপ্লিমেন্টঃ
প্রস্তুতকৃত ফার্মেন্টেড কর্ন এর সাথে গরুকে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট সরবরাহ করতে হবে। প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট তৈরীর উপাদান নিচে দিয়ে দেয়া হল :
সয়ামিল ৫০%, ভুট্টার গুঁড়া ৩৫%,লবন ৫%,ডি সি পি ৫%, লাইমস্টোন ৫% .
কতটুকু করে খাওয়াবেনঃ
প্রতি ১০০ কেজি লাইভ ওয়েটের জন্য গরুকে ১ থেকে সোয়া ১ কেজি ফার্মেন্টেড কর্ন ও ২২৫ গ্রাম প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে।
সাবধানতাঃ
১।ফার্মেন্টেড কর্ন মোটাতাজাকরণের গরুর জন্য ব্যবহার করতে হবে। ডেইরির জন্য নয়।
২। প্রস্তুতকৃত ফার্মেন্টেড কর্ন হঠাৎ করেই গরুকে বেশি পরিমানে দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে গরু জাতীয় প্রাণীর খাদ্যে যেকোন পরিবর্তন আস্তে আস্তে সময় নিয়ে করতে হবে।
৩। পূর্বের খাদ্য কিছুটা কমিয়ে ২৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ফার্মেন্টেড কর্ন দিয়ে শুরু করে আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে।
৪। এছাড়া প্রাথমিক অবস্থায় ফার্মেন্টেড কর্ন দেয়ার ফলে গরুর গোবর কিছুটা নরম হতে পারে। এতে ঘাবড়ানোর কারণ নেই। দুএকদিনের মাঝে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
ডা মোঃ শাহিন মিয়া
ভেটেরিনারি সার্জন
বিসিএস প্রাণিসম্পদ
চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা.
01716 1620 61
rafiashahinurhurram@gmail.com