গরুর খাবার হিসাবে ইউরিয়া : মাত্রা ও সতর্কতা
গরুর খাবার হিসাবে ইউরিয়া : গরুর খাবার হিসাবে ইউরিয়া ব্যবহারের ইতিহাস নতুন হলেও আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রবণতা বেশি দেখা যায়। ১৯ শতকের শেষ দিকে সহজলভ্য এবং সস্তা প্রোটিন উতস হিসাবে গরুর খাবারে ইউরিয়া যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। মূলত সহযোগী খাবারের (দানাদার বা ইউ এম এস) সাথে মিশিয়ে নন প্রোটিন নাইট্রোজেন উতস হিসাবে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো হয়। গরু খাবার হিসাবে ইউরিয়া গ্রহণ করার পরে গরুর রুমেনে (৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলীর প্রাণীর প্রথম প্রকোষ্ঠ) এসে এমোনিয়া হিসাবে ভেঙে যায় এবং রুমেনে থাকা অণুজীব এমোনিয়াকে ভেঙ্গে প্রোটিনে রূপান্তর করে এবং পাকস্থনির অন্য প্রকোষ্ঠ গুলো জৈব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গরুর শরীরে প্রোটিন এনার্জি হিসাবে শোষিত হয়।
মাত্রা : গরুর জন্য ইউরিয়ার দৈনিক সঠিক মাত্রা নির্ধারণ এতটাই জটিল যে অনেক সময় সচেতন খামারিদের জন্যই সঠিক মাত্রা নির্ধারণ কঠিন হয়ে যায়। যেহেতু ইউরিয়াতে থাকা এমোনিয়া সরবরাহ অতিরিক্ত হয়ে গেলে গরুর শরীর গ্রহণ করতে পারেনা এবং বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে, তাই ভুল মাত্রায় ইউরিয়া অনেক ক্ষেত্রে গরুর প্রাণ নাসের ও কারণ হতে পারে। ইউরিয়ার মাত্রা এবং বিষক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা হলেও সঠিক নিরাপদ মাত্রা নিযে গবেষকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। নটিংহ্যাম বিশ্যবিদ্যালয়ের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, গরুর জন্য ইউরিয়ার দৈনিক পরিমান নির্ভর করে গরুকে দেয়া সারাদিনের প্রোটিন সরবরাহের উপরে। গরুকে সারাদিনে দেয়া ক্রুড প্রোটিনের (সিপি) ২০% এর বেশি হতে পারবেনা, সহযোগী দানাদার খাবারের ১% এর বেশি হতে পারবেনা। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ টেরিটরি প্রাণিসম্পদ বিভাগের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য খাবারের সাথে সহযোগী খাবার হিসাবে দৈনিক গরুর লাইভ ওয়েটের ০.১% ইউরিয়া গরুর জন্য নিরাপদ। তবে অবশ্যই দৈনিক ৫-১০ গ্রাম থেকে শুরু করতে হবে এবং আস্তে আস্তে বাড়াতে হবে। অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবেনা। কোনো কারণে ইউরিয়া খাওয়ানো বন্ধ করলে পুনরায় অল্প করে শুরু করে আস্তে আস্তে মাত্রা বাড়াতে হবে।
সতর্কতা : গরু খাবার হিসাবে ইউরিয়া গ্রহণ করার পরে গরুর রুমেনে (৪ প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ট পাকস্থলীর প্রাণীর প্রথম প্রকোষ্ঠ) এসে এমোনিয়া হিসাবে ভেঙে যায় এবং রুমেনে থাকা অণুজীব এমোনিয়াকে ভেঙ্গে প্রোটিনে রূপান্তর করে এবং পাকস্থনির অন্য প্রকোষ্ঠ গুলো জৈব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গৃহীত হয়। কিন্তু প্রয়োনজোন অতিরিক্ত ইউরিয়া গরুকে খাওয়ালে গরুর পাকস্থলী তখন অতিরিক্ত এমোনিয়া (ইউরিয়া) হজম (বিপাক) করতে পারেনা। তখন ওই অতিরিক্ত এমোনিয়া রক্তের সাথে মিশে যায় এবং গরুর লিভারে গিয়ে পুনরায় ইউরিয়ায় রূপান্তর হয় ও কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু মূল সমস্যা হয় যখন রক্তে অতিরিক্ত ইউরিয়ার পরিমান লিভার ও কিডনির শোষণ ও ফিল্টারিং ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় এবং তখিনি গরুর ইউরিয়া পয়জনিং বা বিষক্রিয়া হয় এবং গরু অতি অল্প সময়ে মারা যায়। এছাড়া অতিরিক্ত ইউরিয়া লিভার এবং কিডনিতে জমে কিডনি ও লিভার নষ্ট করে দেয় এবং শরীরে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। একারণেই ইউরিয়া খাওয়ানোর ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
তথ্যসূত্র : ১. এনিমেল সাইন্স বিভাগ, নটিংহাম ইউনিভার্সিটি।
২. ডিপার্টমেন্ট অফ লাইভ স্টক, নর্দার্ন টেরিটরি, অষ্ট্রেলিয়া।
জাহিদুল ইস্লাম(পি ডি এফ)