গরুর খাদ্য ও পুষ্টি পর্যালোচনা : জাম্বো ঘাস ( সরগম )
দৃষ্টি আকর্ষণ : এই সিরিজে বিভিন্ন সাইন্টিফিক টার্ম ব্যবহার করা হয়। কারো বুঝতে সমস্যা হলে কমেন্টে প্রশ্ন করবেন।
গরুর খাদ্য হিসাবে ‘জাম্বো ঘাস’ : বাণিজ্যিকভাবে গরু পালনের জন্য জনপ্রিয় ঘাস হিসাবে বিশ্বের সব গরু পালনকারী দেশে পরিচিত জাম্বো বা সুইট জাম্বো ঘাস মূলত সরগম ঘাস এবং সুদান ঘাসের ক্রস ঘাস। ক্রস ঘাস হলেও মূলত সরগম বা জাম্বো ঘাস হিসাবেই ঘাসটি পরিচিত। এই ঘাস সাধারণত শুকনা জমিতে এবং বেলে দোয়াশ মাটিতে সবচে ভালো ফলন হয় এবং বীজ বপনের মাধ্যমে চাষ করা হয়। একবার বপন করা সরগম ঘাস ৩/৪ বার পর্যন্ত কাটা যায়। মাটির গভীরে শিকড় প্রবেশ করে বলে শুষ্ক জমিতে এই ঘাসের ফলন ভালো হয়। সরগম ঘাসে রয়েছে ৮ থেকে ১০% ক্রুড প্রোটিন এবং ২% ক্রুড ফ্যাট। তবে ঘাস যত কচি হবে পুষ্টি উপাদান তত বেশি হবে। জাম্বো ঘাসের সবচে প্রধান সমস্যা হচ্ছে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইডের উপস্থিতি।
‘জাম্বো’ ঘাসের গড় পুষ্টি উপাদান :- (%/ড্রাই ম্যাটার)
ড্রাই ম্যাটার : ১৮
ক্রুড প্রোটিন : ৮.২
ক্রুড ফাইবার : ৩৩.৬
ক্রুড ফ্যাট (ইথার এক্সট্রাক্ট) : ১.৯
নিউট্রাল ডিটারজেন্ট ফাইবার : ৫৭.৯
এসিড ডিটারজেন্ট ফাইবার : ৩৫
লিগনিন : ৩.৩
অ্যাশ (ছাই) : ৯.১
গ্রস এনার্জি : ১৮.১ মেজুল/কেজি
হজম যোগ্য এনার্জি : ১০.৯ ”
বিপাকযোগ্য এনার্জি : ৮.৮ ”
মিনারেলস (খনিজ উপাদান) :- (ড্রাই ম্যাটার)
ক্যালসিয়াম : ৪.১ গ্রাম/কেজি
ফসফরাস : ২০ ”
পটাসিয়াম : ১৯.৩ ”
সোডিয়াম : ২.৫ ”
ম্যাগনেসিয়াম : ২.২ ”
ম্যাঙ্গানিজ : ৮২ মিগ্রা/কেজি
জিংক : ৪৫ ”
কপার : ১৩ ”
আয়রন : ৯১৯ ”
ক্ষতিকর উপাদান :
প্রতি কেজি ড্রাই ম্যাটারে হাইড্রোজেন সায়ানাইড ১০০ মিলিগ্রাম/কেজি এবং নাইট্রেট : মাটি ভেদে ৩.৯ – ২৮.৩ মিলিগ্রাম। ঘাসের বয়স, আবহাওয়া এবং চাষ পদ্ধতি ভেদে ক্ষতিকর উপাদান কম বেশি হয়ে থাকে।
মাত্রা ও সতর্কতা : ঘাস গরুর প্রধান খাবার এবং গরুকে দৈনিক খাবারের পুরাটাই জাম্বো ঘাস দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। তবে শুধু মাত্র নেপিয়ার ঘাসের উপর নির্ভর করলে অনেক সময় গরুতে সায়ানাইড এবং নাইট্রেট বিষক্রিয়া হতে পারে। শুষ্ক আবহাওয়ায় কচি ঘাসে সায়ানাইডের উপস্থিতি বেশি থাকে এবং এই পরিমান প্রতি কেজি ড্রাই ম্যাটারে ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। গরুর প্রতি কেজি লাইভ ওয়েতের জন্য ২ মিলিগ্রাম সায়ানাইড অতি বিষাক্ত এবং অতি বিপদজনক হিসাবে ধরা হয়। অন্যদিকে মাটি ভেদে জাম্বো ঘাসে ৩.৯ মিগ্রা/গ্রাম থেকে ২৮.৩ মিগ্রা/গ্রাম নাইট্রেট যৌগ থাকতে পারে। তাই বর্ষাকালে প্রথম বৃষ্টির পরে, মেঘলা আবহাওয়ায় এবং ইউরিয়া সার প্রয়োগের পরে নাইট্রেটের মাত্রা বেড়ে যায়।
জাহিদুল ইসলা(পি ডি এফ)