Breaking News
ব্যাবেসিওসিস
ব্যাবেসিওসিস

গবাদিপশুর রক্ত-প্রস্রাব (ব্যাবেসিওসিস):  কারন ও প্রতিকার

 পাঠ ১।

গবাদিপশুর রক্ত-প্রস্রাব (ব্যাবেসিওসিস):
কারন 

গবাদিপশুর রক্ত-প্রস্রাব বা ব্যাবেসিওসিস আঁটুলিবাহিত একটি প্রটোজোয়াজনিত রোগ।

এ রোগে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি গরুর মুত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বব্যাপী জীবজন্তুর আঁটুলিবাহিত রোগের মধ্যে এটি অন্যতম।

আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ না হওয়ায় এ রোগে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। সাধারণত গরু ও মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয়।

এ রোগের বাহক (Ripicephalus microplus বা Boophilus microplus ও Ripicephalus annulata বা Boophilus annulata) জাতীয় বিশেষ ধরনের আঁটুলি যারা গরু মহিষের শরীরে বাস করে তাদের শরীর থেকে নিয়মিত রক্ত শোষণ করে। সর্বপ্রথম ১৮৮৯ সালে থিওবাল্ড স্মিথ আমেরিকার টেক্সাস অঞ্চলে গরুতে এ রোগ চিহ্নিত করেন ।

এ কারনে এ রোগের অপর নাম টেক্সাস ফিভার এবং রত্তের রোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাওয়ায় মূএের রং লাল হওয়ায় এর অপর নাম রেড ওয়াটার ফিভার যা রত্ত প্রস্রাব নামে ও অভিহিত।

এছাড়া ১৮৯৩ সালে স্মিথ ও কিলবর্ণ আঠালীর ডিম্বাশয়ের মাধ্যমে ব্যাবিসিয়া সংক্রমণ (trans ovarian transmission) আবিস্কার করেন।

এপিডেমিওলজী:
বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ রোগের প্রার্দুভাব আছে। বছরের প্রায় সব ঋতুতে এ রোগ হয়ে থাকে তবে জুলাই ও আগষ্ট মাসে পা্রর্দুভাব অধিক হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক পশু এরোগে অধিক সংবেদনশীল। গাভী এ রোগের প্রতি অধিক সংবেদনশীল।

দেশী গবাদিপশুর চেয়ে সংকর বা উন্নতজাতের গবাদিপশু এ রোগে অধিক সংবেদনশীল।

যে সব এলাকায় বাহক আঁটুলির প্রকোপ খুব বেশি, সে সকল এলাকার গবাদিপশুতে ক্রমাগত সংক্রমণের ফলে কিছুটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। তবে জলবায়ুর পরিবর্তন বা অনিয়মিত আঁটুলিনাশক ব্যবহারে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
এ রোগে যেহেতু অধিক উৎপাদনশীল গবাদিপশুতে অধিক আক্রানত হয়, তাই অর্থনৈতিক বিবেচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। তাই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ অত্যস্ত জরুরি।

বাংলাদেশে বছরে এ রোগের কারণে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার অধিক আর্থিক ক্ষতি হয়।

সাধারণত শতকরা ৩.২-৪.৯ ভাগ পশু ক্লিনিক্যাল রোগে আক্রান্ত হয় এবং ৭.৩-১৪.৫ ভাগ পশুর মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত পশু দীর্ঘদিন ধরে এ রোগে ভোগার পেও মাংস ও দুধ উৎপাদন হ্রাস পায়।

জীবনচক্র:
আঠালী দ্বারা সংক্রমণের ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর ব্যাবিসিয়া বোভিস ও ব্যাবিসিয়া বাইজেমিনা এর লক্ষণ প্রকাশ পায়।

তবে সরাসরি রত্তে প্রবেশ করানো হলে ইনকিউবেশন পিরিয়ড সংক্ষিপ্ত হয় (ব্যাবিসিয়া বাইজেমিনার ক্ষেেএ ৪ থেকে ৫ দিন, ব্যাবিসিয়া বোভিস এর ক্ষেেএ ১০ থেকে ১২ দিন) আঠালী (রাইপিসেফালাস অ্যানুলেটাস) এ রোগের বাহক।

আঠালীর মধ্যে এ জীবাণুর বছরের পর বছর থাকতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক আঠালীর লালা গ্রঞ্ছিতে স্পোরোজয়েট থাকে। রত্ত শোষণের প্রাক্কালে এ স্পোরোজয়েট পোষকের দেহে প্রবেশ করে। পোষকের লোহিত কণিকায় প্রবেশ করে এবং সেখানে পাইরোপ্লাজমে রপান্তর ঘটে।

বিভিন্ন পদ্বতিতে বংশ বিস্তার করার পর লোহিত কণিকা ভেঙ্গে নতুন লোহিত কণিকায় প্রবেশ করে।

রত্ত শোষনের সময় পাইরোপ্লাজমসহ লোহিত কণিকা আঠালীর পরিপাক নালীতে প্রবেশ করে। রক্ত শোষণের সময় রোগের পরজীবী আঁটুলির শরীরে প্রবেশ করে।

সেখানে এরা বহুগুণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তবে এখানে এদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে না। এই অপূর্ণ অবস্থাকে বলা হয় Vermicule এরা আঁটুলির ডিমের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ডিম ফুটে যখন নতুন লার্ভা জন্মলাভ করে তখন এরা অন্যান্য গবাদিপশুতে আশ্রয় নেয়।

সেখান থেকে রক্ত শোষণের সময় ওই পরজীবী গবাদিপশুর শরীরে প্রবেশ করে। গবাদিপশুর শরীরে এরা লোহিত রক্তকণিকার (Red Blood Cell) মধ্যে প্রবেশ করে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এ কারণেই এদেরকে রক্ত পরজীবী বলা হয়।

এছাড়া আক্রান্ত প্রাণীর রত্ত কোনভাবে যেমন বাইটিং ফ্লাই ও রোগ জীবাণুবাহী সামগ্রী (Fomites) এর মাধ্যমে সুস্থ প্রাণিতে প্রবেশ করলে বা অসুস্থ প্রাণিতে ব্যবহারের পর একই সিরিঞ্জ সুস্থ প্রাণিতে ব্যবহার করলে ও এ রোগ ছড়াতে পারে ।

সাধারণত রোগ জীবাণু প্রবেশের ২-৩ সপ্তাহ পরে আক্রানত প্রাণীর শরীরে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

আক্রানত প্রাণী যদিও আরোগ্যলাভ করে, তাহলেও এদের শরীরে রোগের জীবাণু বছরের পর বছর জীবিত থাকে এবং উক্ত প্রাণী “বাহক” হিসাবে কাজ করে।

রোগের লক্ষণ :
আক্রানত প্রাণীর বয়স ও রোগজীবাণুর প্রকারভেদে এ রোগের লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত ৯ মাস বয়স পর্যনত গরু মহিষ এ রোগে আক্রানত হয় না।

এ রোগের লক্ষণগুলো হল ক্ষুধামান্দ্য ও উচ্চ তাপমাত্রা (১০৩-১০৭ ফা), পাল থেকে আলাদা থাকার প্রবণতা, ঝিমানো ভাব, হাঁটাচলা করতে না চাওয়া , শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী (Mucous membrane) ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া ,

শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া , রক্তশূন্যতা ও রক্তপ্রস্রাব দেখা দেয় . কখনও কখনও রক্তপ্রস্রাব না হয়ে জন্ডিস দেখা দেয় ,

পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠ্যকাঠিন্য হতে পারে , প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত হওয়া ,

জন্ডিস ও জ্বরে আক্রান্ত বাচ্চার জন্ম হতে পারে।

এ রোগে সংক্রমিত রত্তকণিকা (Erythrocytes) যদি মস্তিষ্কের রত্তজালিকায় (Capillaries) প্রবেশ করে তবে স্নায়ুজনিত সমস্যা যেমন চলাচলে অসঙ্গতি,

দাঁত কড়মড় করা, তেড়ে আসা বা চলৎশক্তি হারিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়।

জরায়ুতে সংক্রমণ হলে দুর্বল, পাংশু (anemic), জন্ডিস এবং পানিশূন্যতায় ভোগে এরূপ বাছুর প্রসব করে এবং খিচুনি ও অন্যান্য স্নায়ুবিক সমস্যা ও পরিলক্ষিত হয়।

সুস্থ হয়ে ওঠা পশু অত্যাধিক দুর্বল হয়ে থাকে এবং যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত প্রাণীর মৃত্যু (৪-৮ দিন) ঘটে। আক্রান্ত পশুতে উপরোক্ত সমসত লক্ষণ দেখা নাও দিতে পারে।

পোস্টমর্টেম লক্ষণ:
এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর পোস্টমর্টেম পরীক্ষায় রোগের বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। পোস্টমর্টেমে যে সকল লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় তা হলো ঃ
১) রক্তনালীতে হিমোলাইসিস (hemolysis)
২) প্লীহা সাধারণের তুলানায় আয়তনে বেড়ে যায় এবং কাল, তুলতুলে ও ভংঙ্গুর হয়ে যায়।
৩) অন্ত্রঝিল্লী (Omentum), উদর গহ্বরের চর্বি ও চামড়ার নীচের পর্দা হলুদাভ হয়ে যাওয়া
৪) রক্ত পানির ন্যায় পাতলা হয়ে যাওয়া
৫) যকৃত আকৃতিতে বড়ো কালচে বা হলুদাভ হয়ে যাওয়া
৬) পিত্তথলিতে পিত্তরস অত্যধিক ঘন হয়ে বা দানাদার বস্তুতে পরিণত হয়।
৭) ফুসফুসে পালমোনারী ইডিমা পাওয়া যায়।

রোগ নির্ণয়:
ক্লিনিক্যাল: জ্বর, রত্তশূন্যতা, জন্ডিস ও হিমোগ্লোবিউনিউরিয়া থাকলে ব্যাবিসিসয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করা যায়।
পার্থক্যমূলক রোগ: ব্যাবিসিয়াতে জ্বর ও হিমোলাইটিক এনিমিয়া পরিলক্ষিত হয় যার সাথে বেশ কিছু রোগের সাাদৃশ্য রয়েছে

যেমন এনাপ্লাজমোসিস, থাইলেরিওসিস, ট্রাইপ্যানোসোমিয়াসিস, ব্যাসিলারি হিমোগ্লোবিনউরিয়া, লেপ্টোস্পাইরোসিস, রেপসীড বিষক্রিয়া,দীর্ঘস্থায়ী কপারজনিত বিষক্রিয়।

এছাড়া জলাতঙ্ক ও অন্যান্য মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ যাতে স্নায়ুজনিত সমস্যা পরিলক্ষিত হয় ইত্যাদির সাথে এ রোগের লক্ষণের সাদৃশ্য রয়েছে।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষা:
সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিতে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে এ রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়।

তীব্র রোগের ক্ষেেএ রত্তে ও টিস্যুতে এর উপস্থিতি সনাত্ত করা যায়। ব্যাবিসিয়া জীবাণুটি রত্তের ও টিস্যুর অয়েল ইমারসন দ্বারা

ব্যাবিসিওসিস  আক্রান্ত গরুর রক্ত কনিকা
রঞ্জিত (minimum X 8 eye pieces , X60 objectve lens) অবস্থায় ধরা পড়ে। ল্যাবরেটরিতে জিমসা বা Acridine orangestaining-এর মাধ্যমে রক্ত পরীক্ষা করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

এ রোগের জীবাণু রত্তের লোাহিত কণিকার ভিতর অবস্থান করে এবং এখানে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক ধাপ যেমন রিং ধাপ (annular), পাইরিফম ট্রফোজোয়েট একাকী অথবা জোড়বদ্ব অবস্থায় এবং ফিলামেন্টাস বা আকারবিহীন ধাপ ধারাবাহিকভাবে পরিলক্ষিত হয়।

রত্তে পরজীবীর আধিক্য থাকলে ফিলামেন্টাস রুপটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। বোভাইন বোভিস এর ট্রফোজোয়েট ছোট আকৃতির হয় (সাধারণত ১ থেকে ১.৫ মাইক্রোমিটার X ০,৫ -১ মাইক্রোমিটার ) এবং লোহিত রত্তকণিকার মধ্যখানে এবং জোড়া অবস্থায় থাকে।

বোভাইন ডাইভারজেন্স এর সাথে বোভাইন বোভিস এর সাদৃশ্য রয়েছে বর্তমানে পি.সি.আর. পরীক্ষার মাধ্যমে আরও সুনির্দিষ্টভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। ELISA TEST ও IFA (Indirect fluorescent test)-এর মাধ্যমে রক্তে এ রোগের এন্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।

এছাড়া ক্ষেএবিশেষে Complimant fixation ও Agglutination test ও ব্যবহার করা হয়।
রক্তের লোহিত কনিকাতে গোলাকার বা ডিম্বাকার বা কমার মত জোড়াবদ্ধ সনাক্ত করনের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়।

প্রতিরোধ:
রোগের বাহক আঠালীর নিয়ন্ত্রণ করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আমাদের দেশে যাঁরা সংকর জাতের গবাদিপশু পালন করেন, তাঁরা বিশেষত বর্ষার শুরু ও শেষে আঁটুলিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করে ব্যাবেসিয়াসহ অন্যান্য আঁটুলিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গবাদিপশুর স্থান পরিবর্তনে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তাই নতুন কোনো গবাদিপশু পালে সংযোজনের পূর্বে অন্তত দুই সপ্তাহ পৃথক রেখে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

এ সময়ের মধ্যে যদি নবাগত পশু কোনো ধরনের রোগে আক্রানত না হয় তাহলে তাকে পালের অন্য গরুর সাথে রাখা যাবে। আর যদি কোনো প্রকার অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায় তাহলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তার পর অন্য প্রাণীর সঙ্গে রাখা যেতে পারে।

উর্লেখ্য যুত্তরাস্ট্রে প্রতিটি গবাদিপশুকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ অন্তর আঠুলীনাশক প্রয়োগ করার কারণে ১৯৪৩ সালের পর থেকে এ রোগ পরিলক্ষিত হয নি।

টিকা প্রয়োগেও এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তবে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত এ রোগের টিকা ব্যবহার শুরু হয়নি এবং দেশে পাওয়াও যায় না। এছাড়া রোগের প্রাদুর্ভাবের পূর্বে ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপায়োনেট প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২.৫ মিলি করে ইনজেকশন দিলে গবাদিপশুকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যাবিসিওসিস থেকে মুত্ত রাখা যায়।

চিকিৎসা :
অসুস্থ গবাদিপশুকে প্রথম পর্যায়ে চিকিৎসা দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত রক্তশূন্যতা বা স্নায়ুবিক উপসর্গ (দাঁড়াতে না পারা, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি) দেখা দিলে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে রক্তশূন্যতার চিকিৎসা করা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও তা করা সম্ভব হয়নি।

অ্যারোমেটিক ডায়ামিডিনস গ্রুপের ঔষধ যেমন ডিমিনাজিন ডাইএসিটুরেট (যেমন Berenil, Babcop vet) প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৮ গ্র্মম পরিশ্রত পানিতে (৬%) মিশিয়ে মাংসপেশীর বিরুদ্বে ইনজেকশন এ রোগের বিরুদ্বে কার্যকর।

এছাড়া ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট (যেমন Babcure, Imicarp) প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১.২ মিলিগ্রাম হিসাবে ত্বকের নিচে একবার ইনজেকশন বেশ র্কাযকর। ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট রত্তের লোহিত কণিকার পৃষ্টদেশে সংযুত্ত হয়ে থাকে।

ফলে ব্যাবিসিয়া জীবাণু লোহিত কণিকায় সংযুত্ত হতে পারে না। এছাড়া ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট লোহিত রত্ত কণিকায় ইনোসিটল প্রবেশে বাধা দেয়। ইনোসিটল ব্যাবিসিয়া জীবাণুর জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।

ফলে জীবাণুটি পুষ্টির অভাবে মারা যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে এর প্বার্শপ্রতিক্রিয়ার প্রতি কারণ ইমিডোর্কাব ডাইপ্রোপিয়োনেট এর এন্টি কোলিনস্টারেজ ক্রিয়া থাকায় তীব্র প্রকৃতির বিষক্রিযার মত লক্ষণ যেমন দূর্বলতা, অশ্রুপাত, লালাক্ষরণ, ঘাড় বেকে যাওয়া, কাপুঁনি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

সে ক্ষেেএ এট্রপিন সালফেট (ট্রপিন ভেট) ব্যবহার করতে হবে।

সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে রত্ত সষ্ণালন অথবা রত্তের লোহিত কণিকা সষ্ণালন করা যেতে পারে।

হিমাটিনিক মিক্সার যেমন কপার সালফেট ২ গ্রাম, ফেরাস সালফেট ২ গ্রাম ও কোবাল্ট ক্লোরাইড ১০ মিগ্রা, ২৫০ মিলি পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ১ বার করে ১০ দিন খাওয়ানো ভাল।

সুনির্দিষ্ট ঔষধ পাওয়া না গেলে ৮-১৬ গ্রাম অ্যালাম বা ফিটকিরি ও একই পরিমাণ বোরিক এসিড ২৫০ মিলিলিটার পানির সাথে মিশিয়ে দিনে তিন বার করে ৩ দিন খাওয়াতে হবে।

সূএ: বোভাইন ব্যাবিওসিয়োসিস, OIE বুলেটিন পশু পালন ও চিকিৎসাবিদ্যা বাই প্রফেসর ডঃ এম এ সামাদ (কপি পোষ্ট)

পাঠ ২।

গবাদিপশুর রক্ত-প্রসাব (কফি রংয়ের) কারন ও প্রতিকারঃ
ব্যাবেসিওসিস বা গবাদিপশুর রক্ত-প্রসাব একটি আটুলিবাহিত বা প্রটোজোয়াজনিত রোগ।
এর আর একটি নাম হলো রেড ওয়াটার ফিভার। কারন এ রোগ হলে রক্তের লোহিত কনিকা (RBC) ভেঙ্গে যাওয়ায় মূত্রের রং লাল হয়।

গরুতে রক্ত শুন্যতা দেখা দেয়। একে টেক্স ফিভারও বলা হয়।

(সাদৃশ্য রোগ- এনাপ্লাজমোসিস, থাইলেরিওসিস, ট্রাইপ্যানোসোমিয়াসিস)

রোগ নির্ণয়ঃ প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় করা সহজ নয় বলে এ রোগে ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি।

বছরের সব সময়ই এ রোগের প্রভাব লক্ষ করা যায় কিন্তু জুলাই-আগষ্ট মাসে এর প্রাদুর্ভাব অধিক হয়।

রোগের কারন (সংক্ষেপে):
১। আঠালী (রক্তচোষাক/বাইটিং ফাই এর মাধ্যমে)
২। একই সিরিঞ্জ অসুস্থ গরু থেকে সুস্থ গরুতে ব্যবহার করলে।

রোগের লক্ষনঃ
সাধারনত ৯ মাস পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয় না বলে জানা গেছে।
১। উচ্চ তাপমাত্রা (১০৩-১০৭ ফা), ক্ষুধামান্দ্য।
২। ঝিমানো ভাব, হাটাচলা করতে না চাওয়া।
৩। পাল থেকে আলাদা থাকার প্রবনতা।
৪। রক্ত প্রসাব, পাতলা পায়খানা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যাওয়া।
৫। গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত হতে পারে।

প্রতিকারঃ
১।আটালি নিয়ন্ত্রন করে রোগের প্রতিরোধ করা যায়। সাধারন বর্ষার শুরু ও শেষে আটুলিনাশক ওষুধ প্রয়োগ করলে ব্যাবিসিওসিস প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রন করা যায়।

২। নতুন কেনা গরু ১/২ সপ্তাহ পৃথক রেখে পর্যবেক্ষন করে পালের অন্য গরুর সাথে রাখা।

৩। একই সিরিঞ্জ বার বার ব্যবহার না করা।

ডা মো আজম শাহ

পাঠ ৩

 

ব্যাবেসিওসিস

অন্য নামঃ পাইরোপ্লাজমোসিস, টিক ফিভার, রেড ওয়াটার ফিভার, টেক্সাস ফিভার, স্প্লিনিক ফিভার ইত্যাদি।
ব্যাবেসিয়া গনভূক্ত আঠালি বাহিত একধরনের প্রোটোজোয়া যারা পোষক দেহের রক্তের ভিতরে অবস্থান করে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করে এবং পশু ও মানুষের দেহে ব্যাবেসিওসিস নামক রোগ সৃষ্টি করে।

আক্রান্ত পশুর জ্বর, রক্তশূন্যতা, চকলেট বর্ণের প্রস্রাব (হিমোগ্লোবিনিউরিয়া) ইত্যাদি এ রোগের বৈশিষ্ট্য।
রোগের লক্ষণঃ

প্রাথমিক পর্যায়ে দেহের তাপমাত্রা (১০৩ ডিঃ ফাঃ থেকে ১০৭ ডিঃ ফাঃ) বৃদ্ধি পায় এবং হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে।
সাধারণভাবে অবসাদ, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, রুমেনের গতি মন্থর, দুধ উৎপাদন হ্রাস ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
এ রোগের জীবাণু রক্তের মধ্যে লোহিত রক্ত কনিকা ভেঙ্গে দেয়।

ফলে আক্রান্ত পশু রক্তশূন্যতা রোগে আক্রান্ত হয় বলে চোখের নীচে কনজাঙ্কটিভা ফ্যাকাশে দেখায়।
রক্তে অধিক লোহিত কনিকা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে হিমোগ্লোবিন মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে (হিমোগ্লোবিনিউরিয়া) ফলে মূত্রের বর্ণ দুধ ছাড়া চা বা কফির মতো দেখায়।
এনিমিয়া পরবর্তী পর্যায়ে জন্ডিস দেখা দেয় এবং এসময় চোখ হলুদ বর্ণের দেখায়।
রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আক্রান্ত পশুর ৪-৮ দিনের মধ্যে মৃত্যু ঘটে।
প্রতিরোধঃ

ভেটেরিনারি চিকিৎসকের পরামর্শে নিন্মলিখিত ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা যেতে পারেঃ-

কুইনিউরোনিয়াম ডেরিভেটিভস যেমন Acaprin দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ মি. লি. হিসাবে চামড়ার নীচে ইনজেকশন দিতে হবে। এই ঔষধ সকাল বিকাল দুই ভাগ করে দেওয়া ভাল।
অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশন চামাড়ার নীচে ২-৫ মি.লি. ইনজেকশন দিতে হয় অথবা অ্যাট্রপিন সালফেট বড় পশুর জন্য ৫-১০ মি. লি. ও ছোট পশুর জন্য ২-৫ মি. লি. মাংস পেশীতে ইনজেকশন দিতে হয়।
সুনির্দিষ্ট ঔষধ না পেলে ৮-১৬ গ্রাম এলাম বা ফিটকিরি এবং ৮-১৬ গ্রাম বোরিক এসিড ২৫০ মি. লি. পানির সাথে মিশিয়ে দিনে ৩ বার খাওয়াতে হবে।
সহায়ক চিকিৎসাঃ
কপার সালফেট-২ গ্রাম
ফেরাস সালফেট-২ গ্রাম
কোবাল্ট ক্লোরাইড-১০ মি. গ্রা.
পানিতে মিশিয়ে প্রত্যহ ১ বার করে ১০ দিন খাওয়াতে হবে

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বাছুরের ডায়রিয়ার কারণ

Couses of diarrhea in neonatal rumenants ?Bacterial: ?Escherichia coli ?Salmonella spp. ?Campylobacter fecalis ?Campylobacter coli …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »