ডাঃ শফিকুর রহমান শশী স্যারের মতে একটি খামারে ৯০% ব্যয় হওয়া উচিত খামার ব্যবস্থাপনায়,৫% চিকিৎসায় আর ৫% কৃত্রিম প্রজনন বাবদ।
অর্থাৎ খামার ব্যবস্থাপনা হচ্ছে একটি বিশাল কর্মযগ্য যা,দুই একটা পোস্ট কিংবা এক দুই দিনের প্রশিক্ষণে জানানো সম্ভব না। তারপরও এডমিন ভাইয়ের আহবানে সাড়া দিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করলাম,এতে যদি কেউ বিন্দু মাত্র উপকৃত হন তাতেই আমার সন্তুষ্টি আর ভুল ক্রুটি অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
একটি ফার্মে লাভ-লোকসানের পুরোটাই নির্ভর করে খামার ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উপর। খামার ব্যবস্থাপনা যত বেশি দক্ষ হবে খামারে লাভের পরিমাণ ততো বেশি হবে। খামার ব্যবস্থাপনার মূল ৪টি বিষয় হলো যথা :
১। গাভীর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামদায়ক বাসস্থান নিশ্চিত করা।
২। ডিজিস কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট বা রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।
৩। সঠিক মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার ও অবারিত বিশুদ্ধ পানি পানের ব্যবস্থা করা।
৪। খামারের আয়-ব্যয়সহ সকল ধরনের রেকর্ড সংরক্ষণ করা।
প্রিয় খামারী ভাইয়েরা
আজ আমি আলোচনা করব খামার ব্যবস্থাপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফিড ম্যানেজমেন্ট বা খাবার ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আমরা সাধারনত গাভিকে অনুমানের উপর ভিত্তি করে খাবার দিয়ে থাকি, এতে করে গাভীর প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হয়না তেমনি, কাঙ্খিত উৎপাদনও পাওয়া যায়না। এজন্য বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে গাভীর দৈহিক ওজন ও দুধ উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে ক্রুড প্রোটিন ও মেগাজুল হিসাব করে গাভীর জন্য প্রয়োজনীয় খাবার নির্ধারন করা হচ্ছে।
প্রিয় খামারী ভাইয়েরা আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে এই পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো :
আসুন সূত্রের মাধ্যমে বিষয়টিকে সহজভাবে বুঝার চেষ্টা করি।
সূত্র- ১ : গাভীর বডি মেইন্টেনেন্স এর জন্য প্রতি ১০০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ক্রুড প্রোটিন প্রয়োজন ১০০ গ্রাম এবং ১০ মেগাজুল খাদ্য শক্তির প্রয়োজন।
সূত্র-২ : প্রতি লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য ক্রুড প্রোটিন প্রয়োজন ১০০ গ্রাম এবং খাদ্য শক্তির প্রয়োজন ৫ মেগাজুল।
সূত্র-৩ : প্রতি কেজি কাঁচা ঘাসের ড্রাইম্যাটারে প্রোটিন থাকে ভুট্টাতে প্রায় ২৬ গ্রাম এবং নেপিয়ার ও অন্যান্য ঘাসে প্রোটিন থাকে প্রায় ১৪ গ্রাম।
সূত্র-৪ : প্রতি কেজি কাঁচা ঘাসের ড্রাইম্যাটারে খাদ্য শক্তি থাকে ২ মেগাজুল।
সূত্র-৫ : প্রতি কেজি সুষম দানাদার খাদ্যে প্রোটিন থাকে প্রায় ১৭০ গ্রাম এবং খাদ্য শক্তি থাকে প্রায় ১০ মেগাজুল।
ধরাযাক,
একটি গাভীর দৈহিক ওজন ৩৫০ কেজি এবং প্রতিদিন দুধ দেয় ১৮ লিটার। গাভীটিকে প্রতিদিন কত কেজি কাঁচা ঘাস এবং কত কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
সূত্রমতে : ৩৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন ৩৫০ গ্রাম এবং খাদ্য শক্তির প্রয়োজন ৩৫ মেগাজুল। ১৮ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য প্রোটিন প্রয়োজন ১৮ * ১০০ = ১৮০০ গ্রাম এবং খাদ্য শক্তির প্রয়োজন ১৮ * ৫ = ৯০ মেগাজুল।
অর্থাৎ উক্ত গাভীর দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা
দৈহিক ওজনের জন্য ৩৫০ গ্রাম, দুধ উৎপাদনের জন্য ১৮০০ গ্রাম, মোট ২১৫০ গ্রাম।
খামার বিশেষজ্ঞ ও পুষ্টি বিজ্ঞানী ডাঃ মোঃ শফিকুর রহমান শশী স্যারের মতে গাভীর জন্য প্রয়োজনীয় উক্ত প্রোটিন ও খাদ্য শক্তির বেশির ভাগই কাঁচা ঘাস থেকে পূরণ করা উচিত। এক্ষেত্রে আমরা উক্ত প্রোটিনের ৬০% কাঁচা ঘাস থেকে ৪০% দানাদার খাদ্যের মাধ্যমে দিতে পারি।
উল্লেখিত গাভীটির মোট প্রোটিনের দরকার ২১৫০ গ্রাম।
২১৫০/১০০*৬০ =১২৯০ গ্রাম (কাঁচা ঘাস থেকে)।
২১৫০ / ১০০ * ৪০ = ৮৬০ গ্রাম (দানাদার খাদ্য থেকে)।
অর্থাৎ ১২৯০ গ্রাম প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে কাঁচা ঘাস দিয়ে এবং ৮৬০ গ্রাম প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে হবে দানাদার খাদ্য দিয়ে।
সূত্র মতে প্রতি কেজি ভূট্টা ঘাসে প্রোটিন আছে প্রায় ২৬ গ্রাম। সুতরাং উক্ত গাভীকে প্রতিদিন কাঁচা ঘাস দিতে হবে ১২৯০/২৬ = ৫০ কেজি এবং দানাদার খাদ্য দিতে হবে ৮৬০ / ১৭০ = ৫ কেজি।
বি:দ্র: যেসব খামারে কাঁচা ঘাসের স্বল্পতা আছে তারা কাঁচা ঘাস কম দিয়ে দানাদার খাদ্য বেশি দিতে পারেন, তবে যেসব খামারে কাঁচাঘাস একেবারেই নাই তাদের গরুর খামার না করাই ভালো।
ধন্যবাদ
মোঃ মোকলেছুর রহমান
ডেইরি ডেভেলপমেন্ট অফিসার
রুকুশি ডেইরি লিমিটেড।