Breaking News
কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হবার কারণ
কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হবার কারণ

কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ এবং সমাধানের উপায়

 কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসূ না হওয়ার কারণ।

দ্রুত জাত উন্নয়নে কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির বিকল্প নেই। ভালো জাতের বাছুর পাওয়ার বাসনা থেকেই কৃষক খামারীদের মাঝে কৃত্রিম প্রজনন এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এবং মাঠপর্যায়ে এটা সম্প্রসারিত হয়েছে।

তবে কৃত্রিম প্রজননের ক্ষেত্রে একই বকনা / গাভীকে বার বার প্রজনন করানোর মতো সমস্যাও হয়।

দেখা গেছে কৃত্রিম প্রজননের চেয়ে প্রাকৃতিক প্রজননের ক্ষেত্রে পুনরায় প্রজনন করার হার কম এবং গর্ভধারণের হারও বেশি।

বর্তমানে মাঠপর্যায়ে কৃষক খামারীগণ এক বা দু’বার কৃত্রিম প্রজননে ভালো ফল না পেয়ে প্রাকৃতিক প্রজনন করে সফল হচ্ছেন।

ফলে আমাদের দেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কৃত্রিম প্রজননে অনেক সময় গর্ভধারণের হার কম হওয়ার কারণসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা করা হলো।

প্রধানত ৫ টি কারণে গাভী গর্ভধারণ করে না।

সেগুলো হলঃ

১। বীজের গুণাবলী (Semen quality)ঃ বীজ ভালো না হলে যেমন ক্ষেতে ফসল ভালো হয় না তেমনি বীজ ভালো না হলে বাচ্চা উৎপাদনের হারও তেমন ভালো হয় না।
* মৃত শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* দুর্বল শুক্রাণুযুক্ত বীজ ব্যবহার।
* স্ট্র বা বীজ ভায়ালের মধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা।
* বীজের পরিমাণ কম দেয়া।
* অনুর্বর ষাঁড়ের বীজ ব্যবহার।
* বীজ পরীক্ষা না করে ব্যবহার।
* জীবাণু দ্বারা শুক্রাণু সংক্রামিত হওয়া।
* বীজের গুণগতমান সঠিক না থাকা।
২। সিমেন স্ট্র/ ভায়াল
* ত্রুটিপূর্র্ণভাবে স্ট্র বা ভায়াল পরিবহন।
* ত্রুটিপূর্ণভাবে স্ট্র / ভায়াল সংরক্ষণ
* ক্রটিপূর্ণভাবে সিমেন ক্যান থেকে স্ট্র বের করা।
* সিমেন ক্যানে লিকুইড নাইট্রোজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া।
* সিমেন ক্যানের ঢাকনির সাথে সংলগ্ন­ লাল সিলের ত্রুটি।
* হিমায়িত বীজ ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতিতে গলানো (thawing)।
* তরল বীজ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফ্রিজে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ না থাকা।
৩। প্রজননকারী
* প্রজননকারীর অনভিজ্ঞতা।
* ত্রুটিপূর্ণ ও অদক্ষভাবে প্রজনন করা।
* প্রজনন অঙ্গের ভেতর ভুল স্থানে শুক্রাণু স্থাপন।
* গাভীর ইস্ট্রাস বিষয়ে ভুল ধারণা।
* প্রজননের পর গাভীকে বিশ্রাম না দেয়া।
৪। গাভী
=> গাভী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়া।
=> জননাঙ্গে যে কোনো প্রকারের প্রদাহ থাকা।
=> অনিয়মিত ঋতুচক্র।
=> পুনঃপুনঃ গরম হওয়া ও গরম হওয়ার ভ্রান্ত লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া।
=> হরমোন নিঃসরণের অভাব।
=> হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্যহীনতা।
=> অপ্রকাশিত/নীরব ইস্ট্রাস (গরম হওয়া)।
=> অধিক বয়স।
=> পুষ্টির অভাব।
৫। প্রজননের সময়
=> বকনা / গাভী ডাকে আসার ১২-১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজনন না করা।
=> ত্রুটিপূর্ণ গরমের লক্ষণ চিহ্নিত করা।
=> প্রজনন ব্যবস্থাপনা পালন না করা।
=> সকালে গরম হলে সকালেই প্রজনন করানো।
=> বিকালে গরম হলে ওই দিন বিকালেই প্রজনন করানো।
=> প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময় না মানা।
বর্ণিত ৫টি কারণে বকনা বা গাভী গরম হওয়ার পর প্রজনন করালেও গর্ভধারণে ব্যর্থ হয়।

এছাড়া আরো অনেক কারণ আছে যে কারণে কৃত্রিম প্রজনন ফলপ্রসু হয় না।

তবে বীজের গুণাবলী, সিমেন স্ট্র বা ভায়াল, প্রজননকারী ও গাভীর যেসব ত্রুটির কথা বলা হয়েছে তা যথাযথভাবে সমাধান করা হলে গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।

কারণ হলো-শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর যৌথ মিলনে জাইগোট তৈরি হয় যা হয়ে থাকে স্ত্রী প্রজননতন্ত্রের ফেলোপিয়ন টিউবের ৪টি অংশের একটি নির্দিষ্ট অংশে।

অর্থাৎ জাইগোট তৈরি হয় গাভীর এম্পুলা বা এম্পুলো ইস্তমাস জাংশনে। আর বকনা বা গাভীর ডিম্বাণুক্ষরণ হয় গরম হওয়ার ৮-১০ ঘন্টা পর এবং তা বেঁচে থাকে মাত্র ৮-১২ ঘন্টা।

অপরপক্ষে জরায়ুর পরিবেশ ভালো থাকলে শুক্রাণু ২৪-৪৮ ঘন্টা বেঁচে থাকে।

আবার ফেলোপিয়ান টিউবের নির্দিষ্ট স্থানে ডিম্বাণুর ভেতর প্রবেশ করতে শুক্রাণুর ক্যাপাসিটাইজেশন প্রয়োজন।

ডিম্বাণু ও শুক্রাণু যাতে সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছাতে পারে এ জন্য সঠিক সময়ে প্রজনন করতে হয়।
প্রতিকার
উপরোক্ত সমস্যাসমূহ প্রতিকারে যা করণীয় তা নিম্নে দেয়া হলোঃ
* বীজের গুণাগুণ আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। বীজের ভেতর শুক্রাণুর মটিলিটি, পরিমাণ, সংখ্যা, ইত্যাদি সঠিক হতে হবে।

সে জন্য প্রজননের ষাঁড় বাঁছাই ও ছাটাই পদ্ধতি প্রজনন মানের (Estimated breeding value) ভিত্তিতে করা উচিত।
* বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন এবং যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা এবং এদের মান ঠিক আছে কিনা তা প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করা উচিত।
* তরলীকৃত বীজ পরিবহনে অসুবিধার ক্ষেত্রে তার পরিবর্তে তরল নাইট্রোজেন স্ট্র (Straw) সিমেন পদ্ধতিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
* কৃত্রিম প্রজনন করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রজনন করার পূর্বে বীজের গুণগত মান ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নেয়া প্রয়োজন।
* কৃত্রিম প্রজননে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
* প্রজননক্ষম বকনা বা গাভী হতে হবে সকল রোগ থেকে মুক্ত এবং প্রজননতন্ত্র হতে হবে জীবাণুমুক্ত এবং ত্রুটিমুক্ত।
* হিট বা গরমের সময় সঠিকভাবে নির্ণয় করে ডাক আসার ১২ ঘন্টা পর  এবং ১৮ ঘন্টার মধ্যে প্রজননের ব্যবস্থা করতে হবে।
* কৃত্রিম প্রজনন এবং এর মাধ্যমে গাভীর ঊর্বরতা বৃদ্ধির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক কৃত্রিম প্রজনন সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার জন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগযোগ করা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলা যায়, কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা আমাদের মত দেশে গাভীর জাত উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

তাই তো শহর ও শহরতলী এমনকি গ্রামাঞ্চলে চোখ মেললেই দেখা যায় দেশী গরুর পাশাপাশি সাদা-কালো গায়ে ছাপ অথবা ফিকে লাল রং এর বড় আকারের সংকর জাতের গরু।

আবার কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের ফলেই চোখে পড়ে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফ্রেশ ডেইরীর বড় বড় কুল ভ্যান /লরী। কৃত্রিম প্রজননের কিছুটা সুফল পাওয়ার কারণে ১৬ কোটি লোকের প্রোটিনের ঘাটতি একটু একটু করে কমে আসছে এবং গড়ে উঠেছে ছোট ছোট সংকর জাতের ডেইরী খামার।

এসব খামার গড়ে ওঠার কারণে অনেক লোকের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবার ব্যবস্থা হয়েছে।

যদি সরকার এ খাতে আর একটু নজর দেন তাহলে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার দুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না।

দুধ ও মাংসের চাহিদা মেটাতে পারলে জাতি মেধাসম্পন্ন হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে এবং উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
সংগৃহীত

এ আই করার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ

আপনার খামারের গাভিকে বিজ দেয়ার আগে অবশ্যই তাদের বডি কন্ডিশন স্কোর ঠিক করে নিতে হবে। তাই এ বিষয়ে সাধারন কিছু আলোচনা করা হলোঃ

বকনা গরুর ক্ষেত্রে
** প্রথমত, কৃমিনাশক (যেমন Endex,) তারপর ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট আর মিনারেল দিয়ে প্রপার weight gain করতে হবে।

** গর্ভাবস্থা ব্যতীত অন্য সময়ে মিনিমাম ক্ষুরা রোগ ও এন্থ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।বীজ দেওয়ার আগে মিনিমাম ১৮০-২০০ কেজি হলে ভাল।তাছাড়া, Vitamin ADE inj. 10ml+ মেগাভিট DB জাতীয় মালটিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ৩ চা চামচ, লিভার টনিক যেমন হেপামিন ফোর্ট আধা কাপ করে প্রতি গরুতে দিতে হবে।

** পর্যাপ্ত পানি আর খাদ্য দিতে হবে। ২১ দিন পর পর বকনা গরম হবে। প্রথম হিট মিস করাতে হবে।

** গরম হওয়ার ১২ঘন্টা পর কিন্তু ১৮ ঘন্টার মধ্যে AI/­প্রাকৃতিক প্রজনন করাতে হবে।

** সন্ধ্যার(৬টা) সময় গরম হলে পরের দিন সকালে(৬টা) একবার আবার এর ৬ ঘণ্টা পর দ্বিতীয়বার বীজ স্থাপন করলে সুফল পাওয়া যায় বেশি।

** গাভী বাচ্চা দেয়ার ৬০ দিনের আগে প্রজনন করানো ঠিক না, বাচ্চা প্রসবের পরবর্তী ৪০-৪৫ দিনে তার প্রজনন তন্ত্রকে সাভাবিক হওয়ার সময় দিতে হবে অর্থাৎ ২ টা হিট মিস করাতে হবে।

** প্রসবের ৬৩-৬৫ দিন পর গরম হলে তখন থেকে বীজ দেওয়া যাবে। এভাবে পুরা সাইকেল রিপিট হবে।

নিচের লেখাটা ডা রবিউল আলম ফিরোজ স্যারের

রিপিট ব্রিডিং

।আমার ধারনা মানুস বেশী আমিষ খায় তাই তার এসিডিটি বেশী, গরু ফাইবার জাতীয় খাদ্য বেশী খায় আর আমিষ জাতীয খাদ্য কম খায়,তাই তাদের এসিডিটি কম।কিন্তু ইদানিং দেখছি গরু ঘাস পাই না, আমিষ বেশী খেয়ে বেচে আছে তাই তাদের এসিডিটি বেশী হচ্ছে। যে গরু বার বার পাল মিস করে তাদের যে সমস্ত কর্মীরা পাল দেন,তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, এই গরু পাল দেবার সময় যখন রেকটাম দিয়ে মেসেজ করেন তখন দেখেন স্বচছ মিউকাস সুতার মত ঝুলে পড়ছে,অর্থাৎ কোন সমস্যা নেই,তাহলে কেন পাল রাখেনা। একটু খেয়াল করেন ঐ সময় হঠাৎ করে আধা লিটার পরিমান পানির মত কি যেন পড়ে মাটিতে মিশে যায়। আমরা ধারনা এটাই এসিড জরায়ুর ভিতর জমা হয়েছিল,যাহা অতিরিক্ত আমিষ খাওয়া গরুতে জমে, ফলে জরায়ুতে সিমেন দেবার পর শুক্রানু মারা যায়,ফলে গর্ভধারন করে না,আপনি সোডি বাই কার্ব ওয়াশ দিয়ে পাল দিবেন, কিছুক্ষন পর উপর থেকে পানিটা বের হয়ে যাবে, সোডি বাই কার্ব তলানী হিসেবে পড়ে থাকবে এই অবস্হায় পাল দিলে সোডি বাই কার্বের স্পর্শ শুক্রানু গায়ে লাগলে জোক যেমন লবনে গলে যায়,শুক্রানুও অমন গলে যেতে পারে।তাই২০-৩০সি সি পানিতে এস পি ভেট ২.৫গ্রাম গুলায়ে জরায়ুতে ঢুকায়ে দিয়ে আধা ঘন্টা পর পাল দেন।প্রয়োজন হলে ৮ঘন্টা পর একই প্রক্রিয়ায পাল দেন,যদি ওভুলেশন হতে দেরী হয়,এই জন্য ৮ ঘন্টা পর দ্বিতীয় বার পাল দেবেন,এস পি দেবার উদ্দেশ্য অনেক সময় সাব -ক্লিনিক্যাল ফর্মে ইনফেকশন থাকতে পারে,যার লক্ষন প্রকাশ পায়না, পানি দেবার উদ্দেশ্য এসিডিটি থাকলে তা পাতলা হয়ে যাবে ফলে শুক্রানু মারা যাবেনা গরু পাল রাখবে, শতকারা ৮০ভাগ রিপিট সল্ভ হবে এটা আমি পেয়েছি,এখন যাচাই করে আমারে জানান,মানুসের উপকার হোক।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট

#ডেইরি_ব্রীড_টেস্টিং_রিসার্চ_প্রজেক্ট দেশে ডেইরি শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ডেইরি ব্রীড টেস্টিং রিসার্চ প্রজেক্টের মাঠ পর্যায়ের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »