Breaking News

করোনা পরবর্তী পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির পরিধি ছোট হয়ে আসবে কর্ম হারাবে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষঃ-

করোনা পরবর্তী পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির পরিধি ছোট হয়ে আসবে
কর্ম হারাবে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষঃ-

এমনিতেই গত দুই বছর বাংলাদেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি ধুকতে ধুকতে কোন রকমে অস্ত্বিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। বাংলাদেশে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির পরেই বৃহৎ আকারে প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথিকৃৎ হিসাবে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি আশার আলো জাগিয়েছে। পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির তে ভর করে বৃদ্ধি পেয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ।

এ দেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি গত দুই যুগে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছে প্রায় কোটি মানুষের। গুটি কয় আইটেমের পোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল সামান্য হারে দেশে উৎপাদন হলেও পোল্ট্রির জন্য দরকারি ভ্যাক্সিন, মেডিসিন ভিটামিন এবং খাদ্যের কাঁচামাল সবই আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পন্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে দেশে পোল্ট্রি পন্যের উৎপাদন খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে- কিন্তু সে হারে বাড়েনি লাইভ ব্রয়লার,ডিম বা মুরগির দাম বরং গত কয়েক মাসে অনেক কমেছে।

গত সাত আট মাস ব্রয়লারের বিক্রিত দাম প্রতি কেজি উৎপাদনের দাম থেকে অনেক কম অন্যদিকে বর্তমানে অনেক রোগ ব্যাধির চ্যালেঞ্জের কারনে প্রান্তিক খামারিদের অবস্থা বড়ই করুন।
দায় দেনায় জর্জরিত- পুঁজি খুইয়ে পথে বসছে দেশের হাজার হাজার খামারী। স্থবির হয়ে আসছে এই পেশার প্রান চাঞ্চল্য- শুধু প্রান্তিক খামারী নয় ফিড এবং বাচ্চা উৎপাদনকারী অনেক ছোট এবং মাঝারি উদ্যোতা লোকসান দিয়ে ইতিমধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। এই শিল্পে অর্থের প্রবাহ দিনে দিনে কমে আসছে- ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর এই পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এদেশের প্রান্তিক খামার গড়ে উঠেছে ডিলার নির্ভর একটা সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে, কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের কারনে ডিলারের বিনিয়োগকৃত টাকা মাঠ পর্যায় থেকে ফেরত আসছে না, ডিলার আবার নগদে বাকিতে উৎপাদনকারীদের সাথে লেনদেন করে।
এই সিস্টেমে এখন অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে- ডিলারের কাছ থেকে টাকা নিয়মিত ফিড মিলার এবং হ্যাচারি ও মেডিসিন ভিটামিন সাপ্লাইকারীর নিকট না আসাতে হয় তারা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে নয়তো বাকি দেওয়া সীমিত করে এনেছে।
বড় বড় উৎপাদনকারীদের ব্যাংক লোন পাওয়া অনেক টাই সহজ হলেও প্রান্তিক খামারিদের ভরসা ডিলারেরাই, কিন্তু এই প্রথা এখন সংকটে- ফলে প্রান্তিক খামারী নতুন করে বাচ্চা তুলে খামার পরিচালনা করতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে খামার সচল রেখেই বা লাভ কি? উৎপাদিত পন্যের উপযুক্ত লাভ জনক দাম না পাওয়ার কারনে দিনে দিনে দায় দেনা বাড়ছে, অনেকেই ভিটে মাটি বিক্রি করে দায় দেনা পরিশোধ করে নাকে খৎ দিয়ে এই ব্যবসায় খ্যান্ত দিচ্ছেন।
আর বর্তমানে করোনার প্রভাবে ডিম মুরগী বিক্রি বলতে গেলে শুন্যের কোঠায়- খামারীরা বর্তমানে মুরগী কে খাওয়ানোর জন্য খাদ্য পাচ্ছেন না,ওষধ নেই হাতের কাছে, হ্যাচারি গুলো বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে কি করবে এই অবিক্রীত বাচ্চা নিয়ে।
পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির পুঁজি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, এই খাতে টাকার প্রবাহ দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, বেকার – মানুষের কাফেলা দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।
এমনিতে করোনার প্রভাবে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা কোন জাগায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন, এমন পরিস্থিতিতে যদি পোল্ট্রি শিল্পের সাথে যুক্ত প্রায় এক কোটি লোকের অর্ধেক লোক কর্ম হারায়, কি ভাবে সামলাবে দেশ।

বাংলাদেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি তে প্রান্তিক খামারীরা হল গিনিপিগ- দায়, লোকসান সব তাঁদের, বড় উৎপাদনকারী বড় ঝুঁকি নিতে পারেন, প্রান্তিক চিরকালই প্রান্ত জনা,যদি বলি “দিনে মাছি রাতে মশা এই যাতনা নিয়ে তাঁদের বাঁচা আর মরা” রোগব্যাধির ঝুঁকি,ক্রয় বিক্রয়ে প্রান্তিক খামারিদের নিজের প্রভাব খাটানোর কোন ক্ষমতা না থাকা, সকল ঝুঁকি এড়িয়ে মুরগী বা ডিম যা বিক্রি করতে যাক সেখানে আরেক মাফিয়া, বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওরাই নিয়ন্ত্রণ করে।

এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন একটা বাজার ব্যবস্থায় পোল্ট্রির মত সংবেদনশীল উৎপাদন সিস্টেম দীর্ঘ মেয়াদে টিকে থেকে লাভজনক ভাবে চলতে পারে না, ঝুঁকি থেকেই যায়, যেমন রোগবালাই, বাচ্চা খাদ্যের দাম, উৎপাদিত ডিম বা ব্রয়লারের দাম কোনটা নিয়েই পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন।

এই শিল্পের ফাইনাল প্রোডাক্ট ডিম বা ব্রয়লার উৎপাদনের দিনেই বিক্রি করা নিয়ম- বর্তমানে করোনার প্রভাব পোল্ট্রি শিল্পে অন্যান্ন শিল্পের থেকে আগে আগে এবং প্রকটভাবে পড়েছে- খামারী ব্রয়লার এবং ডিম বিক্রি করতে পারছে না, খাদ্য পরিবহনের অপ্রতুলতার জন্য খামারে ফিড আসছে না, আমদানি করা পোল্ট্রি খাদ্য উপাদান পোর্ট থেকে সময় মত ছাড় করা যাচ্ছে না, এ অবস্থা চলতে থাকলে খামারী খাদ্য যেমন ঠিক মত পাবে না তেমনি অনেক উচ্চ মূল্যে কিনতে হবে, ইতিমধ্যে অনেক দরকারি ফিড এডিটিভসের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে, কোন কোনটির দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
সারা পৃথিবী লক ডাউনের কবলে, বিদেশ থেকে সহজে এবং স্বল্প সময়ে প্রোল্ট্রি ফিডের কাঁচামাল যে আসবে অবস্থাদৃষ্টে তা মনে হয় না। সামনে এ দেশের পোল্ট্রি শিল্পের জন্য আরো ভয়াবহ অবস্থা আসন্ন।

করোনার এই প্রভাব কাটিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনা একক কোন পক্ষের জন্য অনেক কঠিন। সরকার কে উদ্যোগ নিতে হবে সবার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়,অধিদপ্তর এবং পোল্ট্রির ক্রিয়াশীল সকল জাতীয় ও জেলা ভিত্তিক সংগঠন গুলোকে নিয়ে করোনা পরবর্তী ঢাকায় একটি কনভেনশন এর উদ্যোগ নিতে হবে, সেই কনভেনশন এ সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে তাঁদের নিকট পোল্ট্রি শিল্পের করুন দশা তুলে ধরতে হবে।

পোল্ট্রি শিল্পের নানান স্তরে যুক্ত মানুষেরা শুধু নিজেদের জন্য কাজ করে না, দেশের জন্য দেশের জনগনের জন্যও নিরলস কাজ করে যায় যদিও ঝুঁকিটা পুরোপুরি নিজেদের কাঁধে নিয়ে।
এই শিল্প একদিকে যেমন লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করেছে অন্যদিকে দেশের মানুষের জন্য স্বল্প মূল্যের ডিম এবং পোল্ট্রি মাংসের উন্নত মানের প্রোটিনের নিরবিচ্ছিন্ন যোগান দিয়ে দেশে মেধাবী এবং সুস্থ সবল প্রজন্ম সৃষ্টি তে অবদান রেখে যাচ্ছে,অথচ নিজেরা দিনে দিনে নিঃসহ হচ্ছে।

সরকারের কাছে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান তুলে ধরতে আমাদের পোল্ট্রি শিল্পের নেতারা বিগত বছরগুলোতে বারে বারে ব্যর্থ হয়েছেন, এখন আর নিশ্চুপ থাকলে চলবে না সামনে সংকট আরো চরম আকার ধারন করবে, যদি এবারো আমরা ব্যর্থ হই তাহলে ঘাপটি মেরে থাকা কায়েমি স্বার্থবাদী মহল সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং তাদের জন্য সামনে ডিম এবং প্রসেস ব্রয়লার আমদানি সহজ হয়ে যাবে।
বিষয় টা খোলাসা করে বলতে গেলে এভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যায় ,পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি এখন যে ভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে টিকে থাকতে উৎপাদন কমাতে হবে, অনেকে পুঁজি খুইয়ে ব্যবসা বন্ধ করবে, কিন্তু সব শেষ হলে এক সময় না এক সময় ঘাটতি দেখা দিবে তখন আর বিদেশ থেকে ডিম এবং মাংস আমদানি কোন ভাবে ঠেকানো যাবে না, মাংস এবং ডিমের সরবরাহ থেকে চাহিদা বেশি থাকবে, তারা সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হবে দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি ছাড়া বিকল্প নেই।

সামনের দিনে অবস্থা যাই থাকুক যতক্ষন পর্যন্ত পুঁজি নিঃশেষ না হয়ে যায় খামার চালু রাখতে হয়, না হলে ব্যাংক কিস্তি আর সুদের জন্য চেপে ধরবে, মহাজন রক্তচক্ষু নিয়ে দরজায় হামলে পড়বে, ডিলার বার বার তাগিদ দিবে।

জ্বালা মহা জ্বালা- কেউ সুখে নেই, হয়তো কেউ কেউ সুখের ভান করে, গত দু বছরে বাংলাদেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে, বড় থেকে ছোট সবার ভান্ডার শুন্য। তাহলে চলছে কি করে?

পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির এত বড় দক্ষযজ্ঞ কারবার , ১৬০ টা বড় আর মাঝারি ফিড মিল যাঁরা বছরে গড়ে ৩৯ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করে, ১৪৫ টা মাঝারি বড় হ্যাচারি- চলে না ঠেলে ঠুলে চালাতে হয়, এক জন আরেক জন কে ঠেকিয়ে – সাপ্লাইয়ার কে ঠেকায় ফিড মিল আর হ্যাচারী ওয়ালা, সাপ্লাইয়ার ঠেকায় ব্যংক কে, ডিলার ঠেকায় ফিড মিল আর হ্যাচারী ওয়ালাকে, খামারী ঠেকায় ডিলার কে আর দিন শেষে ফাইনালী খামারী ঠেকে যায় আড়তদার, ফড়িয়া, দাদন ব্যবসায়ী আর ডিম মুরগি ক্রয়ের সিন্ডিকেটের কাছে।লাভ যা হয় খামারীর পরে যারা আছে তাদের, তাদের যেমন কিনা তেমন বেচা, লাভ তাদের হয়ই। পোল্ট্রি শিল্পের উপর থেকে নীচে যাঁরাই আছে উপর থেকে নীচে উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে যাঁরা তারা কেউ লাভের মুখ দেখে না- যাঁর চালুনি যত বড় তাঁর ছিদ্র তত বেশি, এখন যা চলে তা হল নেড়েচেড়ে কোন রকমে ঠাটবাট ঠিক রাখা।

কতদিন ঠিক থাকবেন?

গুজব কিন্তু আমাদের পিছু ছাড়ে না, একটু গুছিয়ে আসতে লাগলেই ঠিক ঠিক কোন আজাব এসে পড়ে ,প্লাস্টিকের ডিম, অনিরাপদ মুরগী আর এখন করোনা গুজব, এখানে শেষ হলে খুশি হতাম, হবে না কিছু না কিছু এসে তক্কে তক্কে হাজির হবেই।

তাহলে উপায় কি এই সর্বগ্রাসী পতনের হাত থেকে লক্ষ লক্ক মানুষের পেশাকে সুরক্ষিত করার, পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের এই শিল্পকে সুরক্ষিত করে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে স্বল্প মূল্যের প্রোটিনের যোগান দেওয়ার?

পথ নিশ্চয় খোলা আছে- তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে বড় উৎপাদনকারীদের, পোল্ট্রির সকল ক্রিয়াশীল সংগঠন গুলোকে, প্রান্তিক খামারিদের জন্য সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে হবে, মাফিয়া সিন্ডিকেট এড়িয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায়, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের সহায়তায় নানামুখী উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
ভাবতে পারেন আমি তো নিজেই এখন লক্ষ লক্ষ ব্রয়লার আর লেয়ার পালন করি, করেন সমস্যা নাই,ব্যবসা আপনি নানা ভাবে করতেই পারেন কিন্তু ডিলারের মাধ্যমে যদি বাচ্চা খাদ্য বেচতে যান তাহলে নীচের দিকের যে মানুষগুলো আছে তাদের নিয়ে আপনি ভাবতে বাধ্য।

কারন তাঁরা সুখে নাই – তাঁরা হারিয়ে গেলে আপনার বাচ্চা খাদ্য ক্রয় করার লোকও কমে যাবে, গত এক বছরে সপ্তাহে ১ কোট ৮০ লক্ষ বাচ্চা উৎপাদন কমতে কমতে বর্তমানে সপ্তাহে ১ কোটি ৩০ থেকে ১ কোটি ৪০ লক্ষ বাচ্চা উৎপাদন করেও বাচ্চা বিক্রি করার জন্য খামারী পাওয়া যাচ্ছে না, ন্যাড়া বেল তলায় একবার যায় আমাদের প্রান্তিক খামারীরা বেল তলায় বার বার গিয়ে ঘাড়ে ন্যাড়া মাথাটাও নাই- আছে ঘাড় সহ দেহ টা।

বুঝতেছেন সবাই কিন্তু স্বীয় স্বার্থে নেতাগিরি করেন, কেউ শিল্পের সার্বজনীন চিন্তা করছেন না- আর কত ভুল করবেন আপনারা ,ভাবছেন ছোটরা সব চলে গেলে আপনারা খাদ্য বাচ্চা ব্রয়লার লেয়ার সব নিজেরাই উৎপাদন করবেন- সে স্বপ্নও পূরন হবে না- লাভ দেখলে আপনাদের থেকে আরো বেশি পুঁজি ওয়ালারা এখানে বিনিয়োগ করবে।

প্রতিযোগিতা আরো কঠিন হবে- স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে যাবে- তার থেকে পোল্ট্রি শিপ্লের বর্তমান সিস্টেমটা আরো উন্নত করুন- মিলে মিশে সবাই লাভ করুন টিকে থাকুন।

গত ২৯ মার্চ ২০২০ ইং তারিখে বিপি আই সি সি’র তথ্যমতে করোন ভাইরাসের দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবে বাংলাদেশের মোট লোকশান দাঁডিয়েছে ১২৭৫ কোটি টাকা, এই তথ্যের বাইরে প্রকৃতি লোকসানের পরিমান আরো কয়েকগুন বেশি হবে।

দিন যত গড়াবে করোনার প্রভাব দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো নাজুক করে তুলবে, মানুষ এখন পুরোপুরি ঘর বন্দি,নিন্ম আয়ের মানুষদের রুজি রোজগার পুরোপুরি বন্ধ, মধ্যবিত্ত শ্রেনীর অবস্থাও আরো খারাপের দিকে যাবে।
পোল্ট্রির বাজার কবে পুরোপুরি ঠিক হবে বলা মুশকিল।

পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির এমন পরিস্থিতিতে সরকার কে এগিয়ে আসতে হবে, আমাদের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির সংগঠনগুলো কে আরো সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে, পত্র পত্রিকা আর টেলিভিশন টক শো তে সীমাবদ্ধ না থেকে করোনা উত্তর পরিস্থিতিতে সারাদেশের পোল্ট্রির সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে একটি শ্বেতপত্র তৈরি করতে হবে।
সকরকারের সাথে এ নিয়ে যথাযত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশের পোল্ট্রির প্রকৃত অবস্থা এবং সরকারী বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে কি ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তার একটি প্রস্তাব তুলে ধরা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।

পোল্ট্রি শিল্প যদি মুখ থুবড়ে পড়ে দেশ ভয়বহ প্রোটিন এবং পুষ্টি সংকটের মধ্যে পড়বে, মাছ মাংস ডিম দুধ ইত্যাদির দাম সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

প্রান্তিক খামারিদের পক্ষে নিজের সামর্থের মধ্যে নতুন করে বিনিয়োগ করে পোল্ট্রি পালন করা একেবারেই অসম্ভব একটা বিষয় হবে। ডিলারের কাছে থেকে বাকিতে ক্রয় করা যাবে না কারন ডিলারেরা আর বাকি দেওয়ার সামর্থ থাকবে না।

এমন এক অনাগত পরিস্থিতিতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির নতুন প্রান সঞ্চার করার জন্য, খামারীর বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করতে হবে, প্রতি হাজার মুরগী পালন করার জন্য নগদ হিসাবে
এককালীন নগদ অর্থে ভর্তুকি বা প্রনোদনা দিতে হবে, বড় বড় বাচ্চা খাদ্য উৎপাদনকারীদের যার যার ডিলারের মাধ্যমে খামারী কল্যান মুখী উদ্যোগ নিতে হবে- কারন প্রান্তিক খামারীরাই আপনাদের লাভ এবং অর্থের যোগান দাতা।

পোল্ট্রির সকল সংগঠন কে নিজেদের মধ্যে নানা ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে এসে ঐক্য বদ্ধ হতে হবে, সরকারের কাছে নিজেদের সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা পরিস্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে।

পোল্ট্রি সেক্টর আগামী দিনে জিডিপি তে কি পরিমান অবদান রাখতে পারে, নেট কি পরিমান কর্ম সৃজন করতে পারে, পোল্ট্রি পন্য বিদেশে যে রপ্তানি করার মত বর্তমানে বাংলাদেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রির সক্ষমতা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে তা সরকারের নজরে আনতে হবে।

সব কিছু ছাপিয়ে পোল্ট্রির বর্তমান সর্বগ্রাসী সংকট এবং করোনার প্রভাবে আগামী দিনে যে মহা দূর্যোগের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে তা একদিকে যেমন ইন্ডাস্ট্রির নেতাদের বুঝতে হবে কি ধরনের কর্মসূচি নিলে ইন্ডাস্ট্রির পতন ঠেকানো যাবে এবং এই পেশায় প্রকৃত গতিশীলতা আনা যাবে।

সবশেষে আমাদের ঐক্য বদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই, নিজেদের স্বার্থে প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে হবে- তার জন্য এখন থেকেই কার্য্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে সকলের সম্মিলিত প্রচেস্টায়।

লেখক
অঞ্জন মজুমদার
সমন্বয়ক
পোল্ট্রিপ্রফেশনাল’স বাংলাদেশ (পিপিবি)
anjan21@hotmail.com
CEO. Bangladesh family poultry Development Services. Dhaka. Bangladesh

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রি খামারীদের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানব বন্ধনঃ

খাবারের ও বাচ্চার দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে লাখ লাখ তরুণ পোল্ট্রি খামারী সহ ৬০লাখ লোক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »