এনিম্যাল ব্রিডিং এর অদোপ্যান্ত
ডেইরি ফার্মিং এর জন্য এনিম্যাল ব্রিডিং সম্পর্কে জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি আপনার গাভীটিকে সবচেয়ে ভাল ফিডিং সিস্টেমে রেখে বা সবচেয়ে ভাল ম্যানেজমেন্টে রেখেও সর্বোচ্চ আউটপুট নাও পেতে পারেন যদি না গাভীটির জেনেটিক পারফর্মেন্স ভাল না থাকে। আপনার ফার্মের গরুগুলোর জেনেটিক মেরিট উন্নত করার জন্য আপনাকে অবশ্যই এনিম্যাল ব্রিডিং এর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এইজন্য প্রতিটি খামারীর উচিত এনিম্যাল ব্রিডিং এন্ড জেনেটিক্স সম্পর্কে অল্পবিস্তর পড়াশুনা থাকা উচিত। আমি এই লেখাতে এনিম্যাল ব্রিডিং সম্পর্কে সহজ ভাষায় বেসিক কিছু লেখার চেষ্টা করেছি যাতে সবাই এই বিষয়ে একটা ধারনা পেতে পারেন।
এনিম্যাল ব্রিডিং এর সংজ্ঞাটা এইজন্য জানা প্রয়োজন। সহজ ভাষায় এনিম্যাল ব্রিডিং হচ্ছে এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে আপনি আপনার পছন্দের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভাল পিতা-মাতা নির্বাচন করে এদের মাঝে মেটিং করাবেন যার ফলে উন্নতমানের প্রজেনীর তৈরি হবে। অর্থাৎ আপনার প্রধান লক্ষ্য হবে ভবিষ্যত প্রজন্মটা যাতে ভাল মানের হয়।
ব্রিডিং (Breeding) এবং মেটিং (Mating) শব্দ দুটোর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। মেটিং বলতে শুধু দুটো বিপরীত লিংগের প্রাণীর মাঝে মিলনকে বুঝানো হয় আর ব্রিডিং বলতে পুরো প্রক্রিয়াটা বুঝায় যেখানে প্রাণি নির্বাচন, মেটিং, প্রজেনী নির্বাচন ইত্যাদিকে বুঝানো হয়।
এনিম্যাল ব্রিডিং এর প্রকারভেদঃ
মূলত দুইভাগে ভাগ করা হয়।
১) ইন ব্রিডিং- রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কারো মাঝে যখন ব্রিডিং করানো হয়।
২) আউট ব্রিডিং – রক্তের সম্পর্ক নাই এমন কারো মাঝে যখন ব্রিডিং করানো হয়।
ইন ব্রিডিং কে আবার নিম্নোক্ত ভাবে ভাগ করা হয়ঃ
ক) ক্লোজ ব্রিডিং- যেখানে ভাই-বোন, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলের মাঝে মেটিং করানো হয়।
খ) লাইন ব্রিডিং- যেখানে দূরসম্পর্কের কারো সাথে মেটিং করানো হয়।যেমন চাচাতো ভাইবোন বা একটু দূর সম্পর্কের কারো সাথে মেটিং করানো হয়।
আউট-ব্রিডিং কে আবার নিম্নোক্ত ভাবে ভাগ করা হয়ঃ
ক) আউট-ক্রসিং- কোন রকম রক্তের সম্পর্ক নাই এমন প্রাণীদের মাঝে যখন মেটিং করানো হয় তখন তাকে আউটক্রসিং বলা হয়। যেমন হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের দুইটা প্রাণীর মেটিং যাদের মাঝে রক্তের কোন সম্পর্ক নাই।
খ) ক্রস-ব্রিডিংঃ যখন দুইটা ভিন্ন জাতের প্রাণীর মাঝে মেটিং করানো হয়। যেমন হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান এবং শাহীওয়াল জাতের কোন প্রাণীর মাঝে মেটিং।
গ) আপ-গ্রেডিং /গ্রেডিং আপ বা টপক্রসিং- মূলত এই সিস্টেমে পিওর ব্রিড তৈরি করা হয়। একটা জাতকে ধীরে ধীরে উন্নত মানের জাতের দ্বারা মেটিং করিয়ে উন্নত জাতের পার্সেন্টেজ বাড়ানো অর্থাৎ জাত উন্নয়ন করা হয়। যেমন একটি দেশি গাভীকে প্রথমে ১০০% ফ্রিজিয়ান বুল দিয়ে মেটিং করালে বাচ্চাটা ৫০% ফ্রিজিয়ান হবে। এরপর মেয়ে প্রজেনীকে আবার ১০০% বুল দিয়ে মেটিং করালে তার প্রজেনী ৭৫% হবে। এইভাবে ৭ টা জেনারেশন পরে প্রায় ৯৯.৯৯% ফ্রিজিয়ান ব্লাড চলে আসে প্রজেনীতে। বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বর্তমানে ব্রীড আপগ্রেডেশন থ্রু প্রজেনী টেস্ট প্রকল্পের মাধ্যমে এইভাবে জাত উন্নয়ন করছে।
ঘ) ব্যাক-ক্রসিং- এই সিস্টেমে প্রথম জেনারেশনের প্রজেনী কে তার বাবা অথবা মায়ের সাথে পুনরায় ক্রস করা হয়। মূলত এই সিস্টেমে ৭৫% ব্লাড ফিক্সড করা হয় প্রজেনীতে। যেসব প্রথম প্রজেনী মেয়ে হয় তারা এই সুবিধাটা নিয়ে থাকে।
এইগুলো ছাড়াও রোটেশনাল ক্রসিং, লিউপ্রেসচট সিস্টেম, জিন পুল, স্পেসিস হাইব্রিডাইজেশন টার্মগুলোর ব্যাখা আপাতত দিচ্ছিনা। যেহেতু আমাদের দেশে এইগুলোর প্রয়োগ আপাতত হবার সম্ভাবনা নেই।
একটা জাত উন্নয়ন করার জন্য এনিম্যাল ব্রিডারদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে সিলেকশন এবং ক্রসব্রিডিং।
ক্রসব্রিডিং নিয়ে যেহেতু সবার অল্প বিস্তর জানা তাই সিলেকশন নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করছি।
একজন ব্রিডার তার খামারে ব্রিডিং এর জন্য তার সমস্ত গরুকে মূল্যায়ন করে যদি দেখে তার খামারের গাভীদের দুধ উৎপাদন কম তখন তার হাতে দুইটা অপশন থাকে।
প্রথমত, সে খামারের সবচেয়ে ভাল ষাঁড় এবং গাভীকে নির্বাচন করে এদের মাঝে মেটিং করিয়ে ভাল প্রজেনী তৈরি করবে। এইটাকে বলা হয়ে “Bred best to the best” । অর্থাৎ উতকৃষ্ট মানের বুল দ্বারা উৎকৃষ্ট মানের গাভীকে প্রজনন করানো। হোক সেটা দেশী বা ক্রস বা পিউর ব্রিড।
দ্বিতীয়ত, উন্নত জাতের গাভী দ্বারা ক্রসব্রিডিং করে ভাল প্রজেনী তৈরি করবে। ক্রসব্রিডিং এর একটা গুরুত্বপূর্ন ফল হচ্ছে হাইব্রিড ভিগর। অর্থাৎ দুইটা ভিন্ন জাতের ষাঁড় এবং গাভীকে প্রজনন করালে এদের বাচ্চাটা অনেক সময় পিতামাতার গড় পার্ফমেন্সের চেয়ে ভাল ফল দেয়। এই সুবিধা একমাত্র ক্রসব্রিডিং এ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ দুটো ক্ষেত্রেই প্রথমে সিলেকশন করা হয় এবং পরবর্তীতে মেটিং করা হয়।
এই মেটিং স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল আবার দুই প্রকারঃ
১) র্যানডম ( Random )বা লক্ষ্যহীন বা এলোমেলো মেটিং এবং
২) এসরটেটিভ বা সিলেকটিভ মেটিং বা বিশেষ শ্রেণিভুক্ত মেটিং
১) র্যানডম মেটিং- বাংলাদেশে এই মেটিং স্ট্র্যাটেজী বা কৌশলটাই পালন করা হয়। পালন করা হয় বলতে না বুঝেই মেটিং করা হয়। এই সিস্টেমে সব গাভী এবং ষাড় মিলনে সমান অধিকার (!!) পায় । অর্থাৎ খামারীদের অনুমতি (!) ছাড়াই প্রাণীরা রতিক্রিয়াই (!!) মিলিত হয়। ডেইরি ব্রিডের সাথে বিফ ব্রিডের মেটিং, বাবার সাথে মেয়ের মেটিং, ছেলের সাথে মায়ের মেটিং, যাকে বলে এলোমোলো সিস্টেম যেখানে কোন প্ল্যানিং করা হয়না। একে ব্রিড বাই চান্স ও বলে। এর ফলে ভাল প্রজেনীও আসতে পারে আবার খারাপ প্রজেনীও আসতে পারে।
২) Assortative Mating (এসরটেটিভ বা বিশেষ শ্রেণিভুক্ত মেটিং):
এই সিস্টেমে একটা প্রাণীর বয়স, জেনেটিক মেরিট, বংশ অনুসারে আরেকটা প্রাণীর সাথে মেটিং করা হয়। অর্থাৎ এইখানে ব্রিডার সিদ্ধান্ত নেয় তার কোন প্রাণীটিকে কোনটির সাথে মেটিং করবে। ডেইরি ব্রিডের সাথে ডেইরি ব্রিড, বিফ ব্রিডের সাথে বিফ ব্রিড, ডুয়েল ব্রিডের সাথে ডুয়েল ব্রিড সব মেইনটেইন করেই ব্রিডারের পছন্দমত ব্রিডের সাথে মেটিং করানো হয়। একে ব্রিড বাই চয়েস বলা হয়।
ধন্যবাদ
মানিক ভাই
AZ Agro Farm LtD