খুলনায় অস্ট্রেলিয়ার ‘ইমু’ পাখির খামার
‘ইমু’ সুদূর অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় পাখি।
খুলনায় এই ভিনদেশি পাখিটির খামার গড়ে তুলেছেন বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফুল আলম খান।
বটিয়াঘাটা থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দুরে কিসমত ফুলতলা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ইমু পাখির খামার।
রাস্তার পাশে বালু দিয়ে ভরাট করা ১ বিঘা খোলা জায়গায় করা এ খামারের একপাশে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২০ ফুট প্রস্থ’র একটি পুকুরও রয়েছে।
খামারের চারপাশে রয়েছে নেটের বেড়া।
খোলা জায়গায় এ খামারটি গড়ে ওঠায় প্রতিদিন ভিড় করছেন বহু দর্শনার্থী।
পরীক্ষামূলকভাবে গড়ে তোলা খামারটিতে এখন ১৯০টি ইমু পাখি রয়েছে।
ইমু পাখিটি উড়তে পারে না।
এরা খুবই নিরীহ প্রকৃতির।
মুরগীর ন্যায় এরা দলবদ্ধ হয়ে মাঠে চড়ে বেড়ায় এবং সেই সাথে ঘাস, পাতা, নুড়ি পাথর খেয়ে থাকে।
এরা চরম ঠান্ডা ও চরম গরম- দু অবস্থাতেই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
বাংলাদেশের তাপমাত্রায় ইমু পাখির কোন সমস্যা হয়না।
একটা ইমু পাখি সাধারণত ১ থেকে দেড় বছর বয়সে শারিরিক পূর্ণতা লাভ করে।
২৫ বছর পর্যন্ত প্রজনন ক্ষমতা থাকে।
২০-২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে।
ইমু সাধারণতঃ ৫-৬ ফুট উচু হয়।
প্রতিটির ওজন ৪০-৬০ কেজি হয়ে থাকে।
একটি স্ত্রী ইমু পাখি দেড় থেকে ২ বৎসর বয়সে প্রজনন ক্ষমতা লাভ করে।
সাধারণতঃ অক্টোবর থেকে মার্চ এই ৬মাস ডিম দেয়।
এরা বছরে ২৫-৩৫ টা পর্যন্ত ডিম দিয়ে থাকে।
ইমু পাখির ডিম সবুজ বর্ণের এবং সাইজ মুরগির ডিম থেকে ১০-১২ গুণ বড়।
প্রজননকালে এরা ৩ থেকে ৫ দিন অন্তর অন্তর ডিম পাড়ে।
জন্ম নেওয়ার পর ছানা হালকা বাদামী রংয়ের হয়।
৪ মাস বয়সের পর গায়ের রং গাঢ় বাদামী আকার ধারণ করে।
এক বছর বয়সের পর এর গায়ে বাদামীর ওপর কিছু নিলাভ সবুজ পালক দেখা যায়।
দেড় বৎসর পর গায়ের রং একেবারেই বাদামী বর্ণের হয়ে যায়।
খামারের মালিক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান জানান, তিনি এই পাখির প্রতি জোড়া ১৬ হাজার টাকা করে কিনে আনেন। প্রথমে ২০০টি ইমু পাখির বাচ্চা এবং ১২টি উট পাখির বাচ্চা কিনেছিলেন। তখন প্রতিটি ইমুর ওজন ছিল ৬০০-৭০০ গ্রাম। এখন প্রতিটির ওজন ৪০-৫০ কেজি। বাংলাদেশের আবহাওয়ার খাপ খাওয়াতে না পেরে ১০টি উট পাখি মারা গেছে। কিন্তু ইমু পাখি জীবিত রয়েছে ১৯০টি।
তিনি বলেন, ‘ইমুর মাংস বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। কারণ এর মাংস ৯৮ ভাগ পর্যন্ত চর্বিমুক্ত। এর চামড়ার নীচে একটি চর্বির আস্তরণ রয়েছে। যা দিয়ে মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়। আমাদের দেশের পরিবেশে ইমুর মৃত্যুহার খুবই কম।’
তিনি আশা করেন, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে ইমুর খামার জনপ্রিয়তা পাবে এবং গ্রাম-গঞ্জের ঘরে ঘরে এ পাখি খামার হবে, বেকার নারী-পুরুষরা স্বাবলম্বী হবে।
ইমু পাখির চাষি মোঃ ইমরান হোসেন বলেন, ‘২০১৭ সালে তিনি ইমু পাখির চাষ শুরু করেন। ৪০০ গ্রামের একটি ইমুর বাচ্চা ১২ থেকে ১৪ মাস পরে ৬০ কেজি’র বেশি ওজন হয়। ১৮ মাসে ইমু বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। একটি ইমু ১৮ থেকে ৩৫টি ডিম দিতে পারে।’
তিনি জানান, এক জোড়া ইমু’র বাচ্চা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা কেনা-বেচা হয়। ১২ থেকে ১৪ মাস পর এক জোড়া ইমুর দাম দাঁড়ায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায়। বিক্রি করা যায় এর মাংসও। এছাড়াও ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়েও বিক্রি করেন তিনি।
খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ম. জাভেদ ইকবাল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘দাপ্তরিক কাজে দাকোপ যাওয়ার পথে ইমু পাখির এই খামারটি চোখে পড়লো। উড়তে অক্ষম ইমুকে এভাবে পালন করা যায় আগে জানা ছিল না।’
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বঙ্কিম কুমার হালদার জানান, ইমু পাখির মাংস বেশ সুস্বাদু।
এর মাংস কোলেস্টরেল ফ্রি। ইমুর মাংস বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। এর মাংস ৯৮ ভাগ পর্যন্ত চর্বিমুক্ত।
এর মৃত্যুহার টার্কি, ব্রয়লারের থেকে অনেক কম।
বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ইমুর খামার বেশ সম্ভাবনাময়।
বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. সুশান্ত কুমার রায় জানান, এটি সম্ভাবনাময় পাখি এবং এর মাংস সুস্বাদু।
(প্রকাশ: ২০১৯-০১-১৭ ১০:৫২:১৯ এএম
রাইজিংবিডি.কম থেকে সংগৃহীত)
নোটঃনোয়াখালীতে একটা ইম পাখির ফার্ম আছে।ইকো এগ্রো ফার্ম,নবাব গঞ্জ ,দিনাজপুর
