Breaking News

হ্যাচিং-এর পর বাচ্চাকে দ্রুত পুষ্টি সরবরাহের প্রভাব

হ্যাচিং-এর পর বাচ্চাকে দ্রুত পুষ্টি সরবরাহের প্রভাব

পঞ্চাশের দশকে ৪২ দিন বয়সের একটি ব্রয়লারের ওজন হতো ৫৪০ গ্রাম এবং খাদ্য রুপান্তর হার ছিল ২.৩৫। বর্তমানে একই বয়সে একটি ব্রযলারের ওজন ২.৮ কেজি ছাড়িযে যায় এবং খাদ্য রুপান্তর হার ১.৪- ১.৬। তাছাড়া marketing age কমে এসেছে ২৭-৩৫ দিনে। এবং বিগত ৫০ বছরে মুরগি প্রতি ডিম উৎপাদন বেড়েছে ৬৪% এর উপরে, মুরগি প্রতি এগম্যাস বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৩% এবং প্রতি গ্রাম ডিম উৎপাদনে খাদ্য ব্যবহার কমেছে প্রায় ২০% এর উপরে। মুরগি উৎপাদনের এই বিস্ময়কর অগ্রগতির ক্ষেত্রে দৈহিক বৃদ্ধির শতকরা ৮৫-৯০ ভাগ পরিবর্তন এসেছে জেনেটিক সিলেকশনের জন্য এবং ১০-১৫ ভাগ পরিবর্তন এসেছে পুষ্টি এবং ব্যবস্থাপনার উন্নতির জন্যে। আমরা জানি জেনেটিক পটেনশিয়ালিটি ,পুষ্টি এবং ব্যবস্থাপনা পরস্পরের সাথে জড়িত। জেনেটিক পটেনশিয়ালিটি প্রকাশ করতে যথাযথ পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। যেমন একটি জাতের মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা (জেনেটিক পটেনশিয়ালিটি) বছরে ১০০ টি ( in a production cycle) এক্ষেত্রে ঐ মুরগির জন্য পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা যত ভালোই হোক না কেন ডিম উৎপাদন ২০০ হবে না। আবার অন্য একটি জাতের মুরগির ডিম উৎপাদন ক্ষমতা (জেনেটিক পটেনশিয়ালিটি) বছরে ৩০০ টি ( in a production cycle) এক্ষেত্রে ঐ মুরগির জন্য পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা যদি ভালো না হয় তাহলে ডিম উৎপাদন কখনো ৩০০ হবে না। ব্রয়লার উৎপাদনের ক্ষেত্রে ও বিষয়টি একই। ব্রয়লার পালনকারীরা চান দ্রুত ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি অর্থাৎ অল্প সময়ে কাঙ্খিত ওজন। আর এটা পেতে হলে জীবনের প্রথম দিন থেকেই কিছু ব্যবস্থাপনাগত বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চা ডিম থেকে ফুটে বের হওয়ার পর থেকে ৭২ ঘন্টা সময় পর্যন্ত কোন খাদ্য ও পানি গ্রহন না করেও বেঁচে থাকতে পারে। এই সময় পর্যন্ত মুরগির বাচ্চাকে বলা হয় Straight run chick| এটা শুধু বিশেষ মুহূর্তেু বেচে থাকার জন্য গুরুত্বর্পূণ। ভবিষৎ উৎপাদন পারফরমেন্সের জন্য বাচ্চাকে হ্যাচিং এর পর যত দ্রুত সম্ভব বাহ্যিক পুষ্টি (exogenous nutrient) সরবরাহ করা জরুরী। এমব্রায়োনিক ডেভলপমেন্টের শেষ পর্যাযে একমাত্র কুসুমই এমব্রায়োকে শক্তি সরবরাহ করে। হ্যাচিং এর সময় বাচ্চার দেহ গঠনে কুসুমের ২০% ব্যবহৃত হয। ইনকুবেশনের শেষে বাকী কুসুম বাচ্চার এবডোমেনাল ক্যাভিটিতে জমা থাকে। সদ্য ফুটা বাচচার বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য এই কুসুম ব্যবহৃত হয়। তবে এই কুসুম বাচ্চাকে খাদ্য ছাড়া প্রথম ৩-৪ দিন বয়স পর্যন্ত বাচিয়ে রাখতে পারে ঠিকই কিন্তু গ্যাস্টোইনটেস্টাইনাল ট্যাক্ট ,ইমিউনো সিস্টেম এর ডেভলপমেন্ট এমনকি দৈহিক ওজন বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখতে পারে না। হ্যাচিং এর পর হতে প্রথম খাদ্য গ্রহন পর্যন্ত ব্রয়লারের বাচ্চার সঠিক দৈহিক বৃদ্ধি ক্রিটিক্যাল। বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে ইনকুবেশনের পর অব্যবহৃত কুসুম শরীর ক্ষণাবেক্ষনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং সরবরাহকৃত পুষ্টি দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। হ্যাচিং এর পর বাচ্চাকে দ্রুত খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। দেরিতে খাদ্য সরবরাহ করলে গ্যাস্টোইনটেস্টাইনাল ট্যাক্ট ,ইমিউনো সিস্টেম এর ডেভলপমেন্ট slow হবে এবং এর ফলে দৈহিক বৃদ্ধির হার কমে যাবে।

দৈহিক বৃদ্ধির উপর বাচ্চা ফুটার পর দ্রুত ( early nutrition) খাদ্য সরবরাহের প্রভাবঃ

হ্যাচিং এর পর হ্যাচারী থেকে বাচ্চা সাধারণত: প্রথমে এজেন্টদের কাছে পৌছে এর পর এজেন্টদের নিকট থেকে খামারীরা বাচ্চা নেয়। এবং খুব কম ক্ষেত্রে খামারী সরাসরি হ্যাচারী থেকে বাচ্চা সরবরাহ নেয়। এটাই আমাদের দেশে ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে খামারীদের কাছে বাচ্চা পৌছতে অনেক সময় লাগে। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে বাচ্চা অভুক্ত থাকে যদিও ইনকুবেশনে অব্যবহৃত কুসুম এই সময় বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে দীর্ঘ off fed period ব্রয়লারের ভবিষ্যৎ উৎপাদন পারফরমেন্স কে ঋণাত্নক ভাবে প্রভাবিত করে। সমপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন study থেকে জানা যায় যে , যে ব্রয়লারের বাচ্চাকে হ্যাচিং এর পরে দ্রুত সময়ে ( early nutrition) খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে সে বাচ্চার দৈহিক বৃদ্ধির হার যে বাচ্চাকে হ্যাচিং এর ৪৮ ঘন্টা সময় পরে খাদ্য সরবরাহ হয়েছে তার তুলনায় বেশি। তবে হ্যাচিং এর পর খুব দ্রুত বা ২৪ ঘন্টা পর পুষ্টি সরবরাহের ক্ষেত্রে দৈহিক ওজনের তেমন কোন পার্থক্য দেখা যায় নি। অন্য একটি study থেকে দেখা গেছে যে হ্যাচিং এর পর ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ না করা বাচ্চার দৈহিক ওজন হ্যাচিং এর অব্যবহিত (immediately after hatching) পর খাওয়ানো বাচ্চার ওজনের তুলনায় ৭.৮% কম হয়েছে। যদি ব্রয়লারের বাচ্চাকে হ্যাচিং এর পর দ্রুত খাদ্য সরবরাহ করা না হয় তাহলে দৈহিক বৃদ্ধি এবং ইনটেস্টাইনাল গ্রোথ বিঘ্নিত হয় এবং ইনটেস্টাইনাল পরিশোষন হ্রাস পায়, ইনটেস্টাইনের nutrient uptake capacity সীমিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থা পরবর্তীতে দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস করে। হ্যাচিং এর দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ করা বাচ্চার বুকের মাংশ পুষ্টি সরবরাহ না করা বাচ্চার চেয়ে ৭-৮ ভাগ বেশি হয়। এবং এটা হয় স্কেলেটন এবং মাসলের বৃদ্ধির জন্য।

পৌষ্টিকনালীর উপর বাচ্চা ফুটার পর দ্রুত ( early nutrition) খাদ্য সরবরাহের প্রভাব ঃ

হ্যাচিং এর সময় মুরগির বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র অপরিপক্ক থাকে এবং এর কার্য্য ক্ষমতা পুরোপুরি কার্য উপযোগি হয় না। gastro-intestinal tract এ সময় মরফোলজিক্যালি (ইনটেস্টাইনের দৈর্ঘিক বৃদ্ধি,ভিলির উচ্চতা এবং ঘনত্ব) এবং ফিজিওলজিক্যালি (প্যানক্রিয়াটিক এবং ডাইজেস্টিভ এনজাইমের উৎপাদন/নিঃসরন বেড়ে যাওয়া) পরিবর্তিত হতে থাকে। হ্যাচিং এর পর ক্ষুদ্রান্ত্রের ওজন পুরো দৈহিক ওজনের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই বৃদ্ধি ৬-১০ দিন বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ইনটেস্টাইনে পুষ্টির উপস্থিতি ভিলির গ্রোথকে উদ্দীপ্ত করে। হ্যাচিং এর পর ২৪ ঘন্টা অভুক্ত থাকলে ডিওডেনাম এর ডেভলপমেন্ট হ্রাস পায় এবং ২৪,৪৮ বা ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ না করলে ইনটেস্টাইন এর ভিলির ডেভলপমেন্ট বাধা প্রাপ্ত হয়। বাচ্চা হ্যাচিং এর পর দ্রুত খাদ্য সরবরাহ করলে বাচ্চার ইনটেস্টাইনে পুষ্টি পরিশোষণ বেড়ে যায়,ট্রিপসিন,লাইপেজ এবং এমাইলেজ এনজাইমের কার্যকরীতা বৃদ্ধি পায। হ্যাচিং এর পর খাদ্যে সোডিয়াম জাতীয় খনিজের পরিমান কম হলে ইনটেস্টাইন কর্তৃক nutrient uptake হ্রাস পায়। হ্যাচিং এর পর বাচ্চার প্যানক্রিয়াস,লিভার এবং ক্ষুদ্রান্ত্র দ্রুত ডেভলপড হতে থাকে। অর্থাৎ এ সময়ে (জীবনের প্রথম ৭দিন) গ্যাষ্টোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট,ইমিউন সিস্টেম প্রভৃতি অপরিপর্ক্ক (immature) থাকে অর্থাৎ কার্যকর হতে শুরু করে। এ জন্যএ সময়ে গবেষকরা বিশেষ ধরনের প্রি-স্টাটার রেশনের কথা বলেছেন। এই ধরনের রেশন তৈরিতে ব্যবহৃত প্রতিটি উপাদান (feed ingredient উচ্চ পরিপাচ্যতা সম্পন্ন (highly digestable) হতে হবে ফলে সম্পূর্ণ রেশনের পরিপাচ্যতা সর্বাধিক হবে। কৌলিতাত্বিক অগ্রগতির কারনে ব্রয়লারের market weight gain প্রতি বছরই দ্রুততর হচ্ছে এবং marketing age কমে আসছে। দৈহিক বৃদ্ধির হারের (growth rate) প্রবৃদ্ধির সাথে পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা growth প্রভাবিত করে। ব্রয়লারের বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর প্রথম সাতদিন ব্রয়লারের সমস্ত জীবনের ২০-২৫ ভাগ। কিছুদিন আগেও এই প্রথম সপ্তাহ সমগ্র জীবনের ১৫ ভাগ ছিল। ব্রয়লারের জীবনের এই সময়টা বেশ জটিল কারন দৈহিব বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে এবং বাচ্চার বেড়ে উঠা বা বিকাশের জন্য (development) পুষ্টি ও ব্যবস্থাপনা বিশেষ ভুমিকা রাখে। ব্রয়লার পালনে কার্যকরী প্রি-স্টাটার কর্মসূচী তৈরীতে বিবেচ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমুহ হলো ঃ

উচ্চ গুণগত মানের এবং উচ্চ পরিপাচ্য উপাদানের সমন্বয়ে খাদ্য তৈরী করতে হবে। খাদ্যের পরিপাচ্যতা ভালো হতে হবে । অর্থাৎ সরবরাহকৃত খাদ্য এমন হবে যা সহজেই হজম হয়। এবং খাদ্যের পরিপাচ্যতা কমিয়ে দেয় এমন উপাদান দিয়ে খাদ্য তৈরী করা পরিহার করতে হবে। হ্যাচিং এর পর বাচ্চাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খাদ্য সরবরাহ করতে হবে যাতে খাদ্য গ্রহনকে প্রভাবিত করে এমন এনজাইম সংশে­ষন উদ্দিপ্ত হয়।ছোট অবস্থায় বাচ্চার পরিপাকতন্ত্র অপরিপক্ক থাকায় পরিপাক ক্ষমতা কম থাকে এই বিষয়টি বিবেচনা করে প্রি-স্টাটার রেশন তৈরী করতে হবে।পানি এবং খাদ্য গ্রহন stimulate করতে খাদ্যে সোডিয়ামের মাত্রা (খাদ্য লবন) গ্রহনযোগ্য মাত্রায় বাড়াতে হবে। এর ফলে দেহে পুষ্ঠি পরিশোষণ বৃদ্ধি পায়।খাদ্যের আকার(যদি পিলেট, ক্রাম্বল খাওয়ানো হয়) কাঙ্খিত মাত্রার হবে।খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমান ক্রড প্রোটিনের উপস্থিতি থাকতে হবে,যাতে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড যেমন গ্লাইসিন,সিরিনের সরবরাহ নিশ্চিত হয়।ব্রয়লারকে বিভিন্ন রোগের জীবাণু (pathogens), মাইকোটক্সিন (mycotoxins) এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে খাদ্যে যথাযথ মাত্রায় ফিড এডিটিভ ব্যবহার করতে হবে।

উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে মুরগির বাচ্চার হ্যাচিং এর পর যত দ্রুত সম্ভব খাদ্য ও পানি সরবরাহ করলেই হবে না সরবরাহকৃত খাদ্যের পরিপাচ্যতা এবং উপাদানসমুহের গুনগতমান ভাল হতে হবে।। যত দ্রুত পুষ্টি সরবরাহ পাবে বাচ্চার ভবিষৎ পারফরমেন্স তত ভালো হবে। কারন বাচ্চার পরিপাক অঙ্গানুসমুহ, রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম প্রথম সপ্তাহে কার্যকর হতে শুরু করে। তাই এ সময় পুষ্টি ঘাটতি হলে এই সব অঙ্গানুসমুহের বৃদ্ধি কাঙ্খিত মাত্রায় হয না। এবং এর ফলে খামার লাভজনক হবে না।

কালেক্টেড

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই ঠিক করে শুরু করতে হবে।

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই করা উচিত।। ক।ফার্মের যে সমস্যা যা কোন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »