Breaking News

লাভজনক ব্রয়লার পালন কৌশল-পর্ব ২

লাভজনক ব্রয়লার পালন কৌশল-
অঞ্জন মজুমদার
৬ষ্ঠ পর্ব /-

সঠিক ভ্যাকসিন প্রয়োগঃ

রোগ না আসলেও ভ্যাক্সিন দিতে হয় ,আমরা মুলত ভাইরাস জনিত রোগ প্রতিরোধ করার জন্যই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করি। ভাইরাস জনিত রোগ একবার যদি খামার আক্রান্ত করে খামারীর তেমন কিছু করার থাকে না। কারন ভাইরাস জনিত রোগের কোন চিকিৎসা নাই।
প্রশ্ন আসতে পারে আমরা তো গামবোরো বা রানিক্ষেত রোগে আক্রান্ত হলেও এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করি, আসলে ব্যাপারটা তা নয়, এই সকল ভাইরাস জনিত রোগে মুরগি আক্রান্ত হলে তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কমে যায়,এই সুযোগে বিভিন্ন প্রকার ব্যাক্টেরিয়া আক্রমন করে এবং দেহের ভিতরে বাইরে নানা প্রকার ক্ষত,ফুলা পচন সৃষ্টি করে সে জন্য সেকেন্ডারী ইনফেকশান থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং তা কোন ভাবেই ভাইরাস জনিত রোগের জন্য নয়।

ভাইরাস জনিত রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে, দরকার খামারের রোগব্যাধির অবস্থা বিবেচনা করে সঠিক একটি ভ্যাকসিন সিডিউল বানানো এবং সে মোতাবেক সঠিক বয়সে,সঠিক মাত্রায়,সঠিক নিয়মে মুরগিকে ভ্যাকসিন দেওয়া। ভ্যাকসিন দেওয়ার বা সিডিউল করার জন্য স্থানীয় প্রানি চিকিৎসক বা পোল্ট্রি স্পেশালিস্টের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।

ভ্যাকসিন পরিবহন এবং সংরক্ষনে অনেক সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। ব্যবহার করা ভ্যাক্সিনের শিশি বা এম্পুল পুড়িয়ে বা মাটিতে ফুঁতে ফেলতে হবে অন্যথায় এই শিশি থেকেই এই রোগ-জীবানু ছড়িয়ে খামারকে আক্রান্ত করবে। ভাইরাস জনিত রোগে আক্রান্ত মরা মুরগী যত্রতত্র ফেলে দেওয়া যাবে না এতে সবখানে রোগ ছড়িয়ে পড়ার শতভাগ সম্ভাবনা থাকে। মরা মুরগী গভীর গর্ত করে পুঁতে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

সঠিক তাপমাত্রায় ভ্যাক্সিন সংরক্ষন এবং পরিবহন করতে হবে অন্যথায় ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন না করে, এই ভ্যাক্সিন দিলেও রোগ আসার সম্ভাবনা থেকে যাবে। দিনের যে সময় ঠান্ডা থাকে সে সময়ে ভ্যাক্সিন দিতে হবে, ভ্যাক্সিন দেওয়ার সময় খামারের দক্ষ কর্মী দিয়েই ভ্যাক্সিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। অসুস্থ বা রোগে আক্রান্ত হলে এই সময় ভ্যাক্সিন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রতিটি ভ্যাক্সিনের ডোজ এবং মাত্রা উৎপাদনকারী কোম্পানী কতৃক নির্ধারন করা থাকে সেই মাত্রা অনুসারে সঠিক পন্থায় এবং অঙ্গে ভ্যাক্সিন প্রযোগ করতে হবে। রোগাক্রান্ত মুরগীতে ভ্যাক্সিন দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে,রোগ সেরে উঠলে ভ্যাক্সিন দেওয়া যাবে।
ব্রয়লার মুরগীতে সাধারনত লাইভ ভ্যাক্সিন বেশী দেওয়া হয় যেখানে গামবরো এবং রানীক্ষেতের পাদুর্ভাব বেশী সেখানে বয়সের প্রথম সপ্তাহে এই দুটি রোগের জন্য কম্বাইন্ড কিল্ড ভ্যাক্সিন দিলে রোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রনে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ব্রয়লার খামারীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে ভ্যাক্সিন সিডিউল রেজিস্টার্ড প্রানি চিকিৎসক অথবা পোল্ট্রি কনসাল্টেন্টের দ্বারা করিয়ে নিতে হবে

লাইভ ভ্যাকসিনের প্রাইমারী বা প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে অবশ্যই বুস্টার ডোজ দিতে হবে কারন প্রথম বার ভ্যাকসিন দিলে কিছু মুরগীতে ভ্যাক্সিন কার্য্যকরী নাও হতে পারে তাই দ্বিতীয় বার বুস্টার ডোজ দিলে সম্পূর্ন ব্যাচে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠে।প্রাইমারি ডোজ যে কোম্পানীর ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হবে বুস্টার ডোজ ও সেই কোম্পানীর ভ্যাকসিন দেওয়া উত্তম।

##যে সকল কারনে ভ্যাক্সিন দেওয়ার পরও মুরগী রোগে আক্রান্ত হয়-

•উৎপাদন, পরিবহন ,সংরক্ষন এবং দেওয়ার সময় সঠিক তাপমাত্রা এবং পদ্দতি তে না হলে।
• সঠিক বয়স এবং সঠিক মাত্রায় ভ্যাক্সিন প্রয়োগ না করলে।
• অসুস্থ এবং দূর্বল বার্ডকে ভ্যাক্সিন দিলে।
• প্রাইমারি ভ্যাক্সিন দেওয়ার পর রোগের প্রকোপ বিবেচনায় বুস্টার ডোজ দেওয়া না হলে।
• মানহীন ভ্যাক্সিন প্রযোগ করলে
• এক্সপেয়ার ডেট পার হ ওয়া ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করলে।
• লাইভ ভ্যাক্সিন ব্যবহারের পর খালি ভ্যাল যত্রতত্র ফেলে রাখলে।
• যদি পানিতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করা হয় এবং একই সময় পানিতে জীবানু নাশক ( ব্লিচিং পাউডার বা অন্য কিছু) ব্যবহার করা হয়।
• খামারের রোগ ব্যাধির পূর্বের রেকর্ড বিবেচনায় না নিয়ে যদি ভ্যাক্সিন সিডিউল করা হয়।
• ভ্যাক্সিন সিডিউল করার সময় স্থানীয় প্রানী চিকিৎসক এর পরামর্শ না নেওয়া হয়।
• দক্ষ লোক দিয়ে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ না করা হলে ।
• খামারে যদি পাখি প্রবেশ করে , লোক জনের যাতায়াতে এবং যন্ত্রপাতি বা গাড়ি জীবানুমুক্ত না হয়ে প্রবেশ করে।
• ফার্মের হাউজ টু হাউজ দূরত্ব কম থাকে,
• মৃত মুরগী সঠিক ভাবে পুঁতে বা জ্বালিয়ে ফেলে ফার্মের আশেপাশে ফেলে রাখলে।
• খাদ্যে বা পানিতে যদি বিষ ক্রিয়ার ঘটার মত উপাদান বিদ্যমান থাকে।
• বাচ্চা যদি মায়ের কাছ থেকে পর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না নিয়ে আসে।
• খাদ্যে পুষ্টি গুন যদি সঠিক মাত্রায় না থাকে।
• খামারে অনাহুত এন্টিবায়োটিক বেশি বেশি ব্যবহার করা হয়।
• মুরগীর ঘরে যদি পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকে।
• মুরগীর ঘরে যদি সব সময় সহ্য মাত্রার অধিক এমোনিয়া গ্যাস থাকে।
• এছাড়া আরো অনেক কারন আছে।

***ব্রয়লারের কিছু কমন রোগ এবং প্রতিকার***

মাইকোপ্লাজমা

শীতকালে মাইকোপ্লাজমার প্রকোপ অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়। এর কারন অতিরিক্ত ঠান্ডা এবং ঘরের বদ্ধ পরিবেশ ও গাদাগাদি করে ব্রুডিং করা, ত্রিমুখী কারন এখানে কাজ করে;যেমন নিন্ম তাপমাত্রা,অধিক ঘনত্ব এবং ব্যাক্টেরিয়ার ও মাইকোপ্লাজমা জীবানুর আধিক্য চূড়ান্তভাবে যাকে আমরা সি আর ডি বা ক্রনিক রেস্পিরেটোরি ডিজিজ বলি সেই রোগে আক্রান্ত হয়। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সেই ফ্লক থেকে কোন ভাবে ভাল ফলাফল পাওয়া যায় না।

মাইকোপ্লাজমা রোগে মুরগির মরার হার তেমন বেশি না হলেও ক্ষতির পরিমান অনেক বেশি। আক্রান্ত মুরগি খাদ্য খাওয়া পরিহার করে,দিন অনুসারে ওজন বাড়াতে ছন্দ পতন ঘটে,খামারীরা অনেক সময় বুঝে না বুঝে মনগড়া যথেচ্ছ এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন। ফলে চিকিৎসায় ভাল হওয়ার বদলে ঔষধের ধকলে মুরগীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি থেমে যায়।অথচ ট্রেনের মত সময় ধরে সঠিক সময়ে মুরগী বিক্রি করতে না পারলে লোকসান এড়ানো অসম্ভব।

মাইকোপ্লাজমার জীবানু আমরা চাইলেও পুরোপুরি খামার থেকে বিতাড়িত করতে পারব না। এই জীবানুকে সব সময় মুরগীর দেহে সাবক্লিনিক্যাল লেভেলেই রাখতে হবে যাতে রোগ সৃষ্টির জন্য যে পরিমান জীবাণুর সংখ্যা প্রতি মিলি লিটার রক্তে থাকা দরকার সেই সংখ্যায় যেন কখনো যেতে না পারে। রক্তে জীবানুর সংখ্যা কম রাখার জন্য মাইকোপ্লাজমা দমনে একটা উপযুক্ত মাইকোপ্লামাল ড্রাগ সিডিউল দরকার। সিডিউলটি প্রানী চিকিৎসক বা পোল্ট্রি কনসালটেন্টের মতামত নিয়ে করলে ভাল উপকার পাওয়া যাবে।

ব্রুডার নিউমোনিয়াঃ

রোগটি ব্রুডিং কালে (প্রথম সপ্তাহে)বেশী দেখা যায় তাই এর নাম ব্রুডার নিউমোনিয়া। মুলত এই রোগ হ্যাচারি থেকেই বেশী ছড়ায়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রয়লার খামারের আদ্র লিটার (কাঠের ভুষি এবং তুষ) থেকে, মুরগীর ঘরের পর্দা এবং ছাদ থেকেও ছড়াতে পারে। ইহা একটি ছত্রাক জনিত রোগ । ছত্রাক যেন খামারে গজাতে না পারে তার জন্য খামার এবং ফ্লোর ও মুরগীর ঘরকে শুকনো রাখতে হবে । ব্রুডিং এ ব্যবহার করা লিটার রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হবে। চিক গার্ডের মধ্যে ব্রুডিং এর সময় লিটার ভিজে গেলে পাল্টাতে হবে ,চিক পেপার ২৪ ঘন্টার বেশী সময় না রাখা উত্তম কারন এ সময়ে লিটারে যে পানি পড়ে তার উপরে পেপার থাকলে লিটারে দ্রুত ছত্রাক গজায় এবং কাগজ উঠিয়ে নিলে ছত্রাকের ফুল বা হাইপি দ্রুত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছোট বাচ্চা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এই হাইপি বা ছত্রাকের ফুল টেনে নেয় যা ছোট বাচ্চার ফুস্ফুসে একধরনের ছোটছোট নডিউল (গোটা) সৃষ্টি করে এবং দিন দিনে এই নডিউল ফুস্ফুসের অনেক জায়গা %

Please follow and like us:

About admin

Check Also

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই ঠিক করে শুরু করতে হবে।

ফার্মের যে বিষয়গুলি সংশোধনের সুযোগ নাই তাই আগেই করা উচিত।। ক।ফার্মের যে সমস্যা যা কোন …

Translate »