Breaking News

রোগের সময় কেন বেশি বেশি প্রোটিন (আমিষ) খেতে হয়? ডাঃ মোঃ আবু বকর (আহাদ)

রোগের সময় কেন বেশি বেশি প্রোটিন (আমিষ) খেতে হয়?

(১) গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হলে মানুষের শরীরে নাইট্রোজেনের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং তা ইউরিয়া হিসেবে শরীর থেকে বের (মূলত পস্রাবের সাথে) হয়ে যায়। এজন্য খেয়াল করলে দেখবেন, অসুস্থ অবস্থায় পস্রাবের গন্ধ একটু বেশি কড়া হয়। যখন নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ে তখন শরীরে একটি নেগেটিভ ব্যালেন্স তৈরি হয়। এই নেগেটিভ ব্যালেন্স ঠিক করার জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন হয় কেননা নাইট্রোজেনের মূল উৎস হল প্রোটিন বা আমিষ। তাই, এসময় আমিষ বেশি খেতে হয়। অসুস্থ অবস্থায় আমাদের খাবারের রুচি কমে যাওয়ায় অনেক সময় আমরা খাবারের সাথে পর্যাপ্ত আমিষ খেতে পারিনা। উপায়ন্তর না খুজে পেয়ে শরীর তখন Skeletal Muscle (কংকাল পেশি বা দেহের মাংস) ভাঙতে থাকে প্রোটিন বা আমিষ সাপ্লাই দেওয়ার জন্য। একারণে কেও অসুস্থ হলে শুকিয়ে যায়।

(২) স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীরে নানা হরমোন, এনজাইম কিংবা অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার জন্য প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম প্রোটিন খাওয়ার প্রয়োজন হয়। অসুস্থ অবস্থায় আরো বেশি প্রয়োজন হয়। শরীরে সংক্রমণ বা অন্যান্য ইনজুরি ঘটিত কারনে যখন কোনো ক্ষয় (কোভিড ১৯ ফুসফুসের টিস্যু ক্ষয় করে) হয় তখন Human Growth Horome, Insulin, Insulin-like Growth Factor-1, Testosterone এবং এর Analogues (সদৃশ) ইত্যাদি এনাবোলিক হরমোন দেহের ক্ষয় পূরণ করার জন্য উঠেপড়ে লাগে। একমাত্র Testosterone ছাড়া বাকি সবগুলো হরমোন প্রোটিন বা পেপটাইড হরমোন। দেহে আমিষের ঘাটতির কারনে এই প্রোটিন হরমোনগুলোর উৎপাদন যদি ব্যহত হয় তাহলে দেহের ক্ষয়সাধন দ্রুত হবেনা।

(৩) জীবাণু অনুসারে দেহে এক এক ধরনের রক্তকণিকা যুদ্ধ করে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে Lymphocyte (লিম্ফোসাইট) যুদ্ধ করে। ধরে নিন, আপনি শত ব্যবস্থা নিয়েও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পারেন নাই। আপনার শরীরে ভাইরাস ঢুকলে helper CD4 T-Lymphocyte (সাহায্যকারী সিডি৪ টি-লিম্ফোসাইট) Interleukin (ইন্টারলিউকিন) এর মাধ্যমে T-Lymphocyte এবং B-Lymphocyte এর কাছে ভাইরাস সংক্রমণের একটি মেসেজ পাঠাবে। দেহে Interleukin না থাকলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যত ফেল করবে। এই Interleukin টাই একটি প্রোটিন।

(৪) Interleukin এর মেসেজ পেয়ে Lymphocyte ভাইরাসকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে মূলত ২ টি উপায়ে। একটি উপায় হল T-Lymphocyte এর Cytotoxic type ভাইরাসসহ আক্রান্ত দেহকোষকে ধ্বংস করবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল B-Lymphocyte Antibody (এন্টিবডি) তৈরি করবে। যার শরীরে যত দ্রুত Antibody তৈরি হবে সে তত দ্রুত ভাইরাসকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে যাবে। Antibody হল এক ধরনের প্রোটিন (আমিষ)।

(৫) ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে দেহকোষের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল Interferon (ইন্টারফেরন) তৈরি করা। ভাইরাস আক্রান্ত দেহকোষ Interferon এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী সুস্থ দেহকোষকে এই বলে মেসেজ দেয় যে ‘ভাইরাস আসছে, তাড়াতাড়ি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোল’। তাছাড়া, Interferon রোগপ্রতিরোধী কোষগুলোকে যেমন, Natural Killer Cells এবং Macrophage কে সক্রিয় করে তোলে। যে Interferon এর কথা বলছি তাও একটা প্রোটিন বা আমিষ।

(৬) এই যে, দেহের এত প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে এজন্য আমাদের দেহে Inflammatory Response (প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া) এর অংশ হিসেবে জ্বর, সর্দি, ব্যাথা দেখা দেয়। জ্বর, সর্দি, ব্যাথা হলে বুঝবেন আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জীবানুর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে। প্রতিক্রিয়ার নমুনাস্বরূপ আপনার নাক দিয়ে যে আঠালো পানি বের হয় তাতে Mucin (মিউসিন) নামক একটি প্রোটিন বা আমিষ থাকে। সর্দির সময় শরীর থেকে কতগুলো আমিষ বের হয়ে যায় চিন্তা করেন!

(৭) আমাদের শরীরে Carbohydrate (শর্করা), Fat (চর্বি) জমা থাকে। কিন্তু Protein (প্রোটিন) জমা থাকেনা। আমরা অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে তা শর্করা হিসেবে দেহে জমা থাকে প্রোটিন হিসেবে নয়। প্রথমেই বলেছি, দেহে প্রোটিনের চাহিদা বেড়ে গেলে খাবারের মাধ্যমে তা সরবরাহ করতে হয়। নতুবা দেহের মাংস ক্ষয় হবে। দেহের মাংস ক্ষয় হলে Myoglobin (মায়োগ্লোবিন) বের হয়। এই Myoglobin কিডনির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। এটি কিডনি নষ্ট করতে যথেষ্ট।

(৮) অতএব সংক্রমণজনিত রোগের সময়ে কেও যদি আমিষ বেশি খায় তার শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে বেগ পেতে হবেনা। উদ্ভিজ্জ আমিষের (ডাল বা বীজ জাতীয়) হজম ও শোষণ কম হয় এবং এতে আমিষের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গাঠনিক উপাদান (Amino acids) থাকেনা যা মাংস, ডিম ও দুধে থাকে। মাংস, ডিম ও দুধ শুধু উন্নতমানের প্রোটিন দেয়না সেই সাথে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক ভিটামিন ও মিনারেল দেয়। তাই ব্রয়লার, গরু বা খাসির মাংস, মুরগি বা হাসের ডিম এবং গরুর দুধ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করবে।

ডাঃ মোঃ আবু বকর (আহাদ)
ডিভিএম, এমএস (ফার্মাকোলজি)
প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
দাগনভূঞা, ফেনী।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম কোম্পানীর নাম ১।সিপি ২।কাজী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »