Breaking News

বাংলা নীলকান্ত পাখি

বাংলা নীলকান্ত,

Indian Roller , Coracias bengalensis

বর্ণনা- বাংলা নীলকান্ত বাদামি বুক ও নীল ডানার পাখি ( দৈর্ঘ্য ৩১ সেমি, ওজন ১৬৫ গ্রাম, ডানা ১৯ সেমি, ঠোঁট ৩.৫ সেমি, পা ২.৭ সেমি, লেজ ১৩ সেমি)। বসে থাকা অবস্থায় এর পিঠ লালচে বাদামি, উড়ে গেলে ডানার নীল রঙ দেখা যায়, ডানায় পর্যায়ক্রমে ফিকে নীল ও কালচে নীল পালক রয়েছে। গলাবন্ধ, ঘাড়ের পিছনের ভাগ, গলা ও বুক লালচে-বাদামি। কাঁধ-ঢাকনি ও ডানার গোঁড়ার পালক বাদামি জলপাই-সবুজ, তলপেট ও অবসারণী ফিকে নীল এবং লেজ গাঢ় নীল। এর চোখ বাদামি, ঠোঁট বাদামি-কালো, পা এবং পায়ের সঙ্গে সংযুক্ত অঙ্গ হলদে-বাদামি। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারা অভিন্ন। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখি অনুজ্জ্বল, কাঁধ-ঢাকনি মেটে বাদামি এবং গলা ও বুকে ডোরা রয়েছে। ৩টি উপপ্রজাতির মধ্যে C.b.bengalensis এবং সম্ভবত C.b.affinis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব- বাংলা নীলকান্ত পাতাঝরা বন, বনের প্রান্তদেশ, তৃণভূমি, ক্ষুদ্র ঝোপ, খামার ও গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে। পাতাহীন ডাল, বেড়ার বাঁশ অথবা বৈদ্যুতিক তারে একাকী বসে থাকে। নীরবে বসে এরা ধীরে লেজ ওপর-নিচে দোলায় ও নিচের ভূমিতে শিকার খোঁজে।
আহার্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, টিকটিকি, ব্যাঙ ও সাপ। ঘাসে বা ঝোপে আগুন দেওয়া হলে পোকা ধরার জন্য এরা পাশে বসে অপেক্ষা করে।

এপ্রিল-মে মাসের প্রজনন ঋতুতে এরা উঁচু গলায় ও তীক্ষ সুরে ডাকে- ক্রাক, ক্রাক, ছেলে ও মেয়ে সমবেত ওড়ার মহড়া দেয় এবং গাছের কোটরে অথবা দালানকোঠার ফাঁকফোঁকরে ঘাস এবং খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা ৩-৫টি, মাপ ৩.৮ x ২.৮ সেমি। ১৭-১৯ দিনে ডিম ফোটে, ২০-২৫ দিনে ছানার শরীরে ওড়ার পালক গজায়,

বিস্তৃতি- বাংলা নীলকান্ত বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি, সকল বিভাগের গ্রামাঞ্চলে বিচরণ করে। পারস্য উপসাগর থেকে পুরো ভারত উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে সুদুর চীন ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা- বাংলা নীলকান্ত বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ- বাংলা নীলকান্তের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার তাউরা ( গ্রীক, Korakias= তাউরা, bengalensis=বাংলার)

বাংলা ডাহর পাখি

Bengal Florican, Houbaropsis bengalensis

বর্ণনা- বাংলা ডাহর বাংলাদেশে থেকে হারিয়ে যাওয়া বড় আকারের ভূচর পাখি, ( দৈর্ঘ্য ৬৬ সেমি, ওজন ২ কেজি, ডানা ৩৫.৫ সেমি, ঠোঁট- ৩.৭ সেমি, পা ১৭.৫ সেমি)। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে, ছেলের মাথা ও ঘাড় মখমল কালো এবং সাদা ডানার আগা কালো, পিঠের বাকী অংশ কালো ও মেটে থেকে দারুচিনি পীতাভে মিশ্রিত, বুকে এক গুচ্ছ লম্বা পালক, দেহের নিচের দিকে মখমল বাদামি। মেয়েপাখি ছেলে পাখি থেকে আকারে কিছুটা বড়। পীতাভ ভ্রু-রেখা সমেত মাথার চাঁদি ঘন বাদামি ও পিঠে স্পষ্ট বাদামি রঙে কালো তীর-ফলকের দাগ, ঘাড়ের পাশে ঘন বাদামি সরু ডোরা ও দেহের নিচের দিক পীতাভ-সাদা, ডানার পালক ঢাকনি পীতাভ-সাদা ও ওড়ার পালকে বাদামি ডোরা। ছেলে ও মেয়ে পাখি উভয়েরই চোখ হলুদ, ঠোঁট ঘন বাদামি এবং পা ও পায়ের পাতা হলুদ। ২টি উপপ্রজাতির মধ্যে H.b.bengalensis এককালে বাংলাদেশে ছিল।

স্বভাব- বাংলা ডাহর বাদাবন, বন সংলগ্ন ঝোপের প্রান্তর ও বৃহৎ তৃণভূমিতে বিচরণ করে, ৪-৮টি পাখির ছোট দলে দেখা যায়। ঘাসে ও শস্যক্ষেতে ধীরে হেঁটে এবং ঠুকরে খাবার খায়, খাদ্যতালিকায় রয়েছে পোকামাকড়, টিকটিকি, ছোট সাপ, রসালো ফল, বীজ এবং ঘাসের ও শস্যের কচি ডগা।

ভোর ও গোধূলিতে এরা বেশী কর্মচঞ্চল থাকে এবং দলের সদস্যদের সাথে যোগাযোগের জন্য ধাতব স্বরে ডাকে- চিক-চিক-চিক। মার্চ- জুন মাসে প্রজনন কালে ছেলেরা লাফ দিয়ে উঁচু ঘাসের উপর ডানা ছড়িয়ে নিজেদের প্রদর্শন করে এবং তৃণভূমির মাটি সামান্য খুঁড়ে ঘাস বিছিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো জলপাই-সবুজ, বেগুনি ফুসকুড়ি ও ফিকে বেগুনি-ধূসর দাগ আছে, সংখ্যায় ২টি, ৬.৪ x ৪.৬ সেমি। ৩০ দিনে ডিম ফোটে।

বিস্তৃতি- বাংলা ডাহর বাংলাদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখি, ঢাকা বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যেত, পাখিটি এখন আর নেই। বর্তমানে নেপাল, উত্তর-পূর্ব ভারত, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম পর্যন্ত এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে।

অবস্থা- বাংলা ডাহর বিশ্বে বিপন্ন ও বাংলাদেশে অপ্রতুল তথ্য শ্রেণীতে রয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতি সংরক্ষিত।

বিবিধ- বাংলা ডাহরের বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার ডাহর ( আরবি hubura= ডাহর, opsis= চেহারা, bengalensis= বাংলার)।

বাংলা কুবো পাখি

Lesser Coucal (Centropus bengalensis)

বর্ণনা- বাংলা কুবো পর্যায়ক্রমে পালকসজ্জিত লম্বা লেজওয়ালা কাকের মত পাখি ( দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ১২০ গ্রাম, ডানা ১৫ সেমি, ঠোঁট ২.৭ সেমি, পা ৩.৭ সেমি, লেজ ১৮ সেমি)। প্রজনন ঋতুতে পিঠ তামাটে ও দেহতল কালো হয়। অনুজ্জল তামাটে কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা ছাড়া পুরো দেহই চকচকে কালো। প্রাথমিক ও তৃতীয় সারির পালকের আগা বাদামি এবং লেজ কালো। প্রজননকাল ছাড়া পাখির কালচে বাদামি মাথা ও কাঁধ-ঢাকনিতে পীতাভ শরের ডোরা এবং কোমরে কালচে বাদামি ও লালচে ডোরা রয়েছে। দেহতল পীতাভ এবং গলা ও বুকে ফিকে ডোরা আছে, সব ঋতুতেই চোখ গাঢ় লাল, ঠোঁট কালো এবং পা, পায়ের পাতা ও নখর স্লেট-কালো। ছেলে ও মেয়েপাখির চেহারায় কোন পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির ডানা, মাথার চাঁদি, কাঁধ-ঢাকনি ও পিঠে কালচে বাদামি ডোরা থাকে। ৫ টি উপপ্রজাতির মধ্যে C.b.bengalensis বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

স্বভাব- বাংলা কুবো উঁচু ঘাসের জমি, নল বন, ঘন গুল্ম, ঝোপ ও চা বাগানে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। মাটিতে চুপিসারে হেঁটে এবং হঠাৎ শিকারকে ঠোঁট ও পা দিয়ে চেপে ধরে শিকার করে। খাবার তালিকায় ফড়িং ও অন্যান্য বড় পোকা রয়েছে। ওড়ার চেয়ে দৌড়াতে পছন্দ করে। ভোরে ও গোধূলিতে বেশ কর্ম তৎপর থাকে। দুটি অনুক্রমিক স্বরে ডাকে- কুপ-কুপ-কুপ কুরুক-কুবুক-কুরুক। মার্চ-অক্টোবর মাসে প্রজননকালে পূর্বরাগে ছেলে পাখি লেজ খাড়া করে ও বাকায়। ভূমির কাছাকাছি ঘন ঝোপে পল্লব, পত্র ফলক ও ঘাসের ডগা দিয়ে পার্শ্ব প্রবেশ পথসহ ডিম্বাকার বাসা বানায়। ডিমগুলো সাদা, সংখ্যায় ২-৪টি, মাপ ২.৮ x ২.৩ সেমি।

3 Lesser Coucal (Centropus bengalensis) Juvenile
বিস্তৃতি- বাংলা কুবো বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের ঝোপঝাড়ে ও চা বাগানে পাওয়া যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীনের দক্ষিনাঞ্চল ও ফিলিপাইনে এর বৈশ্বিক বিস্তৃতি রয়েছে, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ ব্যতীত সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায়।

অবস্থা- বাংলা কুবো বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে পরিচিত। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এ প্রজাতিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয় নি।

বিবিধ- বাংলা কুবোর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ বাংলার গজাল-পা ( গ্রিক-kentron= গজালের মত নখর, pous= পা,bengalensis= বাংলার)

 

ডা মহিউদ্দিন তারেক

Please follow and like us:

About admin

Check Also

বিলুপ্তপ্রায় পাঁচটি প্রাণী- রাজশকুন, ঘড়িয়াল, মিঠাপানির কুমির, নীলগাই এবং শুশুক

বর্তমান সময়ে জীববৈচিত্র্য পড়েছে মহা সংকটে। ইতোমধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে তালিকাভুক্ত অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »