Breaking News

দুধের ল্যাক্টোফেরিন

ল্যাক্টোফেরিন হলো একটি আয়রন সমৃদ্ধ প্রোটিন। সর্বপ্রথম ১৯৩৯ সালে গরুর দুধে এই প্রোটিনের সন্ধান মেলে। কিছুটা লালচে রঙের জন্য এর নাম দেওয়া হয় ‘রেড প্রোটিন’। এরপর ২১ বছর লেগে যায় দুধ থেকে ল্যাক্টোফেরিন পৃথক করতে। ১৯৬১ সালে এই প্রোটিনের নাম দেওয়া হয় ‘ল্যাক্টোফেরিন’। পরবর্তীতে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর দুধ (কুকুর ও ইঁদুর ছাড়া) থেকেও ল্যাক্টোফেরিন পৃথক করা হয়। শুধু কী দুধ, ল্যাক্টোফেরিন পাওয়া যায় চোখ ও নাকের পানিতে, মুখের লালায়, রক্তরসে এবং অন্যান্য বহিঃগ্রন্থিয় নিঃসরণে। স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রথম দুধে যা কলস্ট্রাম বা কাচলা দুধ নামে পরিচিত, সব থেকে বেশি পরিমাণে ল্যাক্টোফেরিন থাকে। গরুর দুধের তুলনায় মানুষের দুধে ল্যাক্টোফেরিন থাকে অনেক বেশি। প্রতিলিটার মানুষের দুধে যেখানে ১-৩ গ্রাম ল্যাক্টোফেরিন থাকে সেখানে সমপরিমাণ গরুর দুধে থাকে ০.০২-০.২ গ্রাম। আর প্রতিগ্রাম মানুষের কলস্ট্রাম বা কাচলা দুধে ল্যাক্টোফেরিন থাকে ৭-৮ গ্রাম। মানুষের দুধে ল্যাক্টোফেরিনের এই আধিক্যই এর গুণাগুণের ওপর মানুষের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে।

কেমন দেখতে ল্যাক্টোফেরিন?
ল্যাক্টোফেরিন যেহেতু আয়রন সমৃদ্ধ প্রোটিন, তাই একে যখন বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুকানো হয় তখন দেখতে হাল্কা গোলাপি রঙের হয় (চিত্র)। এ ধরনের ল্যাক্টোফেরিন-কে বলে ন্যাটিভ ল্যাক্টোফেরিন। প্রাকৃতিকভাবে দুধে ল্যাক্টোফেরিন যে অবস্থায় থাকে তাকেই ন্যাটিভ ল্যাক্টোফেরিন বলে। ন্যাটিভ ল্যাক্টোফেরিনে আয়রন থাকে আনুমানিক ৩০ শতাংশ। তবে যদি প্রক্রিয়াজাত করে আয়রন কৃত্রিমভাবে মেশানো হয়, তা হলে গাঢ় লাল রঙের হয়। একে বলে হোলো ল্যাক্টোফেরিন। আর যদি ল্যাক্টোফেরিনে থাকা আয়রন বের করে নেওয়া হয় তা হলে সাদা রঙের হয়। এর নাম হলো অ্যাপো ল্যাক্টোফেরিন।

কেন ল্যাক্টোফেরিন গুরুত্বপূর্ণ?
ল্যাক্টোফেরিন-কে বলা হয়ে থাকে বহু গুণাগুণসম্পন্ন প্রোটিন। ল্যাক্টোফেরিনের বিভিন্ন কার্যাবলী সারণি-ঘ-তে দেখানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ল্যাক্টোফেরিনের বেশ কিছু কার্যাবলী মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন। ল্যাক্টোফেরিন খাওয়ার ফলে চোখ বা মুখ শুকিয়ে যাওয়া, ক্রনিক হেপাটাইটিস-সি, হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি ইনফেকশন, কোলন পলিপ, আয়রন শোষণ, পায়ের পাতার রিং ওয়ার্ম, অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদি উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ল্যাক্টোফেরিন থেকে এক ধরনের ছোট পেপটাইড তৈরি সম্ভব, যা ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। এই পেপটাইডের নাম হলো ‘ল্যাক্টোফেরিসিন’।

বাণিজ্যিকভাবে ল্যাক্টোফেরিন উৎপাদন কী সম্ভব?
২০০৩ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারাবিশ্বে প্রতিবছর ৭৯ টন গরুর দুধের ল্যাক্টোফেরিন উৎপাদিত হয়। কীভাবে আসে এই ল্যাক্টোফেরিন। পশ্চিমা বিশ্বে চিজ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় দুগ্ধজাত খাদ্য। চিজ তৈরির সময় প্রচুর পরিমাণ চিজের পানি বের হয়ে আসে যা ‘হোয়ে’ নামে পরিচিত। এই হোয়ে পরিপূর্ণ থাকে ল্যাক্টোফেরিনসহ অন্যান্য পুষ্টিতে। আগে এই চিজের পানি সাধারণত ফেলে দেওয়া হতো, যা পরিবেশের জন্য ছিল অত্যন্ত ক্ষতিকর। প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও উন্নয়নের ফলে বর্তমানে খুব সহজেই হোয়ে থেকে ল্যাক্টোফেরিন পৃথক করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বিশ্বে উৎপাদিত ল্যাক্টোফেরিনের সিংহভাগ আসে চিজ ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রাপ্ত চিজের পানি বা হোয়ে থেকে। বর্তমানে ল্যাক্টোফেরিন ফুড, ফার্মাসিউটিক্যাল, কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে জাপানসহ বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত দেশের বাজারে ল্যাক্টোফেরিন সমৃদ্ধ দুধ ও ইওগার্ট পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ল্যাক্টোফেরিনের সম্ভাবনা কতটুকু?
পশ্চিমা দেশগুলোতে যেমন চিজ বাংলাদেশে তেমনি ছানা থেকে তৈরি বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাদ্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। চিজের মতোই ছানা তৈরির সময় ছানার পানি পাওয়া যায়, যা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। এই ছানার পানি-ই হলো ল্যাক্টোফেরিনের উৎস। ফলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে ল্যাক্টোফেরিন উৎপাদন সম্ভব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে ছানার পানি সংক্রান্ত গবেষণা ও তথ্য অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও উদ্যোগ। একযোগে কাজ করতে হবে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর ইন্ডাস্ট্রিকে।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

দেশের মোট প্রোটিনের সরবরাহ ৭৬% আসছে প্রানিসম্পদ হতে, ২৪% আসছে ফিশারিজ হতে।

দেশের মোট প্রোটিনের সরবরাহ ৭৬% আসছে প্রানিসম্পদ হতে, ২৪% আসছে ফিশারিজ হতে- একটি পর্যবেক্ষণ ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »