Breaking News

ডাক্তার এবং নার্সদের পোশাক কেমন হবে

একজন নার্সের পোশাকপরিচ্ছদ কেমন হবে বিংশ শতাব্দীর আগেও তা মোটামুটি সুনির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু একজন সার্জনের পোশাক কী হবে তার কোন ঠিকঠিকানা ছিল না। অপারেশন থিয়েটারে সার্জারি হত। সার্জন আটপৌরে জামাকাপড় পরেই অপারেশন থিয়েটারে আসতেন। রক্তারক্তিতে কাপড় নষ্ট হবে এই ভয়ে এপ্রন পরতেন। এপ্রন বলতে তেমন পরিচ্ছন্ন কিছু নয়, কসাই পশু জবাই করার আগে যেমন একটা ঢিলেঢালা কাপড়ে নিজেকে মুড়ে রাখে তেমন কিছু একটা। প্রতিদিন অপারেশনের সময় একই এপ্রন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই তো ছিলই না বরং প্রচলিত ছিল যার এপ্রনে যত রক্তের দাগ তিনি তত ভালো সার্জন।
সেসময় দিনের পর দিন একই জায়গায় একই যন্ত্রপাতিতে অপারেশন হতো। যন্ত্রপাতিতে সামান্য দাগ বা মরচে পড়া কোন বিষয়ই ছিল না; সামান্য ধোয়ামোছার প্রয়োজন সার্জন নিজ এপ্রনে সেরে নিতেন। অপারশনের জন্য যে সুঁইসুতা ব্যবহৃত হত তা আসত খোলা বাজার থেকে। কটন মিলের মেজেতে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত ময়লা মাখানো তুলায় তৈরি হত গজ ব্যান্ডেজ।
চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। ১৯১৮-২০ সাল। ফ্লু ভাইরাসের আক্রমণে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন প্রাণহানি সবার মতো সার্জনদের মনেও ভীতির সঞ্চার করে। লুই পাস্তুর বললেন, রোগ হচ্ছে জীবাণুদের আক্রমণের ফল। লিস্টার ভাবলেন, আক্রমণ যদি কোন উপায়ে থামানো যেত! এন্টিসেপ্টিকের ধারণার এখানেই সূত্রপাত। প্রথম এন্টিসেপ্টিকের নাম কার্বলিক এসিড। অপারেশন থিয়েটার থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, এমনকি রোগীর ক্ষতস্থান- জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে সব জায়গায় কার্বলিক এসিডের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হল। OPERATION SUCCESSFUL, PATIENT DIED- তখন স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। কার্বলিক এসিডের ব্যবহারে লিস্টারের ভূমিকার দরুন মৃত্যুহার ৫০ থেকে এক ধাক্কায় ৩০ শতাংশে নেমে আসে। লিস্টারর সফলতার সাথে অন্যান্যদের ধ্যানধারণায় পরিবর্তন আসে। অপারেশন থিয়েটারের স্যাঁতস্যাঁতে থকথকে পরিবেশে লাগে দিন বদলের হাওয়া। সার্জনের হাতে গ্লভস, স্টেইনলেস স্টিলের যন্ত্রপাতি, জীবাণুমুক্ত সুঁইসুতা।
অপারেশন থিয়েটার, যন্ত্রপাতি ও ক্ষতস্থান কার্বলিক এসিডে ধুয়ে লাভ হল খুব। কিন্তু তবুও কোথায় যেন একটা খুঁত থেকেই যায়। অনেক পর্যবেক্ষণ শেষে সার্জনরা খেয়াল করলেন, আরে, আমাদের এপ্রনেই তো কত জীবাণু! ঠিক হলো এপ্রন হতে হবে এমন যাতে সবচেয়ে কম জীবাণু ধারণ করে। কম জীবাণু ধারণের জন্য এপ্রনকে হতে হবে টেকনিক্যালি সিম্পল ডিজাইনের। এতে থাকবে না কোন অতিরিক্ত ভাঁজ, কলার, বোতাম ইত্যাদি অর্থাৎ যতটুকু না-হলেই নয় ততটুকুই থাকবে। নতুন এই পোশাকের নাম দেওয়া হলো গাউন। নিয়ম করা হলো প্রতিবার অপারেশনের আগে নতুন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন গাউন পরা হবে এবং তা থিয়েটারে এসেই পরতে হবে; বাহির থেকে গাউন পরে থিয়েটারে প্রবেশ করা যাবে না, গাউন পরে বাহিরেও যাওয়া চলবে না।

সাদা পরিচ্ছন্নতার প্রতীক- এ ধারণা থেকে ঠিক করা হলো গাউনের রং হবে সাদা। অপারেশন থিয়েটারের দেয়ালের রং সাদা হওয়ার পেছনেও একই কারণ। দিনের আলোয় অপারেশন হত তখন, সে আলোও উজ্জ্বল। চারিদিকে সাদা আর সাদা। অপারেশনের সময় সার্জন ও স্টাফের চোখে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই ঔজ্জ্বল্য। চালু হলো গাঢ় সবুজ/নীল রংয়ের গাউন। এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হলঃ এক. উজ্জ্বল আলোর চোখধাঁধাঁনো অস্বস্তি থেকে মুক্তি মিলল, দুই. সাদা কাপড়ে রক্ত লাগলে তা চোখে লাগত, গাঢ় রঙে সে ঝামেলা নেই। অপারেশন থিয়েটারের দেয়ালের রং এখনো সাদাই আছে। বদলেছে কেবল গাউনের রং। গাঢ় সবুজ, গাঢ় নীল থেকে হালকা সবুজ, হালকা নীল।
SELLULAR Surgery

Please follow and like us:

About admin

Check Also

খামারীদের কেমন পরামর্শ দেয়া উচিত,কোনটা উচিত না এবং কিছু আলোচনা।

খামারীদের কেমন পরামর্শ দেয়া উচিত,কোনটা উচিত নাএবং কিছু আলোচনা। খামারীদের পরামর্শ দিতে গিয়ে যাতে সেটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »