Breaking News

কবুতর/পাখির পায়খানা (মল) দেখে যেভাবে রোগ নির্ণয় করবেন★

কবুতর/পাখির পায়খানা (মল) দেখে যেভাবে রোগ নির্ণয় করবেন★

আপনি আপনার পাখির বা কবুতরের অভিভাবক। আপনার পাখির জন্য কোনটা ভাল কোনটা মন্দ এটা আপনি ছাড়া অন্য কেও ভাল বুঝতে পারবে না, ঠিক যেমন আপনার সন্তানের বেলাতে যেমনটি ঘটে থাকে। তবে পার্থক্য হল যে পাখির অসুস্থতা মানুষের মত বুঝা যায় না। আর এটা বুঝার জন্য প্রতিদিন মল নিরীক্ষন দ্বারা আপনি আপনার পাখির স্বাস্থ্য সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে পারেন। আর এটার জন্য প্রথম দিকে যদি একটু সময় ব্যয় করতে হয়, তাহলে তাই করুন। কিন্তু আপনাকে তা করেতেই হবে। কারন আপনি যদি যথেষ্ট ভাবে এই অধ্যয়ন করেন, তাহলে একদিন হয়ত এর সাথে পরিচিত হয়ে একসময় আপনার কবুতরের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। আপণাকে অবশ্যই একবার সকালে এবং সন্ধ্যায় এক নজর খেয়াল, আপনার পাখি/কবুতরের সুস্থ রাখতে ও জীবন বাচাতে সাহায্য করবে। আর এই ক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত ভাবে খাঁচার নীচে প্রতিদিন poopy কাগজ পরিবর্তন করুন বা প্লেইন নিউজপ্রিন্ট কাগজ বা পরিষ্কার মোম কাগজ বা পলিথিন ব্যবহার করুন,যাতে পায়খানা শনাক্ত করন (poop Detecting) সহজ হয়।

পাখি বা কবুতররা অসুস্থতা গোপন করার চমৎকার ঊপায় জানে, কিন্তু আপনার কাছে তা এড়াবে না। কারণ আপনার পাখি বা কবুতরের ড্রপ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার পাখি/কবুতর সুস্থ নাকি অসুস্থ আর এটা যা গোড়ার দিকে সূচক বা সতর্কবার্তা হতে পারে।

পাখী বা কবুতরা সরাসরি প্রসাব করে না। এরা যে পানি খায় সেটি রক্তে মিশে কিডনির মাধ্যমে ফিল্টার হয়ে। শক্ত সাদা অংশ আকারের(Concentrated urine) Urates ( chalky সাদা অংশ কে fluid বলা হয় ) ইউরিক অ্যাসিড আকারে শরীর থেকে খাদ্য হজমের পর বজ্যের সাথে বের হয়ে আসে।

সাধারনত পাখি বা কবুতরের পায়খানাতে তিন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি যথা ১)মল-কম্পোনেন্ট বা উপাদান, মূত্র কম্পোনেন্ট বা উপাদান এবং ইউরিক অ্যাসিড কম্পোনেন্ট বা উপাদান আছে। তিনটি উপাদানের যে কোন পরিবর্তনের গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করা উচিত এবং যা আপনার পাখির বা কবুতরের অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে।

সবচেয়ে মল তিনটি উপাদান.

১) মল উপাদানঃ

মল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল নালীর থেকে আসে এবং সাধারণত একটি সবুজাভ দড়ি বা blob বা ক্ষুদ্র বড়ির মত বা ফোঁটা ফোঁটা এই অংশ এর খাদ্য হজমের মাধ্যমে প্রভাবিত হয় এবং এটি আমূল খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । অর্থাৎ আপনি যদি কবুতর কে শাকসবজি দেন বা গ্রিন পিস দেন তাহলে পায়খানা সবুজবর্ণ হতে পারে। আবার যখন গ্রিট দিবেন তখন লাল পায়খানা করতে পারে। কিছু বাণিজ্যিক খাদ্য মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রঙ বা Colorants থাকার কারনে আয়খানার রঙ পরিবর্তন করতে পারে। রঙ পরিবর্তন প্রায়ই বা অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক ও অযুক্তিক, আর এটা নিয়ে অজথা মাথা না ঘামানই ভাল। তবে আপনার কবুতরের পায়খানা যদি কালো হয়ে বা একটি শক্তিশালী বা অস্বাভাবিক গন্ধ থাকে তাহলে পাখি মালিকদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

মনে রাখতে হবে অনেক সময় কিছু খাবার আছে, যার কারনেও মল এর রং বিভিন্ন হতে পারে। যেমনঃ রেজা, গ্রীন পিস, মাস কলায় ইত্যাদি আবার গ্রিত এর কারনে লাল হতে পারে এবং এই অবস্থায় কখনও অ্যান্টিবায়টিক বা অন্য কোন ঔষধ দিয়া ঠিক না।

২) প্রস্রাব উপাদানঃ

অপেক্ষাকৃত পরিষ্কার, পানি (watery) প্রস্রাব অংশ কিডনি দ্বারা উত্পাদিত হয়। যদিও কবুতরের মুত্রথলি নাই। পাখি এর ফোঁটা ফোঁটা পানি পরিমাণ সরাসরি আপনার পাখি যে খাবার বা জল পান করে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এটিকে অস্ফটিক প্রস্রাব(অপরিষ্কার জল ) বলা হয়। কখনও কখনও মুত্র এবং Urates একত্রিত হয়ে একটি মেঘলা তরল গঠন এর মত দেখায়। এই পরিবর্তনগুলি রঙ পরিবর্তন এবং পরিমাণ ভিজা পায়খানার মত হয়ে বের হয়। যদি এ রকম স্থায়ীরূপে প্রচুর পরিমাণে জল উপস্থিত গুরুতর রোগ হিসাবে চিহ্নত হতে পারে। একটা কথা মনে রাখতে হবে পায়খানার সাথে সাদা অংশ মানেই কিন্তু রোগ না আর এই ব্যাপারে একটু খেয়াল রাখবেন।

৩) ইউরিক অ্যাসিড উপাদানঃ

আপনার পাখি এর ফোঁটা ফোঁটা সাদা / ক্রীম রঙের ইউরিক অ্যাসিড অংশ স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই ভাগে ব্যতিক্রম ছাড়া সাদা বা রঙ সাদা কাছাকাছি হতে হবে। চুন সবুজ, উজ্জ্বল হলুদ , সরিষা শ্যামবর্ণ, ফ্যাকাশে ব্রাউন এবং ইট লাল পরিবর্তনগুলি গুরুতর অসুস্থতা সাধারণ লক্ষণ। স্বাভাবিক অবস্থায় কোন পরিবর্তন অবিলম্বে তদন্ত করা উচিত।

কবুতরের মল বা পায়খানা সাধারণত ২ ভাগে ভাগ করা যায়। ক) স্বাভাবিক মল ও খ) অস্বাভাবিক মল।

ক) স্বাভাবিক বা স্বাস্থ্যকর মলঃ

কবুতরের স্বাভাবিক বা স্বাস্থ্যকর মল বলে কিন্তু আমরা আড়াই পেচান অংশ বা অল্প পায়খানা করাকে বুঝি। আসলে যারা দিনে একবেলা খাবার দেন ও অপরিমত খাবার দিয়ে অন্য খামারিদের দেখানর চেষ্টা করে থাকেন যে তাদের কবুতর কত সুস্থ ও কত স্বাস্থ্যকর পায়খানা করে। এই ধারনা ভুল। অল্প পরিমান পায়খানা করলেই সেটি স্বাস্থ্যকর এমনটি ভাবার কোন কারন নাই। স্বাস্থ্যকর পায়খানা কবুতরের এক এক বয়স ও সময়ের ও অবস্থার উপর নির্ভর করে থাকে। একটি কবুতরের আনন্দ, দুঃখ, হতাশা, ভয় নার্ভাস নেস,উত্তেজনা, কাম ভাব ইত্যাদি সব কিছুই পায়খানার মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে। যেমনঃআপনি একটি কবুতর কে ধরে যখন ছাড়বেন সে লেজ নেরে পায়খানা করে তৃপ্তি ও সস্থি প্রকাশ করবে। আবার অনেক কবুতর দুইটি ডানা হালকা উচিয়ে পায়খানা করে, এটি তার রস বোধের পরিচয় ও চরম relax এর নির্দেশ করে থাকে। আবার ভয় পেলে কবুতর পাতলা সবুজ পায়খানা করে থাকে। অনেক সময় হটাত মাথার উপর দিয়ে কাক বা চিল উড়ে গেলেই তারা পায়কাহ্না করে অল্প পরিমান বা নার্ভাস থাকলে বিশেষ করে নতুন পূর্ণ বয়স্ক কবুতর পাতলা পায়খানা করে তার কাম ও নার্ভাস নেস প্রকাশ করতে পারে। আবার আপনি যদি সঠিক পুষ্টি বা সুষম খাদ্য না দেন তাহলে সে কারনেও আপনার কবুতর পাতলা পায়খানা করতে পারে বা যদি প্রচণ্ড রকমের ভিটামিন ও মিনারেলস এর ঘাটতি বা লবনের ঘাটতি বা খাবারে অতি মাত্রায় প্রোটিনের পস্থিথিতি বা ঔষধ প্রয়োগ না করলে অনেক সময় পাতলা পায়খানা করতে পারে। আবার খাবারে ফাঙ্গাস বা অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়টিক প্রয়োগ অনেক সময় পাতলা পায়খানার কারন হতে পারে। এটি কিন্তু আপনার কবুতরের অসুস্থতার লক্ষন না এটি আপনার খামার ব্যাবস্থাপনা কে দায়ী করতে পারেন। একটি তরুন বাচ্চা কবুতর ও একটি পূর্ণ বয়স্ক কবুতরের পায়খানার রন ও ধরনের পার্থক্য যেমন হবে তেমন একটি ১-১০ দিনের বাচ্চার পায়খানা ও একটি মাদি কবুতরের পায়খানার রঙ ও গন্ধের পার্থক্য হবে। একটু স্বাস্থ্যকর মল বলতে বোঝায়ঃ

১. অল্প সবুজ ও সংগে সাদা সাদা অংশ।
২. এটি পার্শ্ববর্তী অংশে কোন ভিজা কোন চিহ্ন থাকবে না।
৩. কোন গন্ধ থাকবে না।

অনেক সময় কবুতর খোপে থাকলে পায়খানা করে না করলেও এক পাশে করে বা সকালে বের হলে অনেক মল একসাথে করে যা দুর্গন্ধ যুক্ত হয়। তার মান কিন্তু সেটি সমস্যা না। কোন কবুতর খাঁচাতে থাকে সুস্থ অবস্থাতে খাঁচা থেকে লেজ বের করে বা খাচার একবাসে পায়খানা করে। আবার বাচ্চা গুলো বাতির এক পাশে পায়খানা করে এটি সুস্থতারই লক্ষন।

খা) অস্বাভাবিক কবুতর মল :

১) বার বার বা গাড় সবুজ সাদা অংশ বিহীন মল সাল্মনেল্লা এর নির্দেশ করে ও টাল হতে পারে।

২) ভারী , তৈলাক্ত বা আমাশা ভাব মল সাল্মনেল্লা, ক্যাঙ্কার পক্স, করিজা রোগের করে।

৩) সবুজ আভা বা Discolored বা ঘন সবুজ, খাকী থেকে যে কোনো রঙ হতে পারে এমন বা কাল সাথে সাদা অংশ সাল্মনেল্লার লক্ষন ও নানা ধরনের রোগের শঙ্কা দেখা দিতে পারে।

৪) চুন সাদা প্রায়ই ভিজা হয় chalky সাদা অংশ কে fluid বের হয়ে যায় এটি পুলরাম রোগের নির্দেশ করে।

৫) সবুজ ও ক্রিম বা সবুজ অফ হোয়াইট বা সবুজ হলুদ ডিপথেরিয়া রোগের লক্ষন নির্দেশ করে।

৬) লাল রক্ত বা রক্ত বর্ণ মারাত্মক রকম রক্ত আমাশয় বা coccidiosis রোগের লক্ষন নির্দেশ করে।

৭) পাতলা চাল ধয়া পানির মত সাথে বমি মারাত্মক রকম কলেরা রোগের নির্দেশ করে।

৮) বাদামি রঙ এর পায়খানা কবুতরের মারাত্মক রকমের লিভার সমস্যা বা সম্ভাব্য বিষক্রিয়া ইজ্ঞিত করে।

৯) অতি মাত্রায় পাতলা পানি পায়খানা সাথে খুদা মন্দা ডায়রিয়া রোগের লক্ষন নির্দেশ করে।

১০) বেশি খাবার খাওয়া বা অনেক পান করা (ব্যাকটেরিয়া মাত্রাধিক্য নির্দেশ করে।)

১১) ডেলা-পাকানো বা হজম করা হয় নাই এমন Undigested খাদ্য: অসম্পূর্ণ হজম, Giardia , hypermotile intestine ইত্যাদি রোগ সভাবনা। বা গোটা বা অভুক্ত খাবার সাথে পাতলা পায়খানা লিভার ও ইমিউন সিস্টেম সমস্যাও নির্দেশ করে।

১২) এ সব পায়খানার সাথে হালকা বা তিব্র গন্ধ বহন করে বা করতে পারে।

১৩) আলগা মল মানসিক চাপ, রোগ, অথবা নির্দিষ্ট খাবার কারণেও হতে পারে।

১৪) যে কোনো বুদবুদ বা ফেনা ধারণ করে ফোঁটা ফোঁটা সম্ভবত যেমন clostridium সংক্রমণ হিসাবে ধরা হয়।

কবুতরের মল/পায়খানা-সংক্রান্ত বা মল হতে মানুষের রোগঃ

কবুতর প্রায়ই মল এর সাথে জড়িত সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। একজন কবুতর খামারি যার সাথে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। তিনি কবুতর কে এমন ভালবাসেন যে মুখে করে খাওয়াতেন কবুতরের খামারে বসে খাওয়া দাওয়া করতেন। এমন কি তার বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে করতেও হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়া শুরু করতেন। পড়ে তিনি গলা ব্যাথা ও শ্বাস-জনিত সমস্যাই আক্রান্ত হন। পড়ে ডাক্তারের সরানাপন্ন হতে হয়েছিল। আপনি কবুতর কে ভাল বাসেন মানেই এই নয় যে তার বিষ্ঠা খাবেন বা তার ঘরে খাবেন বা আপনি আপনার মুখ দিয়ে তাকে খাওয়াবেন। আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা আগে বাকি গুলো পরে। কবুতরের পায়খানা বা এর সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্কের ফলে একটি ছোট স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। কবুতরের পায়খানা মানুষের বেশ কিছু রোগের কারন হিসাবে সনাক্ত করা হয়। Histoplasmosis, cryptococcosis, এবং psittacosis: তিনটি মানুষের রোগ পায়রা মল/পায়খানার সঙ্গে যুক্ত/সম্পর্ক আছে বলে ধরা হয়। এই জীবাণু মল থেকে বৃদ্ধি পায় ও এটি একটি ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট একটি রোগ। কবুতরের ও পাখির মলে প্রচুর পরিমানে ফসফরাস-নাইট্রোজেন-পটাশিয়াম ও কিছু মাত্রায় অ্যাঁমনিয়া উৎপাদন করে। যা ভাল সার হিসাবে পরিগণিত হলেও মানুষ ও কবুতরের জন্য এই গ্যাস শ্বাসনালীর সংক্রমন এর জন্য দায়ী করা হয়। এ সব রোগের লক্ষণ ১০ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ প্রদর্শন করে না। যেমন- প্রাথমিক সংক্রমণের পর প্রদর্শিত লক্ষণ আরম্ভ হয় এবং ক্লান্তি, জ্বর, এবং বুকে ব্যাথা, মল শুষ্ক হয়ে যখন বায়ুবাহিত(air born) হয়ে মানুষের শ্বসনতন্ত্র সংক্রমিত হয়ে অসুস্থ হতে পারে। ক্লান্তি, জ্বর ছাড়াও মাথাব্যথা, ফুসকুড়ি, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, পাতলা পায়খানা, খুদামন্দা, বমি ভাব এবং কখনও কখনও নিউমোনিয়া/ডিপথেরিয়ার মত রোগ মানুষের মধ্যে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক দ্বারা তৈরি হয় বলে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়াও কবুতরের ছোট ছোট পরের কনা গুলো চোখের সংক্রমন, অ্যালার্জির উপসর্গ ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও এই রোগের প্রধান সংক্রমন হয় বাচ্চাদের ও বয়স্ক লোকদের। আর এগুলো প্রানহানিকর না হলেও অনেক কষ্ট ভোগ করতে হয়।কবুতরের মল থেকে মানুষের ৬০ ধরনের রোগ হয় বলে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন। তবে আপনি যদি নিয়মিত খামার বা খাঁচা পরিষ্কার রাখেন তাহলে আপনি এ ধরনের সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবেন বলে আশা করা যায়।

প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ

রোগ গুলো সাধারন ঔষধে যেমন অ্যান্টিবায়টিকে নিরাময় হয়। আর এ জন্য খামার বা কবুতরের মালিকদের,কর্মচারী বা যারা স্বাস্থ্যকর্মী এবং মানুষ অন্তর্ভুক্ত কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে পায়রা মল পরিষ্কারের সময় স্বাস্থ্য ও সাধারণ বিষয় খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যদি খামার পরিষ্কার রাখা হয় ও কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুকি কমিয়ে আনা যাবে। যেমন যিনি খামার পরিষ্কার করবেন তিনি বুট, গ্লাভস,মাস্ক ইত্যাদি সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও পরিস্কার করার আগে স্প্রে করে নিয়া জরুরি। এর পর শুল্ক প্লাস্টিক ব্যাগ বা নিরাপদ কনটেইনার বা এ ধরনের সংগৃহীত ময়লা ও আবর্জনা সঙ্গে সঙ্গে ও নিয়মিত ভাবে ফেলে দিবার ব্যাবস্থা করা উচিত। অনেকেই আছেন যারা সপ্তাহে ১ বার বা ২ বার খামার পরিষ্কার করেন তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুকি বেশী থাকে। আপনি আপনার খামার ও এর অবকাঠামো নিয়মিত পরিষ্কার করা বা অন্তত মাসে একবার নিচে পড়ে থাকা মলগুলো পানিতে ভাল করে ধুয়ে দিয়া উচিৎ।

কবুতরের মল/পায়খানা-সংক্রান্ত বা মল হতে কবুতরের রোগঃ

অনেকের ধারনা শীত ও বর্ষাতে কবুতরের রোগ বেশী হয়। আসলে আই সময়তা কবুতর খামারের দরজা জানালা বন্ধ রাখার ফলে গ্যাস উৎপাদিত হয়ে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। ফলে কবুতরের মালিকরা ঋতু কে দোষ দিয়ে নিজেরা পালিয়ে বাছতে চাই বা দায়িত্ব এড়াতে চাই। অনেকেই বলে থাকেন আমি তো সব কিছু করি কিন্তু তারপরও এ রকম রোগ বালায় হচ্ছে। আপনি যত কিছুই করেন কিন্তু ছোট অথচ আসল কাজটিই করেন না। আর তাই এতো সমস্যা। কবুতরের পায়খানা তে মৃত ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ক্রিমি ও তার ডিম এবং অনেক সময় ভাইরাস এ আক্রান্ত কবুতর থেকে নির্গত ভাইরাস ও থাকতে পারে। কিন্তু বেশির ভাগ সময় কবুতর মালিক গন খাচার ট্রে’তে পেপার দেন বা শুধু মাত্র প্যাখানা গুলো পরিষ্কার করে। ট্রে বা মেঝেতে পড়ে থাকা পায়খানার পানি গুলো যেগুলো খাচাতে বা মেঝেতে পানি গুলো শুকিয়ে সেগুল থেকে ছত্রাক ও জীবাণু ছড়ায়। কবুতরের যত রোগ আছে তার প্রায় সব গুলোই এর পায়খানা বা তার থেকে সৃষ্ট ধূলা থেকে উৎপন্ন হয় ও একটার পর একটা কবুতরের মধ্যে সংক্রমিত হয়। অনেক সময় মারা যাওয়া কবুতর কে পুতে না ফেলে সেটি সরিসরি ডাস্টবিনে ফেলে দেন ফলে সেই রোগের জীবাণু বাতাসের সাথে মিশে সংক্রমণ ছড়ায়। অনেকেই আছেন যারা ব্যাস্ততার অজুহাতে পরিষ্কার পরিচ্ছনতার ব্যাপারটি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন বা অনেকেই জায়গার অভাব বা পরিষ্কার করার জন্য অসুবিধার ব্যাপারেও আপত্তি জানান। আপনি যাই করেন আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি নিশ্চয় সামনে পায়খানা রেখে খেতে পারবেন না বা এর গন্ধেও না। অনেক সময় কবুতর তাদের নিজেদের সুকনা পায়খানা খায় এটি প্রছন্দ রকম ক্যালসিয়াম লবনের ঘাটতি ও পানি শুন্যতার নির্দেশ করে। আর এখান থেকেও নানা রোগ হতে পারে।

প্রতিরোধ ও প্রতিকারঃ

অনেক সময় সাধারন ভাবে বা জীবাণু নাশক স্প্রে করে বা সাধ্রন ভাবে এগুলো কে পরিষ্কার করে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই বাইরের দেশে খাঁচা গুলো করে খামারের বাইরে নিয়ে গিয়ে বার্নার দিয়ে পুড়িয়ে এর পর জীবাণু মুক্ত করে। আর এটাই সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি। এতে করে আপনার খাচার ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর এ ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন খাচাতে এই সময় কবুতর না থাকে ও সেটা খামারের ভিতরে না করা হয়। খামারে সব সময় পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন সরবরাহ থাকতে হবে। আলো বাতাস থাকতে হবে। পরিষ্কার করার আগে খাঁচা বা খামার স্প্রে করে নিতে হবে যাতে ধূলা না ছড়ায়। খামার পরিষ্কার করবেন তিনি বুট, গ্লাভস,মাস্ক ইত্যাদি সুরক্ষার ব্যাবস্থা করেবেন। শুল্ক প্লাস্টিক ব্যাগ বা নিরাপদ কনটেইনার বা এ ধরনের সংগৃহীত ময়লা ও আবর্জনা সঙ্গে সঙ্গে ও নিয়মিত ভাবে ফেলে দিবার ব্যাবস্থা করা উচিত। কবুতর কে নিয়মিত গোসল করান ও পোকা ও মাছি মুক্ত রাখতে হবে। কবুতরের খামারে ২ ধরনের মাছি আছে একটি গায়ের মাছি ও আরেক বাইরের মাছি। বাইরের মাছি গুলো পায়খানার উপর ডিম পেড়ে নানা ধরনের রোগ উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। খামারের পাত্র যেখানে খাবার সংরক্ষন করা হয় সেটি ঢেকে রাখার ব্যাবস্থা করতে হবে না হলে কবুতর যখন পাখা ঝাপটাই তখন তার সাথে খাচার রডে জমে থাকা শুষ্ক পায়খানা গুলো ধূলা হয়ে বাতাসে ছড়ায় সেগুল খাবার ও পানিতে পড়ে। ফলে নানা ধরনের রোগ তৈরি হয়। অনেক সময় যারা ছেড়ে কবুতর পালেন তাদের খাবারের পাত্র উমুক্ত থাকে ফলে কবুতর ও পাখি এসে তাতে খাবার কায় বা কবুতর তাতে পা দেয়। এতে আপনার নিজের অজান্তেই জীবাণু আপনার কবুতরের শরীরে প্রবেশ করছে। অনেকেই আছেন যারা রাস্তা থেকে ইটের গুড়া সংগ্রহ করেন ও টা শুধু গরম করেই কবুতর কে সরবরাহ করেন। তাদের ধারনা এতে তার দায়িত্ব তিনি সেরে ফেলেছেন। আসলে টা নয়, আপনার দায়িত্ব এটা না। কবুতরে খামারে অতি দ্রুত ঝুল বা মাকসার জাল হয়। সেগুল পরিস্কারের ব্যাবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে সেগুল এক ধরনের ধূলা। অনেক কবুতর আছে যেগুলো মিনারেলস লবন ও গ্রিটের পায়খানা খায় বা অনেক সময় খাবারে ও পানিতে পায়খানা করে। এটা খুবই মারাত্মক কবুতরের স্বাস্থ্যের জন্য, সুতরাং এ ব্যাপারে কবুতরের মালিকদের নজর দিয়া জরুরি।

জিবানুমুক্ত কারী কিছু জরুরি ঔষধঃ (Antiseptic Medicine)

Povisep, Salvlon ,Detol, Farm 30, Virocid, Temson, Vircon S, পটাস ইত্যাদি মনে রাখতে হবে। কিছু স্প্রে পানি ও খাবারের জন্য হুমকি স্বরূপ না আবার কিছু গুলো মারাত্মক। ফিনায়েল বা ব্লিচিং পাওডার দিয়ে খামার বা খাঁচা পরিষ্কার করার চেষ্টা করবেন না এটি কবুতরের জন্য মারাত্মক। আবার আপনি এক ধরনের জীবাণু নাশক দিয়ে নিয়মিত স্প্রে করলেও এর কার্যকারিতা কমে যায়। অনেকেই মনে করেন পটাশ বা ডেটল দিয়ে স্প্রে করলেই যথেষ্ট, আসলে তা ঠিক না। আপনাকে প্রতিদিন বা একদিন পর পর খামারে বা খাঁচাতে স্প্রে করা উচিৎ বিশেষ করে খাঁচা পরিষ্কার করা আগে তো অবশ্যই…!

যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ভালবাসেন তারা নিয়মিত খামার পরিষ্কার করেন। তারা কোন প্রকার বাধা বা ওজুহাত দেখানোর চেষ্টা করেন না। এমন অনেক খামারি বা কবুতর পালক আছেন যারা অফিস থেকে ফিরে রাত ১০ তার পরেও খামার বা খাঁচা পরিষ্কার করতে গেলে যান। তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। তারা খালি ডিম বাচ্চার উদ্দেশ্যেই কবুতর পালেন না। তারা কবুতর কে ভালবাসেন বলেই কবুতর পালেন। আবার অন্যদিকে অনেক কবুতর পালক আছেন যারা কবুতর প্রেমী বলে গলা ফাটিয়ে দেন…! বড় খামারি বলে দুনিয়া কাঁপানর চেষ্টা করেন…!! আমি ১০ বছর ধরে কবুতর পালন করি বলে বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নেন…!!! তাদের জন্য এগুলো বলা আর করাটাই বৃথা…! আপনাকে কাউকে বলার দরকার নাই…কাউকে শুনানোর দরকার নাই…কাউকে বুঝানর দরকার নাই…! আপনি কি আপনি সেটা নিজে জানলেই যথেষ্ট…! আর সেটাই আপনার চরম পাওয়া…! দৈনন্দিন জীবনে কাজ সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা তার সাথে বিজ্ঞান গত ধারণার বেশ পার্থক্য রয়েছে। যেমন কোন বস্তুকে আপনি দুহাতে আঁকড়ে ধরে সারাদিন ধরে ঠেলতে লাগলেন কিন্তু এক চুল ও নারাতে পালেন না তাহলে বিজ্ঞান এর দৃষ্টিকোন থেকে এধরনের কাজের পরিমাণ হবে জিরো, অথচ নিত্যদিনকার ধারনামতে আমরা এটাকেও হয়ত আমরা কাজ বলব কারণ এর মাধ্যমে আপনি যথেষ্ট ক্লান্ত এবং ঘর্মাক্ত হয়ে পড়তে পারেন। এতে করে আপনি হয়ত নিজে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারেন কিন্তু বাস্তবে কিন্তু অন্য কিছুই ঘটছে বলে ধরে নেয়া হবে। পরিশেষে বলা যেতে পারে যে সাধারন অবস্থায় অনেকে চিকিৎসা দিতে দিরে করেন বা কাজের ওজুহাতে খাওয়া বা পানির দিকে নজর দেন কম বা ২৪ ঘণ্টার জন্য খাবার ও পানি দিয়ে যান। কিন্তু মনে রাখতে হবে।জে খাবার ও পানি আপনি দিচ্ছেন তা ময়লা হতে পারে,আর এই ময়লা খাবার থেকেই যত রোগের সুচনা। তাই যদি আপনি সত্যিকার কবুতর প্রেমী হন তাহলে কিছু সাধারন দায়িত্ব পালন করুন আর তা না হলে কবুতর বা পাখি পালা ছেড়ে দিন। শুধু লোক দেখানর জন্য এটা করবেন না। কারন আপনার অবহেলা/অমনোযোগিতা/গাফলতির কারনে যদি কোন কবুতর বা পাখি মারা যায় তাহলে হয়তো একদিন আপনাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হতে পারে।

Please follow and like us:

About admin

Check Also

হাঁসের রোগ সমূহ

হাঁসের রোগ সমূহ এবং টিকার সিডিউল

হাঁসের রোগ সমূহ; ১।ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস #এটি মারাত্মক  সংক্রামক রোগ যা picorna virus দিয়ে হয়। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »