Breaking News

ব্রয়লার ফার্মিং; লাভ করতে চান? FCR নয়, গ্রোথ ইন্ডেক্স (GI) অনুসরণ করুন।

এফ সি আর (খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা) বনাম ডেইলি এভারেজ ওয়েট গেইন (গড়ে দৈনিক দৈহিক ওজন অর্জন)ঃ

এফ সি আর-
বাংলা করলে দাঁড়ায় খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা অর্থাৎ প্রতি কেজি দৈহিক ওজন অর্জনের জন্য একটি ব্রয়লার কত কেজি খাদ্য খেলো তার অনুপাত, উদাহরন হিসাবে বলা যায় এফ সি আর ১. ৫৭ এর মানে কি ?
এক কেজি ওজন আসার জন্য এক কেজি পাঁচ শত সত্তর গ্রাম খাবার ব্রয়লার মুরগী কে খেতে হল।
অন্যদিকে এভারেজ ডেইলি ওয়েট গেইন বা দৈনিক দৈহিক ওজন অর্জন হল প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় মোট কতটুকু ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমরা বর্তমানে যে সকল ব্রয়লার বার্ড পালন করি তাদের প্রত্যেক জাতের একটি সুনির্দিষ্ট গাইড লাইন আছে- প্রথম সপ্তাহ বয়সে প্রতিদিন কত গ্রাম করে গড়ে ওজন বাড়বে, সপ্তাহ শেষে মোট ওজন কত হবে এভাবে প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম সপ্তাহ শেষে মোট কত ওজন হবে তা সুনির্দিষ্ট করা আছে।
কোন খামারী যদি সপ্তাহ অনুসারে বার্ডের নির্দেশিত গড় ওজন আনতে না পারে তার পক্ষে কোন ভাবেই বিক্রির সময় ভাল এফ সি আর পাওয়া সম্ভব নয়।
মজার বিষয় হল- আমরা ব্রয়লারের দিন হিসাবের মধ্যে না নিয়ে অনেক সময় ভাল এফ সি আর পেয়েছি বলে দাবি করি-
এমন ক্ষেত্রে কি হয়?
আমরা বাচ্চার জাতের বৈশিষ্ট্য কে বিবেচনায় নেই না
কোন বাচ্চা কোন সপ্তাহে কি পরিমান ওজন আসবে তা,না জানার কারনে এমন হয়।
হাবার্ড ক্লাসিক, কব ৫০০, লোহ্যমেন মিট, রস যে ব্রিড পালন করি না কেন বাচ্চা সরবরাহকারী বা হ্যাচারির নিকট থেকে দৈহিক ওজনের চার্ট নিয়ে তা ফলো করা উচিৎ তাহলে একজন খামারী সহজে বুঝতে পারবেন তিনি আসলেই কি ব্রয়লারে সঠিক ওজন আনতে পারছেন নাকি পিছিয়ে আছেন।
এফ সি আর বিবেচনায় ব্রয়লারের বয়স গননা জরুরী বয়স যত কমের দিকে থাকে তত ভাল এফ সি আর দেখায়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে এফ সি আর কমতে থাকে।
এটা দেখতে হয় কোন সপ্তাহের এফ সি আর বিবেচনা করা হচ্ছে,
দেখা গেল একজন খামারী ২৮ দিন বয়সে ১.৪২ এফ সি আর( ১৭০০ গ্রাম এভারেজ ওয়েট) পেয়ে ব্রয়লার বিক্রি করে দিলেন আরেক জন খামারী ৪২ দিন বয়সে ১.৫৭ এফ সি আর ( ২.৬ কেজি এভারেজ বডি ওয়েট) পেয়ে ব্রয়লার বিক্রি করলেন
দেখা গেল যিনি কম এফ সি আর এবং বেশিদিন বয়সে ব্রয়লার বিক্রি করলেন সমসংখ্যক ব্রয়লারে তার লাভ অনেক বেশী হয়েছে।
এটা দুই কারনে হয়-
দ্বিতীয় জন ডেইলি এভারেজ ওয়েট ঠিক ঠিক মত পেয়েছেন, মর্টালিটি কম ছিল, রোগ ব্যাধি কমছিল প্লাস তিনি শেষ দিকে ফিনিশার ফিড খাইয়ে ছিলেন।
যিনি ভাল এফ সি আর পেয়েছেন ২৮ দিন বয়সে ব্রয়লার বিক্রি করে তিনি ডেইলি এভারেজ বডি ওয়েট গেইন ঠিক মত পান নি প্লাস তিনি গ্রোয়ার ফিড দিয়ে ব্রয়লার পালন শেষ করেছেন।
আধুনিক ব্রয়লার পালনে এভারেজ ডেইলি দৈহিক অর্জন কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় – এফ সি আর গননা একটি পুরাতন পন্থা এবং এখানে অনেক অশুভংকরের ফাঁকি আছে।
ব্রয়লার পালন করতে গেলে হাতের কাছে ব্রয়লারের জাতের যেটি আপনি পালন করতেছেন তার একটি গাইড রাখুন, সেই গাইড অনুসরণ করুন, আপনি নিজেই বুঝে যাবেন কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল- কেন ভাল এফ সি আর অর্জন করেও লাভ করতে পারেন নি।

 ব্রয়লার ফার্মিং; লাভ করতে চান?
FCR নয়, গ্রোথ ইন্ডেক্স (GI) অনুসরণ করুন।
আচ্ছা বলুন তো, একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্রয়লার খামারী হিসাবে আপনি কি কখনো একদিন বয়সী বাচ্চা সরবরাহকারী হ্যাচারির বিক্রয় প্রতিনিধি বা তাদের ডিলারের কাছে- কমার্শিয়াল ব্রয়লার ম্যানেজমেন্ট গাইড(লালন পালন বিষয়ক পুস্তিকা) চেয়েছিলেন?
হ্যাঁ, যদি চেয়ে থাকেন বা তেমন পুস্তিকা আপনার নিকট থাকে অতি উত্তম না থাকলে এ অধ্যায় পড়ার পরেই একজন সচেতন খামারী হিসাবে অবশ্যই চেয়ে নিতে ভুল করবেন না।
পোল্ট্রি পালন একটি বিজ্ঞান নির্ভর কর্ম চর্চা / পেশা- কেউ কেউ ভাবেন এ আবার বিজ্ঞান হল কিভাবে!বাচ্চা আনব, পালন করব বড় হলেই বিক্রি করে ফেলব, ব্যাস।
হুঁ ঠিকই তো এখানে বিজ্ঞান কোথায়?
অবশ্যই বিজ্ঞান আছে- এটা তো আর নিত্য চেনা জানা দেশী মুরগীর বাচ্চা নয়,ঝড় বৃষ্টি আসলে মায়ের ডানার নীচে আশ্রয় নিবে, এদিক সে দিক ইচ্ছে মত ঘুরে বেড়াবে,পোকামাকড়, যা খুঁজে পায় তাই খাবে, আস্তে আস্তে বড় হবে – মাস শেষে বছর লেগে যাক কোন সমস্যা নেই।
এ হল ব্রয়লার মুরগী- দিনের হিসেব করে বড় হতে হবে- আপনার খামারে থেকে যা খাবে তার হিসাব দিতে হবে- না হলে যে পকেট ফাঁকা হবে।সফল এবং দক্ষ খামারী হিসাবে আপনাকে বছরে একটি শেড বা ঘর থেকে ৬/৭ টি ফ্লক বা ব্যাচ ব্রয়লার বড় করে বিক্রি করতে হবে।
পোল্ট্রি বিজ্ঞানের(Poultry science) ভাষায় –
“পোল্ট্রি বলতে সে সকল পাখি কে বুঝায়; যা মানুষের তত্বাবধানে লালিত পালিত হবে, স্বাধীন ভাবে বংশ বিস্তার করবে এবং পরিনামে মানুষকে আর্থিক ভাবে লাভবান করবে।”
★কমার্শিয়াল ব্রয়লারের ক্ষেত্রে বংশ বিস্তার প্রযোজ্য নয়, কারন আমরা তাদের অল্প বয়সেই বিক্রি করে ফেলি, প্রজননের সুযোগ থাকে না।
পোল্ট্রি মানেই টাকার যোগান দাতা- পোল্ট্রি সায়েন্সের ভাষায় অন্তত তাই বলে।
একটি ব্রয়লার বাচ্চা কত দিনে কত বড় হবে তার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জাতের ব্যবস্থাপনা গাইডে উল্লেখ আছে- যাকে গ্রোথ ইন্ডেক্স বলে।
উদাহরণ হিসাবে ধরুন লোহম্যান মিট কমার্শিয়াল ব্রয়লার নিয়ে কথা বলি-
বলা আছে ৩০ দিন বয়সে ২ কেজি গড় ওজন আসবে –
এই ২০০০ গ্রাম ওজনের মধ্যে তার জাতের ধারা/বংশ ধারা(জেনেটিক্যাল ইনহ্যারিটেন্স) এর জন্য ৬০% বা ১২০০ গ্রাম ওজন অবশ্যই আসবে, একজন খারাপ পরিবেশে যত খারপ ভাবেই তাকে পালন করুক।
অবশিষ্ট ৪০% ওজন বা ৮০০ গ্রাম ওজন পুরোপুরি একজন খামারী বা পালনকারীর হাতে (এটাকে বলে এনভায়রনমেন্ট সাপোর্ট বা পরিবেশগত সমর্থন বলে)
এনভায়রনমেন্ট সোপোর্ট বা বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশের উপাদানগুলো কি কি-
১.হাউজিং(ঘর, বায়ু চলাচল, লিটার ইত্যাদি)
২. খাদ্য★★★
৩. চিকিৎসা
৪. ব্যবস্থাপনা(বায়ো-সিকিউরিটি,লাইটিং, ব্রুডিং ইত্যাদি)
আধুনিক পোল্ট্রি হল জীব বিজ্ঞানের গবেষণা লব্দ প্রযুক্তি পন্য (লাইভ পন্য)। পোল্ট্রি বিজ্ঞানকে বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্তর্ভুক্ত ও বলতে পারেন, পৃথিবীর উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বায়ো সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট আছে, সেখানে লাইভ সায়েন্সের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির সমন্বয় করে পাঠদান করা হয়- এই লেখকের ব্যক্তিগতভাবে সুযোগ হয়েছিল এমন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব পর্যন্ত পোঁছার এবং কিছু তথ্য ও জ্ঞান অর্জনের।
বিজ্ঞান গবেষণাগারে থাকে আর বিজ্ঞানের গবেষণা লব্দ ফলাফল; প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের হাতে আসে।
যেহেতু পোল্ট্রি ইসু নিয়েই আলাপ- সরাসরি পোল্ট্রি নিয়েই কথা বলাই শ্রেয়-
আপনারা সবাই জানেন ব্রয়লারের বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন জাত এবং বিভিন্ন কোড নামের ব্রয়লার আছে যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- কব-৫০০; এর মধ্যে আবার স্লো ফেদারিং ফাস্ট ফেদারিং যেমন আছে তেমনি কব ৭০০ ও আছে।
প্রত্যেকটা স্ট্রেইন(জাত)এর কমার্শিয়াল ব্রয়লারের চরিত্রও ভিন্ন ভিন্ন,কোনটি গরম দেশের জন্য কোনটা শীতল দেশের জন্য আবার কোনটা আমাদের মত নাতিশীতোষ্ণ (সাব ট্রফিক্যাল) দেশের সাথে খাপ খাইয়ে দুনিয়ার তাবত বড় বড় জেনিটিক কোম্পানিগুলো শত শত বিজ্ঞানীর নিরলস গবেষনা এবং বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেই নানান জাতের ব্রয়লার অথবা লেয়ার জাতের সৃষ্টি করেছে, আজকে যে জাতের চাহিদা তুঙ্গে আগামী দিনে হয়তো কেউ আর এই জাত কিনবে না কারন নতুন আরো উন্নত কোন জাত বাজারে চলে আসবে।
আমাদের যেমন পূর্ব পুরুষের ইতিহাস আছে, তেমনি এই আধুনিক পোল্ট্রি মুরগিরও সুনির্দিষ্ট বংশ ঐতিহ্য আছে।
আমরা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে সারা বছর যে ব্রয়লার পালন করি তার কোনটিই ইতিহাস বিহীন নয়।
প্রত্যেকেরই নিজ নিজ জাতের ধারা আছে-
এর মধ্যে মর্টালিটি/মৃত্যুহার কত হতে পারে
প্রথম দিন থেকে শুরু করে কোন দিন কতটুকু খাবে, কোন দিন কতটুকু ওজন আসবে, সপ্তাহ অনুসারে খাদ্য রূপান্তর দক্ষতা(FCR) কেমন হবে, ব্রেস্ট মিটের/বুকের মাংসের পার্সেন্টেজ কত হবে, প্রসেসিং করার পর সম্ভাব্য ড্রেসিং ইল্ড কত পারসেন্ট(মোট কত মাংস) হবে সব কিছু প্রত্যেক জেনেটিক কোম্পানির গাইডে উল্ল্যেখ আছে।এ ছাড়াও প্রত্যেক ব্রয়লার জাতের স্টার্টার গ্রোয়ার ফিনিশার ফিডের পুষ্টি উপাদন এবং এর চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন।
এর মধ্যে একজন সাধারন খামারির ব্যবস্থাপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গ্রোথ ইন্ডেক্স (GI), এই ইন্ডেক্স অনুসরণ করে ব্রয়লারে প্রতিদিনের এভারেজ গ্রোথ(দৈনিক দৈনিক ওজন)যাঁরা অর্জন করতে পারবেন তাঁরদেরই ব্রয়লার ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে- তার জন্য আগে দরকার আপনি যে জাতের ব্রয়লার পালন করছেন তাদের একটি ম্যানেজমেন্ট গাইড বা লালনপালন নির্দেশিকা সংগ্রহ করা- তারপর সে নির্দেশিকা ধরে ব্রয়লার পালতে থাকেন দেখেন আগে আর পরে কি পার্থক্য হয়, যখন আপনার কাছে এমন ম্যানেজমেন্ট গাইড ছিল না বা থাকলে অনুসরণ করার অত গরজ মনে করেন নি।
একটি ব্রয়লার বাচ্চাকে তার জাতের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে কাংখিত ওজনে আনতে হলে দুই ধরনের সাপোর্ট দিতে হয়-
এক – তার বংশধারা বা জেনেটিক পোটেনশিয়ালস কে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া
দুইঃ তার জাতের বৈশিষ্ট্য কে পরিপূর্ণ রূপে প্রকাশ করার জন্য পরিবেশগত শতভাগ সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া,অন্যথায় একটি ভাল জাতের ব্রয়লার বাচ্চা ভাল খাদ্য দিয়ে লালনলালন করেও সপ্তাহ অনুসারে কাঙ্ক্ষিত ওজন কোন ভাবেই পাওয়া যাবে না।
ভাল বাচ্চা, ভাল খাদ্য –
সঠিক বায়ো-সিকিউরিটি এবং বাযু চলাচল ও বয়স অনুসারে ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখলেই একটি ব্রয়লার বাচ্চা তার জাতের বৈশিষ্ট্য’র শতভাগ অর্জন করতে পারে।
খাদ্য-
ফিড- ব্রয়লার নামক জীবন্ত যন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের ফুডে(মাংসে)রূপান্তর হয়।
এই ফুড নিরাপদ হওয়া জরুরি এবং নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি একজন ভোক্তার রাস্ট্রের আইন দ্বারা স্বীকৃত সংবিধিবদ্ধ অধিকার।
প্রকৃত বিধান অনুসরন না করে অন্যকে অনুসরণ করা এবং তা প্রয়োগ করলে চুড়ান্তে কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছানো দূরুহ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়- ব্রয়লার ফার্মিং এর ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য।
বর্তমানের দ্রুত বর্ধনশীল ব্রয়লার জাতের ৪২/৪৩ দিন বয়সের পঞ্জিকা অনুসারে প্রত্যেক ব্রিডার কোম্পানী সম্পুর্ন গাইডলাইন দিয়ে দেয়( যে কেউ চাইলেই অনলাইন থেকে ডাউন লোড করে নিতে পারে অথবা যে হ্যাচারির বাচ্চা ক্রয় করছেন তাদের নিকট চেয়ে নিতে পারেন)
সেখানে ৪২/৪৩ দিনের বয়স পঞ্জিকাতে
তিন বা চার প্রকার খাদ্যের সাজেশান অথবা নির্দেশনা দিয়ে থাকে-যেমন প্রি-স্টার্টার,স্টার্টার, গ্রোয়ার এবং ফিনিশার ফিড।
এই যে চার প্রকার খাদ্যের কথা বলা হয়েছে তা এমনি এমনি বলা হয় নি-
প্রি-স্টার্টার ফিড-
মূল্য লক্ষ্য উচ্চহারে শক্তির যোগান দেওয়া যেন বাচ্চা কোন পরিবেশ গত ধকলে পড়লেও খাদ্যের মাধ্যমে প্রাপ্ত এনার্জি কে তাপে রূপান্তর করে টিকে থাকে, এই খাদ্যে উচ্চহারে প্রোটিন (CP) দেওয়া হয় যেন দিন পঞ্জিকা ধরে বাচ্চার দেহে যথেষ্ট পরিমানে মাংসপেশি গঠিত হয়- না হলে প্রতিদিনের দৈনিক ওজন অর্জিত হবে না।
স্টার্টার ফিড-
স্টার্টার খাদ্যেও এনার্জি এবং প্রোটিন উচ্চহারে দেওয়া থাকে পাশাপাশি ব্রয়লারের অস্তি তন্ত্রের গঠন যেন স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় তারজন্য প্রয়োজনীয় মিনারেলস এবং ভিটামিনের আধিক্য থাকে কারন এই সময়েই নির্ধারণ হয়ে যায় একটা ব্রয়লার কতটুকু লম্বা এবং উঁচু হবে, যা তার অস্তি তন্ত্রের আকার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
গ্রোয়ার ফিড-
গ্রোয়ার ফিডের মূল লক্ষ্যই থাকে, যেন দ্রুত মাংসপেশি গঠন এবং বর্ধন হয়- এ বয়সে খাদ্যে প্রোটিনের মাত্রা কিছুটা কমে আসে তবে যে প্রোটিন দেওয়া হয় তা যেন দেহের কোষের জন্য বায়ো এভেইলএবল হয়, ক্রুড প্রোটিন থেকেও এমাইনো এসিড প্রোফাইল কে বর্তমান সময়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল জাতের ব্রয়লারে বয়সের এ সময়ে দিন অনুসারে দৈনিক ওজন আনার চেস্টা করা হয়।
ফিনিশার ফিড-
ব্রয়লারের বয়স পঞ্জিকা অনুসারে এ সময়ের ফিনিশার ফিডে স্টার্টার- ফিডের তুলনায় প্রোটিন অনেক কম থাকে এবং এনার্জি কিছুটা বেশী থাকে, লক্ষ্য মাংসের কম্পেক্টনেস বা সহজ কথায় বললে মাংসকে শক্তপোক্ত করা এবং মাংসপেশিতে যেন অধিক হারে ইন্টার মাসকুলার চর্বি বা ফ্যাট সঞ্চিত হয়, যা মাংসের স্বাদকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়।
আমরা এফ সি আর এর পিছনে সবাই দোঁড়াই- কিন্তু বাস্তবতা কি বলে-
২৮-৩০ দিন বয়সে ১৭০০-১৮০০ বা মতান্তরে ২০০০ গ্রাম গড় ওজন আনতে আমরা যার যার মত করে নৈতিক, অনৈতিক নানা পন্থা অনুসরণ করি- যা আধুনিক পোল্ট্রি পালনে পোল্ট্রি ওয়েলফেয়ারে চূড়ান্তভাবে ব্রয়লার মাংসের ভোক্তার জন্য নিরাপদ চিকেনের অনুকূলে নয়।
এমন কেন হচ্ছে?
আমরা একটি বিকাশমান প্রতিযোগিতামূকল পোল্ট্রি বাজার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, নতুন নতুন ফিড উৎপাদনকারী বাজারে আসছেন যাঁদের প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে আগে থেকে যাঁরা বাজার দখল করে আছেন তাঁদের সাথে।
ফলে গ্যারান্টি দিতে হচ্ছে এত বস্তা খাবার খেয়ে এত কেজি ওজন আসবে(প্রান্তিক খামারিদের কাছে FCR এর নতুন ভার্সন) – কেউ কেউ এই গ্যারান্টিও দেন এফ সি আর ১.৩২ হবে!
চিকেন ফিজিওলজি আর জেনারেল বায়োলজি বুঝলে এটা সম্ভব তবে চিকেনের উপর অত্যাচার চালাতে হবে- যা বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান নয়।
এভাবে ওজন আনা ব্রয়লার মাংসে যেমন একদিকে স্বাদ থাকে না তেমনি এই ব্রয়লারগুলো যে কোন ধরনের ধকলে অত্যন্ত সংবেদনশীল হয় এবং উদ্ভুদ্ধ পরিস্থিতিতে নানা জটিলতা দেখা দেয়, যেমন লেমনেস বা পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে না পারা,স্ট্রোক,খাদ্য খাওয়া ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি।
এভাবে ভাল এফ সি আর এর পিছনে দৌঁড়ানো খামারীর লাভ শুধুমাত্র দামের প্যারামিটারের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়- যদি ভাল দাম না থাকে তাহলে তিনি কোন ভাবেই লাভ করতে পারবেন না।
অন্যদিকে যাঁরা তাড়াহুড়ো না করে; তিনি যে জাতের ব্রয়লার পালন করছেন তাঁদের গাইড অনুসরণ করে প্রতিদিনের যে ওজন আসার কথা তা আনতে ব্রয়লার কে পরিবেশগত সকল সাপোর্ট বা সমর্থন নির্ভুলভাবে দিয়ে যাচ্ছেন তিনি ৪২/৪৩ দিন বয়সে ২.৫ থেকে ২.৬ কেজি ওজনে ব্রয়লার বিক্রি করেও(যেখানে এফ সি আর ১.৫৭) যিনি ২৮ দিন বয়সে ১.৪২ এফ সি আর এ ১৮০০-২০০০ গ্রামে ব্রয়লার বিক্রি করেছেন তাঁর থেকে বেশি লাভ করার সম্ভাবনা থাকবে।
কি ভাবে এই সমীকরণ –
২৮ দিন বয়স পর্যন্ত একটি ব্রয়লার ফ্লকের জন্য প্রয়োজনীয় সকল চলতি খরচ(ব্রুডিং খরচ, ভ্যাকসিন খরচ, ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ, লিটার খরচ,পরিবহন খরচ)বিনিয়োগ করে ফেলেন, সাধারনত পরবর্তী ১০/১২ দিন এই খরচ গুলো তেমন থাকে না, তখন শুধুমাত্র খাদ্য খরচই থাকে।
ফিনিশার ফিডের উৎপাদন খরচ কম(★ প্রোটিন % কম ★ ৪ এম এম পিলেট ★★ পিলেট সাইজ যত মোটা হবে প্রতি ডাইসে আনুপাতিক হারে অধিক খাদ্য প্রোডাকশন দেওয়া যাবে ★*** ডাইস বাবত প্রতি কেজি ফিডে ২-৩ পয়সা খরচ কম হবে)
প্রশ্ন হল- খামারী কি ফিনিশার ফিড; স্টার্টার বা গ্রোয়ার ফিডের একই দামে কিনছেন কিনা?
সকল বিবেচনায় বাংলাদেশে একজন দক্ষ খামারী যদি জাত অনুসারে গ্রোথ ইন্ডেক্স (GI)/ দৈনিক ওজনের দিনপঞ্জি অনুসরণ করে তাড়াহুড়ো না করে বছরে একটি ব্রয়লার হাউজ থেকে ৬টি ব্যাচ ব্রয়লার উৎপাদন করতে চান তাহলে তাকে এফ সি আর এর মরিচিকার পিছনে দৌঁড়াতে হবে না।
বড় ব্রয়লার মানে তাত্ত্বিকভাবে সেফ – কারন রোগবালাই আসে অনেকটা কম বয়সে, এ সময় দরকারী ক্ষেত্রে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতেই হয়, অন্যথাও হয় খামারী নিজের সিধান্তে বা অন্য খামারীর পরামর্শে এন্টিবায়োটিক বা সালফা ড্রাগের মত ঔষধ ব্যবহার করেন- প্রত্যেক এন্টিবায়োটিকের একটা উইথড্রল পিরিয়ড বা দিনের বিধি বদ্ধতা উল্ল্যেখ আছে- অর্থাৎ এ সময়ের আগে ব্রয়লার বাজারে বিক্রি করা যাবে না- কারন ব্রয়লারের চিকিৎসায় ব্যবহার করা ড্রাগের কিছু অবশিষ্টাংশ বা রেসিডুয়াল থেকে যেতে পারে।
বড় বয়সে তেমন রোগ বালাই হয় না- কারন ততোদিনে একটি ব্রয়লার মায়ের থেকে নিয়ে আসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, প্লাস খাদ্য এবং উপযুক্ত পরিবেশের সাপোর্টের মাধ্যমে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মিলিয়ে অনেকটাই রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠে।
সুতরাং বেশি বয়সের ব্রয়লার একদিকে যেমন ভোক্তার জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত স্বাদের, তেমনি একজন দক্ষ ও বিজ্ঞানমনস্ক খামারীর জন্য প্রকৃত লাভেরও হয়ে উঠতে পারে যদি তিনি এফ সি আর এর পিছনে না ছুটে,ব্রয়লারের লাইফ টাইমে, দৈহিক ওজনের দিন পঞ্জিকা (GI) অনুসরণ করেন।
 অঞ্জন মজুমদার(পিপিবি এডমিন)

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

টিপস ২৪

গমে মাইকোটক্সিন হয় না কারণ এতে থাকে Purothionine which is lipoprotine and has fungicidal.তাই গম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »