রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি? (What is immunity)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হল শরীর বৃত্তীয় সেই ক্ষমতা যার দ্বারা শরীর কোন রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ প্রাচীর গড়ে তোলে।
#রোগ_প্রতিরোধকারী_অঙ্গসমূহ:
(Immune System)
১. বারসা অফ ফেব্রিসিয়াস (Bursa of Fabricius)
২. থাইমাস(Thymus)
৩. স্প্লিন (Spleen)
৪. বোন মেরো (Bone Marrow)
৫. লিম্ফয়েড সেল যা গাট, ট্রাকিয়া এবং ইসোফগোস (Oesophageous) এ থাকে
৬. হারডিরিয়ান গ্রন্থি
৭. সিকাল টনসিল
#ইমুনোসাপ্রেশন (Immunosuppression):
ইমুনোসাপ্রেশন হল শরীরের সেই অবস্থা যাতে শরীর কোন রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে না বা পারলেও তা যথাযথ মাত্রায় হয় না। ইমুনোসাপ্রেশন কোন রোগ নয়, যার কারণে এর কোন নির্দিষ্ট লক্ষণও নেই। তবে কিছু ফ্যাক্টর আছে যা দ্বারা ইমুনোসাপ্রেশন বোঝা যায়। নিম্নের ফ্যাক্টর গুলো প্রদান করা হলঃ
কোন মুরগী ইমুনোসাপ্রেশন এ ভুগতেছে তা বুঝার জন্য নি¤œ লিখিত লক্ষণ গুলো অবলোকন করা যায়।
১. মৃত্যুর হার বেড়ে যায়,
২. অসম বৃদ্ধি হয়,
৩. ওজন কমে যায়,
৪. খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়,
৫. ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও কাঙ্খিত মাত্রার টাইটার পাওয়া যায় না,
৬. সাধারণ রোগ যেমন (E. coli infection) মৃত্যুর হার বেড়ে যায়,
৭. লিম্ফয়েড অঙ্গসমূহের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়,
৮. FCR বেড়ে যায়।
ইমুনোসাপ্রেশনের কারণঃ
ইমুনোসাপ্রেশনের কারণ সমূহকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথাঃ
১. ইনফেকশাস কারণ
২. নন-ইনফেকশাস কারণ
১. ইনফেকশাস কারণসমূহঃ কিছু কিছু রোগ আছে যার কারণে মুরগী সারা জীবন ইমুনোসাাপ্রেশনে ভোগ। নিম্নে সেগুলোর তালিকা প্রদান করা হলঃ
(ক)গামরোরো (IBDV): এটা সাধারণত ২-৩ সপ্তাহ বয়সে হয়। এই রোগে মুরগীর বারসা আক্রান্ত হয় এবং আক্রান্ত মুরগী সারা জীবন ইমুনোসাপ্রেশনে ভোগে।
(খ) চিকেন ইনফেকশান অ্যানিমিয়া ভাইরাস (CIAV):
এই রোগ সাধারণত ব্রিডার মুরগীতে ঠিক প্রডাকশনের আগে পরে দেখা দেয়। এটি মাতা-পিতা থেকে বাচ্চাতে আসে এবং ১০-১৪ দিন বয়সের বাচ্চাতে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এই রোগে বাচ্চার থাইমাস আক্রান্ত হয় এবং থাইমাসে হেমরেজ পাওয়া যায়।
(গ) মারেক্স ডিজিস ভাইরাস (Marek’s Disease Virus)
এটি সাধারনত ৫-৩৫ সপ্তাহের মুরগীকে বেশী আক্রান্ত করে। তবে ভ্যাকসিন করা হয় নাই এ রকম ফ্লোকে ৬০ সপ্তাহ পর্যন্ত দেখা যায়। এটি এক ধরনের ওনকোজেনিক (ঙহপড়মবরহপ) ভাইরাস অর্থাৎ টিউমার তৈরী করে এমন ভাইরাস।
(ঘ) লিমফয়েড লিউকোসিস (Lymphoid Leukosis): এই রোগটি ১৪ সপ্তাহের আগে সাধারনত মুরগীতে দেখা যায় না। সাধারণত ২৪-৪০ সপ্তাহের মুরগীতে এই রোগের প্রার্দুভাব হয়ে থাকে।
(ঙ) কক্সিডিওসিস (Eimeria spp.): কক্সিডিওসিস সাধারণত ০-৬ মাসের বয়সের বাচ্চাতে হয়ে থাকে। যেহেতু ইমুনো অঙ্গসমূহ বাচ্চা বয়সেই বেশী সচল হয়। তাই এই বয়সে এই রোগ হলে মুরগী সারা জীবনের জন্য ইমুনোসাপ্রেশনে ভোগে।
(চ) রাণীক্ষেত রোগ (New castle Disease virus) রাণী ক্ষেত যে কোন বয়সের মুরগীতেই হতে পারে।
(ছ) রিও ভাইরাস (Reo virus)
(জ) রেটি কিউলো এন্ডোথেলিওসিস ভাইরাস (Reticuloendotheliosis)
(ঝ) নিউমোভাইরাস (Avian Pheumovirus /Swollen head Syndromes)
নন-ইনফেকসাস কারণসমূহ
(ক) জেনেটিক্স কারণঃ কিছু কিছু ব্্রীড বা স্ট্রেইন আছে যারা কোন কোন রোগের প্রতি বেশী সংবেদনশীল ।
(খ) ভিটামিনের অভাব ঃ কোন কোন ভিটামিন আছে যা প্রত্যেক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইমুনিটির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
যেমন
ভিটামিন-ই (Vitamin E) : ভিটামিন-ই কোষ প্রচীরের স্থায়ীত্ব ঠিক রাখে। মেটাবলিজমের মাধ্যমে যেসব মুক্ত রেডিক্যাল তৈরি হয় তা ইমুনো কোষকে আক্রান্ত করে নষ্ট করে দিতে চায়। কিন্তু ভিটামিন-ই ইমুনো কোষের প্রাচীর ঠিক রাখে এবং মুক্ত রেডিক্যালকে দূর করে দেয়।
ভিটামিন-সি (Vitamin C): ভিটামিন-সি যে কোন ধকলকে প্রতিরোধ করে। আবার ভিটামিন-সি শ্বেত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এই শ্বেত রক্তকণিকা থেকেই লিম্ফসাইট তৈরি হয় যা থেকে এ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
ভিটামিন-এ (Vitamin A): ভিটামিন-এ সরাসরি এ্যান্টিবডি তৈরিতে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-এ এর অভাব মুরগীতে রাণীক্ষেতের এ্যান্টিবডি কাঙ্খিতমাত্রায় তৈরি হতে পারে না।
(গ) মাইকোটক্সিনঃ মাইকোটক্সিন হল ফাঙ্গাস/ছত্রাকের মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় নিঃসরিত বর্জ্য। সাধারনত: ফিড গুদামজাত করে রাখলে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস যেমন পেনিসিলিয়াম, অ্যাসপারজিলাস, ফোসিয়াম বিভিন্ন টক্সিন তৈরী করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় তাদের মধ্যে অন্যতম টক্সিন হলঃ আফলাটক্সিন, ওচেরাটক্সিন, টি-২ টক্সিন।
(চ) অ্যামোনিয়া: অ্যামোনিয়া গ্যাস মুরগীর শ্বাসতন্ত্রীয় কোষকে দারুনভাবে আক্রান্ত করে ফলে মুরগীর রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই লেয়ার সেডে অবশ্যই অ্যামোনিয়ার মাত্রা ২৫ পিপিএমস এর বেশী হতে দেওয়া যাবে না।
(ঙ) ধকল (Stress):মুরগী বিভিন্ন ধরনের স্টেসে পরে যেমন খুব গরম বা শীত, অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, মুরগীর ঘনত্ব (কম জায়গায় বেশী মুরগী পালন), অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা, অনেক বেশী আলোর তীব্রতা ইত্যাদি। যে কোন স্টেস দীর্ঘদিন যাবৎ থাকলে মুরগীর শরীর থেকে ষ্টেরয়েড নিঃসৃত হয় যা কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।
ইমুনোসাপ্রেশন প্রতিরোধ খামারীদের করণীয়:
(১) প্রথমত মুরগী পালনের জন্য এমন স্টেইন বাছাই করতে হবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী।
(২) মুরগীকে যে খাবার সরবরাহ করা হয়, তাতে নিদিষ্ট মাত্রায় ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যামোইনো এসিড থাকতে হবে। এই জন্য কোন পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক রেশন তৈরী করতে হবে।
(৩) মাইকোটক্সিন মুক্ত খাদ্য উপাদান (যেমন ভূট্রা, গম, রাইস পলিশ সয়াবিন মিল) সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য সরবরাহকৃত খাদ্য উপাদান নিয়মিত টেস্ট করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কিট পাওয়া যায় যা দ্বারা খুব সহজেই মাইকোটক্সিনের উপস্থিতি টেস্ট করা যায়।
(৪) নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট সিডিউল মোতাবেক ভ্যাকসিন করতে হবে। বিশেষ করে যেসব ইমুনোসাপ্রেশন ডিজিজ রয়েছে সেগুলো প্রতিরোধে সে সব ভ্যাকসিন আরো সচেতনতার সাথে করতে হবে।
(৫) লিটার ব্যবস্থাপনা অবশ্যই ভাল হতে হবে। লিটারে যাতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যামোনিয়া তৈরী না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ড্রিংকার বা নিপল লাইন থেকে পানি যাতে লিটারে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(৬) মুরগীর ঘনত্ব, অবশ্যই জায়গার অনুপাতে হিসাব করে দিতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমান ড্রিংকার ও ফিডার সরবরাহ করতে হবে। যাতে কোন প্রতিযোগিতা ছাড়াই অনায়াসে খাদ্য গ্রহণ ও পানি পান করতে পারে।
প্রাইভেট প্যাক্টিশনার্স(ঠাকুরগাও)