মুরগির ঠোকরাঠুকরি(cannabolism) এবং প্রলাপ্স এর কারণ ও সমাধান
ঠোকরাঠুকরিঃ
এটি মুরগির খারাপ অভ্যাস যার জন্য মূলত পরিবেশ বা ব্যবস্থাপনা দায়ী.
ডিম পাড়া অবস্থায় অনেক ফার্মে জটিল অবস্থার সৃস্টি হয়,অনবরত এক মুরগি আরেক মুরগিকে ঠোকরায়,ব্লিডিং হতে থাকে এবং অবশেষে মারা যায় যা অনেক সময় কন্টোল করা যায়না.
অনেক খামারি দেখেছি যারা শেষে প্রডাকশনের মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে এবং ১০০০ মুরগির মধ্যে কালিং এর সময় ৭০০ তে চলে আসে.
বাচ্চা মুরগির ক্ষেত্রে সহজেই সমাধান পাওয়া যায় কিন্তু প্রডাকশনের ক্ষেত্রে কঠিন তাই যাতে এই সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা করাই বুদ্ধিমানের কাজ.
হালকা জাতের মুরগি (সাদা) ভারি জাতের মুরগি ( বাদামি)থেকে বেশি ঠোকরাঠুকরি করে.
কারণ
১. অপর্যাপ্ত খাবার এবং পানির পাত্র
২. অল্প জায়গায় বেশি মুরগি
৩. ব্রুডিং এ বেশি তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা কম হলে
৪. অতিরিক্ত আলো
৫. পিলেট খাবার
৬. খাবারে অতিরিক্ত ভুট্রা
৭. অনেক ক্ষন ধরে খাবার না দেয়া
৮. ডিম পাড়ার বাসা কম থাকলে এবং বাসায় আলো বেশি থাকলে.
৯.গরম বেশি থাকলে
১০. ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি থাকলে.( ক্লোরিন,প্রোটিন,ক্যালসিয়াম এর ঘাটতি)
১১. উকুন বা যে কোন পরজীবী থাকলে
১২. অভার ওয়েট এবং এই অভার ওয়েট মুরগিতে প্রলাপ্স বেশি হয় মানে ভেজাইনা বের হয়ে আসে যা দেখতে লাল. এই লাল রং এর প্রতি মুরগির আগ্রহ বেশি যা ঠোকরাঠুকরিতে সাহায্য করে.
১৩. বায়ুচলাচল ভাল না হলে
১৪. আমাশয়
১৫. যে কোন ধকল
১৬. উচ্চ এনার্জি এবং নিন্ম ফাইবার যুক্ত খাবার.
১৭. অসুস্থ বা মৃত মুরগি ফার্মে বেশিক্ষণ রেখে দিলে
১৮. বিভিন্ন বয়সের মুরগি একসাথে পালন করলে
১৯।পেস্টি ডায়রিয়া
২০।মুরগির ইউনিফর্মিটি ভাল না হলে( ৮০% এর কম হলে)
২১।পালক দেরিতে উঠলে
২২।ডিমের সাইজ বড় হলে বের হতে চায়না কিন্তু জরায়ু বের হয়ে যায় যা থেকে ঠুকর দেয়।
২৩।ম্যাচুরিটি হবার আগেই ডিম পাড়া শুরু করলে
২৪।মুরগি স্থানান্তরিত করলে
২৫।ঠোট ছেকা বা কাটা ভাল না হলে
২৬।Infection Of Uropygial gland(Oil gland)
২৭ জেনেটিক,একই কোম্পানীর বাচ্চা বিভিন্ন ফার্মে ঠোকরাঠুকরি দেখা যায়।
প্রকারভেদ
১. ভেন্ট পিকিং
২. ফেদার পিকিং( অল্প জায়গায় বেশি মুরগি পালন করলে,ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি হলে দেখা যায়)
১. ভেন্ট পিকিং: বেশি মারাত্মক কারন এটা দ্বারা ই মুরগি মারা যায়,যা হেবিওয়েট মুরগিতে বেশি দেখা যায়.
যখন মুরগি ডিম পাড়া শুরু করে তখন যদি বড় ডিম হয় তখন ডিম পাড়ার সময় ভেন্টের চামড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ক্লোয়েকার মিউকাস মেমব্রেন দেখে অন্য মুরগি আকর্ষিত হয়. ফলে এখানে ঠোকরাতে থাকে এবং একটার দেখাদেখি অন্য মুরগিও ঠোকরায়.
এভাবে সমস্ত মুরগিতে অভ্যাস ছড়িয়ে যায়.
(একই পরিবেশ হলেও দেখা যায় একটি রুমে সমস্যা কিন্তু অন্য কোন রুমে সমস্যা নেই.)
প্রতিরোধ:
উপরের বিষয়গুলি সমাধান করলেই চলবে.
চিকিৎসা করে প্রায় সময়ই ঠিক করা যায় না।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল
১. সঠিক পরিমান খাবার এবং পানির পাত্র
২. বেশি ক্ষন খাবার অফ না রাখা
৩. সঠিক আলোর তীব্রতা কমিয়ে দেয়া ও লাল আলো দেয়া
৪. সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে ঠোটকাটা
৫।নিম পাতা,লেটোস পাতা(নন সলোবল ফাইবার দেয়া)
৬।পানিতে লবন দেয়া ৫দিন
৫. ব্যবস্থাপনা,ব্যবস্থাপনা,ব্যবস্থাপনা.
(সমস্যার সমাধান না হলে ঠোটছেকা বা কাটতে হবে যদিও কিছুদিন প্রডাকশন কম হয়)
প্রলাপ্স
অভিডাক্টের(জরায়ু) নিচের অংশ ভেন্ট(পায়ুপথ) দিয়ে যাবার কন্ডিশনই হলো প্রলাপ্স
প্রিডিস্পোজাল ফ্যাক্টরঃ
মুরগি যদি অধিক ঘন হয়
পেলবিক রিজনের ডেভেলপমেন্ট যদি ভাল না হয়
লবণের ঘাটতি
খাবারে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ঘাটতি
poor development of the pelvice as result of low levels of estrogen level in circulation due to poor nutrition which is not balanced.
প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা ঃ
১৬ ঘন্টার বেশি আলো দেয়া যাবে না,১৫ ঘন্টা হলে ভাল।
ওপেন হাউজে আলোর তীব্রতা ৪০লাক্স আর কন্টোল হাউজে ২০-৩০লাক্স।
পানিতে ভিটামিন সি দিতে হবে।
১লিটার পানিতে ১গ্রাম লবণ দিতে হবে।
খাবারে এনার্জি কমাতে হবে কারণ এই ফ্যাট মাংসে জমা হয় ফলে মাসল নমণীয় হয়ে যায়,এতে প্রলাপ্স বেড়ে যায়।
Decrease energy level as fat is increased in muscular layer which weaken the muscles and ultimately prolapsed occurs .
সাইট্রিক এসিড খাবারে দিতে হবে যাতে ইনঅর্গানিক ও অর্গানিক ক্যালসিয়ামের ডিসলব (Dissolve) ভাল হয়।
#যে_সমস্ত_কারণে_অধিকাংশ_মুরগি_খামারিরা_লাভের_মুখ_দেখতে_পারে না।
এ মুরগি পালনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে অনেক বিষয়ের।সেজন্য মুরগির জীবন চরিত্র সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন।কিছু বিষয় মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক আর কিছু বিষয় মুরগির উৎপাদন হ্রাস করে। মারা যায়ও অনেক মুরগি।মুরগির এমন কিছু বদঅভ্যাস লক্ষ করা যায়, যার ফলে মুরগির কাক্সিক্ষত মান অর্জনে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এসব অবস্থার মধ্যে ক্যানাবলিজম,ডিম খাওয়া,কুচে হওয়া,পালক খাওয়া ইত্যাদি অন্যতম। তাই মুরগির এসব বদঅভ্যাসকে চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুব জরুরি। এগুলো নিচে আলোকপাত করা হলো।
ক্যানাবলিজম : মুরগির বদঅভ্যাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং ক্ষতিকর হলো ক্যানাবলিজম।এটা যে কোনো বয়সের মুরগির হতে পারে। এটা খুবই ব্যয়বহুল সমস্যা যা খামারির ক্ষতি সাধন করে থাকে কিন্তু অনেক সময় খামারি তা বুঝতে পারেন না।ক্যানাবলিজমের কয়েকটা ভাগ রয়েছে যেমন।
১. #ভেন্ট_পিকিং
২. #ফিদার_পিকিং
৩. #টই_পিকিং
#ভেন্ট_পিকিং : এটা মূলত বড় মুরগির ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায় এবং লেয়ার মুরগির বদঅভ্যাস।এ অভ্যাসের কারণে মুরগির পায়ুপথের নরম মাংশে আঘাত করে রক্ত গ্রহণ করে।এর ফলে মুরগির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় এবং মুরগির উৎপাদন কমে যায়।অনেক সময় এর ফলে মুরগির মৃত্যও ঘটে থাকে। আর মুরগি যদি একবার রক্তের স্বাদ পায় তাহলে সে অন্য মুরগিকে ঠোকরাতে থাকে এবং এ অভ্যাসটা পুরো ফ্লকে ছড়িয়ে পড়ে।
নিম্নোক্ত এক বা একাধিক কারণে মুরগির ক্যানাবলিজম হয়ে থাকে-
১. #মুরগির_ঘনত্ব_বৃদ্ধি : মুরগিকে তার প্রয়োজন মতো জায়গা দিতে হয়।সেক্ষত্রে যদি তার জায়গার ঘাটতি হয় সেক্ষেত্রে এ বদঅভ্যাস শুরু হয়ে যেতে পারে। বাচ্চার জন্য নির্ধারিত জায়গা হলো-
প্রতি বাচ্চার জন্য (প্রথম ২ সপ্তাহ) ১/৪ স্কোয়ার ফিট,
প্রতি মুরগির বাচ্চার জন্য (৩-৮ সপ্তাহ) ১/২ স্কোয়ার ফিট,
প্রতি মুরগির জন্য (৮-১৬ সপ্তাহ) ১ স্কোয়ার ফিট,
প্রতি মুরগির জন্য (১৬ সপ্তাহের পর থেকে) ১.৫ স্কোয়ার ফিট।
এর কম হলে ক্যানাবলিজম দেখা যায়।
২. #অতিরিক্ত_তাপ : যখন মুরগির খামারে অসহ্য গরম দেখা যায় তখন মুরগির মধ্যে ক্যানাবলিজম মারাত্মক আকারে লক্ষ করা যায়।অতিরিক্ত তাপের ফলে মুরগির বিপাকক্রিয়া ভালো হয় না।যার ফলে মুরগির খাদ্যের প্রতি অনীহা দেখা যায়।গরমে একে অপরের সঙ্গে হিংসাত্মক ভাব প্রদর্শন করে।যার ফলে এক মুরগি অন্য মুরগিকে ঠোকর মারতে থাকে।
৩. #অপর্যাপ্ত_খাদ্য_ও_পানির_পাত্র : মুরগির জন্য সর্বদা পানির সরবরাহ রাখতে হয়।মুরগি তার প্রয়োজন মতো পানি পান করতে থাকে। পানিপাত্রের অভাব হলে মুরগির মধ্যে হিংসাত্মক ভাব প্রকাশ পায়।প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পানি ও খাদ্য গ্রহণ করে। আর এসব অবস্থার জন্য মুরগির মধ্যে ক্যানাবলিজমের প্রভাব বেড়ে যায়।
৪. #মুরগিকে শুধুমাত্র দানাদার খাদ্য খাওয়ানো :মুরগির খাদ্যে পিলেট ও ম্যাস উভয়ের মিশ্রণ থাকা খুব জরুরি।শুধু দানাদার খাদ্য খাওয়ালে মুরগির মধ্যে কিছু বদঅভ্যাস সৃষ্টি হয়।এদের মধ্যে ক্যানাবলিজম ও অন্যতম। মুরগির দানাদার খাদ্য খেতে খেতে ঠোকরানো প্রভাব বেশি হতে থাকে।তাই পরিমিত দানাদার ও ম্যাস ফিড (গুঁড়া খাবার) খাওয়ানো উত্তম।
৫. খাঁচায় অবস্থান সংকট : খাঁচায় মুরগি পালন করা হলে নিয়মমতো মুরগির জন্য স্থান প্রয়োজন।আর খাঁচায় যদি মুরগি পালন কালে জায়গার ঘাটতি পড়ে তাহলে খাদ্যের ঘাটতির সঙ্গে মুরগির প্রতিযোগিতা স্বরূপ একে অপরের সঙ্গে মারামারিসহ ঠোকরানো শুরু করে।ফলে ক্যানাবলিজমের প্রভাব বাড়তে থাকে।
৬. #সময়মতো সঠিক চিকিৎসার অভাব হলে : মুরগি কোনো জীবাণু বা কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। অন্তত তাকে আলাদাকরণ খুব প্রয়োজন।আর এ চিকিৎসার যদি কোনো ঘাটতি হয় এবং যদি দেরি হয় তাহলে অন্য মুরগি সেই আক্রান্ত মুরগিকে নতুন করে ঠোকরানো শুরু করে। আর এ অবস্থায় যদি কোনোভাবে রক্তের স্বাদ পায় তাহলে সেই মুরগির মধ্যে এ ঠোকরানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। এবং এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যে খামারের অন্য মুরগির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে যা সহজে রোধ করা কষ্টকর।
৭. #পরজীবী_ও_উকুনের_আক্রমণ : মুরগি খুব সংবেদনশীল পাখি। অল্পতেই যে বিরক্ত এমনকি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।গরম ঠাণ্ডার বেশি পার্থক্য হলেই অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর মুরগিতে পরজীবীর আক্রমণ খুব সাধারণ একটা বিষয়।পরজীবীর আক্রমণ হলে মুরগি খুব অশস্তি বোধ করে। এর ফলে আক্রমণের স্থান চুলকায়। যার কারণে সে নিজের ঠোঁট দিয়ে তা চুলকাতে চেষ্টা করে।এতে কাজ না হলে পরে অন্য কোনো শক্ত জিনিসের সঙ্গে নিজের শরীর লাগিয়ে দিয়ে সেই যন্ত্রণা হতে মুক্তির চেষ্টা করে। আর এ রকম অবস্থায় মুরগির পালক উঠে যায় এমনকি মুরগির রক্তক্ষরণও হতে পারে। যদি মুরগির সেই ক্ষরিত রক্ত কোনো মুরগি গ্রহণ করে তাহলে সেই মুরগির মধ্যে রক্তের নেশা লেগে যায়। ফলশ্রুতিতে অন্য সুস্থ মুরগিকে আক্রমণ করে রক্ত শোষণ করতে শুরু করে। পরে এক সময় তা ব্যাপক হারে মুরগির ফ্লকে ছড়িয়ে পড়ে।
৮. #সময়মতো ও সঠিক মাত্রায় মুরগির ঠোঁট না কাটা : মুরগির ক্ষেত্রে ঠোঁট কেটে ছোট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত লেয়ার (ডিম পাড়া) মুরগির ক্ষেত্রে। মুরগির ঠোঁট বেশি বড় থাকলে সে যেমন খাদ্যের অপচয় করে ঠিক তেমনি তার বড় ঠোঁটের বড়ত্ব দেখিয়ে অন্য মুরগিকে আক্রমণ করে থাকে। আর এ ধরনের মুরগির মধ্যে ডিম খাওয়ার প্রবণতাও বেশি থাকে। এর ফলে মুরগির উৎপাদনের অনেকটা ক্ষতি হয়।
৯. দীর্ঘক্ষণ না খাইয়ে রাখা : মুরগিকে তার প্রয়োজনীয় খাবার সময় মতো খাবার দিতে হয়। দীর্ঘক্ষণ খাবার ছাড়া থাকলে মুরগির ভেতরে ফেদার পিকিং এর প্রবণতা বেড়ে যায়। খাবারের তাগিদে তারা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে।
১০. #ঘরে_আলোর_তীব্রতা_বেশি_হলে : প্রয়োজন মতো আলো মুরগির জন্য খুবই জরুরি। এর চেয়ে মাত্রা বেশি হলে তা ক্ষতিতে রূপ নিতে থাকে।
১১. #মুরগির_বংশগত_স্বভাব_হলে : কিছু মুরগির বংশগতভাবে ফিদার পিকিং এ আক্রান্ত থাকে। যার ফলে খামারে তা রোধ করা সহজ হয় না।
১২. #উচ্চ_পুষ্টিসম্পন্ন_খাদ্য_এবং_কম_ফাইবার_যুক্ত_খাবার : মুরগির ক্ষেত্রে অতি উচ্চশক্তির খাদ্য খাওয়ালেও এ সমস্যা সৃষ্টি হয়।আর খাবারে ফাইবার কম থাকাটাও একটা অন্যতম কারণ।যার ফলে ক্যানাবলিজমের স্বভাব বৃদ্ধি পায়।
#ক্যানাবলিজমের_প্রতিকার : কথায় আছে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।ক্যানাবলিজমের ক্ষেত্রেও একই কথা। একবার ক্যানাবলিজম হলে খুব সহজেই তা দূর করা কষ্টকর। তবে কিছু বিষয়ের ওপর সজাগ দৃষ্টি দিলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।যায় এর প্রভাবে ক্ষতির পরিমাণ কমানো। যে বিষয়ের ওপর বিশেষ যতœ নিতে হবে তা হলো-
১. সুষম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে : মুরগিকে তার প্রয়োজনমতো সব পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতি ঠিক রেখে সুন্দরভাবে খাদ্য প্রস্তুত করতে হবে। কোনো ঘাটতি যেন না থাকে সে ক্ষত্রে লক্ষ রাখতে হবে। ভিটামিন ও মিনারেলের ওপর সুনজর রাখতে হবে। আর মুরগি সাধারণত যে অর্গানিক উপাদানগুলো গ্রহণ করে থাকে তাই উৎপন্ন মাংস ও ডিমে সরবরাহ করে। তাই তার নিজের খাদ্যে যদি এগুলো উপাদানের ঘাটতি থাকে তাহলে সে দিনে দিনে ঘাটতিতে পড়ে যাবে। আর সব উপাদান ভালো মাত্রায় রাখলে এ ক্যানাবলিজমের পরিমাণ অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।
২. পর্যাপ্ত পানির ও খাদ্যের পাত্রের সরবরাহ বাড়াতে হবে : মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী পাত্রের সংখ্যা নির্ধারণ করে তাতে পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। খাবারের জায়গা সবসময় পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। খাবার পরিমাণ মুরগির বয়স অনুযায়ী নির্ধারণ করে মুরগির সংখ্যার সঙ্গে তালমিলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
৩. সময়মতো ডিবেকিং (ঠোঁট ছোট) করা : বর্তমানে সহজ উপায়ে মুরগির ক্যানাবলিজম দূর করার জন্য ডিবেকিংকেই একমাত্র প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।বিশেষত লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে ঠোটের এক-তৃতীয়াংশ কেটে দিতে হবে। আর এ সময় মুরগির রক্তক্ষরণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন- দক্ষ লোক দ্বারা এ কাজ সম্পন্ন করা,
* আইরন ব্রান্ড কে পর্যাপ্ত তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা,
সতর্কতার সঙ্গে মুরগিকে ধরা এবং মেশিনে স্থাপন করা,
* পরিমাণ মতো ঠোঁট কাটা .বেশি না কাটা,
* ঠোঁট কাটার পর মুরগির স্ট্রেস (ধকল) কমানো জন্য ভিটামিন সি অথবা লেবু পানি খাওয়ানো।
৪. পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করা : সব মুরগিকে তার নিজের সব কাজ সঠিকভাবে করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা দিতে হবে।
৫. মুরগির ভিড় কমানো :বেশি মুরগি একসঙ্গে গাদাগাদি করে যেন না থাকে সে দিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে।
৬. পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. শেডের আলো সব জায়গায় যেন সমভাবে ব্যাপ্ত হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে।লাইট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৪০ ওয়াটের ওপর বাল্প ব্যবহার করা উচিত নয়।
৮. পোলট্রি খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে মিথিওনিন সরবরাহ করতে হবে। মিথিওনিন ক্যানাবলিজম প্রতিরোধ করতে বেশ সহায়তা করে
#ডিম_খাওয়া
ডিম পাড়া মুরগির আরও একটি মারাত্মক বদঅভ্যাস হলো নিজের ডিম নিজে খাওয়া।এটা প্রায়ই লেয়ার খামারে দেখা যায়।এর ফলে খামারি তার লাভের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না।
যেসব কারণ আছে ডিম খাওয়ার পেছনে-
দীর্ঘক্ষণ ডিম খাঁচায় রাখা।
যদি কোনো কারণে একবার ডিম ভেঙে যায় এবং সেই ডিম যদি মুরগি খেয়ে স্বাদ পায় তাহলে পরে সে নিজের ভালো ডিম খেতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
ডিমের খোলস যদি খুব পাতলা হয়।রক্ত বা ভেজা ভেজা অবস্থার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।
মুরগির খাবারে যদি প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,ডি৩ এর অভাব হয়।
#সমাধান
১. মুরগিকে পরিমিত সব উপাদান দেয়া প্রয়োজন,\(ঝিনুক চূর্ণ বা পাথর প্রতি মুরগির জন্য ২গ্রাম ১ মাস,বোন মিল,ডি৩ ( ডি ব্যালেস ১মিলি ১লিটারে ১০দিন) দিতে হবে।
তিরল দুধ দিলেও কাজ হয়.১০০০ মুরগিকে ১লিটার সিদ্ধ করে।
২. যত দ্রুত সম্ভব মুরগির ডিম অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে,
৩. মুরগির ঠোঁট কেটে দিতে হবে।
৪. মুরগির খাবারে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের সরবরাহ বাড়াতে হবে।ক্যালসিয়াম ডিমের সেল গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৫. মুরগির ডিম পাড়ার জায়গা তুলনামূলক ঢালু করে রাখতে হবে। এতে ডিম পাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা নিচে চলে আসে।
৬. ডিম পাড়া স্থানে তুলনামূলক অন্ধকার হলেও এ অভ্যাসের প্রকোপ কমে।
৭. ডিম সংগ্রহের বিরতি কমাতে হবে।
#ডিম_লুকানো
যদিও ডিম লুকানো অভ্যাস মূলত বন্য মুরগির ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। তারপরও জেনেটিক্যালি (বংশগত ভাবে) কিছু মুরগির মধ্যে এ অভ্যাস চলে আসতে পারে। আর এ অভ্যাসে আক্রান্ত মুরগি তাদের ডিম কে মানুষের চোখের অন্তরালে লুকিয়ে রাখে।
#সমাধান
মুরগির মুক্ত চলাচলে বাধা প্রদান।
ডিম পাড়ার স্থানটা খামারের ভেতরেই রাখতে হবে সঙ্গে বালু বা খড় দিয়ে তা আরামদায়ক করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
মুরগির মধ্যে যাদের এ স্বভাব দেখা দেবে তাদের আলাদা করে খাঁচায় পালনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কোনো কোনো মুরগি অস্বাস্থকর পরিবেশে পালক খাওয়া শুরু করে। যদিও এ সমস্যা খুব একটা মারাত্মক নয়। তারপরও এ অভ্যাস হতে আস্তে আস্তে ক্যানাবলিজমের দিকে ধাবিত হয়। আর একবার এ অভ্যাস হয়ে গেলে তা দূর করা খুব দুরূহ হয়ে পড়ে।
এ অভ্যাস কমানোর অন্যতম উপায় হলো মুরগির পরিবেশ ও বাসস্থান পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখা। খাবার দেয়ার সময় দানাদার ও গুঁড়া খাবার একসঙ্গে দেয়া উচিত।
#কুচে_হওয়া
ডিম পাড়া মুরগির খুবই পরিচিত সমস্যা এ কুচে লাগা। একটা নির্দিষ্ট সময় ডিম দেয়ার পর সেই মুরগি ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়।
ব্রুডি হেন (কুচে মুরগি) ডিম দেয় না কিন্তু সে তার জায়গা ধরে রাখে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ফলে অন্য মুরগির ডিম পাড়ার জায়গা দখল করে থাকে। কুচে মুরগি খুব আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করে এবং তাকে তার জায়গা হতে সরানো কষ্টকর।
কুচে হওয়া মুরগির সমাধান
তাকে আলাদ করে রাখতে হবে।
ডিম পাড়া মুরগির সামনে বেশি ডিম একসঙ্গে না রাখা। তার ফলে কুচে হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
কুচে লেগে বসে থাকা মুরগিকে বসে থাকতে না দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানো। এটাও খুব সাধারণ ফলপ্রসূ নিয়ম।
উপযুক্ত খাবার সরবরাহ করা।
#পিকা
মুরগি অনেক সময় যা খাওয়ার উপযুক্ত নয় তাও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। মুরগির এ স্বভাবকে পিকা বলা হয়। যেমন লিটার, পালক ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এ অভ্যাস আধুনিক মুরগির খামারে তেমন নেই বললেই চলে। অনেক সময় ফসফরাসের ঘাটতি হলে, পরজীবীর আক্রমণ হলে এ অভ্যাস লক্ষ করা যায়।
#সমাধান : ভালো খামার ব্যবস্থাপনা এবং ফসফরাসের পরিমাণ ঠিক রেখে খাবার প্রদান করলে এ সমস্যার সমাধান খুব দ্রুত হয়।
#গাছে_উঠা : কিছু কিছু মুরগি তাদের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা বাদ দিয়ে রাতের বেলায় গাছে উঠে থাকে। এটা গ্রামের মুরগির ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। এ সমস্যায় আক্রান্ত মুরগি অনেক সময় বনবিড়াল ও শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়। ভয় পেয়ে অনেক মুরগি তাদের ডিম উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এসব মুরগির ডানা অল্প পরিমাণে কেটে দিতে হবে যেন উড়ে গাছে উঠতে না পারে। আর সজাগ দৃষ্টি রেখে তা প্রতিহত করা যায়।
খামার করে লাভবান হতে হলে ওপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে তার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বদঅভ্যাসগুলো খামারে দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা কমাতে হবে। তাহলেই নিজের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।