ব্রয়লার_মুরগী_নিয়ে_অপপ্রচারের_জবাব :
আমরা কি জানি গার্মেন্টস শিল্পের পরেই এবং দেশের ২য় বৃহত্তম যে শিল্পটা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশী লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে সে শিল্পটির নাম কি? সে শিল্পটির নাম পোল্ট্রি শিল্প। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ও নারীর ক্ষমতায়নে কৃষির পরেই যে শিল্পটি অবদান রাখে সে শিল্পটির নাম পোল্ট্রি শিল্প। সরকারের বিমাতা সুলভ আচরণ, বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি ও অপপ্রচারের পরেও যে শিল্পটি বাংলাদেশে নীরব বিপ্লব সাধিত করে চলছে সেই শিল্পটির নাম পোল্ট্রি শিল্প। দেশে প্রত্যক্ষ্য ভাবে প্রায় ৬০ লক্ষ ও পরোক্ষ্য ভাবে প্রায় সোয়া কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে যে শিল্প সে শিল্পের নাম পোল্ট্রি শিল্প। বাংলাদেশে মোট আমিষের (মাংস+ডিম) চাহিদার প্রায় ৫০-৬০ ভাগই আসে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১ শতাংশ আসে যে শিল্প থেকে তার নাম পোল্ট্রি শিল্প। জাতীয় অর্থনীতিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান ২.৪ শতাংশ। বর্তমানে এই শিল্পে মোট বিনিয়োগের পরিমান প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
(তথ্যসূত্রঃ দৈনিক জনকন্ঠ, ২রা অক্টোবর, ২০১৭)
তথ্যগুলো দিলাম এই শিল্পের অবদান ও ব্যাপকতা বুঝানোর জন্য। কারণ বাংলাদেশে কোন শিল্প যখন পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হতে থাকে তখনই সে শিল্পটিকে ধ্বংস করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। পাট, তৈরী পোষাক শিল্প তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই পোল্ট্রি শিল্পটিকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র যে শুরু হয়ে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই ষড়যন্ত্রগুলোর মাঝে পোল্ট্রি প্রোডাক্ট যেমন, (ব্রয়লার মুরগীর মাংস, ডিম) নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার অন্যতম। অনলাইন ও অফলাইনে কিছু অপপ্রচারের নমুনা দেখি-
অপপ্রচার_০১
ব্রয়লার মুরগীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কারন এতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে।
অপপ্রচার_০২
ব্রয়লার মুরগীর মাংস খেয়ে মানবদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে।
অপপ্রচার_০৩
বাজারে প্রাপ্ত ফার্মের ডিমগুলো সব প্লাস্টিকের ডিম।
যাই হোক চেষ্টা করবো একে একে সবগুলো অপপ্রচারের জবাব দিতে। আজ একটি রিপোর্টে ব্রয়লার মুরগী নিয়ে যে অপপ্রচার দেখলাম সে বিষয়েই জবাব দেবার চেষ্টা করবো।
এই রিপোর্টটা প্রথম দেখি ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ কলকাতার “আনন্দবাজার পত্রিকায়”। ঐ দিনই “কালের কন্ঠ” সেই রিপোর্টটা হুবুহু কপি করে তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশ করেন। তারপর একে একে সব অনলাইন পোর্টালেই নিউজটা দেখতে পাই। দুঃখের বিষয় যারা নিউজটা প্রকাশ করেছেন তারা একটিবারও নিউজে বিদ্যমান তথ্যগুলোর সত্যতা খতিয়ে দেখেন নি? জাস্ট কপি-পেষ্ট করে দিয়েছেন। এটাই কি সাংবাদিকতার মূলনীতি? যাই হোক তারা নিউজটা প্রকাশের পূর্বে পোল্ট্রি স্পেশালিস্ট/ভেটেরিনারিয়ানের মতামত নিতে পারতেন। এই নিউজটা প্রকাশের ক্ষেত্রে সেই কাজটিও করা হয় নি। তারপরে কোন রেফারেন্স ছাড়া নিউজটিতে যে সব বিষয় বলা হয়েছে তাতে নিউজটি প্রথমেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
যাক সে কথা আমি আজ এই মিথ্যা, ভূলে ভরা নিউজটিতে ব্যবহৃত কুযুক্তি/অপপ্রচারগুলো খন্ডন করার চেষ্টা করবো।
কুযুক্তি_বা_অপপ্রচার_০১
এতে বলা আছে কাঁচা মাংসে ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ব্রয়লার মুরগীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
জবাবঃ
কাঁচা মাংসে যে ব্যাকটেরিয়া থাকে সেটা সবাই জানি। আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ প্রত্যেকটা প্রাণীদেহেই ব্যাকটেরিয়া থাকে, হোক সেটা ব্রয়লার মুরগীর মাংস, গরুর মাংস, ছাগলের মাংস বা মানব দেহ। ব্যাকটেরিয়ার ভয়ে কি সকল প্রকার মাংস খাওয়া বাদ দিবেন? অনেকে হয়তো জানেন না সকল ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর নয়। কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের জন্য ভাল।
যাই হোক ব্যাকটেরিয়া মূলত দুই প্রকার।
ক. হিট স্ট্যাবল (তাপ প্রয়োগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না)
খ. হিট লেবাইল (তাপ প্রয়োগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়)
বেশিরভাগ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া হিট লেবাইল গ্রুপভুক্ত। অর্থাৎ তাপ প্রয়োগে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। বিদেশের মানুষ মাংস কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংস খেয়ে থাকে ফলে তাদের কাঁচা মাংসে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পেটের সমস্যা হবার সম্ভবনা আছে। কিন্তু আমরা বাঙালিরা যেভাবে তাপ প্রয়োগে মাংস রান্না করি তাতে হিট লেবাইল ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ব্রয়লার মুরগীর মাংস আমাদের জন্য সম্পূর্ন নিরাপদ। এতে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের কোন সম্ভবনা নেই।
(তথ্যসূত্রঃ http://www.biologydiscussion.com/…/heat-sensitivity-o…/59095)
কুযুক্তি_বা_অপপ্রচার_০২
ব্রয়লার মুরগীতে নাকি এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া হয়। যার কারনে মানবদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে যাচ্ছে।
জবাবঃ
সম্পূর্ন দায়িত্ব নিয়ে বলছি বাংলাদেশের কোথাও ব্রয়লার মুরগীতে এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হয় না। ব্রয়লার মুরগীর রোগের চিকিৎসায় যে এন্টিবায়োটিকগুলো ব্যবহৃত হয় তা মুলত পাউডার ফর্মে ও সল্যূশন হিসেবে পাওয়া যায়। সুতরাং ব্রয়লার মুরগীতে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশনের তথ্যটি পুরোটাই বানোয়াট।
যাক সে কথা এবার আসি ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাওয়ার কারনে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়ে। মুলত ব্রয়লার মুরগীর চিকিৎসায় যে সমস্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় তার ৯০ শতাংশই মানবদেহে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না।
আসুন একটু দেখার চেষ্টা করি পোল্ট্রি ও লাইভস্টকে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক গুলো দিয়ে মানবদেহে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সী হবার সম্ভবনা কতটুকু…
১. পোল্ট্রি ও লাইভস্টকে ব্যবহৃত অনেক মেডিসিন মানুষে ব্যবহার হয় না। যেমনঃ টাইলোসিন, এনরোফ্লক্সাসিন, ফ্লুমিকুইন, টিয়ামুলিন ইত্যাদি। তাই এক্ষেত্রে পোল্ট্রি ও লাইভস্টকে ব্যবহৃত এসব এন্টিবায়োটিক দ্বারা মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সীর কোন প্রশ্নই আসে না।
২. আবার পোল্ট্রি ও লাইভস্টোকে এমন কিছু এন্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয় যেগুলো মানুষে ব্যবহার হলেও শতকরা হিসেবে অনেক কম। এগুলো আমাদের দেশে মানুষে তেমন একটা ব্যবহার হয় না বললেই চলে। যেমনঃ স্ট্রেপটোমাইসিন, নরফ্লক্সাসিন, পিফ্লক্সাসিন, কলিস্টিন সালফেট, রিফামপিসিন ইত্যাদি। পোল্ট্রি ও লাইভস্টকে ব্যবহৃত এসব এন্টিবায়োটিক দ্বারা মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সী হওয়া অসম্ভব। কারন রেজিস্ট্যান্সীর অন্যতম শর্ত হলো ক্রমাগত এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
৩. এরপর যে এন্টিবায়োটিক গুলো পোল্ট্রি-লাইভস্টক ও মানুষ উভয়তে সমানভাবে ব্যবহৃত হয় তাদের মাঝে আবার ২ ভাগ আছে।
ক. হিট লেবাইল (তাপ প্রয়োগে যে এন্টিবায়োটিক ধ্বংস হয়ে যায়)
খ. হিট স্ট্যাবল (তাপ প্রয়োগে যে এন্টিবায়েটিক ধ্বংস হয় না)
ক. হিট লেবাইল এন্টিবায়োটিক গুলোর মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সী করার কোন ক্ষমতা নেই। কারন এগুলো তাপে নষ্ট হয়ে যায়। আর পোল্ট্রি ও লাইভস্টকে ব্যবহৃত বেশীরভাগ এন্টিবায়োটিকই হিট লেবাইল গ্রুপ ভুক্ত।
যেমনঃ অক্সিটেট্রাসিইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন, ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, ইরাথ্রোমাইসিন, এমোক্সিসিলিন, সেফালোস্পোরিন (অল জেনারেশন) ইত্যাদি।
ল্যাব টেস্টে করে দেখা গেছে যে এই এন্টিবায়োটিক গুলো ১২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাত্র ১৫ মিনিট রেখে দিলে এদের MIC (Minimal Inhibitiry Concentration) ১৬ গুনের বেশী বৃদ্ধি পায়। অন্যভাবে বললে এদের কার্যক্ষমতা ১৬ গুন হ্রাস পায়। অর্থাৎ এই এন্টিবায়োটিক গুলোর সঠিক উইথড্রাল পিরিয়ড না মেনেও যদি মাংস, ডিম, দুধ খাওয়া হয় তারপরেও মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স হবার কোন সম্ভাবনা নেই। কারন আমাদের দেশে যে পরিমান তাপ প্রয়োগে মাংস, ডিম, দুধ রান্না করা হয় তা নিঃসন্দেহে ১২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস পেরিয়ে যায় আর সময়ের কথাটা নাইবা বললাম।
খ. আরো কিছু এন্টিবায়োটিক আছে যেগুলো পারসিয়ালি হিট স্ট্যাবল। অর্থাৎ তাপ প্রয়োগে এদের কার্যক্ষমতা মোটামুটি হ্রাস পায়। দেখা গেছে ১২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট তাপ দিলে এদের MIC, ৪-৮ গুন বৃদ্ধি পায়। যেমনঃ পেনিসিলিন জি, পলিমিক্সিন বি, রিফামপিসিন, এম্পিসিলিন, এমোক্সিসিলিন ইত্যাদি। এই এন্টিবায়োটিক গুলোওও মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সী করার তেমন কোন ভুমিকা নেই। কারন তাপ প্রয়োগে রান্না করলে ডিম, দুধ, মাংসে বিদ্যমান এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে।
গ. আর যে দুই একটি হিট স্ট্যাবল এন্টিবায়োটিক আছে সেগুলোও সঠিক উইথড্রাল পিরিয়ড মেনে ব্যবহার করলে মানুষে এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স হবার প্রশ্নই আসে না। যেমনঃ সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লোরামফেনিকল, জেন্টামাইসিন, সালফার ড্রাগ (অল ফর্ম) ইত্যাদি। এর মাঝে জেন্টামাইসিন ও ক্লোরামফেনিকল ব্রয়লারে কালে-ভদ্রে ব্যবহৃত হয়। যদিও ১২১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপে ১৫ মিনিট তাপ দিলে এদের MIC, ২ গুন বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ কার্যক্ষমতা অর্ধেক হ্রাস পায়।
হিট লেবাইল এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা মাংস তাপ প্রয়োগে রান্না করলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। ফলে এই ধরনের এন্টিবায়োটিকের রেজিট্যান্সী আসার কোন সম্ভবনাই নেই। অপর দিকে সঠিক উইথড্রাল পিরিয়ড মেনে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে ও মাংস খেলে সেক্ষেত্রেও এন্টিবায়োটিক রেজিট্যান্সীর সম্ভবনা নেই। আমরা ভেট রা মানব স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, এন্টিবায়োটিক ফ্রি ব্রয়লার মুরগী ও ডিম উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করছি।
(তথ্যসূত্রঃ https://www.google.com/url…)
কুযুক্তি_বা_অপপ্রচার_০৩
ব্রয়লার মুরগীর মাংস খেলে ক্যান্সার হয়। এবং ব্রয়লার মুরগীতে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
জবাবঃ
প্রথম অপপ্রচারের জবাব দেই। রিপোর্টার নিজেই বলেছে “ব্রয়লার মুরগীর মাংস খাওয়ার কারনে ক্যান্সার হয়” এই কথাটির কোন তথ্য প্রমান নেই। তাহলে তথ্য প্রমানহীন এমন একটি গুরত্বপূর্ন বিষয় প্রকাশ করার কারন কি হতে পারে? অনেকেই ব্রয়লার মুরগীর দ্রুত বর্ধনশীলতার কারনে হয়তো ভাবেন যে ব্রয়লার মুরগীর খাদ্য হয়তো এমন কিছু দেয়া থাকে যা মানবদেহের ক্ষতি করতে পারে। ব্রয়লার মুরগীর দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মুলত এর জেনেটিক্সগত উন্নতিসাধন ও সুষম খাদ্য দায়ী। ব্রয়লার মুরগীর জিনগত ভাবেই এমন দ্রুত বর্ধনশীল। সাথে সুষম পুষ্টিযুক্ত খাদ্য এর বৃদ্ধির হারকে ত্বরান্বিত করে। সুতরাং ব্রয়লার মুরগী খেলে ক্যান্সার বা অন্য কোন রোগ হবার সম্ভবনা বিন্দু মাত্র নেই।
দ্বিতীয় অপপ্রচারে বলা হয়েছে ব্রয়লার মুরগীতে নাকি প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে। অপপ্রচারের জবাব দেবার আগে কিছু বিষয় জেনে নেই।
মাংস প্রধানত দুই প্রকার।
১. লাল মাংস। (যেমনঃ গরুর মাংস, ছাগলের মাংস, ভেড়ার মাংস)
২. সাদা মাংস। (ব্রয়লার মুরগীর মাংস, শুয়োর মাংস, খরগোসের মাংস)
লাল মাংস অপেক্ষা সাদা মাংসে শতকরা হিসেবে কোলেস্টেরল কিছুটা কম থাকে। যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে কোলেস্টেরল থাকে ৭২ মিলিগ্রাম, শুয়োরের মাংসে থাকে ৭০ মিলিগ্রাম এমনকি প্রতি ১০০ গ্রাম মাছেও কোলেস্টেরল থাকে ৭০ মিলিগ্রাম। যেখানে প্রতি ১০০ গ্রাম ব্রয়লার মুরগীর মাংসে কোলেস্টেরল থাকে মাত্র ৬৪ মিলিগ্রাম। সুতরাং দেখা যাচ্ছে অন্যান্য মাংস এমনকি মাছের চেয়েও ব্রয়লার মুরগীর মাংসে কোলেস্টেরল কম থাকে। তাই যারা কোলেস্টেরল সচেতন তারা নিশ্চিন্তে ব্রয়লার মুরগীর মাংস খেতে পারেন।
(তথ্যসূত্রঃ https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_cholesterol_in_foods)
কুযুক্তি_বা_অপপ্রচার_০৪
ব্রয়লার মুরগীকে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন কিছু কেমিক্যাল ও ঔষধ খাওয়ানো হয় যার কারনে ব্রয়লার
মুরগী দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
জবাবঃ
আগেই বলেছি ব্রয়লার মুরগীর দ্রুত বৃদ্ধি পাবার পিছনে এর জিনগত উন্নতি সাধন ও সুষম পুষ্টিযুক্ত খাবার দায়ী। ব্রয়লার মুরগীর মেটাবলিজম ক্ষমতা অন্যান্য দেশী মুরগীর চেয়ে বহুগুন বেশী। তাই ব্রয়লার মুরগী যে খাবার খায় তাতে বিদ্যমান পুষ্টির সর্বোচ্চ পরিমান শরীরে শোষিত হয় যা দেশী মুরগীর ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাই অধিক পুষ্টি শরীরে শোষিত হবার কারনে ব্রয়লার মুরগী দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এখানে বলে রাখা ভাল যে ব্রয়লার মুরগীর দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য কোন প্রকার স্টেরয়েড, হরমোন বা অন্য কোন কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় না। ১৯৫৭ সালে একটি একদিনের বাচ্চা ওজন ছিল গড়ে ৩৪ গ্রাম আর ২৮ দিন ধরে লালন পালন করে ২৮ দিনে ওজন পাওয়া যেত গড়ে ৩১৬ গ্রাম। আর সেটা ২০০৫ সালে এসে একদিনের বাচ্চার ওজন পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ৪৪ গ্রাম আর ২৮ দিনে ওজন পাওয়া যায় গড়ে ১৩৯৬ গ্রাম। বর্তমানে ২০১৭ তে একদিনের বাচ্চার ওজন ৫০+ গ্রাম পাওয়া যাচ্ছে আর ২৮ দিনে পাওয়া যাচ্ছে গড়ে ১৫০০ গ্রাম। ব্রয়লার মুরগীর এই যে ওজন বৃদ্ধি সেটা কিছু রাতা-রাতি সম্ভব হয় নি। পোল্ট্রি জেনেটিক্সটিকদের অক্লান্ত চেষ্টায় আজ এমন দ্রুত বর্ধনশীল ব্রয়লারের জাত সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। সুতরাং দ্রুত বর্ধনশীল দেখে এতে কেমিক্যাল দেয়া হয় এমন চিন্তা করা বোকামী, অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না। তাই নিশ্চিতে ব্রয়লার মুরগী খেতে পারেন।
(তথ্যসূত্রঃ http://www.chickencheck.in/…/difference-faster-slower-grow…/)
কুযুক্তি_বা_অপপ্রচার_০৫
ব্রয়লার মুরগী খেলে নাকি ফুড পয়জনিং হবে। কারন ৬৭% ব্রয়লার মুরগীতে ই. কোলাই থাকে।
জবাবঃ
জবাব দেবার আগে একটু ই. কোলাই সম্পর্কে জেনে নেই। ই. কোলাই হলো একটি গ্রাম নেগেটিভ এন্টারিক ব্যাকটেরিয়া যা মুলত পেটের নানা সমস্যা বিশেষ করে এন্টারাইটিস করে থাকে। আচ্ছা ৬৭% ব্রয়লার মুরগীতে ই. কোলাই থাকে। বাকি ৩৩% এ থাকে না কেন? বায়ু সমুদ্রে থাকার পরেও আমরা যেমন বায়ুকে দেখতে পাইনা তেমনি ই. কোলাই সমুদ্রে থাকার পরেও আমরা ই. কোলাইকে দেখতে পারিনা। বিষয়টা ক্লিয়ার করি। ই. কোলাই হলো এমন একটা ব্যাকটেরিয়া যেটা প্রায় সবখানেই পাওয়া যায়। বিশ্বে প্রায় প্রতিটা প্রাণী দেহেই ই. কোলাই পাওয়া যাবে। এমনকি এখনই যদি আপনার মুখের ভিতরের লালা বা ত্বকের আণুবীক্ষনিক পরীক্ষা করা হয় সেখানেও ই. কোলাই পাওয়া যাবে। ব্রয়লার মুরগী তো কেন ছাড়। তাহলে আপনার মুখে ই. কোলাই থাকার পরেও আপনার ফুড পয়জনিং হচ্ছে না কেন? কারন আপনার দেহে ই. কোলাই সংখ্যায় কম আছে। রোগ সৃষ্টি করার জন্য সংখ্যায় বৃদ্ধির পাশাপাশি প্যাথোজেনিক স্ট্রেইন হতে হবে। তাই মুরগীতে ই. কোলাই থাকলেই ফুড পয়জনিং হবে এমন ভাবা মূর্খতা।
আরো সুখবর আছে। ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া ও এর দ্বারা সৃষ্ট টক্সিন মাত্র ৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা যে তাপে রান্না করি তা নিঃস্বন্দেহে ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা পেরিয়ে যায়। সুতরাং আমাদের রান্না করা ব্রয়লার মাংস দ্বারা ফুড পয়জনিং হবার চিন্তাও করবেন না।
(তথ্যসূত্রঃ http://www.who.int/mediacentre/factsheets/fs125/en/)
সকলের কাছে অনুরোধ দেশকে ভালবাসুন, দেশীয় শিল্পকে ভালবাসুন। এমন কোন অপপ্রচারে সামিল হবেন না যাতে দেশের ও দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
আসুন সকলে সচেতন হই। দেশের পোল্ট্রি শিল্পের পিছনে যে অপপ্রচার চলছে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেই।
