Breaking News

ব্রয়লার মুরগীর বাজার দর এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনাঃ

ব্রয়লার মুরগীর বাজার দরঃ
কিছু পর্যবেক্ষণ। পর্ব- ১
বাংলাদেশে বিগত কয়েক মাস ধরে জীবন্ত ব্রয়লারের দাম যে পর্যায়ে তা অবশিষ্ট খামারীদের ও এই পেশা ত্যাগ করতে বাধ্য করবে।
চলেন একটু মিলিয়ে নেই কয় স্তরে কারা কারা এই ব্রয়লার ব্যবসায় জড়িত-
নীচর স্তরে আছেঃ
ব্রয়লার খামারী- ডিলার-দাদন ব্যবসায়ী -পাইকারি ক্রেতা- খুচরা বিক্রেতা।
উপরের স্তরে
ফিড উৎপাদনকারী- ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদনকারী – মেডিসিন, ভ্যাক্সিন, ভিটামিন উৎপাদন এবং সরবরাহ কারী – ঋণদান কারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক।
আসুন দেখি আপনি এক জন ব্রয়লার খামারী হিসাবে কত জনের লাভের যোগান দিয়ে যাচ্ছেন?
উপরের যাদের অবস্থান আছে তারা প্রত্যেকেই ধাপে ধাপে লাভ করে বাচ্চা ,খাদ্য এবং ভিটামিন -মেডিসিন ,ভ্যাক্সিন আপনার হাতে তুলে দিচ্ছে।
ঝুঁকি আপনার শুরু হল ।
এবার লড়ে যান, শ্রম ঘাম পুঁজি সব ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে – যদি পেরিয়ে আসতে পারেন রোগ ব্যধি এবং অন্যান্য বালা মছিবত কাটিয়ে উঠে।
শেষ হাসি আসবেন সে পথ আপাতত বন্ধ, এক কেজি ব্রয়লার বিক্রি করে দেখলেন প্রতি কেজিতে ১২-১৫ টাকা পুঁজি নাই।
বাকিতে সব কিছু কিনেছেন, ক্যালকুলেটর টিপে এত দিন যে হিসাব মিলিয়েছেন বাকি শোধ করেও লাভের অংকটা নাদুসনুদুস দেখা গিয়েছিল।

ব্রয়লার বেচা বিক্রি শেষ, কোথায় কি?
এই বার না সে বার- আশা ফুরুত, দায় দেনা বাড়তেই থাকে।
চক্র কি করে ভাংবেন?
গত দুই যুগে আপনার মত লক্ষ লক্ষ খামারী এ ভাবেই নিঃশব্দে সব খুইয়ে দেনার দায় নিয়ে কেউ দেশ ছেড়েছেন, কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, কেউ বেকার হয়েছেন, কেউ পেশা বদল করেছেন।
বেরিয়ে আসার কি কোন পথ খোলা নেই?
আছে তবে বুঝতে হবে, আবেগে নয় বাস্তবতার নিরিখে।

পর্ব ২
আগের পর্বে বলেছিলাম আবেগ নয় বাস্তবতার নিরিখেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
বাস্তবতাগুলো কি কি? আগে আসুন আপনার দেখা ইসুগুলোর সাথে মিলিয়ে নেই-
১। বাচ্চার দাম- যেহেতু কাঁচা মাল, দিনেরটা দিনেই বিক্রি করে শেষ করতে হবে।
২। মেডিসিন, ভিটামিন, ভ্যাক্সিন- প্রায় পুরোটাই আমদানি নির্ভর। 
৩। খাদ্য বিক্রি – যেহেতু বাকি সিস্টেমে দীর্ঘ দিন চলে আসছে
৪। রেডি মুরগী বিক্রি- যেহেতু ফড়িয়া,দাদন ব্যবসায়ী, পাইকার, খুচরা বিক্রেতা সকলকে নিয়ন্ত্রন করে রাঘব বোয়াল অদৃষ্ট সিন্ডিকেট।
৫. হ্যাচারী মালিকেরা ইহাকে শিল্প হিসাবে না নিয়ে সময় মত লস পুষিয়ে উচ্চ দামে বাচ্চা বিক্রি করাকেই লাভ লোকসানের নিয়ামক মনে করেন।
৬. বাংলাদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ঋণদান কারী প্রতিষ্ঠান মনে করেন এই পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. যেহেতু বাংলাদেশে খামারী বান্ধব পোল্ট্রি নীতিমালা নাই।
৮. যেহেতু ব্রয়লার উৎপাদনকারীদের জাতীয় পর্যায়ে কোন সংগঠন নাই, যে সংগঠন সরকার বা অন্যা্ন্য স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সাথে বারগেনিং করবে।
৯। যেহেতু ব্রয়লার খামারীরা ৮০% সিজনাল খামারী
১০। যেহেতু খামারীর বাচ্চা-খাদ্য-মেডিসিনের বিষয়ে সিধান্ত গ্রহনের ক্ষমতা নেই ( কা্রণ নিজের পুঁজি নেই, পুরোপুরি ডিলার বা মহাজনের উপর নির্ভরশীল)
১১. যেহেতু সারাদেশের ব্রয়লার মুরগীর প্রতিদিনের দাম নির্ধারন করার ক্ষমতা খামারিদের হাত নেই।
সেহেতু একজন খামারী হিসাবে আপনি কি এই চক্র ভাংতে পারবেন?
পারলে এক পথ, না পারলে অন্য পথেই সমাধান খুজতে হবে।

 পর্ব – ৩
প্রথমেই প্রশ্ন এসেই যায়- ব্রয়লার মুরগীর ফার্ম করবেন,
আপনি কতটা প্রস্তুত?
১. আপনার এ বিষয়ে কি নূন্যতম পড়াশোনা আছে?
২. আপনার সাধারন শিক্ষায় লেভেল কতটুকু?
৩. আপনার কি আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত যথেস্ট আর্থিক সামর্থ এবং মানসিক জোর আছে?
৪. পোল্ট্রি লালন পালনকে আপনি কি বিজ্ঞান হিসাবে মানেন কিনা?
৫. বাংলাদেশের পোল্ট্রি ব্যবসায় ভ্যালু এডিশান এবং সাপ্লাই ও বিপনন চেইন সম্পর্কে আপনার কতটুকু জানা শোনা আছে?
৬. আপনি হাতে কলমে কতটুকু ব্যবহারিক জ্ঞান রাখেন?
৭. পোল্ট্রির বায়োলজিক্যাল বিহেভিয়ার সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণের গভীরতা কতটুকু?
৮. আপনি প্রতিদিনের আয়-ব্যয় এবং ব্রয়লার ফার্মের প্রতিদিনের ডাটা সংরক্ষনে কতটুকু আগ্রহী এবং পারদর্শী?
৯. ব্রয়লারের রোগব্যাধি এবং বায়ো সিকিউরিটি সম্পর্কে আপনার কতটুকু জানা আছে?
১০. ব্রয়লার ফিড, ফিডিং, গ্রেডিং, ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আপনি কি জানার চেস্টা করেছেন?
উপরের উল্লেখিত প্রশ্ন গুলো হতে পারে একটি চেক লিস্ট, যদি চেক লিস্ট ধরে আপনি অনেক গুলো প্রশ্নের পজেটিভ উত্তর পেয়ে যান তাহলে ধরে নিব আপনি এখন বাংলাদেশে প্রাথমিক ভাবে ব্রয়লার খামার পরিচালনা অথবা টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত।
এর পরে প্রশ্ন আসবে আপনি কি লাভজনকভাবে সারা বছর এই ব্যবসাকে পরিচালিত করতে পারবেন?
যেখানে ২য় পর্বে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে সেই চ্যালেঞ্জের চক্রকে ভেঙে?

পর্ব- ৪
তৃতীয় পর্ব শেষে যাঁরা এখনো আগ্রহী পরের পর্বের খোঁজে তাদের জন্য-
চলেন কিছু কঠিন বাস্তবতার মুখো মুখি হয়ে টিকে থাকার কৌশল গুলো রপ্ত করি
১. নিজের পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে ব্রয়লার খামার ব্যবসা থেকে ইস্তফা দেই।
কথায় আছে ” যে ঋন করে শোধে ঋন সে হল বেকুব নাম্বার তিন”
বিগত ব্যাচের দায় শোধ না করে আবার নতুন আরেক ডিলারের কাছ থেকে বাকিতে খাদ্য বাচ্চা ,ঔষধ্ ,ভিটামিন ও  ভ্যাক্সিন কিনতে যাবেন না, সে আপনার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে লো কোয়ালিটির সব কিছু ধরিয়ে দেবে উচ্চ লাভ করে, কারণ আপনার করার কিছু নাই।
আগের ডিলারের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন-
সাধু সাবধান-
১. বাচ্চার দাম যখন কম থাকবে, অথবা বাসী বাচ্চা কম দামে এবং বাকিতে পেলেই আপনাকে বাচ্চা দিবে অথবা যে হ্যাচারীর বাচ্চা খারাপ কোয়ালিটির কারনে বাজারে চলে না সেই বাচ্চাই আপনাকে ধরিয়ে দেবে।
কারণ ঋনের দায়ে তার কাছে আপনার হাত পা বাঁধা।
যেমন চালাবে তেমই চলতে হবে।
লাভ জনক ব্রয়লার ফার্মিং এর প্রথম সত্ত্বই হল ভাল বাচ্চা  ও ভাল খাদ্য দিয়েই ফার্ম করতে হবে।
দায়ে পড়ে বাকিতে কিনলে আপনার বারগেনিং করার কোন ক্ষমতাই থাকবে না, ফলে যা হবার তা হবে
খারাপ বাচ্চা খারাপ খাদ্য নিয়ে ফার্ম করলে উচ্চ মৃত্যুহার এবং লো এফ সি আর হতে বাধ্য।
লাভ সেটা নিজেই ভেবে দেখেন কি হবে আপনার পরিনতি?
ব্রয়লার খামার করবেন কমপক্ষে তিনটি ব্যাচ আপনার থাকতে হবে( প্রতিব্যাচে কমপক্ষে ১০০০ করে ব্রয়লার থাকতে হবে) এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর বাচ্চা তুলতে হবে, এতে বাজারের খারাপ ভাল সব পরিস্থিতিতে আপনার রেডি ব্রয়লার বিক্রির সুযোগ থাকবে, ফলে সারা বছরের এভারেজ করলে একটা মোটামুটি লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা থাকবে।
এ ভাবে তিন ব্যাচ ব্রয়লার থাকলে নগদ টাকার একটা ফ্লো সব সময় আপনার থাকবে, ফলে ভ্যাক্সিন- ভিটামিন-বাচ্চা- খাদ্য নগদে দামাদামি করে ভাল মানের কম দামে ক্রয় করার একটা অবস্থা থাকবে।
জিম্মি দশা থেকে মুক্তির আলো দেখবেন – এটা নিশ্চিত বলতে পারি।

 লেখক ঃমজুমদার অঞ্জন(পি পি বি)

নোটঃ

বাকিতে ডিলার ও কোম্পানীর লাভ বেশি হয়।

বাকিতে ১০০০ ব্রয়লারে ডিলারের লাভ বা খামারীর লসঃ

বস্তায় ১০০-১৫০টাকা লাভ করে হলে ৫০ বস্তায় ৫০০০-৭৫০০টাকা

বাচ্চায় ১-২টাকা হলে ১০০০ এ                 ১০০০-২০০০টাকা

মেডিসিন ও টিকায়    ১০০০ব্রয়লারে           ১০০০-২০০০টাকা

মুরগি বিক্রি করে    ১০০০ব্রয়লারে         ১০০০-২০০০টাকা

মোট ৮০০০-১৩৫০০টাকা।

খামারী বাকিতে খাবার পেলে খুব খুশি হয় কিন্তু লসটা তারই হয়।

১জন ডিলারের যদি ২০ জন খামারী বাচ্চা তুলে তাহলে মাসে তার লাভ ২০*১০০০০ঃ২লাখ টাকা।

আর যদি ২জন খামারীর  লস হয়  তাহলে লাভ  ১লাখ ৮০ হাজার।

ডিলারের মত কোম্পানীর ও ঠিক তেমন লাভ হয়।

খামারীর লাভ লটারীর মত আর ডিলার ও কোম্পানীর লাভ মোটামুটি নির্ধারিত যদি না  ব্যাপক হারে মরটালিটি হয়।

তবে অনেক খামারী লস পড়লে কিছু টাকা কম দেয়।

টাকা থাকলে নগদে ব্যবসা করেন বাকিতে না করাই ভাল।

প্রতি মাসে ২০-৫০জন খামারীকে ১০০০-৩০০০ টি করে বাচ্চা দেয় এমন ডিলারের স ংখ্যা প্রায় ৩০-৪০% হবে।

রেডি ব্রয়লারের দাম কমে যাবার কারণ

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি।প্রতিদিন মাংস উতপাদন ৩০০০টন আর চাহিদা ২০০০টন।

বাংগালী ব্রয়লার/ মুরগির মাংস  কম খায় বছরে ৪-৫কেজি (মালয়েশিয়ান রা খায় ৪০কেজি আর কানাডা ,আমেরিকা ও জাপানিজ রা খায় ৪২-৪৪কেজি।বাংগালী সস্তা জিনিস পছন্দ করে না।

খাসীর মাংস ৬০০-৭০০টাকা,গরুর মাংস ৪৫০-৫০০টাকা কিন্তু ব্রয়লার ৯০টাকা ।

বিদেশে রপ্তানী না করা।

শুধু রান্না করে খায় মানে প্রসেসিং করে মাংস খায় না।

সরকার কর্তৃক মুরগির  নির্ধারিত মূল্য না দেয়া।

স ঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী বাচ্চার প্রডাকশন না করা।

প্রতিদিন ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদিত ২০লাখ ।

ডাঃ মো সোহরাব হুসাইন

 

Please follow and like us:

About admin

Check Also

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম

পোল্ট্রির(ব্রয়লার) প্রসেস ফুড উৎপাদনকারী কোম্পানী ও তাদের প্রোডাক্টসের নাম ও দাম কোম্পানীর নাম ১।সিপি ২।কাজী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »