ফাউল টাইফয়েড
১.ভূমিকা
এটা বাংলাদেশের কমন সমস্যা বিশেষ করে কিছু কিছু জেলায় ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে এবং শত শত খামার ধবংস হয়ে যাচ্ছে।
এজেন্টঃ
ফ্যামিলি Enterobacteriaceae.
আমেরিকার ভেট Daniel E Salmon এর নামে এর নাম হয় সালমোনেলা।১৮৮৮ সালে ১ম চিহ্নিত করা হয়।ফাউল টাইফয়েড নামে ডাকা শুরু হয় ১৯০২ সাল থেকে।
#এটি সালমোনেলা গ্যালিনেরাম(গ্রাম নেগেটিভ,এরোবিক) দ্বারা হয়,চলনবিহীন,স্পোরবিহীন।সেরোটাইপ গ্রুপ ডি এর অন্তভুক্ত।২টি এন্টিজেন সোমাটিক ও ফ্লাজেলার।এর প্রায় ২৩০০ টি সেরোটাইপ আছেক।ল্যাবে ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রা সেলেনাইট ব্রথ,টেট্রাথায়োনেট ব্রথ,ম্যাকন কি আগার,ব্রিলিয়ান্ট গ্রিন আগার এ ভাল জন্মায়।#পি এইচ ৪-৯ এর মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে,( পি এইচ ৭ ভাল)। ধুলা মিশ্রিত পানিতে ১০-৪৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় জীবানূ বেশি বংশ বিস্তার করে ।৮০-৮২ ডিগ্রী সেন্টি তাপমাত্রায় খাদ্যকে পিলেটিং করলে সালমোনেলা কমে যায়
# মর্টালিটি ১০-৯০% ,বাচ্চা মুরগিতে ২৫% পর্যন্ত মারা যেতে পারে। ডিম কমে ১০-২০%
# ইনকিউবেশন পিরিয়ড ৪ -৬ দিন,এটি উপযুক্ত পরিবেশে ১ বছর বাচতে পারে।
# ইংল্যান্ড,পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা থেকে এই রোগটি নিমূল করা হয়েছে.
# বাংলাদেশের প্রায় সব পোল্ট্রি ফার্মে এই রোগটি আছে
#নোংরা পরিবেশ,গাদাগাদি অবস্থা,অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল,ঠান্ডালাগা এবং অন্য রোগের উপস্থিতি রোগাক্রান্ত এবং মর্টালিটি বাড়িয়ে দেয়.মর্টালিটি নির্ভর করে বয়স,স্ট্রেইন,পুস্ট্রি,ফার্ম ব্যবস্থাপনা,ব্যাক্টেরিয়ার লোডের উপর।
হোস্টঃ
গৃহপালিত মুরগ মুরগিই সালমোনেলা জীবাণূ্র বড় বাহক।মুরগি এবং টার্কি বেশি আক্রান্ত হয় তবে কোয়েল,হাঁস,কবুতর,ময়ুর,গিনি ফাউল,ফ্রিজেন্ট,চড়ুই,টিয়াপাখি আক্রান্ত হয়।সব বয়সেই হয় তবে তিন মাস থেকে ডিম পাড়ার শুরুর সময় বেশি হ।
মুরগির দেহের বাহিরে কতদিন বেচে থাকে তা নিন্মে দেয়া হলোঃ
চিকেন ড্রপিং ৫-২৫ঃদিন।পোল্ট্রি মল ১০-৪০দিন
পোল্ট্রি লিটার ২১-১৪৪দিন।পিট লিটার ১৬০-১৬৪দিন
পালক ১-৪ বছর।ডিমের খোসা ৩-১৪ মাস
চিক বক্স ২ মাস।রবারের ফিটিং ২০-১৭২দিন
মাটিতে ২৮০দিন।পানিতে ২-৪৫দিন
ফিশমিল ১ মাস-২ বছর।মাছি ৫-৬০দিন
ডিমের পাউডার ১৩ বছর
২.কি দিয়ে রোগটি ছড়ায়:
#ডিম( ভার্টিকেল) (Transovarian transmission)
# হ্যাচারী #ইদুর
#পাখি( কবুতর)।ভিজিটর
#চিকা
।পোকামাকড়।মাছি
তেলাপোকা।খাবারের ভ্যান,ট্রাক,রিক্সা,পিক আপ।খাদ্য এবং খাদ্য উপাদান
ডিমের ট্রে,ব্রুডার।সিমেন
প্যাথোজেনেসিসঃ
সিস্টেমিক ডিজিজ প্রায় প্রতিটি অর্গান আক্রান্ত হয়।সেপ্টিসেমিয়া হয়।পরিপাক তন্ত্র (ক্ষুদ্রান্ত্র ,লিভার,কিডনি,প্রজনতন্ত্র,ফুসফুস,স্প্লিন,ঝুটি)
৩.প্রকারভেদ এবং লক্ষণ
পুলোরামের মত জন্মের পর পরই ঘটেনা অন্তত ৫ দিন সময় নেয় মানে ৭-১০ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা যায়।সুস্থ সবল বাচ্চা হঠাত মারা যায়,খাদ্য এবং পানি ঠিক থাকে।পুলোরামের মত দুর্বল হয়না।বাচ্চার শ্বাস কস্ট হয়।আক্রান্ত ডিম থেকে যে বাচ্চা আসে তা ফোটার আগেই মারা যায় বা ফুটার পর মারা যায়।নরমাল ডিমের বাচ্চা জীবাণূ দ্বারা আক্রান্ত হলে ২-৩ সপ্তাহের মাধ্যে মারা যায়।
অতিতীব্র:
#.হঠাৎ করে মারা যায়,১-৩ ঘন্টার মধ্যে কিছু পাখি মারা যায়।পানি বেশি খায়
তীব্র:
#জ্বর,ক্ষুদামন্দা,নিস্তেজতা,বিমর্ষতা দেখা যায়.
#মাথার ঝুটি ও লতিকা ফ্যাকাশে এবং ছোট হয়ে যায় ।
# সবুজ,সালফার বা হলুদ রং এর ডায়রিয়া দেখা যায় যা দূর্গন্ধ যুক্ত ।তবে অধিকাংশ বাচ্চায় তা দেখা যায়না,লালচে তরল পায়খানা দেখা যায়,অনেকে এটিকে আমাশয় বলে ভুল করে। সাদা আঠালো পায়খানা মলদারে লেগে থাকে.হলুদ বাদামী আবার কখনো সবুজ পায়খানা করে।শরীরে জ্বর থাকে,ডানা ঝুলে যায়,পানি বেশি খায়।মারা যাবার আগে মুখ দিয়ে লালা পড়ে।কখনো কখনো হাস ফাস শব্দ করে,শ্বাসকস্ট দেখা দেয়।ফার্মে আস্তে আস্তে মৃত্যু হার বেড়ে যায় ১ম ২টি তারপর ৩টি,এভাবে বাড়তে থাকে।পিক প্রডাকশনে ঊঠে না ৮৩-৮৫% থাকে।
দীর্ঘ মেয়াদী
#খাবার কম খায়। ওজন কমে যায়।ডিম কমে যায়।ছোট ডিম পাড়ে এবং ভাংগা ডিম বেড়ে যায়।।#ফাইব্রিনাস পেরি্টোনাইটস।ডিমে কালো কালো ছিটা দেখা যায়।
৪.পোস্ট মর্টেম লেশনঃ
রোগের প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণ ভাল বুঝা যায় না.
#তীব্র পর্যায়ে (সেপ্টিসেমিক)
লিভার বড়,কাসার মত রং(বোঞ্জ কালার,মেহগনির মত).লিভারে নেক্রোটিক ফোকাই দেখা যায় ( Liver Dark Red or almost black)
#অনেক সময় লিভার উজ্জল সবুজ হয়,এতে নিশ্চিত হওয়া যায়(pathognomic lesion)
#লিভারে রক্ত বর্ণ,সাদা রং বা উভয় দেখা যেতে পারে.। লিভার বের করার পর বাতাসের সংস্পশে কিছুটা সবুজ নং ধারণ করে।Skeletal muscle congested and dark in color.
অনেক সময় লিভার সাদা এবং ভংগুর হয়ে যায়।ফুসফুস কালচে রং এর হয়(Heavily congested) এবং শোথগ্রন্থ(Oedematous).ফূসফুস পানিতে রাখলে ডুবে যাবে.। প্লীন এবং কিডনী অনেক বড় হয়ে যায়।
প্লীন সবুজ এবং সাদা বর্ণের নেক্রোটিক ফোকাই দেখা যায়।#পেঠের ভিতর ভাংগা,গলিত,বিবর্ণ ডিম পাওয়া যায়.ওভারিয়ান ফলিকল গুলো একত্রে মোটা দলার মত দেখা যায়।ইনটেসটাইনে আলসার দেখায যায়।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতিঃ
ক্লিনিকেল লক্ষণ দেখে
পোস্ট মর্টেম করে
সিরাম প্লেট এগ্লুটিনেশন করে
ব্যাক্টেরিয়া কালচার করে
এলাইজা করে
হিস্টো প্যাথোলজিকেল টেস্ট করে
৬.চিকিৎসাঃ
আক্রান্ত মুরগি চিকিৎসা করে ভাল রিজাল্ট পাওয়া যায় না তবে প্রাথমিক অবস্থায় হলে ভাল রিজাল্ট পাওয়া যায়।
#.এন্টিবায়োটিক
ফ্লোরোকোইনোলন গ্রুপ
ফ্লোরফেনিকল
সালফার ড্রাগ
নিওমাইসিন
জেন্টামাইসিন
এমিকাসিন
বা জেন্টা ইঞ্জেকশন ০.2ml করে মাংসে ৩-৪দিন মাংসে
#ইমোনুস্টিমোলেটর
#টক্সিন বাইন্ডার
#লিভার টনিক
#ই+ সেলেনিয়াম
৬.প্রতিরোধ:
#ভাল কোম্পানি এবং হ্যাচারীর বাচ্চা নিতে হবে।#বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে
#পানিতে প্রবায়োটিক, ক্লোরিন এবং এসিডিফায়ার ব্যবহার করতে হবে.।রীতিমত স্প্রে করতে হবে.
খাদ্যে মিটবোন ব্যবহার কমিয়ে উদ্ভিজাত প্রোটিন ব্যবহার করতে হবে।টিকা দেয়া যায়।
নোটঃলিভার বিভিন্ন কারণে বড় হতে পারে যেমন কলেরা,টাইফয়েড।অনেক সময় কোন লক্ষণ ও লেশন পাওয়া যায় না তাই টেস্ট করা উচিত।এ আই,কলেরা,টাইফয়েড এর ক্ষেত্রে কিছু মিল আছে তাই সব টেস্ট করলে শিউর হওয়া যাবে।কলেরায় লিভার কালচে হবে,এবডোমিনাল ফ্যাটে এবং হার্টে হেমোরেজ হবে।ডিওডেনাম ও জেজুনাম ফুলে যায়।ফ্যাটি লিভার হলে হলুদ এবং ভংগুর হবে