আমাদের দেশে বেকার থাকায় এবং ডিম ও মাংসের চাহিদায় অপরিকল্পিত ভাবে অনেক ছোট বড় পোল্ট্রি খামার গড়ে উঠেছে।লোকসানের কয়েকটি কারণের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ভাবে এন্টিবায়োটিক সহ অন্যান্য উপাদানের ব্যব্হার । ।এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায় এবং অপরিকল্পিত ভাবে এই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারই ভবিষ্যতে পোল্ট্রি শিল্পের বড় হুমকি।ধীরে ধীরে জীবাণু গুলো রেজিস্ট্যান্ট হচ্ছে।স্বাস্থ্য সচেতন অনেক দেশেই ফিডিং এনিম্যালে (গরু, মোরগ মুরগি) এন্টিবায়োটিক কমাতে কমাতে বন্ধ করে দি্যেছে।
আমাদেরকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।তাহলে উৎপাদিত পণ্যের রপ্তানি করে শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারবো।একেবারে এন্টিবায়োটিক বন্ধ সম্বব হবে না।তাই অতি প্র্য়োজনে খুব কম ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
এন্টিবায়োটিকের স্থলে ক্ষতিকর জীবাণূকে দমন করার জন্য প্রবায়োটিকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এই শিল্প রক্ষায় পোল্ট্রি ব্যবস্থাপনা নিন্ম্ রুপ হলে ভাল হয়ঃ
১।সঠিক ভ্যাক্সিন প্রয়োগে নির্দিস্ট কিছু রোগ দমন
২।ফার্মে জৈব নিরাপত্তা সম্বব মত মেনে চলা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখা
৩।খুবই প্রয়োজনে সর্বোচ্চ নিরাপদ ওষুধ ব্যবহার করা
৪।সর্বোপরি খাবার ও পানির মাধ্যমে উপযুক্ত মানের প্রবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ানো
প্রবায়োটিক কি?
প্রবায়োটিক শব্দটি গ্রীক শব্দ ,প্রবিওস থেকে এসেছে যার অর্থ জীবনের জন্য
ইহা উপকারী জীবানূর সমস্টি যারা তাদের অবস্থানকারী প্রানীকে সার্বিকভাবে উপকার করে।
এতে তারা ঐ প্রাণীর আন্তনালীতে ক্ষতিকর জীবাণূর সংখ্যা একেবারে কমিয়ে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে ফলে ঐ প্রাণী তুলনামূলক ভাবে রোগ মুক্ত এবং ভাল উৎপাদনমুখী থাকে।
ভাল প্রবায়োটিকের বৈশিস্ট্য কি
১। রোগ সৃস্টি করার ক্ষমতা নাই এবং অবিষাক্ত
২।মোরগ মুরগির খাদ্য হজমসহ ভ্যাক্সিনের দ্বারা ভাল কাজ পাওয়া ,রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি সহ ক্ষতিকর জীবাণূকে ধবংস করা এবং খাদ্যের পুস্টির সঠিক ব্যবহারের জন্য যত প্রকারের উপকারীর জীবানূর প্রয়োজন তা প্রবায়োটিকে থাকতে হবে।
৩।প্রয়োজনীয় সংখ্যার উপকারী জীবাণূ প্রবায়োটিকে থাকতে হবে
৪।ক্ষতিকর সালমোনেলা এবং ইকলাই দমনের জন্য তাদের নিঃসরণকে প্রবায়োটিকের এই উপকারী জীবানূ নস্ট করা
৫।মোরগ মুরগি তন্ত্রনালীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ,অর্গানিক এসিড এবং পিত্তের উপস্থিতে প্রবায়োটিকের উপকারী জীবাণুর টিকে থাকার সামর্থ্য থাকতে হবে
৬।স্বাভাবিক তাপমাত্রায় প্রবায়োটিকের উপকারী জীবাণূগুলো সংরক্ষণ করা যায় এমন হতে হবে
৭।নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগের সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায় এমন হতে হবে।
মোরগ মুরগিতে উপকারী জীবাণূর স্বাভাবিক অবস্থান কেমন
১।বাচ্চার জন্ম গ্রহণের সময় উপকারী জীবানূমুক্ত থাকে।
২।পরিপা্ক তন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া থাকে যাদেরকে মাইক্রোফ্লোরা বলে,মাক্রোফ্লোরা প্রায় ৪০০ প্রজাতি .১০(১৪) পরিমাণ উপকারী জীবানূ থাকে।
মাক্রোফ্লোরা মোরগ মুরগির কি কি উপকার করেঃ
১।খাদ্য হজমে সহায়তা করে শরীর থেকে এঞ্জাইম নিঃসরণ ঘটিয়ে থাকে
২।আশ জাতীয় খাদ্য এবং পলিস্যাকারাইড কে ভেংগে শক্তি জোগায়
৩।ভিটামিন এবং মিনারেলস তৈরিতে এবং শোষণে ভূমিকা রাখে।
৪।ক্ষতিকর জীবাণূ কর্তৃক বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ কমিয়ে দেয়।
৫।শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়।
৬।লক্ষণ বিহীন মৃদু প্রকৃতির রোগ কমিয়ে দেয়
# ক্ষতিকর সালমোনেলা কমাতে তন্ত্রনালীতে উপকারী জীবাণূর অবস্থান সুদৃঢ় করতে হবে।
#অতি সম্প্রতি ইরানে গভেষণা করে দেখা গেছে ক্ষতিকর সালমোনেলা এবং ইকলাই দমনে প্রবায়োটিক কার্যকারী ভাবে সমর্থ।
#উপকারী জীবানূ ব্যাসিলাস সাবটিলিস সিকামের ক্ষতিকর সালমোনেলা কমাতে পারে।
#বিভিন্ন রকমের উপকারী জীবাণূর সমনয়ের তৈরি প্রবায়োটিক মোরগ মুরগিতে প্রয়োগ করলে অন্ত্রনালীর ইপিথিলিয়াল কোষগুলোর ধারক সমূহ প্রবায়োটিকের উপকারী জীবাণু গুলো তাদের ফিমব্রি এর দ্বারা আটকিয়ে যায় তাই ক্ষতিকর জীবানূ গুলো এসে মুরগিকে ক্ষতি করার সুযোগ পায় না।
মোরগ মুরগির শরীর থেকে উপকারী জাবাণু কেন কমে যায়
১।পাকস্থলীর ও তন্ত্রনালীর রোগ হলে
২।কোন কারণে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে বিশেষ করে বেশি ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক
৩।খাদ্য পরিবর্তন বা পুস্টির ঘাটতি থাকলে
৪।ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমিত ও মাইকোটক্সিনযুক্ত নিন্ম মানের খাদ্য ও পানি খাওয়ালে
৫।তাপমাত্রা উঠানামা,শরীরে পানির স্বল্পতা আবংপরিবহন জনিত ধকলে
৬।সেডে মুরগির ঘনত্ব বেশি থাকা,অতিরিক্ত ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ ঘটলে
৭।ভ্যাক্সিন প্রয়োগের ফলে রোগ প্রতিরোধমূলক এবং বিরক্তিকর ধকলে
৮।হঠাত তাপমাত্রা উঠানা্মা এবং বাতাস বাহিত রোগ আক্রমণ।
৯।অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থাপনায়
১০।অনুন্নত মানে লিটার ব্যবস্থাপনায়।
১১।আধুনিক ব্যবস্থা জনিত ধকলে
বিভিন্ন প্রকার ধকলের কারণ
১।কটিকোস্টেরয়েড হরমোন উৎপাদন বেড়ে যায়
২।অন্রনালীর নাড়াচাড়া বেড়ে যায়
৩।মিউকাস উৎপাদন বেড়ে যায়
উপরোক্ত কারণে শরীরে উপকারী জীবাণু কমে যায়,ক্ষতিকর জীবাণু বেড়ে যায় অর্থাৎ উপকারী জীবাণু অসম হয় যার ফলে অন্ত্রনালীর ভিলাই ছোট এবং অকার্যকর হয় আর ফলে খাদ্য শোষণ কমে যায় ,পাতলা পায়খানা হয় ,ক্ষতিকর জীবাণূ সমূহ রোগ করার সুযোগ পায় ,পরবর্তিতে ক্লিনিকেল পর্যায়ে অর্থাৎ সাব ক্লিনিকেল পর্যায়ে রোগ হয়।
বিভিন্ন পরীক্ষায় নিরিক্ষায় এবং গবেষণায় দেখা গেছে প্রবায়োটিক প্রয়োগে মোরগ মুরগিতে দৈহিক ওজন বৃদ্ধি সহ উতপাদিকা শক্তি বৃদ্ধি পায় ,সালমোনেলা ইকলাই সহ অন্যান্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া দামিত হয়।বিষ জাতীয় পদার্থ ধ্বংস হয়,মোরগ মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
প্রবায়োটিক কিভাবে কাজ করে
১।প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান গ্রহণ :(Competitive exclusions)
প্রবায়োটিক অন্ত্রনালীর সমস্ত যায়গা দখল করে ফেলে তাই খাদ্য ও পানি দিয়ে আসা ক্ষতিকর জীবাণূ প্রবেশ করলে অবশিস্ট কোন যায়গা না পেয়ে তারা পায়খানা দিয়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।এমন কি যারা অবস্থান করেছিল তারাও বের হয়ে যায়।
২।মোরগ মুরগি ২ভাবে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে।ক্ষতিকর জীবাণূকে গিয়ে খেয়ে ফেলে রোগ প্রতিরোধ করে যাকে বলে সেল মেডিয়েডেট রেস্পপন্স।আবার ভ্যাক্সিন প্রয়োগের পরে সরবরাহকৃত প্রোটিন থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে এন্টিবডি তৈরি করে ঐ নির্দিস্ট রোগের বিরোদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে যাকে বলে হিউমোরাল এন্টিবডি।
৩।প্রবায়োটিকের মাধ্যমে উপকারী জীবাণু ল্যাক্টোব্যাসিলাস ল্যাক্টিক এসিড নিঃসরণ করে যার ফলে অন্ত্রনালীর পি এইচ কমে যায় অর্থাৎ অন্ত্রনালীর এসিডিক হয়।এই অম্লীয় পরিবেশে ক্ষতিকর সালমোনেলা ইক্লাই জীবানূ ধবংস প্রাপ্ত হয় ,অপর পক্ষে উপকারী জীবাণূ গুলো বংশ বিস্তার ঘটে।
৪।প্রবায়োটিক খাদ্য হজমের জন্য বিভিন্ন রকমের এঞ্জাইম যেমন এমাইলেজ,প্রোটিয়েজ,লাইপেজ,সেলোলেজ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে ফলে খাদ্য হজম ভাল ভাবে হয় ।এছাড়া পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন কে সংশ্লেষণ করে। প্রয়োজনীয় এমানো এসিড সংশ্লেষণ করে।ক্ষতিকর জীবাণূ গুলো ধবংস প্রাপ্ত হয়ে নিজেরাই প্রোটিনের উৎস হিসাবে কাজ করে।
৫।প্রবায়োটিকের উপকারী জীবাণূগুলো Bacteriocin নিঃসরণ করে যে্মন ল্যাক্টোব্যাসলাস ,এসিডোফিলাস ও অন্যান্য প্রজাতির ল্যাক্টোব্যাসিলাস উপকারী জীবাণূ lactobacilin নিঃসরণ করে .এগুলো এক ধরণের আমিষ জাতীয় যৌগ যা ক্ষতকর জীবাণূকে ধবংস করে।
উপকারী জীবাণুগুলোর নাম এবং কাজ
ল্যাক্টোব্যাসিলাস এসিডোফিলাসঃ
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সাড়া জাগায়,দৈহিক ওজন বাড়ায়,সালমোনেলা ,স্টেফাইলোকক্কাস এবং ই কলাই দমন করে।
ল্যাক্টোব্যাসিলাস বুল্গেরিকাস ও স্টেপ্টোকক্কাস থারমোফিলাসঃ
ইকলাই নিঃসৃত টক্সিন দূর করে রোগ দমন করে।সালমোনেলা প্রতিহত করে।ইন্টাফেরন তৈরি করে।ইমিনোগ্লোবিউলিন তৈরি করে এবং জীবাণূকে গিলে খেয়ে ফেলে রোগ প্রতিরোধ সাড়া জাগায়।
ল্যাক্টোব্যাসিলাস প্লান্টেরামঃ
অন্ননালীর মধ্যকার জীবাণু যা শর্করার গাজন প্রক্রিয়া ঘটায়,অর্গানিক এসিড উৎপন্ন করে ,অন্ত্রনালীর অম্লীয় বজায় রাখে এবং ব্যাক্টেসিন উৎপন্ন করে যা ক্ষতিকর জীবাণু ধবংস করে।
ল্যাক র্যাম্নোসাসঃ
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় সাড়া জাগায় ,ক্ষতিকর জীবাণুকে গিলে ফেলে দমন করে,ক্লোস্টিডিয়াম জীবানূ ঘটিত পাতলা পায়খানা রোধ করে।আলফাটক্সিন সহ অন্যান্য মাইকোটক্সিন বাইন্ড করে।
বিফিডোব্যাক্টেরিয়াম বিফিডামঃ
প্রোটিয়াস,ক্লেবসিয়েল এবং ইকলাই জীবাণূ দমন করে।
এন্টারোকক্কাস ফেসিয়ামঃ
ইকলাই জনিত ডায়রিয়া রোধ করে ,সালমোনেলা রোধ করে।
ফাঙ্গাস প্রবায়োটিক
এস্পারজিলাস অরাইজি
সেলোলোজ এঞ্জাইম তৈরি করে যা আশ জাতীয় খাদ্য হজম ত্বরান্বিত করে।
কেনডিডা পিন্টোলপেসিঃ
অন্ত্রনলীতে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে ক্ষতিকর জীবাণূকে সরিয়ে উপকারী জীবানূর অবস্থান সুদৃঢ় করে।
যে সমস্ত এন্টিবায়োটিএর সাথে প্রবায়োটিক (প্রটেক্সিন) দেয়া যায়ঃ
কসুমিক্স প্লাস, ইএস বি৩,টিয়ামুলিন,এভোপোরাসিন,এভিলামাইসিন,এনরোফ্লক্সাসিন,ফ্লেভোফসফোলিপল,মনেন্সিন,সেলিনোমাইসিন,স্টেপ্টোমাইসিন,ভার্জিনোমাইসিন,জিংক ব্যাসিট্রাসিন,জৈব এসিড,মিটামিন ও মিনারেলস, ক্লোরিন ১০ পিপিএম মাত্রা পর্যন্ত।
ডা রইস উদ্দিন স্যারের লেখা থেকে
সাবেক নোভার্টিসের টেকনিকেল হেড